somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরস্কার

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছরের প্রথম দিনটিতে তরুণ সাংবাদিকের জন্য ‘দ্য এনকারেজিয়াস পারসনেজ অব ইয়ার’ বা ‘বছর সেরা উদ্যমী মানুষ’ নামের একটা পুরস্কারের প্রবর্তন করা হলো। দাদু বললেন, ইনা আর দিনা, দেখব তোমাদের মধ্যে কে এটা পাও। দাদু হলেন পক্ককেশ বৃদ্ধ, অবসর নেয়া উচ্চ আদালতের এক বিচারক। ইনা আর দিনা তুতো বোন, একই বয়সের। তাছাড়া ওরা বেড়ে উঠেছে এই দীক্ষা নিয়ে যে :

লোভ কিংবা নীচতা নয়,
চাই মনুষ্যত্বের জয়।

বইয়ে অনেক কিছু লেখা থাকে। মুখের কথায়ও অনেক কিছু ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাস্তবে যখন তার প্রয়োগের পালা আসে তখন দেখা যায় যে বইয়ে কথাটা লেখা আছে ঠিকই কিন্তু বাস্তব জীবনে কিভাবে তা ব্যবহার করা যাবে তার উল্লেখ নেই। হয়তো সুখের কথা যারা আমাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন কেউ কেউ তাদের আজও বেঁচে আছেন। যখন তাদের বলা হয় যে লোভ না করে পারছি না তো দাদু! একজনের একটা পা ভেঙে দিতে পারলে আমার দুটো বাড়তি হাত গজায় Ñ তো কী করব? দাদুরা বা বাবারা বা বন্ধুরা বলে থাকেন, যা ভালো বোঝো করো। আসলে ওসব দীক্ষা-টিক্ষা সব বাজে কথা, আসল কথা হলো, যা ভালো বোঝো করো।

যখন ইনা আর দিনাকে লোভের দিকে পুরস্কারের আধার দিয়ে আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হলো, তখন তাদের দুজনেই মাছের মতো সবেগে ছুটে এল।ওদের দুজনেই নতুন সাংবাদিক। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’য় পাস করেছে গেল বছর। এখন দুজন দুটি ভিন্ন পত্রিকায় কাজ করে। শরীরে-মনে এখন ওদের জ্যৈষ্ঠের ঝোড়ো বাতাসের উদ্দাম, প্রাণদীপ্ত হীরকের মতো স্বপ্ন : হতেই হবে বছর সেরা উদ্যমী মানুষ।


বছরের শুরু থেকে ওরা নিজেদেরকে মনোযোগের নদীতে ডুবিয়ে দিলো। সেই নদীর তলদেশে হাজারো ভুবন, রকমারি রঙে-ঢঙে সাজানো। সেই ভুবনের একনিষ্ঠ যাত্রী হয়ে তারা এমন সব আলোকচিত্র তুলতে লাগল, এমন চমৎকার রিপোর্ট করতে থাকল যে দাদু তার অবসর দশা থেকে লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, আহা, যদি সে বয়স থাকত! তোরা দেখছি সত্যিই সেই পুরস্কারটার ফাঁস গলায় পরে ছাড়বি!

Ñফাঁস কি বলছ দাদু?
ওই আর কী, পুরস্কারের ফাঁসে আটকে গেলে তো কর্মজীবনের ফাঁসি হয়ে গেল। সবসময় নিজেকে বড় বলে মনে হবে। আর ওদিকে আসল কাজের হবে ‘ঘটি ডোবে না নামে তাল পুকুর’।
Ñকিন্তু দাদু পুরস্কার তো আর দুজন পাবে না। তোমার মনে হয় কে পাবে? ওরা দুজন দাদুর চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
দাদু শহরের দেবদূত কাকগুলোর স্বর্গীয় কা-কা শুনে বিরক্ত হতে হতে বলেন, আরে কী জ্বালা! তার আমি কি বলব? কোথাকার কে না কে পাবে তার ঠিক আছে!
মেয়ে দুটো হতাশ হলো। একজন বলল, দেখে নিও আমরাই একজন পাব।
Ñহ্যাঁ হ্যাঁ, তোরাই পাবি। তোরা পুরস্কার পা আর ভাতে দিয়ে খাÑ যাই দেখি আমার গোসলের পানি গরম হলো কিনা...

দাদুর কথাকে তারা পাত্তা দিলো না। তারা তাদের কর্মের জাল এমন নিপুণভাবে বুনতে ও বিছাতে লাগল যে, তাতে পুরস্কার ধরা পড়ার আগে পত্রিকার সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক আর আরও অনেকের শুভদৃষ্টি ধরা পড়ল। সবাই মোটামুটিভাবে ভাবতে লাগলেন : হয় ইনা না হয় দিনাÑ পুরস্কার ওরা নিয়েই ছাড়বে।


