somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা বিজ্ঞানের ‘চমস্কীয়’ ধারা

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[১৯২৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নোয়াম এব্রাম চমস্কি জন্মান য্ক্তুরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে। তার বাবা উইলিয়াম ছিলেন ইউক্রেনের বাসিন্দা। পরে তিনি নাজিদের (Nazis) দ্বারা বিতাড়িত হন। মা এলাসি এসেছিলেন বেলারুশ (Belarus) থেকে। তিনি বড় হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রে । কথা বলেন তিনি নিউইয়র্কের আঞ্চলিক ইংরেজিতে। ধর্মীয় বিশ্বাসে ইহুদী এই পরিবারটির পারিবারিক ভাষা ছিল ইদ্দিশ (Yiddish)। চমস্কির মাতৃভাষা তাই ইদ্দিশ। অবশ্য চমস্কির ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, কেবল ইংরেজিতে আমি সঠিক ভাবে আমার মনের ভাব বলতে ও লিখতে পারি।

৮/৯ বছর বয়সে প্রতিটি শুক্রবারের রাতে তার জন্য নির্ধারিত ছিল হিব্রু সাহিত্য। হিব্রু সংস্কৃতি তিনি শেখেন পরিবারে। ১৯৪৫ থেকে দর্শন ও ভাষা বিজ্ঞান পড়তে শুরু করেন পেনসিলভিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Pensylvania)। ১৯৫৫ তে পি.এইচ.ডি করেন তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার সেই গবেষণা সন্দর্ভকে ১৯৫৭তে তিনি বিস্তৃত রূপ দেন সিনট্যাকটিক স্ট্রাকচারস (Syntactic Structures) নামের একটা বইতে। সম্ভত, ভাষা বিজ্ঞানের ওপর লেখা তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বই এটি।

অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে তিনি রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় জড়িয়ে পড়েন ভিয়েতনাম যুদ্ধের ওপর ১৯৬৭তে তাঁর লেখা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। অনেকে মনে করেন যে তিনি বামধারায় রাজৗনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী। তিনি অজস্র লেখা লিখেছেন গত তিন দশকের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে। মার্কিন সরকারের পররাষ্ট্র নীতির তিনি একজন তীব্র সমালোচক।

ভাষা বিজ্ঞানে তিনি শুরু করেছেন একেবারে নতুন একটা দিকের। তাঁর উদ্ভাবিত এই দিকটি সঞ্জননী ভাষা বা সঞ্জননী ব্যাকরণ (Generative Language/ Grammar) নামে পরিচিত। তাঁর মতে, ভাষা মানুষের একটা সহজাত (Innate) বৈশিষ্ট্য। সব শিশুই জন্মায় একধরণের বৈশ্বিক ভাষা-বোধ নিয়ে। পরিবর্তীতে কেবল নিজ নিজ ভাষার স্বভাবগুলো তারা চর্চার ফলে কার্যকর রাখেন আর বাকিগুলো ভুলে যান। তাঁর ভাষা বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে বাক্যতত্ত্বের যৌক্তিক কাঠামো (Logical Structure of Syntactic Theory, 1965) সঞ্জননী ব্যাকরণ তত্ত্ব (Theory of Generative Grammar, 1966) ভাষা জ্ঞান ইত্যাদি। বর্তমানে চমস্কি ম্যাসচুসেটস ইনস্টিটিউট অভ টেকনোলজি (M I T) এর একজন অধ্যাপক। তিনি সেখানে ভাষাতত্ত্ব, বাক্যরীতি, দর্শন, ভাষার দর্শন (Philosophy of Language) এব বিষয়ে পাঠদান করেন।

