আমরা এমন এক প্রজন্ম যারা বিটিভি দেখে বড় হয়েছি,
.
তখনো দেশে বাতাবী লেবুর বাম্পার ফলন হতো!
.
একসময় আমার জীবনের লক্ষ্য ছিলো বিটিভির সংবাদ পাঠক হবো,
.
মুগ্ধ হয়ে শুনতাম রাত আটটার বাংলা সংবাদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে ইংরেজীতে ফেইল করার পর অবশ্য স্যার রাত দশটার ইংরেজী সংবাদ বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলো!
.
পৃথিবী যেদিকে যাক খবর মিস্ হতো না মাইরি! ক্রিকেটে টান টান উত্তেজনা এক্ষুণি নির্ধারণ হয়ে যাবে কে জিতবে কে হারবে চলে আসলো খবর!
.
তিন ঘন্টার সিনেমার ঠিক শেষ মুহূর্ত ভিলেনের আস্তানায় নায়ক পৌঁছে গেছে সাথে সাথে আমরাও হাত ভাঁজ করে মাইর দিবো বলে প্রস্তুতি নিয়েছি এমন সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্র চলে আসতো!
.
মাঝে মাঝে দেশ নেত্রীর ভাষণ দিতো আমরা সব কথাগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করে শুনতাম!
.
ভাবতাম ওরা কিভাবে পুরো সংবাদ মুখস্ত করে আমাদের শুনাচ্ছে! হয়তো ইহাকে বলে খাঁটি দেশপ্রেম!
.
সত্যি আমরা এমন এক প্রজন্ম ছিলাম! দেশে কোন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে বিটিভি অন করে বসে থাকতাম!
.
তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে সংবাদ 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' আর আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় থাকলে 'জয় বাংলা' দিয়ে শেষ হতো,
.
রমজান এলে পাঠিকার মাথায় ঘোমটা উঠতো আর ঈদ এলে নামতো!
.
বিজ্ঞাপন বিরতি ছিলো মাশাল্লাহ! খেয়ে দেয়ে বাথরুম সেরে আসার পরও দেখতাম আরো কয়েক মিনিট বিজ্ঞাপন চলতো
.
দেশে ছিলো সুখ আর সুখ! ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের বাম্পার প্রজনন দেখে কত্তো ভালো লাগতো!
.
প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সাদা পায়রা উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে ভাবতাম কখনো পায়রাগুলোর ডানায় 'এতো সুন্দর করে দেশ চালানোর জন্য অভিনন্দন' লিখে যদি খোলা চিঠি পাঠাতে পারতাম কত্তো ভালো লাগতো,
.
জীবন তখন আসলে সুন্দর ছিলো
.
প্রিয় মানুষদের নাকি বেশী জানতে নেই! জানলে তা হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়!
.
বিটিভির পর স্যাটেলাইট চ্যানেল আসলো! অশান্তি বাড়তে লাগলো! সাদাকে সাদা কালোকে কালো হিসেবে চিনতে লাগলাম!
.
তারপর ইন্টারনেট এলো! ফেসবুক ঘিরে শুরু হলো উন্মাদনা! শুরু হলো গুজব!
.
বাম্পার ফলন হওয়া বাতাবী লেবুগুলোকে আর মার্কেটে খুঁজে পাওয়া গেলো না! এতো বেশী খুঁজতে যাওয়া কি উচিত হয়েছে!
.
ইশ! আবারো একটু শান্তির জন্য যদি বিটিভিতে মুখ লুকিয়ে থাকতে পারতাম! সুখের পায়রা! সুখের টিভি! পরিস্থিতি স্বাভাবিক!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২০