চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে আমার প্রথম প্রেম ভেঙ্গে গিয়েছিলো কারণ হিসেবে 'হাতের লেখা' দায়ী,
.
তার ভাষ্যমতে বাপের জন্মেও এতো খারাপ হাতের লেখা দেখেনি!
.
অবশ্য দ্বিতীয় বার আর সেই ভুল হয়নি! স্বভাবতই মেয়েদের হাতের লেখা সুন্দর হয় বলে এক বান্ধবীকে দিয়ে প্রেমপত্র লিখিয়ে তাকে দিলাম! মেয়ে বললো, আমি লেখকের হাতের লেখার প্রেমে পড়ে গেছি! মনে মনে ভাবলাম, 'মেয়ে তো রংধনু!'
.
সেদিন কোন রকমে পালিয়ে আসলাম!
.
আমার এক বন্ধুর হাতের লেখা আমার চেয়ে খারাপ ছিলো! তাকে দেখলে আমার মনে হতো না শেষ খারাপ বলে কিছু নেই! খারাপতর কিংবা খারাপতম নামক ব্যাপারও আছে!
.
সেই বন্ধু যখন সমাজ বিজ্ঞান ঝুপড়িতে এক টোকাইকে দিয়ে প্রেম পত্র পাঠালো তখন মেয়ে চিঠির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, প্রেরককে আসতে বলো! টোকাই দৌড়ে গিয়ে বললো, 'ভাই, ম্যাডাম আপনাকে ডাকে' তা শুনে সে মেয়ের সামনে গিয়ে খুশিতে কাচুমুচু হয়ে গদগদ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়ে বললো, 'কি লিখছো পড়তে পারিনি তুমি বরং রিডিং পড়ে শুনাও'
.
হাতে লেখা খারাপ বলে কত রোমান্টিক কবি কখনো পত্র লিখেনি!
.
এখানে 'সুন্দর করে গুড্ গুড্ অক্ষরে প্রেম পত্র' লেখা হয় তখন এমন বিজ্ঞাপন চোখে পড়তো না কারণ টাইপ মেশিন তেমন ছিলো!
.
পুরো স্কুলে একটি টাইপ রাইটার ছিলো! নিজের হাতের লেখা সম্বন্ধে স্কুল থেকে সম্যক ধারণা থাকায় এক সময় মাই এইম ইন লাইফ ছিলো টাইপ রাইটার হবো!
.
যদিও এখন সবকিছু টাইপিং করে লিখি,
.
এখনো মনে আছে টেস্টের সময় লাল কালিতে পরীক্ষার খাতায় স্যার কি যেনো লিখে দিয়েছিলো! পরের দিন স্যারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'স্যার কি লিখেছেন কিছু বুঝতেছি না' তখন স্যার বললো লিখেছি 'ভালো নম্বর পেতে হলে হাতের লেখা আরো সুন্দর করতে হবে'
.
স্যারদের হাতের লেখা বুঝতে না পারলে সেটা হয়ে যেতো 'টানা লেখা'
.
ছোটকালে স্কুলে হাতের লেখা খারাপ বলে 'আমাদের দেশ বাংলাদেশ' এমন একটি বাক্য দশ বার লিখতে দিতো কিন্তু দুই তিন বার লেখার পর যখন স্যার বলতো দশবার লেখোনি কেনো তখন একজন বলেছিলো, শুধু হাতের লেখা না আমি অংকেও খারাপ!
.
শত চেষ্টা করেও হাতের লেখা সুন্দর করতে না পারা ডিসলেক্সিয়ার একটি লক্ষণ,
.
পড়ার সময় অক্ষর উল্টা পাল্টা দেখা, শত চেষ্টা করেও ক্লাশ লেকচার না বুঝা কিন্তু জানার প্রতি পচন্ড আগ্রহ কিংবা যে সব শিশুরা বেশী সৃজনশীল হয় তাদের মধ্যে ডিসলেক্সিয়ার প্রভাব দেখা যায়!
.
পুরুষের কাছে নারী জাতি হাতের লেখার মতো শত চেষ্টা করেও পাল্টাতে পারবেন না বরং তাকে না পাল্টানো চেষ্টা করা বুদ্ধিমানের কাজ তার চেয়ে বরং ভালবাসা কিংবা সৃজনশীলতা দিয়ে জয় করার চেষ্টা করা দরকার!
.
'তারে জামিন পার' মুভিটি দেখলে ডিসলেক্সিয়া সম্বন্ধে ধারণা পাবেন! জগতের বিখ্যাত কিংবা ইউনিক আইডিয়া কেনো ক্লাশের শেষ বেঞ্চে বসা পড়া না পারা ছেলেটির মাথা থেকে আসে বুঝতে পারছেন?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৮