মার্কিন দেশের উল্লেখযোগ্য দৈনিক TIMES এর মতে তিনি বর্তমান কালের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তাকারী প্রতিভা যার বক্তব্য এই গ্রহের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং আকর্ষণ করে হাজারও মানব মেধার মনযোগ। অবশ্য ঘরে বাইরে তাঁরও রয়েছে সমালোচক। অনেক গবেষক মনে করেন যে চমস্কির তত্ত্বে ভুলের কোন অভাব নেই। কিন্তু, সবকিছুর পরও গণশ্রদ্ধা তিনি এত বেশি পান যে প্রতি ২৪ ঘন্টায় ৬ ঘন্টা তাকে কাটাতে হয় এই গ্রহের মানুষদের তড়িৎ বার্তা (electronic mail/e-mail) র জবাব দিতে।]

ভাষা বিজ্ঞানের ‘চমস্কীয় ধারা’
[`The Architecture of Language – 2000’ এর অংশ বিশেষ। অনুবাদ: আবু সিদ। ]

প্রশ্নঃ চমস্কীয় ধারার বিকাশ ও বৃদ্ধি ভাষা বিজ্ঞানকে জ্ঞানের একটা অমূল্য শাখা হিসাবে তুলে ধরেছে। একই সাথে এটা এতটা বিশেষ হয়ে উঠেছে যে ভাষা বিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষেরাই কেবল এটাকে বুঝে উঠতে পারেন। ভাষা বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত নন এমন মানুষেরা কিভাবে এটাকে বুঝতে পারেন? এটার বাজার দরই বা কেমন?

চমস্কিঃ এ ধরণের ব্যক্তিকীকরণ আমার একেবারে অপছন্দ। কোন কিছু সম্পর্কে কিছু ভাবার ক্ষেত্রে এটা একটা ভুল পদ্ধতি। যৌক্তিক চিন্তার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকীকরণের কোন সুযোগ নেই। কেননা এই ধরণের ক্ষেত্রে অনেক মানুষ একই সময়ে কাজ করেন। যাইহোক, এ বিষয়ে আমি এখানে থামতে চাই।

সবার আগে বলে নেয়া ভাল যে বিজ্ঞানের অনেক কিছুই অনেকের পক্ষে বোধগম্য। এ ধরণের প্রশ্ন আপনি রসায়ন শাস্ত্র নিয়েও করতে পারেন। এক্ষেত্রে রসায়নকে ভালোভাবে বুঝতে হলে যে কাউকে এই বিষয়ের প্রাথমিক জ্ঞান, মূল সূত্রাবলী, সেসবের ফলাফল জানতে হবে। ওই বিষয় সম্পর্কিত বিজ্ঞ জনদের চিন্তাভাবনাও আপনাকে জানতে হবে। কিন্তু রসায়নকে মোটামুটি জানাটা এত দুরুহ নয়। বিজ্ঞানের পরিচিত যে কোন ধারার জন্য কথাটা প্রযোজ্য। ব্যবহারিক বিজ্ঞানের যে কোন অনুসন্ধানের ফলাফল সাধারণের বোধগম্য করে তোলাটা খুবই নীতিগত এবং সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এখন কোয়ান্টাম পর্দাথ বিজ্ঞান সম্পর্কে যদি আমি সাধারণ ধারণা পেতে চাই তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানবার কোন প্রয়োজন নেই আমার। বিষয়টা সাধারণভাবে বলার জন্যে অনেক মানুষ এবং অনেক বই রয়েছে। আমার ধারণা ভাষা বিজ্ঞানের জন্যও এটা সমান সত্য।

