দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৮৩টি, যেখানে শুধু মেডিকেল ও প্রোকৌশল বিভাগেই শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষ। এই সংখ্যার বড় একটি এসেছে ঢাকার বাইরে থেকে, অনেকে প্রতন্ত গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে আসা কিশোর ছেলেটি ঢাকায় এসে যুবক হয়েছে, স্বপ্ন দেখতে শিখেছে আর সেই স্বপ্নকে বাচিয়ে রেখেছে তার বাবা বা অভিভাবক। যারা বাবার টাকায় কেনা দামী গাড়িতে আসে তাদের বিষয়টি আলাদা, কিন্তু এই সাড়ে তিন লক্ষের মাঝে না হলেও দুই লক্ষ শিক্ষার্থী লোকাল বাসে আসে।
গ্রাম থেকে আসা বর্তমানে যুবকটির বাবা তাকে স্বপ্ন দেখানোর আগেই রাতে শুয়ে শুয়ে না হলেও শতবার টাকার হিসেব কষেছে। তারপরই ছেলেকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে, বাবার মৃত্যুতে এমন স্বপ্ন ঝড়ে গেছে তা আমার নিজেরই জানা আছে। একজন বাবা যখন সংসারের হিসেব কষেন তখন বাসায় কেনা লবনের কথাও চিন্তা করেন। যারা পড়ছে তারা সবাই যে মধ্যবিত্ত পরিবারের তা ভাবার কারণ নেই, এদের মাঝে কিছু আবার নিম্ন আয়ের পরিবার থেকেও এসেছে।
সাধারণত বাবারা যখন আমাদের হিসেব করতে দেন আমরা তা নিজের মতো করেই করি। অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন, কিন্তু ডাবল A+, Golden A+ নিয়ে এসব জায়গায় পড়ছে সেই সংখ্যাও অনেক বেশী। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুগ্ধে পরাজিত হয়েছিলাম, তখন একবার জাতীয়তে পড়ার চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু সাত বছরের প্যারা নেবার মতো মানসিকতা আমার ছিল না, বাবাকে কোন রকম ম্যানেজ করে আমিও বাবার টাকায় স্বপ্ন কিনেছি। সেই স্বপ্ন কেনার আগে আমি বাজার দর দেখেছি, কোথাও দশ লক্ষ, কোথাও সাত আবার কোথাও দুই লক্ষ। দেশের দামী(টাকার খরচ বেশী) বেসরকারীতে আমি বিনা প্রতিদন্ধী্তায় ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু বাবার মুখখানাতে আধার আনতে চাইনি। আমার মতো প্রায় সবাই আগে টাকার হিসেবটা কষে তারপরই ভর্তি হই, এরপর কতো কিছু।
আজ ক্লাসপার্টি, কাল Presentation পরশু আরো কিছু এভাবে স্রোতের বিপরীতেই আমরা চলে আসছি। আমাদের দেশ যে একবারেই মুলধন শুন্য হয়ে পড়েছে তা নয়, আর এসব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যলয় থেকে কিছু টাকা দেশের তহবিলে যাবে তাও খারাপ নয়। কিন্তু একটা কিন্তু থেকেই যায়.........
৭।৫% কর যদি নতুনদের জন্য হতো তবে সবাই তা হিসেব করেই আসত, কোন সমস্যা হতো না। প্রতিষ্ঠান গুলোকে কোন চাপ দিয়ে লাভ নেই, এরা মূলত ব্যবসার জন্যই বসেছে, তাতে কেউ বাড়াবাড়ি করলে একজনকে বহিস্কার করে বাকীদের ঠান্ডা করার উপায় তাদের জানা আছে।
তাছাড়া দেশে যেখানে হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া মানুষেরা আবারও অন্য নামে লোন পায় তখন সেই মেরে দেয়া টাকার ঘাটতি পূরণে এমন শিক্ষাকে প্রকাশ্যে পণ্য ঘোষনা কী খুবই দরকার? বিস্বাস না করলেও শুধু দেশের রাস্তায় ট্রাফিকে লক্ষ টাকার চালা চালি হয়। রেলখাতে সেটা লক্ষটাকারও অনেক বেশী, এমন বহু খাত দেশে রয়েছে। সরকার যদি দুর্ণিতীতে জিরো টলারেন্স দেখাতে পারে তবেইতো আমাদের মুলধন বাড়তি থাকার কথা।
যে সহজ সরল মানুষগুলো সবসময় ট্যাক্স দিচ্ছে, গায়ে খেটে চলেছে, সন্তানকে রক্ত ঘাম করা টাকা দিয়ে পড়াচ্ছে তাদের কী হবে ভেবেছেন?
৭.৫% কেন আরও বেশী হলেও তারা স্বপ্ন দেখবে, সন্তানকে ঢাকায় পাঠাবেন, হয়তো তাতে তার নিজেরই আয়ুটা কমে যাবে। কারণ গ্রাম থেকে যে ছেলেটি আজ বেসরকারীতে পড়ছে তার বাসায় এখন ভালো তরকারী কিনতেও হিসেব করা হয়। হ্যা, তাদের হয়তো নিজের জমি আছে, যাতে ধান হয়। কিন্তু মানুষতো ধান খায় না, চাল খায়। আর যারা কৃষি বা বাজর সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাদের জানরই কথা আমাদের কৃষকেরা কতোটা ভালো আছে।
দেশে যখন সব ভয় ফেলে বেসরকারীর ছাত্ররা রাস্তায় ভ্যাট বাতিলের জন্য শ্লোগান দেয় তখন কোন রাজপুত্র কেন ভ্যাট দিতে হবে তার গাজাখুরি যুক্তি আবিষ্কার করে। আমরা যখন রাজপথে ঘেমে অস্থির তখন কেউ এসি রুমে থেকে আগামী মাস থেকেই ভ্যাট দেবার হুকুম জারি করে।
আসলেই ভ্যাট ৫০% করে দেয়া উচিৎ, তাতে শুধু কোটিপতির ছেলেরাই পড়ুক। কী দরকার আমার বা আমাদের মতো মানুষের স্বপ্ন দেখার। টাকা দিতে দিতে যে বাবারা আজ বাকী সব ভুলে গেছে সেই বাবারা এবার নুয়ে পড়বে আর রাতের আধারে কেঁদে কেদে বলবে "বাবা, আর কতোদিন?"। এর চেয়ে ভ্যাট আগে থেকে থাকলে আমরা এমন দু:সাহস করতাম না, বাবাও নুয়ে যেত না। বরং একসাথে জমিতে খেটে, কাজ করে বাবা-ছেলে আজ শক্তিশালী হতাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