بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্র। অসংখ্য দরূদ নাযিল হোক তার নবীর উপর বারবার।
কিছু দিন আগে সম্মানিত রায়হান ভাই তাঁর যুক্তিবাদী নাস্তিকদের সাথে সংলাপ নামক পোষ্টে নাস্তিকদের প্রতি একটি প্রশ্ন রেখেছিলেন যে," আপনারা আমাজন জঙ্গলের লোকজনকে কীভাবে বুঝাবেন যে টিভি, কম্পুটার, ও সেলফোন এর সত্যি সত্যি মেকার আছে, যদি তারা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, যেহেতু টিভি, কম্পুটার, ও সেলফোন কারা ও কীভাবে তৈরী করে তা তারা জীবনেও কখনো দেখেনি। ধরে নেয়া যাক যে, তাদেরকে স্বচক্ষে দেখানোও সম্ভব নয়। আর দেখালেও কোথা থেকে কী হচ্ছে তার কিছুই তারা বুঝবে না! "
এরপর "বাদদেন"নিকের একজন নাস্তিক আস্তিকদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রাখে যে," আপনারা আমাজন জঙ্গলের লোকজনকে কীভাবে বুঝাবেন যে অগ্নি দেবতা, বৃষ্টি দেবতা, বন্যা দেবতা, আগ্নেয়গিরি দেবতা এসব বলতে কিছু নেই, এগুলো প্রাকৃতিক কারণে ঘটে, যদি তারা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, কারণ তারা বিজ্ঞান জানে না তারা জীবনেও কখনো দেখেনি। ধরে নেয়া যাক যে, তাদেরকে বুঝানো সম্ভব নয়। আর বুঝালেও কোথা থেকে কী হচ্ছে তার কিছুই তারা বুঝবে না!"
এরপর আর আলোচনা সামনে বেশি আগায়নি।
আলহামদুলিল্লাহ্।নাস্তিকের পাল্টা প্রশ্নের জবাবে আমি আস্তিকদের পক্ষ থেকে আল্লাহ্র দয়ায় কিছু বলার চেষ্টা করছি।আল্লাহ্ আমাকে তওফিক দান করুন।আমিন।
এর আগে আপনাদেরকে বলছি যে,যদি আপনারা আমার আল্লাহ্র অস্তিত্বঃ আস্তিক ও নাস্তিকের যুক্তিতর্কঃ আমার উপলব্ধি-১,২,৩ নামের এই পোষ্টটি আগে মনোযোগের সাথে পড়ে আসেন তাহলে এখন নীচে যা বলবো তা বুঝা অনেক সহজ হয়ে যাবে আশা করি।
এখানে আস্তিক ও নাস্তিকের পক্ষ থেকে একে অপরকে প্রশ্ন করা হয়েছে। আসলে প্রশ্ন করা মূল উদ্দেশ্য নয়। প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে উভয় পক্ষই একে অপরের থেকে কোন একটা বিষয়ের স্বীকৃতি নিতে চাচ্ছে। যাতে করে, উভয় পক্ষ থেকে স্বীকৃত একটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পরে যুক্তি পেশ করা যায় এবং আগেই স্বীকার করে নেয়ার কারণে, পরে আর যেন যুক্তিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে অস্বীকার না করতে পারে। আসুন এবার আমরা উভয় পক্ষের প্রশ্ন ও প্রশ্নের আড়ালের যুক্তি কেটেকুটে বিশ্লেষন করে দেখি। আস্তিকের যুক্তিটি ছিল মূলতঃ এরকম যে ,
১-কোন প্রাণহীন, চিন্তা চেতনাহীন, কিছু জড় বস্তু নিজে নিজে সুশৃঙ্খল কিছু হতে পারে না, কোন প্রাণবান, বুদ্ধিমান সত্তার হাত ছাড়া।
২-এই অতি জটিল, অত্যন্ত সুশৃঙ্খল মহাবিশ্ব, পৃথিবী, মানুষ এগুলোও সব জড় বস্তু দিয়েই তৈরী।
৩-সুতরাং অবশ্যই কোন প্রাণবান ও সীমাহীন বুদ্ধিমান ও শক্তিবান কারণ বা সত্তা এগুলোকে সুশৃঙ্খল করেছে।
কিন্তু নাস্তিকরা যেহেতু এই যুক্তির প্রথম ধাপ, যা নাকি একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয় (অর্থাৎ এটা বিনা প্রমাণেই প্রমাণিত, এটা অতি সাধারণ কমন সেন্স দিয়েই বুঝা যায়) গোঁয়ার্তুমি করে বা না বুঝে অস্বীকার করলো তখন তাকে বুঝানোর জন্য আস্তিকের পক্ষ থেকে এই উপমামূলক প্রশ্ন করা হলো যে," আপনারা আমাজন জঙ্গলের লোকজনকে কীভাবে বুঝাবেন যে টিভি, কম্পুটার, ও সেলফোন এর সত্যি সত্যি মেকার আছে........."
