somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যখন আমাদের লেখা অনুচিত

২৫ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষাকতা বা গবেষণা যাদের পেশা তাদের জন্য লেখা এবং তা প্রকাশ করা একটা নিয়মিত ব্যাপার। পেশাগত সফলতার জন্য তাদের তা করতে হয়। লেখাটা কেমন, লেখার মান কোন উচ্চতার বেশিরভাগ সময় তা নিয়ে ভাবা হয় না। শিক্ষক বা গবেষকেরা এ বিষয়ে তেমন চিন্তিত এমনও মনে হয় না। অনেকের কাছে ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে পারাটাই মুখ্য। ফলে বর্তমান কালের সঞ্চয়ে রয়েছে অগনিত লিখিত বিষয়। অবশ্য এমন কিছু জার্নাল আছে যেগুলোর গুণগত মান সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত।

একই ভাবে সাহিত্য জগতও ভারী হয়ে উঠেছে অগণিত গুণহীন লেখার ভারে। এর মধ্যে গুণহীন লেখকের গুণহীন লেখা যেমন আছে তেমনি আছে গুণী লেখকের গুণহীন লেখা। গুণহীন লেখকের গুণহীন লেখা মহাকাল গ্রাস করে ফেলে। বিপত্তি বাঁধে গুণী লেখকের গুণহীন লেখা নিয়ে। তাদের গুণের কারনে তারা একটা আদর্শে পরিণত হন। তাদের গুণহীন লেখা যুগ যুগ ধরে অনেক মানুষের অনেক সময়, মনোযোগ ও অর্থ নষ্ট করে। এ কারনে গুণী লেখকের গুণহীন লেখা গুণহীন লেখকের গুণহীন লেখার থেকে বেশি ক্ষতিকর।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লেখকেরা নিজেদের লেখাকে কি বিচারকের দৃষ্টিতে দেখেন? অন্যভাবে বললে, প্রতিটি লেখা শুরুর সময় এবং তা শেষ করে লেখক কি নিজেকে এ প্রশ্ন করেন, কি কাজে আসবে এ লেখা? এ লেখার ভবিষ্যত কি? অথবা, আমরা কেনো লিখি? বা, কখন আমাদের লেখা অনুচিত? বাংলা ভাষার অত্যন্ত গুণী লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায় ’কেন লিখি’র উত্তরে বলেছেন যে পাঠককে তার অনুভূতি পাইয়ে দিতে তিনি লেখেন। অর্থাৎ, লেখার বিষয়ে তার নিজস্ব দর্শন রয়েছে। তার নিজের ভাষায়, ’জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেয়ার তাগিদে আমি লিখি।’ তাঁর মতে, ’তাকে উপলব্ধি করাই। আমার লেখাকে অশ্রয় করে সে কতকগুলি মানসিক অভিজ্ঞতা লাভ করে - আমি লিখে পাইয়ে না দিলে বেচারী যা কোনদিন পেতো না।’ [ ’কেন লিখি’ - মানিক বন্দোপাধ্যায়]

তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি মহত্তর লেখক। অর্থ উপার্জন বা নাম অর্জন তার লক্ষ্য নয়। এ কারনে বাঙলা ভাষাভাষী মানুষ তার কাছ পেয়েছেন অনন্য সাধারন অনেক লেখা।

মানিক বলেছেন তিনি কেন লেখেন। এখন আমরা যদি নিজেদের কাছে জানতে চাই, কেন সবার লেখা উচিত নয়? কখনই বা একজন লেখকেরও লেখা অনুচিত।

মাস্টার্সের থিসিস শেষ হলে আমার সুপারভাইজার বললেন, এটা পাবলিশ করেন। জার্নালে পাঠান। আমর মনে হলো, এ একটা যেন তেন কাজ। এ প্রকাশ করে কি হবে? এ লেখা কি মানুষের জ্ঞান ভা-ারে নতুন কিছু যোগ করবে? এর মাধ্যমে কি কারও কিছু উপকার হবে?