আর বাজারদরের বিষয়ে বলব যে চাকরী পাওয়াটা আসলেই একটা সমস্যা। যখন আপনি গভীর ও জটিল কোন বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেছেন তখন কোথায় আপনার চাকরী? এটা গণিতের জন্য যেমন সত্য ভাষা বিজ্ঞানের জন্যও তেমন। বর্তমান সময়ে গণিতের সাথে সম্পৃক্ত একটা চাকরীর জন্য খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই কয়েক হাজার দরখাস্ত পড়ে। এটা অবশ্যই একটা সমস্যা। তবে ভাষা বিজ্ঞানের জন্য সমস্যাটা এতখানি নয়। যে কোন ক্ষেত্রেই এটা একটা সাধারণ সমস্যা। এর মূল প্রোথিত আমাদের সামাজিককতার ভিতর। তবে আরেকটা প্রশ্ন এখানে আসতে পারে যে, বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের দৃষ্টি কেমন হবে? এর যেসব উত্তর আমাদের জানা আছে আমার মতে সেগুলো মনগড়া ও অযৌক্তিক। আজকের দিনে এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে, সবকিছুই ক্রমাগত হয়ে উঠেছে অর্থ ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক, এবং সামাজিক যেকোন সিদ্ধান্তই বিত্তবান ক্ষমতাবানরা নিয়ে থাকেন। আর তাদের সিদ্ধান্তগুলো বাজারদরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সামাজিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা বাজে পদ্ধতি। অন্যসব সিদ্ধান্তের মতো এসব সিদ্ধান্তও গৃহীত হওয়া উচিত মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে।

আমার মতে, বিজ্ঞানের প্রতি গণমানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো দরকার। ঠিক যেভাবে শিল্প ও সাহিত্যে তারা বিপুল সংখ্যায় অংশ নিয়ে থাকেন অনেকটা সেরকম। এগুলো মানব জীনবকে অপেক্ষাকৃত উন্নত করে। এ কারণে এগুলো সাধারণের জন্য বোধগম্য হওয়া উচিত। অর্থাৎ, এসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক কিছু উৎসর্গ করতে হবে। আর সেভাবে আপনি ব্যবসায় টাকা কামাবার মতো করে কিছু জামাতে পারবেন না। সেটা করতে গেলে আপনাকে পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক হওয়া চলবেনা।

প্রশ্নঃ সমাজ ও সংস্কৃতিকে বাদ রাখলে আপনার ভাষা বিজ্ঞান এবং রাজনীতির মধ্যে কোন জিনিসটা সাধারণ (Common)? গণবিবেক (Conscience of community) ন্যায়বিচার এবং ভাষার ভিতর দিয়ে কি প্রকাশ করতে চায়? ভাষা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক দ্বি (bilingual) বা বহুভাষিকতাকে (multilingual) যদি খুব সাধারণ বলে বিবেচনা করা হয় তাহলে ভাষায় ভাষায় যে ব্যাবধান সেটাকে ভালো বিবেচনা করলে আমরা কি আরো বস্তুনিষ্ট ফল পাব?

চমস্কিঃ আমার রাজনৈতিক মতামত একান্তই আমার নিজস্ব। তবে রাজনীতি নিয়ে যে কোন মানুষের বক্তব্য সমাজ ও সংস্কৃতির উপকারে আসতে পারে। আপনার কি মনে হয় তা ছাড়া অন্যকিছু হতে পারে? এটা কেবল পৃথিবীকে জানার জন্যই নয়, এটাকে বদলাবার জন্যও সত্য। আমি মনে করি রাজনীতির বিষয়টা সুষ্ঠুভাবে উপলদ্ধি করা দরকার। কেননা আমি নিজে নৈরাজ্য বিনাশে যেমন সেই নৈরাজ্যকে জানতেও তেমনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বিশেষত সেইসব ক্ষেত্রে যেখানে সমাজ, সংস্কৃতি এবং সমাজে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্বের সাথে ভাবা হয়। ভাষা বিজ্ঞান আমার নিজস্ব সম্পত্তি নয়। যারা এ বিষয়ের কাজ করেন এটা তাদের যে কারও। অবশ্য সাধারণ মানুষ বিজ্ঞানের ধারক। অর্থাৎ, ভাষা বিজ্ঞান চমস্কির নয়। এই পৃথিবীতে কীভাবে সব কাজকর্ম সম্পাদিত হয় সেটা উদ্ঘাটন করতে অনেক মানুষের সম্মিলিত শ্রমের প্রয়োজন। তবে একথা বলা যাবে না যে, ‘খ’ হচ্ছে ‘ক’ মানুষটির দ্বারা উদ্ভাবিত বিজ্ঞান। বর্তমান সময়ে সঞ্জননী ব্যাকরণ (Generative Grammar) ভাষা বিজ্ঞানের একটা অংশ হয়ে উঠেছে তবে সেটা আমার বা অন্য কোন বিশেষ মানুষের নয়।