এখানে আস্তিকের উদ্দেশ্য হলো এই যেঃ নাস্তিক এই প্রশ্নের জবাবে এই কথাই বলবে যে, আমরা তাদেরকে এভাবে বুঝাবো যে, দেখো, এগুলো সব জড় বস্তু , এদের নিজস্ব কোন চিন্তা চেতনা নেই, এরা নিজেরা নিজেরা কোন সুন্দর, সুশৃঙ্খল, জটিল, সুসমন্বিত কিছু হবে এটাতো অনেক দূরের কথা এরা নিজে নিজে একটু নড়তেও পারেনা।সুতরাং এই জড় বস্তুগুলো দিয়ে যখন এমন কিছু জটিল যন্ত্র তৈরী হলো তখন তোমরা না দেখলেও এটা মেনে নাও যে এগুলোর পিছনে প্রাণবান, জ্ঞানবান, পরিকল্পনাকারী কোন কারণ রয়েছে।
তখন আস্তিক, নাস্তিককে বলবে যে, ঠিক এরকম আমাদের নিজেদের এই শরীর , এইসব গাছপালা,ফুলফল, এই পৃথিবী , এই সৌরজগত এগুলোও তো জড় বস্তু দিয়েই তৈরী, এইসবই তো মূলে অনু পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি দিয়ে তৈরী,তার উপর এগুলো ঐ যন্ত্রগুলো থেকেও অনেক অনেক জটিল। সুতরাং তোমার যুক্তিতেই প্রমাণিত হলো যে, কোন এমন একটি কারণ এগুলোর পিছনে আছে যে কারণটির প্রাণ আছে, আছে বিরাট শক্তি, আছে অপরিমেয় জ্ঞান। সুতরাং সেই সত্তাকে না দেখলেও মেনে নাও।
কিন্তু নাস্তিক আস্তিকের এই ফাঁদে না পরে পাল্টা ফাঁদ পেতে প্রশ্ন করলো যে," আপনারা আমাজন জঙ্গলের লোকজনকে কীভাবে বুঝাবেন যে অগ্নি দেবতা, বৃষ্টি দেবতা, বন্যা দেবতা, আগ্নেয়গিরি দেবতা এসব বলতে কিছু নেই,........."
তো এখানে সম্ভবতঃ নাস্তিকের মূল যুক্তিটি ছিল এরকম
১-আমারা যেটা চোখে দেখিনা সেটার অস্তিত্ব নাই।
২- আর আল্লাহকে আমরা চোখে দেখিনা ।
৩- সুতরাং আল্লাহ্ বলে কিছু নাই।
তো, নাস্তিক তার এই যুক্তির ১ম ধাপ যা নাকি একেবারেই অযৌক্তিক,সেটার স্বীকৃতি আস্তিকের থেকে নেয়ার জন্য পাল্টা এই উপমামূলক প্রশ্ন করে।নাস্তিক ভেবেছে, আমারা ঐ সকল লোকদেরকে এভাবে বুঝাবো যে,দেখ,তোমরা কি এইসব দেব-দেবীদেরকে কখনো দেখেছো?না দেখে কেন তোমরা এসব দেবতাদেরকে এসব প্রাকৃতিক ঘটনার কারণ হিসাবে মেনে নিচ্ছ? তখন নাস্তিকও আমাদেরকে বলবে যে,তাহলে তোমরা কেন আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করছো?