মন থেকে আমি সাড়া পেলাম না। আমার মতে, একটা লেখা প্রকাশিত হওয়া আর না-হওয়ার মধ্যে যদি কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে লেখাটা প্রকাশ না করাই ভালো। তা ছাড়া কোন একটা বিষয়ে যদি কেউ একজন আমার মতো বা আমার থেকে ভালো লিখে থাকেন তাহলে আমার লেখারই বা কি দরকার! ইংরেজি ১৯০৫ সালে সুইস পেটেন্ট অফিসের একজন কেরানী জার্মান ভাষায় ৩ টি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে এই প্রবন্ধ তিনটি বিশ্ববিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (Theory of Relativity) প্রতিষ্ঠিত করে। আর্বিভাব ঘটে এলবার্ট আইনস্টাইনের।

সন্দেহ নেই, এরকম লেখা প্রতি শতব্দীতে হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র প্রকাশিত হয়। তাই বলে অন্যরা কি লিখবেন না? সব গবেষণালব্ধ লেখনীকে আপেক্ষিকতার তত্ত্বেও মতো হতে হবে এমন নয়। কিন্তু প্রতিটি প্রকাশিত লেখাই যদি ন্যূনতম একটা মানের হয় তাহলে তা স্বার্থক প্রকাশ।

সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, সব কবিতাকে যে পারস্য কবি হাফিজ বা ওমর খৈয়ামের কবিতার মতো হবে এমন কোন কথা নেই। ঔপন্যাসিকেরা যে সব কাফকার মতো ’মেটামরফোসিস’ অথবা আলবিয়ের কামুর মতো ’দ্য প্লেগ’ প্রকাশ করবেন এমনও নয়। শিল্পের মানদ-ে যে কোন প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী অবশ্যই এমন কাজ করবেন যা আগের আর সবার থেকে আলাদা। যেমন ভ্যান গগ যে ছবি আঁকলেন তা চিত্রকলার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। শিল্পী সুলতান বা শাহাবুদ্দিনও তাদের চিত্রকর্মে এনেছেন নতুন মাত্রা। তাদের এসব কাজ শব্দ দিয়ে নির্মিত নয়, এসবের নির্মাণ ছবি দিয়ে। কিন্তু এসবও প্রকাশিত গদ্য বা কবিতার মতো।

সব লেখক কবি বা শিল্পী যে তাদের কাজে নিজস্ব মাত্রা যোগ করতে পারবেন তাও নয়। তবে তাদের হাত দিয়ে এক বা একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ লেখা উঠে আসতে পারে। যেমন, কুসুমকুমারী দাশ। তাঁর লেখা, ’আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’ আজও আমাদের মনের কথা বলে। অনেকের অবশ্যই জানা আছে যে তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনান্দ দাশের মা।

সৃজনশীলতা মানব মননের এক স্বতস্ফুর্ত বিকাশ। সৃজনশীল কাজ করার অধিকার তাই সব মানুষের রয়েছে। কোনভাবে একথা বলার অধিকার আমাদের নেই যে এই মানদ-ের না হলে লেখা বা শিল্পকর্ম বা অন্য ধরনের সৃজনশীল কাজ করা যাবে না। এছাড়া যথেষ্ট অনুশীলন না করে কিভাবে কেউ ভালো লেখক বা শিল্পী হতে পারেন? অনেক বছর ধরে হাজার হাজার শব্দ লিখে, নিজেকে বার বার সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করেই কেবল কারও পক্ষে ভালো লেখক হওয়া সম্ভব। ভালো লেখক বা স্বার্থক শিল্পী হওয়া তাই এক নিরন্তর সাধনা। যে কেউ এ সাধনায় ব্রতী হতে পারেন। তবে প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হওয়ার সুযোগ আছে। লেখা তৈরি আর তা প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখকের বিবেকই তাই চূড়ান্ত নির্দেশ দাতা। তাদের ওপর সব কালের বেশির ভাগ মানুষের গভীর আস্থা।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×