ভাষা বিজ্ঞানের এই অংশে সমাজ ও সংস্কৃতির যে কোন প্রভাবকে অস্বীকার করা হয়। আমি যতটা জানি যেকোন ধরনের শারীরবৃত্তিও (biological) কাজের ওপর সমাজ ও সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাব নেই। তবে এ বিষয়ে কেউ কিছু জেনে থাকলে তার কাছ থেকে তা জেনে নিতে আমি আগ্রহী। অর্থাৎ, আমি যা জানি তা হলো, ভাষার সাথে সমাজ ও সংস্কৃতির কোন প্রত্যক্ষ যোগ নেই। [বাংলায় সঞ্জননী ব্যাকরণের ওপর বিস্তারিত তথ্যের জন্য: ভট্টাচার্য্য, শিশির। সঞ্জননী ব্যাকরণ। চারু প্রকাশ। ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮।] কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সমাজ, সংস্কৃতি বা ভাষা গুরুত্বহীন বিষয়। বরং এসব অশেষ গুরুত্বপূর্ণ মানব জীবনের অন্য যে কোন দিকের মতো। তবে এগুলো নিয়ে আমাদের জানা শোনা যথেষ্ট কম। যেকোন কৌশলগত জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের জানা শোনাকে সুস্পষ্ট ও পরিপূর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে সব মানুষ সমান। কৌশলগত জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে, এবং এপথ থেকে কৌশলগত পথে যেতে প্রত্যেকে নিজের নিজের পথ বেছে নেন। যদি আমি ভুল বলে থাকি তবে যে কেউ আমাকে সংশোধন করে দিতে পারেন - তবে এটা যে ভুল তা ভাববার কোন কারণ এখনও পর্যন্ত আমি পাইনি।

আমি এবং অন্য যারা ভাষার ওপর কাজ করছেন তারা বিভিন্ন ভাষার পারস্পারিক পার্থক্যের ওপর দৃষ্টি আর্কষণ করেন। যদি আমরা তা না করি তবে দেখব যে যে কোন ভাষাই সহজাত। তা আমাদের ভাষাবোধ, ভাষা শিক্ষা সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের সমাধান দিতে সক্ষম। আধুনিক কালে সঞ্জননী ব্যাকরণের প্রথম কাজ হয়েছে হিব্রু ভাষার ওপর। তবে সর্বপ্রথম সঞ্জননী ব্যাকরণ প্রকাশিত হয়েছিল হিদাতা (Hidata) -য়। অর্থাৎ, এর ওপর কাজ অব্যাহত আছে। এটা কোন ভালো বা মন্দ ফলাফলের বিষয় নয়। তবে যে কেউ এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন যে হাইড্রোজেনের ওপর কাজ করে আমরা ভালো না মন্দ ফল পেয়েছি। ঠিক একইভাবে হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের ব্যবধান কিংবা কেবল মাছির বা মাছি ও বানরের মধ্যেকার মিলের বিষয়েও আমরা একই প্রশ্ন করতে পারি। তবে কোন ক্ষেত্রেই কোন প্রশ্নের ওপর মনোনিবেশ করতে পারাটা একটা সম্ভাবনার বিষয়।

