somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের অন্ধকার সময়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। (১৯৭৫-১৯৮২)

০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্ধকার যুগ বলে একটা কথা আছে। কম বেশি আমরা সবাই এর সাথে পরিচিত। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আমরা এক অর্থে অন্ধকার যুগ বলতে পারি। আমি নিজে ঐতিহাসিক নই কিংবা ইতিহাসবেত্তাও নই। ২০০৮ সাল পর্যন্ত জানতাম না ঠিক কি ঘটেছিল এই সময়ে ।আমি এটাও জানি তরুন সমাজের খুব ক্ষুদ্র অংশই এই সময়কার ব্যাপারগুলো জানেন। খুব সংক্ষেপে আমি একটি ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই সময়টার। আশা করছি আমার মত যারা ইতিহাস হাতড়ে বেড়ান তাদের ভালো লাগবে।
১৯৭৫ : বঙ্গবন্ধুকে ১৫ই আগস্ট গুলি করা সৈনিকটির নাম ছিল মেজর নূর। তার প্রবল ব্যক্তিত্বের কাছে খেই হারিয়ে ফেলে তাকে হত্যা করতে আসা হত্যাকারীরা। আনুমানিক ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সূর্য সন্তানদের হিসেবে ঘোষণা করেন, তার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভাগঠিত হয়, আওয়ামীলীগের মন্ত্রীরা সেই কেবিনেটে যোগ দেন । আতাউল গনি ওসমানী সেই সরকারের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হন এবং মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন জানান।

১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গি পাড়ায় সমাহিত করা হয়। ২৩শে আগস্ট জাতীয় ৪ নেতা সহ ২০ জনের মত নেতাকে আটক করা হয়। ২৪শে আগস্ট জিয়াকে নতুন সেনা প্রধান নিয়োগ করা হয়। দুর্ভাগ্যর বিষয় ভারতও এই সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

৩রা নভেম্ভর খন্দকার মোশতাকের সম্মতিতে জেল খানায় রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ৪ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রিসালদাল মুসলেহ উদ্দিন খুব কাছ থেকে তাদের উপর ব্রাশ ফায়ার করেন। নভেম্বর মাসের প্রথম ৩ তারিখেই ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ একটি অভ্যুত্থান ঘটান । একই সময়ে খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশ প্রেরন করেন। জিয়াকে খালেদ মোশাররফ গৃহবন্দী করে রাখেন। মোশতাক বাধ্য হন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে সেনা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করতে।

জিয়া জেলে থেকেই তার কাছের বন্ধু কর্নেল তাহেরের কাছে সাহায্যর জন্য আবেদন পাঠান। কর্নেল তাহের তার আহ্বানে সাড়াও দেন। তাদের মধ্যে সর্বস্তরে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা সৃষ্টি, শ্রেণীহীন সেনাবাহিনী কাঠামোর ব্যাপারে সমঝোতা হয়। কর্নেল তাহের তার অনুগত বাহিনীর সাহায্য জিয়াকে মুক্ত করে আনলেন একটা পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। যেটা এখন জাতীয় বিপ্লবও সংহতি দিবস নামে পরিচিত।

৭ই নভেম্বরেই খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যা করার কাজটি করে ক্যাপ্টেন আসাদ ও ক্যাপ্টেন জলিল। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন আসাদকে খালেদ মোশাররফ মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের জীবন বাজি রেখে বাঁচান

জিয়া আবার সেনা বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। সেনা বাহিনীর মধ্যে শ্রেণী বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে জিয়ার সাথে কর্নেল তাহেরের মতানৈক্য দেখা দেয়। এর জের ধরে ২৪শে নভেম্বর কর্নেল তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। ৭ই নভেম্বর এক বৈধ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালান এই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়।
১৯৭৬ :
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কর্নেল তাহেরকে ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। তার স্ত্রী লুতফা তাহের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও কর্নেল তাহের ক্ষমা চান নি। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করায় ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। মৃত্যুর সময়ও তিনি ছিলেন অকুতোভয় আর নীতির সাথে আপোষহীন।
এদিকে সেপ্টেম্বরের দিকে বঙ্গবন্ধু খুনিরা আবার দেশে ফিরে আসে। লক্ষ্য ছিল আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে সরিয়ে দেওয়া।সে লক্ষ্য তারা অনেকদূর অগ্রসরও হয়। জিয়া খুব কৌশলে এদেরকে আবার বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা এদের সাথে জিয়া উৎখাতে জড়িত ছিল জিয়া তাদেরকে হত্যা শুরু করে।
১৯৭৭:
১৯৭৭ সালের ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত জিয়া প্রায় ১২০০ অফিসার , জওয়ানকে হত্যা করেন।
একই বছর ২১শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনে অপরগতা জানান এবং জিয়ার হাতে প্রেসিডেন্টের ভার তুলে দেন
১৯৭৮:
১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন
১৯৭৯:
। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে।
১৯৮১ :
মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুরের নেতৃত্বে জিয়াকে ৩০শে মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে হত্যা করা হয়। কর্নেল এম এ মতিন নামে একজন জিয়াকে স্টেনগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করে বলে জানা যায়।অসহনিয় ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ঘাতকদের একজন জিয়ার মৃত্যুর পরেও তার মুখে এক ম্যাগজিন গুলি শেষ করে। এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে জিয়া হত্যার সাথে অভিযুক্ত সবাইকে হত্যা করা হয়।
১৯৮২:
১৯৮২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন।
মোটামুটিভাবে একটা ধারনা আপনি পেয়ে গেছেন আশা করি। সত্যি কথা বলতে এই সময়কার ঘটনাগুলোর মধ্যে হলিউডের সিনেমা হওয়ার সব উপকরন ই আছে।এই সময়ের বিশ্বাসঘাতকতাগুলো পৃথিবীর ইতিহাসে দুর্লভ বৈকি!

তথ্য সুত্রঃ
তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা।-লেঃকর্নেল এম এ হামিদ
Bangladesh :a legacy of blood-Anthony mascarenhas
দেয়াল- হুমায়ুন আহমেদ
ক্র্যাচের কর্নেল - শাহাদুজ্জামান
উইকিপিডিয়া
বিভিন্ন বাংলা ব্লগ ও ইংরেজি আর্টিকেল
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:০০
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×