somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭.৫% ভ্যাট ও কিছু পিতার নুয়ে পড়া

০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৮৩টি, যেখানে শুধু মেডিকেল ও প্রোকৌশল বিভাগেই শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষ। এই সংখ্যার বড় একটি এসেছে ঢাকার বাইরে থেকে, অনেকে প্রতন্ত গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে আসা কিশোর ছেলেটি ঢাকায় এসে যুবক হয়েছে, স্বপ্ন দেখতে শিখেছে আর সেই স্বপ্নকে বাচিয়ে রেখেছে তার বাবা বা অভিভাবক। যারা বাবার টাকায় কেনা দামী গাড়িতে আসে তাদের বিষয়টি আলাদা, কিন্তু এই সাড়ে তিন লক্ষের মাঝে না হলেও দুই লক্ষ শিক্ষার্থী লোকাল বাসে আসে।

গ্রাম থেকে আসা বর্তমানে যুবকটির বাবা তাকে স্বপ্ন দেখানোর আগেই রাতে শুয়ে শুয়ে না হলেও শতবার টাকার হিসেব কষেছে। তারপরই ছেলেকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে, বাবার মৃত্যুতে এমন স্বপ্ন ঝড়ে গেছে তা আমার নিজেরই জানা আছে। একজন বাবা যখন সংসারের হিসেব কষেন তখন বাসায় কেনা লবনের কথাও চিন্তা করেন। যারা পড়ছে তারা সবাই যে মধ্যবিত্ত পরিবারের তা ভাবার কারণ নেই, এদের মাঝে কিছু আবার নিম্ন আয়ের পরিবার থেকেও এসেছে।
সাধারণত বাবারা যখন আমাদের হিসেব করতে দেন আমরা তা নিজের মতো করেই করি। অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন, কিন্তু ডাবল A+, Golden A+ নিয়ে এসব জায়গায় পড়ছে সেই সংখ্যাও অনেক বেশী। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুগ্ধে পরাজিত হয়েছিলাম, তখন একবার জাতীয়তে পড়ার চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু সাত বছরের প্যারা নেবার মতো মানসিকতা আমার ছিল না, বাবাকে কোন রকম ম্যানেজ করে আমিও বাবার টাকায় স্বপ্ন কিনেছি। সেই স্বপ্ন কেনার আগে আমি বাজার দর দেখেছি, কোথাও দশ লক্ষ, কোথাও সাত আবার কোথাও দুই লক্ষ। দেশের দামী(টাকার খরচ বেশী) বেসরকারীতে আমি বিনা প্রতিদন্ধী্তায় ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু বাবার মুখখানাতে আধার আনতে চাইনি। আমার মতো প্রায় সবাই আগে টাকার হিসেবটা কষে তারপরই ভর্তি হই, এরপর কতো কিছু।

আজ ক্লাসপার্টি, কাল Presentation পরশু আরো কিছু এভাবে স্রোতের বিপরীতেই আমরা চলে আসছি। আমাদের দেশ যে একবারেই মুলধন শুন্য হয়ে পড়েছে তা নয়, আর এসব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যলয় থেকে কিছু টাকা দেশের তহবিলে যাবে তাও খারাপ নয়। কিন্তু একটা কিন্তু থেকেই যায়.........
৭।৫% কর যদি নতুনদের জন্য হতো তবে সবাই তা হিসেব করেই আসত, কোন সমস্যা হতো না। প্রতিষ্ঠান গুলোকে কোন চাপ দিয়ে লাভ নেই, এরা মূলত ব্যবসার জন্যই বসেছে, তাতে কেউ বাড়াবাড়ি করলে একজনকে বহিস্কার করে বাকীদের ঠান্ডা করার উপায় তাদের জানা আছে।

তাছাড়া দেশে যেখানে হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া মানুষেরা আবারও অন্য নামে লোন পায় তখন সেই মেরে দেয়া টাকার ঘাটতি পূরণে এমন শিক্ষাকে প্রকাশ্যে পণ্য ঘোষনা কী খুবই দরকার? বিস্বাস না করলেও শুধু দেশের রাস্তায় ট্রাফিকে লক্ষ টাকার চালা চালি হয়। রেলখাতে সেটা লক্ষটাকারও অনেক বেশী, এমন বহু খাত দেশে রয়েছে। সরকার যদি দুর্ণিতীতে জিরো টলারেন্স দেখাতে পারে তবেইতো আমাদের মুলধন বাড়তি থাকার কথা।
যে সহজ সরল মানুষগুলো সবসময় ট্যাক্স দিচ্ছে, গায়ে খেটে চলেছে, সন্তানকে রক্ত ঘাম করা টাকা দিয়ে পড়াচ্ছে তাদের কী হবে ভেবেছেন?
৭.৫% কেন আরও বেশী হলেও তারা স্বপ্ন দেখবে, সন্তানকে ঢাকায় পাঠাবেন, হয়তো তাতে তার নিজেরই আয়ুটা কমে যাবে। কারণ গ্রাম থেকে যে ছেলেটি আজ বেসরকারীতে পড়ছে তার বাসায় এখন ভালো তরকারী কিনতেও হিসেব করা হয়। হ্যা, তাদের হয়তো নিজের জমি আছে, যাতে ধান হয়। কিন্তু মানুষতো ধান খায় না, চাল খায়। আর যারা কৃষি বা বাজর সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাদের জানরই কথা আমাদের কৃষকেরা কতোটা ভালো আছে।
দেশে যখন সব ভয় ফেলে বেসরকারীর ছাত্ররা রাস্তায় ভ্যাট বাতিলের জন্য শ্লোগান দেয় তখন কোন রাজপুত্র কেন ভ্যাট দিতে হবে তার গাজাখুরি যুক্তি আবিষ্কার করে। আমরা যখন রাজপথে ঘেমে অস্থির তখন কেউ এসি রুমে থেকে আগামী মাস থেকেই ভ্যাট দেবার হুকুম জারি করে।
আসলেই ভ্যাট ৫০% করে দেয়া উচিৎ, তাতে শুধু কোটিপতির ছেলেরাই পড়ুক। কী দরকার আমার বা আমাদের মতো মানুষের স্বপ্ন দেখার। টাকা দিতে দিতে যে বাবারা আজ বাকী সব ভুলে গেছে সেই বাবারা এবার নুয়ে পড়বে আর রাতের আধারে কেঁদে কেদে বলবে "বাবা, আর কতোদিন?"। এর চেয়ে ভ্যাট আগে থেকে থাকলে আমরা এমন দু:সাহস করতাম না, বাবাও নুয়ে যেত না। বরং একসাথে জমিতে খেটে, কাজ করে বাবা-ছেলে আজ শক্তিশালী হতাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×