বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রফেশনাল সেক্টরে যে পচন ধরেছে তার সবচে বড় দু'টি ক্ষেত্র হলো চিকিৎসা এবং সাংবাদিকতা। দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে মানুষের যে হতাশা তার একটি বড় কারণ হলো ডাক্তারদের গুনগত মান। একটি বিরাট অংশ যখন রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন আর চিকিৎসাবিদ্যার মতো কঠিন একটি বিষয় শেখার আর সময় কোথায়? পাশাপাশি সাংবাদিকদের একটি বড় অংশের নীতি নৈতিকতা নিয়ে সমাজে মানুষের ভেতর নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তাই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে যখন ইন্টার্নী ডাক্তাররা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন, তখন চায়ের দোকান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল ঝড় ওঠে পড়ে। আর ঝড়ে যে বড় বড় ক্ষতি হয় সেটা সবারই জানা। এসব দেখে যে যার মত মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন, কেউ বলছেন ডাক্তারি ছাইড়া সাংবাদিকতা করো। সাংবাদিকতা করতে খুব বেশি মেধা লাগে না। সাংবাদিকতা ছাইড়া ডাক্তারি করো। ভুল ওষুধে একটা দুইটা রোগী মরলে সমস্যা নাই। বাহ !বাহ !
২
একটা কাপ নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে স্বামীকে ঘরে ঢোকা দেখে স্ত্রী বলল, একি! এত হাঁপাচ্ছ কেন? আর এ কাপটাই বা কোথায় পেলে? স্বামীর চটজলদি উত্তর দৌড় প্রতিযোগিতায় দুজনকে হারিয়ে এটা পেলাম। স্ত্রী জানতে চাইলো কয়জন নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা? স্বামী বলল, মাত্র তিনজনের দৌড় প্রতিযোগীতা, দৌড়ের প্রথমে আমি, তারপর পুলিশ আর সবার পেছনে এ কাপটার মালিক!
রাজশাহীর মেডিকেরে শিক্ষার্থীরা লাইভ ক্যামেরার সামনে সাংবাদিক পিটিয়ে রক্তাত্ব করে ফেলেছে। তবুও সারা ফেইসবুক জুড়ে ডাক্তার বা মেডিক্যাল ষ্টুডেন্ট প্রায় সবাই এটার পক্ষে 'দালালী' করছে। নোংরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতই তারা বলছে, 'নিশ্চই সাংবাদিকরা হলুদ কোন কারবার করতে গিয়েছিল তাই ইন্টার্ণ ভাইয়েরা মাইর দিছে। পৈশাচিক আনন্দ পাইছি''। যেন ডাক্তারদের কাজ হচ্ছে কাউকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া এবং সেটাই যেন স্বাভাবিক। ওই স্বামীর মতই চুরি করে আনা কাপটিকে স্ত্রীর কাছে বিজয়ী কাপ বলে জাহির করা। চুরির বিষটা মালুম অস্বীকার করা। আরে ভাই এ ধরনের আচার ব্যবহার ধারাবাহিক রাখলে আর কেউ সম্মান করে "ডাক্তারবাবু", "ডাক্তারসাব", "ডাক্তারসাহেব" বলে ডাকবে না।
৩.
জার্মান কবি গেটে বলেছেন, ‘মানুষের চরিত্র গঠিত হয় কর্মের ভিতর, আর মস্তিস্ক গঠিত হয় অবসরের ভিতর। অর্থাৎ পেশি সবল করতে হলে মানুষের পক্ষে ছোটাছুটি করা দরকার,-কিন্তু মস্তিস্ক সবল করতে হলে মাথা ঠিক রাখা দরকার, স্থির থাকা দরকার।’ সাংবাদিক আর চিকিৎসক। দুটি পেশায় মস্তিস্কের ব্যবহার অতিব জরুরি। এ দুই পেশার মানুষকে আর যাই হোক হাতাহাতি মানায় না। তবে সাংবাদিক ও ডাক্তার দুটি পেশার মানুষই খারাপ এটা বলা যাবে না। ভালো খারাপ এই প্রকৃতির সৃষ্টি। মানুষের মধ্যে ভালো খারাপ আছে। সে হিসেবে সব পেশার মানুষদের মধ্যেই ভালো এবং খারাপ দুটোই আছে। নিজের স্বার্থের উপর যখন আঘাত পড়ে তখনই বুঝা যায় মানুষটা ভালো নাকি খারাপ। আমাদের নিউট্রল হয়ে চিন্তা করতে হবে। আরেকজনের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দেয়া ঠিক না। ডাক্তারদের ছাড়া যেমন আমাদের চলবে না ঠিক তেমনি সাংবাদিকদের ছাড়াও আমাদের চলবে না। তাহলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। আমি কাউকে দোষ দিব না বরং চাইবো এর সুষ্ঠ তদন্ত হোক এবং অন্যায়কারীর বিচার হোক!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১০