কিন্তু নাস্তিক যেরকম ভেবেছে আমরা আসলে সেভাবে তাদেরকে বুঝাবোনা।বরং আমারা তাদেরকে বলবো যে,দেখো,তোমরা নাস্তিকদের মতো এতো বোকা নও যে,তোমরা এটা বিশ্বাস করবে যে এইসব প্রাকৃতিক সুশৃঙ্খল ঘটনাসমূহ এমনি এমনি কোন বিরাট শক্তিমান ও বুদ্ধিমান সত্তা ছাড়া ঘটছে।কিন্তু তোমরা যে ভাবছো এসব সুশৃঙ্খল ঘটনাসমূহ একেকটা একেক দেবতা করছে এটা ভুল বরং এসব কিছু একজন মাত্র সত্তা করছেন।তখন আমারা তাদেরকে আল্লাহ্র একত্তবাদের প্রমাণ দিবো। যাইহোক এটা তাদের সাথে আলোচনার বিষয়,নাস্তিকদের সাথে এ ব্যাপারে কোন কথা নাই।আলহামদুলিল্লাহ্।
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে,নাস্তিকের যুক্তির প্রথম ধাপটি তো একেবারে অযৌক্তিক,এমনকি নাস্তিকরা নিজেরাও এটা মানেনা যে,আমরা যা চোখে দেখিনা (যেমন অভিকর্ষ বল)তার অস্তিত্ব নাই;তারপরও কেন সে এরকম একটা বিষয়ের স্বীকৃতি আস্তিকের কাছ থেকে আদায় করতে চাচ্ছে? এর উত্তর কয়েকটি হতে পারেঃ
১-আসলে এখানে আমরা আল্লাহ্র দয়ায় উভয় পক্ষের যুক্তি যেভাবে বিশ্লেষণ করলাম নাস্তিক এই মারপ্যাঁচ বুঝতেই পারেনি।না বুঝেই সে পাল্টা প্রশ্ন করেছে।আবার প্রশ্ন আসবে না বুঝে এরকম চালাকিপূর্ণ প্রশ্ন সে কিভাবে করলো? উত্তর হলোঃ সবচেয়ে বড় আস্তিক যে শয়তান, সেই তার মনে এই ধোঁকাবাজিমূলক প্রশ্ন ঢেলে দিয়েছে।
২-নাস্তিক সব বুঝে শুনেই করেছে,হটকারিতা করে,তর্কের খাতিরে তর্ক করার জন্য প্রশ্ন করেছে;সত্যকে জানার ও মানার জন্য সে প্রশ্ন করেনি।
৩-আরেকটি জবাব মাথায় শুরুতে এসেছিলো,কিন্তু এই ৩নং পর্যন্ত আসতে আসতে তা আবার মাথা থেকে চলে গেছে।এটাতে রয়েছে আল্লাহ্ পাকের গোপন ঈশারা যে,যা কিছু আমরা লেখছি তা আল্লাহর দয়াতেই সম্ভব হচ্ছে।আলহামদুলিল্লাহ্।
আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই যে,বিভিন্ন যুক্তি বা উপমার আলোকে আমরা শুধু এতটুকু বুঝতে পারবো যে সৃষ্টিকর্তা জাতীয় একজন শক্তিবান ও জ্ঞানবান সত্তা আছে,কিন্তু কখনোই তাঁর সম্পর্কে শুধু যুক্তি দিয়ে পুরাপুরি জানতে পারবো না।হ্যাঁ,তিনিই যদি আমাদেরকে জানিয়ে দেন ,এবং যতটুকু জানিয়ে দেন অতটুকুই আমরা জানতে পারবো। আর এখানেই আসে তাঁর মেসেঞ্জার তথা নবী রাসূলদের কথা। আলহামদুলিল্লাহ্।
যাইহোক ,নাস্তিকেরই আমাদের প্রশ্নের জবাব আগে দেয়ার কথা ছিলো ,কিন্তু সে তা না করে গা বাঁচানোর জন্য পাল্টা প্রশ্ন করলো, আমরা সেটারও জবাব দিলাম। এবার তারা আমাদের প্রশ্নের জবাব দিক। জবাবটি এখানেও দিতে পারেন তবে রায়হান ভাইয়ের ঐ পোষ্টে গিয়ে দিলে ভালো হয়। কারণ উপরেই লেখা আছে। আলহামদুলিল্লাহ্।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১২ রাত ১১:২৪