somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবুবুল আজাদ
কেমন জানি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী,ভালবাসি বই পড়তে,তার চেয়েও বেশি ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে,আর কবিতা সে তো টানে আমায় অদৃশ্য সূতোয়।ঘুরেছি পৃথিবীর বহু দেশ, তবুও মন ভরেনি, আবার ও বের হব কোন একদিন পৃথিবীর পথে প্রান্তরে, আর হব আমার লেখা লেখির ফেরিওয়ালা।

আমার বিমান যাত্রার গল্পঃ কলকাতা টু কলম্বো-১

২০ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লংকান এয়ার হোস্টেস এর আগে কখনো দেখিনি, যেহেতু এটাই আমার প্রথম কোন শ্রীলংকান প্লেনে ভ্রমণ, তাই তাহাদের সাথে এটাই আমার প্রথম সাক্ষাত। বেশ মায়াময় চেহারা এদের। নমস্কার করে স্বাগত জানাল, নীল শাড়ি পরিহিতা সবাই, উপরের দিকে চিকন করে কুচি দেয়া শাড়ি, মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই এমন নিচু করে শাড়ি পরা যাতে পেট দেখা যায়, তবে তা মেদ বহুল হোক বা স্লিম তাতে তেমন কোন ভ্রূক্ষেপ নেই তাদের। শ্যাম বর্ণের মেয়েগুলো অনেকটা আমাদের দেশের মতই গড়ন। তবে এরা ভালই লম্বা চওড়া, এদের নিয়ে আপাতত আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। আগামী তিন ঘণ্টা আকাশে কেমনে উড়ে যাব সেটাই আমার ভাবনার একান্ত বিষয়।

বিমান যাত্রা কখনোই খুব একটা ভাল লাগার অনুভূতি দেয় না। তারপরেও কেমন জানি একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করে। এয়ারপোর্ট যাবার চার পাঁচ ঘণ্টা আগে থেকেই আমার গলা শুকিয়ে যায়, একটু পর পর পানি খাই। পায়চারি করি। তারপরও আমার ইতস্তত ভাব কমে না। অকারনেই ঘামতে থাকি। অযথাই এক হাহাকারের কাঁথা বালিশে জড়িয়ে যাই।
টিকেট করার সময় আমার বেশ ভাল লাগে, এই ভাল লাগা অন্যরকম। তখন কেবল এইটাই ভাবি মাত্রতো কয়েক ঘণ্টা পট করে চলে যাব কিছু বোঝার আগেই। কিন্তু আমার এই পট করে চলে যাবার ব্যাপারটা যাত্রার দিন বেশ ঝট করেই আতঙ্কে বদলে যায়। আমার কেবল মনে হতে থাকে ইশ না গেলে কি হত, প্লেনের টিকেট টা না কাটলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত।
অগত্যা আমাকে যেতেই হবে। প্লেন সম্পর্কে আমার বিরাট গবেষণা করা আছে আগে থেকেই। কোন প্লেন কেমন, ভিন্ন ভিন্ন ক্লাসে সিট কেমন। কি সুবিধা ইত্যকার যাবতীয় বিষয় আমি সুযোগ পেলেই অনলাইনে বসে বসে দেখি। অনেকটা নেশার মত। যে এয়ারপোর্টে যাব সেটাও দেখি ইউটিউবে। কোন ধরনের এয়ারক্রাফট সেটা না জেনে আমি কখনোই টিকেট করিনা।



এবারের যাত্রা কলকাতা থেকে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো, মিহিন লংকা’র একটি ফ্লাইট এয়ারক্রাফট এয়ারবাস এ ৩১৯, স্বল্প যাত্রার ছোট প্লেন। এসব প্লেনে সুযোগ সুবিধা একটু কম থাকে, যেমন সিটের সামনে কোন মনিটর থাকেনা, সিট গুলো একটু সরু হয়, খাবার ও অনেকটা না দিলেই নয় এমন। ঠাণ্ডা স্যান্ডউইচ কামড় দিলে মুখ হিম হয়ে যায়, তবে নেহাত মন্দ না। খাবারের স্বাদ বুঝতে হলে এক কামড় পেটের মধ্যে চলে যাবার পর ধীরে ধীরে স্বাদের উদয় হয়। তখন বোঝা যায় কেমন টেস্ট।
মিহিন লংকায় এটাই আমার প্রথম যাত্রা, এর আগে এই প্লেনের অভিজ্ঞতা বলতে আমার বন্ধু লিমানের কাছ থেকে শোনা। ও গিয়েছিল কলম্বো, তার অনুভূতি বেশ ভীতিকর যা আগে থেকেই আমাকে মোটামুটি কাহিল করে রেখেছে। গেট থেকে কল আসল বোর্ডিং এর জন্য, এয়ারপোর্টের এসির মধ্যে বসে থেকেও আমি কেমন যেন ঘামছি। অগত্যা এখন তো বিমানে উঠাই লাগবে।



