somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি জানবেও না যে এই লেখাটা তোমায় নিয়ে...

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আ,

ছোটবেলায় আমি একবার দৌড়ের রেসে নেমেছিলাম। অনেক প্রাণপণ দৌড়ে নিঃশ্বাসের শেষবিন্দুতে পৌঁছে দেখি আমি হেরে গেছি আরেকটা ঢ্যাঙা ছেলের কাছে। সেদিন ফিনিশিং লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে আমার অনেক কান্না পাচ্ছিলো, ছোট ছিলাম। আবেগী ছিলাম। এখনও হতচ্ছাড়া আবেগ আমায় ছাড়ে না। সেদিন থেকে হারতে বড়ো কষ্ট হয় সবসময়।




বছরের বিশেষ দিনগুলোতে আমাদের কখনোই দেখা হয় না! এটা খুব অদ্ভুতভাবে তুমি একদিন বললে, কী নিয়ে যেনো আমাদের মধ্যে খুটখাট লেগে গেলো আর তুমি বললে, খুব ক্লান্ত স্বরে, যেন এই কথাগুলো বলতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে! বললে, তুমি কি খেয়াল করেছো যে আমরা কোন উৎসবের দিনে, আয়োজনের দিনে, দিবসগুলোতে দেখা করতেই পারি না! আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম হয়তো, তাই ভেবে দেখলাম যে আসলেই পারি না। কিন্তু এটা নিয়ে বলার কিছুই ছিলো না। দেখা না করার কারণ আমরা হইনি কখনো। পরিপার্শ্ব আমাদের কতোভাবে বেঁকেচুরে দেয়। সহস্র আকাঙ্ক্ষার গলা পরিস্থিতির চাপে বুজে আসে অনায়াসে, যেনো কোনো বাগানের মালি গাছে পানি দেয়ার নলটা অনায়াসে বুজে দিলো!

এক একটা বছর যায় আর আমি অবাক হই, কীভাবে বিস্তর বিস্তর স্মৃতি জমা হয়। আমি জন্মের পর থেকে এক একটা স্মৃতির ঘর বুনছি। কত হর্ষ, বেদনা আর বিরহ জমা হয়ে আছে, অমলিন আর্কাইভের মতো। কিন্তু তুমি এলে আর এসব ঘরের চাবি হারিয়েই ফেললাম আমি। টেরও পাই না যে সেই দুঃস্মৃতির ঘর আমার বুকের ভেতরে এখনও আছে!

দুর! আজকের দিনে কেনো আমি এসব বলছি। কিন্তু জানো তো, আমি কেমন মেলাঙ্কলিক-অ্যালকোহলিকের মতোন। মাঝে মাঝে রেট্রোস্পেক্টে নিজেকে দেখি, আর ভাবি আমি কীভাবে খাদের একটু পাশ দিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে এলাম। তুমি সামনে ছিলে নিয়ত ঘূর্ণির বছরটা জুড়ে ছায়ার মতো একই গতিতে ঘুরেছি দু'জনেই। এতো দ্রুত দিনগুলো পেরিয়েছে যে মাঝে মাঝে টের পাইনিঃ আমি অনলাইনে একজনের সাথেই কথা বলছি, রোজ রোজ। প্রতিদিন। তুমিও খেয়াল করেছিলে? আমি কতটা অপেক্ষা করতাম, অপেক্ষার মুহূর্তে কী ভাবতাম এখনও সব জানি।

ঝকঝকে দোকানটার চেয়ারগুলো ঠাণ্ডা ছিলো, সেটা শীতের জানুয়ারি ছিলো। আমি কাঠ হয়ে বসে ছিলাম আর তোমার অপেক্ষা করছিলাম। তুমি একটা নীলচে বেগুনি জামা পরে আসলে, জামায় শাদা শাদা ফুল। এসে সামনের চেয়ারটা টেনে বসলে আর আমি জমে গেলাম। আমার হাতে একটা প্যাকেট ছিলো, প্যাকেটের ভেতরে পোকা ছিল। পোকা না, একটা ঝিনুক ছিলো। ছোট প্যাট্রিফায়েড ঝিনুক। ঝিনুকটা একটা চাবির রিঙের ভেতরে সারাজীবনের জন্যে আটকা পড়ে গেছে! আমি সেই প্যাকেটটা তোমার দিকে ঠেলে দেয়ার সময়ে একটু একটু কাঁপছিলাম মনে হয়। সেদিন তো বুঝি নি, সেই প্যাকেটের ভেতরের চাবির রিঙে আমার সবটুকু বাঁধা পড়ে গেছে...




তোমার সাথে এর পরে আমার যতোদিনই দেখা হয়েছে, আমি সেই কম্পনটা টের পেয়েছি। এটা কোনো বলার মতো বিষয় না, বরং হয়তো দুশ্চিন্তার বিষয়। আমি নিশ্চয়ই উদভ্রান্ত অসুস্থ কেউ! নাহলে কেনো আমি এমন সম্মোহিত হবো, কেনো একজনের চোখের দিকে তাকালে আমার আর কোনোকিছুই ভালো লাগবে না-- তাকে ছাড়া। কেনো কারো খিল খিল হাসি শুনলে আমি মোবাইল কোম্পানিকে ধন্যবাদ দিবো আর সারাজীবনের জন্যে চার্লি চ্যাপলিনের চেয়ে বড়ো কমেডিয়ান হয়ে যাবো! কেনো সে ব্যস্ত আর পাঁচ মিনিটের বেশি দেখা করতে পারবে না জেনেও আমি ঠা ঠা রোদ্দুর অনায়াসে মাথায় মেখে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো! এতোসব কেনো বড়ো অস্থির করে আমাকে!

আমি জানি তুমিও আমার মতোই কাঁপো। আমি নিশ্চিতভাবেই জানি এই খেলাঘরে তুমি আমার চেয়ে বেশি আমাকে ভালোবাসো। নিজের ওপর দাবি ছেড়ে দিয়েছি সেদিনই, চাবির রিঙের সাথে তোমাকে দিয়ে দিয়েছিলাম স-ও-ব!

এই প্রথম আমি হেরে গিয়ে অনেক খুশি হয়ে গেছি। এই প্রথম আমি জেনেছি সব দৌড়ে জিততে নেই। মাঝে মাঝে ফিনিশিং লাইনে সবচে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি দাঁড়িয়ে থাকে শুধুই আমার জন্যে...


৫০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×