somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবুবুল আজাদ
কেমন জানি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী,ভালবাসি বই পড়তে,তার চেয়েও বেশি ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে,আর কবিতা সে তো টানে আমায় অদৃশ্য সূতোয়।ঘুরেছি পৃথিবীর বহু দেশ, তবুও মন ভরেনি, আবার ও বের হব কোন একদিন পৃথিবীর পথে প্রান্তরে, আর হব আমার লেখা লেখির ফেরিওয়ালা।

দিন শেষে বেঁচে থাকে স্বার্থহীন ভালবাসা

২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রেলষ্টেশন আসলেই আমার ডিম মামলেট আর পরোটা খেতে ইচ্ছে করে। এটা হোক ঢাকার কমলাপুর বা কলকাতা দিল্লী বা আমাদের শায়েস্তাগঞ্জ এ ইচ্ছা আমার কখনোই দমে না। অদম্য ইচ্ছে ষ্টেশনে এলেই জেগে উঠে, মনে হয় জীবনেও খাইনি এমন একটা ভাব।
মোবাইলে সময় দেখি অযথাই, জানি ট্রেনের অনেক দেরি আছে এখনো, তবুও ঘড়ি দেখতে ভাল লাগে। সহজাত অভ্যাস। এদিকে পেটের ভেতর মোচড় দেয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, নাহ আর মনে হয় বসে থেকে সময় পার করা যাবে না।

আজ রেল ষ্টেশন বেশ নিরিবিলি, সচরাচর এমন হয়না, সব সময় সবার মাঝে কেমন জানি একটা অকারণ ব্যাস্ততা থাকে, চানাচুর ওয়ালা ঝুনঝুনি বাজিয়েই যাচ্ছে, আলো আছে তারপরেও একটা কুপি বাতি জ্বলছে। দেখতে ভালই লাগে।
রাতের ট্রেন এখনো অনেক দেরি।
আমার তেমন কোন তাড়াহুড়ো নেই, ব্যাগ টা পাশে রেখে হেলান দিয়ে বসে আছি, আমি বাড়ি যাচ্ছি কোন প্ল্যান ছিল না যাবার। হঠাত মনে হল যাই অমনি রওনা। এখন আশপাশের মানুষের কর্মকাণ্ড দেখে সময় পার করতে হবে।

গৃহহীন কিছু মানুষের ঘুমের আয়োজন চলছে এদিক সেদিক, আমি অবাক তাকিয়ে দেখি, কতগুলো সারের বস্তা আর চট দিয়ে মুড়িয়ে মোটামুটি একটা বালিশ বানানো হয়েছে। মানুষ দুজন, বয়স আর কত হবে আন্দাজ করলাম খুব বেশি হলে ১২/১৪ বছর হবে। বালিশ তৈরি, বিছানা সেতো ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, কিছু খবরের কাগজ, আমি ভাবছি দুজন কিভাবে একটা বালিশে ঘুমাবে, কিছুটা অবাক হলাম, দেখি দু জন দুদিকে পা দিয়ে শুয়ে পড়ল, কি সরল একটা সমাধান।
একটু পরেই কিঞ্চিৎ নাক ডাকার শব্দ, বোঝাই যাচ্ছে নির্ভাবনার ঘুম। আমার চোখে ঘুম নেই, এ শহরে হাজারো মানুষের চোখে ঘুম নেই, অথচ কত আরামের বিছানা বালিশ আছে।
মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে বসে খেতে মন চায় না, তাই দুটা পরটা আর দুটা ডিম গরম গরম নিয়ে বেশ আয়েশে আগের জায়গায় ফিরে এলাম, ঘ্রাণ টা দারুণ লাগে, এত গরম যে মুখে দেয়া যাচ্ছে না তবুও একটু একটু ফু দিচ্ছি আমার ডিম পরোটা রোল এ।
বড় কামড় দেয়া যাচ্ছেনা,
তারপর ও হা টা মোটামুটি হাঙ্গর টাইপ হয়ে যাচ্ছে।

পাশের প্ল্যাটফর্মে আবছা আলো, কথা শুনে মনে হল মা আর ছেলে,তাদের কথা কিছুটা শোনা যাচ্ছেঃ
মাগো খাইছো, নারে বাবা দুফুরে রুডি খাইছি ডাইল দিয়া, অহন তো পানি দিয়া খাওন লাগবো।
রুডি ডা শক্ত লাগে।
ছেলেটার মুখে কথা নেই, একটু পরে মাগো আইজকা তো যে টেহা পাইছি হেইডা ধার শোধ দিছি, সহালে ভাত আনুম, চিন্তা কইরো না। মন ভোলানো এ শান্তনায় ছেলেটার মন মানে না সারারাত মা না খেয়ে থাকবে।
আবার উঠে যায়, আশে পাশের খাবারের দোকান গুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে ততক্ষণে, কিছু চায়ের স্টল খোলা আছে। অসহায় সে মুখের ভাষা অনেক করুণ, আমি চেয়ে থাকি, খালি হাতে ছেলেটা ফিরে আসছে বেশ ধীর পায়ে, মায়ের জন্য ভালবাসা আর নিজের অপারগায় সে অনেক ক্লান্ত।

একটু ভাতের আশা, একটা নরম রুটির আশা, কতটুকু বেশি চাওয়া, আমি অসহায় হয়ে বসে আছি, আমার খাওয়া থেমে গেছে, পাশ দিয়ে যাবার সময় তার বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার শব্দটা আমার নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
ক্ষুধার্ত মা আধো ঘুমে, রাজ্যের হতাশা নিয়ে ছেলেটা বসে থাকে মায়ের পাশে।
কারো মুখে কথা নেই, আমার আর শক্তি নেই এর পর চুপ করে এসব দেখার, উঠে গেলাম রেল লাইনটা পার হয়ে, কোন কথা না বলে ছেলেটার হাতে দুটা পরোটাই ধরিয়ে দিলাম, সে মায়ের ক্ষুধার্ত মুখ দেখার সাহস আমার হয়নি।
অবাক ছেলেটার চেহারা্‌ পেছনে ফেলে আমি চলে আসি, চুপ করে হেলান দিয়ে বসে থাকি, কোন কিছু ভাবতে চাইনা, আমার চোখের কোণে একটু অশ্রু, চাইনা এ পৃথিবী দেখুক।
কেন জানি আবারো পেছনে তাকাই, আবছা আলোয় দেখা যায় দু হাত তুলে সে মায়ের দোয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:০২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×