ফ্লাইট ১০ টা ৫৫ তে, টারমাক থেকে প্লেনটা রানওয়েতে নিয়ে আসা হল, উইংস্প্যান গুলো হালকা দুলছে, এ দৃশ্য দেখতে ভালই লাগে, তিন ঘণ্টার ফ্লাইট। প্লেন যাবে ইন্ডিয়ার বঙ্গোপসাগর উপকুল ঘেসে, রুট ম্যাপ তাই বলছে। আমার সিট জানালার পাশে। এক সময় জানালার পাশে বসা নিয়ে অনেক উৎসাহ কাজ করত এখন পারতপক্ষে এড়িয়ে যাই। ধীরে ধীরে প্লেন টা এগোতে শুরু করল। টেকঅফ রানওয়ের দিকে।
আমার ঠিক পাশের যাত্রী অনেকটা দেখতে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের মত, উনাকে মোটামুটি তার আপন ভাই বলে চালিয়ে দেয়া যাবে অনায়াসে। ভদ্রলোক বেশ পরিপাটি সাফারি পরে এসেছেন। উনি অনবরত তার ফোন ব্যবহার করে যাচ্ছেন বিপত্তি টা বাধল যখন এয়ার হোস্টেস তাকে এসে বলল এটা অফ করার জন্য। কেন তাকে অনেক নরম ভাবে প্লিজ বলে রিকুয়েস্ট করা হলনা এইটাই তার ইগোতে বেশ জোরেসোরে আঘাত করল, আঘাত এমনই জ্বালাময়ী যে উনাকে ঠাণ্ডা করা যাচ্ছেনা, যাই হোক বেশ কিছু সময় পরে উনি ঠাণ্ডা হলেন। কিছু মানুষ থাকে যারা হঠাত করে জাতে উঠে যায়, কিন্তু স্বভাব তো বদলায় না। এরা সব জায়গায় আগাছার মতই ব্যবহার করে। উনাকেও আমার তাই মনে হল। প্রথমে যতটা ভদ্র মনে হচ্ছিল এখন ঠিক ততটাই ক্ষ্যাত মনে হচ্ছে।



পাইলট উইংস্প্যান এর ইনবোর্ড আউট বোর্ড ফ্ল্যাপ আপ ডাউন চেক করে আস্তে আস্তে স্পিড বাড়াতে লাগলেন। এখনতো আমার হৃৎপিণ্ড উপর থেকে তলপেটে আসা যাওয়া শুরু করে দিচ্ছে। স্পিড এখন সর্বোচ্চ যাস্ট টেক অফ, আমার নিঃশ্বাস চেপে গিয়েছে সিট শক্ত করে ধরে বসে আছি, অনেকের কাছে এটা বেশ রোমাঞ্চকর, আর আমার কাছে উফ কেমন যে নিজেও জানিনা। কান যথারীতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে প্লেন উপরে উঠছে। পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যে সমান্তরাল অবস্থায় পৌঁছে গেছে। এখন কিছুটা স্বস্থি। তারপরও ভেতরে ভেতরে দোয়া কালাম পরছি। মুখে স্বাভাবিক ভাব ভঙ্গি থাকলেও ভেতর তা মোটেও স্বাভাবিক না। প্লেন মসৃণ ভাবেই উড়ে যাচ্ছে। মাঝখানে কেবল নামার আধাঘণ্টা আগে কিছুটা এয়ার বাম্পিং হল, কিছুটা স্লো ড্রপ, এইটাই আমার হার্ট এট্যাক করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা, কোন রকমে হার্ট রক্ষা পেল। আমার মনে হয় ত্রিরিশ সেকেন্ডের বেশি এমন হলে আমি নাই। প্লেন ধীরে ধীরে নিচে নামছে, এই সময়টা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর সময়, আহা মাটি, এই মাটি যে আমার কত প্রিয় তা আমি প্রতিটা ল্যান্ডিং এর আগে টের পাই।
প্লেন তিন হাজার ফিট- নিচে সাগর দেখা যাচ্ছে আর হাজার হাজার গাছ, এত সুন্দর দৃশ্য আমি এর আগে কোন ল্যান্ডিং এর সময় দেখিনি। শ্রীলংকার এয়ারপোর্ট সাগরের কোল ঘেষেই। অবাক করা ছবির মত সুন্দর। প্লেনটাকে এখন সী-প্লেন বলে মনে হচ্ছে। এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে রানওয়ে স্পর্শ করল প্লেনের চাকা।

যাইহোক শ্রীলংকার বাকি গল্পটা আগামী পর্বে।
১ম ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ১১:৪০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×