পুরস্কারের যোগ্যতায় যখন তাদের দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে তখন একদিন তারা শহরের একটা দরিদ্র বস্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। ওরা সেই জায়গাটা অতিক্রম করতে করতে সেখানে তীব্র অগ্নিকুণ্ড দেখতে পেল। ওদের সুচারু আঙুল, অভিজ্ঞ চোখ এবং প্রশিক্ষিত চেতনা একসঙ্গে কাজ করল। ওরা ছুটতে ছুটতে দুই দিকে চলে গেল এবং চলতি পথে অজস্র ছবি তুলল। ছবির বন্যা ক্যামেরার রিলের বাঁধে বন্দি করে একসময় ওরা সেই বস্তির কেন্দ্রভাগে গিয়ে দেখল যে একটা জ্বলন্ত ঘরের চাল উড়ে গেছে। তার চার দেয়ালে আগুন জ্বলছে। দিনা দৌড় দিয়ে ছুটল সেই ঘরে আটকে পড়া একমাত্র বুড়োকে উদ্ধার করতে। ইনা অন্যদিক থেকে ছবি তুলতে তুলতে আসছে। তার ছবিতে তার স্বপ্নে ব্যাঘাত হতে সে এক ছুটে অগ্নিদগ্ধ ঘরটার কাছে গিয়ে দিনার চুল ধরে ঘুরানি দিলো। দিনা ছিটকে পড়ল। তারপর দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হতে এক পর্যায়ে ইনা দিনার পিছনে লাথি দিয়ে তাকে সে বাইরে বের করে আনল। দিনা আর ঘরের ভিতর ঢুকতে পারল না।। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা নিমগাছ। সে সেই নিমগাছে দিনাকে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে তার মুখে কয়েকটা ঘুষি চালাল। বুড়োর চারদিকে ঘরের দেয়াল আগুন হয়ে খুলে পড়েছে নিচে। বুড়ো নিজে হয়ে উঠেছে দৃশ্যময় অগ্নিকুণ্ড। ইনা মন ভরে সেই ছবি তুলল।

তার ছবি তুলতে তুলতেই বৃদ্ধ অগ্নিকুণ্ড থেকে ছাইয়ে পরিণত হলো। দিনা চিৎকার করল, শুধু পুরস্কারের জন্যে?

আজ সকালে পত্রিকায় এই অগ্নিকুণ্ডের খবর ফলাও করে প্রকাশিত হলো। ছাপা হলো : শতাধিক আহত, একজন জীবন্ত দগ্ধ। সব পত্রিকার কাটতি তাতে বাড়ল বা কমল না কিন্তু সেই অসাধারণ আর মর্মস্পশী আলোকচিত্রের কল্যাণে ইনার পত্রিকার কাটতি অনেক বেড়ে গেল। রাতারাতি সে প্রমোশন পেয়ে উন্নতির পথে এগিয়ে গেল ...


এ ঘটনার দু সপ্তাহ পর বছরের সেরা পুরস্কার ‘দ্য এনকারেজিয়াস পারসনেজ অব ইয়ার’-এর ঘোষণা করা হয়। তাতে বলা হয় যে, ইনা রাশিদী প্রথম ‘দ্য এনকারেজিয়াস পারসনেজ’।


আজ সন্ধ্যায় সমস্ত শিল্পকলা ভবন অপরূপ সাজে সজ্জিত। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনেই উপস্থিত। বাড়ি থেকে বের হবার সময় মা দিনাকে বললেন, আমি বুঝতে পারছি তোর ঈর্ষা হচ্ছে। কিন্তু ও তোর খালাতো বোন। চল, আমরা সবাই যাই পুরস্কার বিতরণীতে। দিনা মাকে বলল যে সে যাবে না। মা তাই একাই তার বোনের মেয়ের কৃতিত্বে যোগ দিতে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন।

অনুষ্ঠানটা সরকারি টেলিভিশন থেকে সরাসরি স¤প্রচারিত হচ্ছে। দিনা তাতে রাষ্ট্রের ধ্বজাধারীদের চকচকে মুখ দেখতে পেল। দেখল যে ইনা তার বিজয়দীপ্ত ভঙ্গিমায় অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে বসে। একপাশে তার মা ও বাবা, আরেক পাশে দাদু এবং খালা।

অনুষ্ঠান ক্রমে এগিয়ে চলল। চলতে চলতে সে তার সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াল। ঘোষণা করা হলো : ‘দ্য এনকারেজিয়াস পারসনেজ অব ইয়ার’ ইনা রাশিদী Ñ চারদিকে অজস্র করতালি বেজে উঠলÑ আপনি আসুন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে থেকে এই মহাসম্মান গ্রহণ করুন। বিপুল আড়ম্বরের ভিতর চারদিকে এখন কোমল ও মোহময় আলো। কিন্তু এরই ভিতর দিনা জ্বলন্ত এক বৃদ্ধকে ছাই হয়ে যেতে দেখল। শুনতে পেল : আমারে বাচায়েন! আমারে বাচায়েন!

বৃদ্ধের কাতরোক্তি যখন দিনার মর্মের গভীরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলছেন, ইনা রাশিদী আমাদের গর্ব। আমাদের প্রত্যেকের উচিত তার মতো কর্মী হয়ে ওঠা। তিনি আমাদের আদর্শ, কালের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব!

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×