বহুভাষিকতা ও দ্বিভাষিকতার ভিতরকার ব্যবধান বা এই জাতীয় ক্ষেত্রে আমার বলার মতো কোন মতামত নেই। তবে আপনার যদি বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞ থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় আছেন। অর্থাৎ, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষাকে জানা এবং তাতে অবগাহন করতে পারাটা জীবনকে মহিমান্বিত করে তোলে। এ মুহুর্তে এ বিষয়ে আর কিছু আমার চিন্তায় আসছে না। মানব স¤প্রদায়ের জন্য দ্বিভাষিকতা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। এছাড়া পৃথিবীর বর্তমান অবস্থায় এক ভাষিকতা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। এমনকি ৮ জনের একটা গোত্রের কথাও যদি বলি তবে সেখানেও বৈচিত্র রয়েছে। মানুষ একে অন্যের অবিকল নকল নয়। এ কারণে কোন না কোনভাবে বহুভাষিকতা থাকে। এটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরেও হতে পারে। তবে কিছু না কিছু ভাষা বৈচিত্র সব সময় থাকবে। তা মানব জাতির জন্য খুব স্বাভাবিক। অবশ্য এ নিয়ে বেশি কিছু ভাবার প্রয়োজন দেখি না।

এটা মনে রাখা ভালো যে বহুভাষিকতা একটা তাৎপর্যহীন ধারণা। কৌশলগত দিক থেকে বলা যায় যে প্রত্যেক মানুষ বহুভাষিকতাকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। মানুষেরা যখন আলাদা ভাষায় কথা বলে তখন ভাবতে পারি যে তারা আলাদা আলাদা জায়গায় বসবাস করে, এবং তারা দেখতেও আলাদা। সাধারণ জীবনাচারে বিষয়টা সত্যি কিন্তু তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ’একজন মানুষ একটি ভাষার বিভিন্ন রূপে কথা বলেন’ না বলে যদি আমরা বলিযে ’তিনি অনেকগুলো ভাষায় কথা বলেন’ তবে তা এক নয়। এই ব্যবধানটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্নঃ এটা বলা হয়ে থাকে যে, মানুষেরই কেবল বাকযন্ত্র আছে। এটা কি সম্ভব যে অন্য প্রাণীদের মানুষের থেকে ভালো আর সূক্ষè যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে (যেখানে কথা কম কিন্তু অর্থ ব্যাপক)?

চমস্কিঃ পিপীলিকা, পাখি, মানুষ না অন্য কেউ অপেক্ষাকৃত ভালো সে বিষয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত নই। এক্ষেত্রে তুলনা করার কোন মানদন্ড নেই। যদি কেবল পারস্পরিক যোগাযোগের কথা বলি তাহলে বলতে হবে যে জীব-বিশ্বের সবার তা আছে। ম্নাুষের ভাষাও যোগাযোগের জন্যই আছে। তবে আসল কথা হলো মানুষের কাজ কর্মের তুলনা করাটা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। মানব-ভাষা জীববৈচিত্রের মধ্যে অত্যন্ত বিরল একটা ব্যাপার তারপরও এমন কিছু প্রাণী আছে যাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মানবভাষার চাইতে উন্নত বলে মনে হতে পারে। তবে তা যে খুব অর্থপূর্ণ সেকথা আমি বলছিনা। অষ্টাদশ শতকে একটা বির্তকের উদ্ভব হয়েছিল বানর গোত্রের প্রাণীদের ভাষা আছে কী নেই তা নিয়ে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো একটা মতামত ছিল যে এই শক্তি তাদের আছে কিন্তু এটা যদি মানুষ জেনে যায় তাহলে তারা তাদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করবে। এই আশংকায় সম্ভবত, মানুষকে কাছাকাছি আসতে দেখলে তারা চুপ হয়ে যায়। এ জাতীয় মতামত সব সময় আমি পছন্দ করি।

প্রশ্নঃ আপনি বলেছিলেন যে, সর্বোপরি মানবমেধার গঠনশৈলী এরকম যে তারা ভাষা তৈরি ও তা প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু উচ্চ শ্রেণীর অন্যান্য স্তন্যপায়ীর এই প্রকাশ-যন্ত্র নেই। এর মানে কি এই যে জীবজন্তুর ভাষা কৌশল জানা আছে কিন্তু প্রকাশ শৈলী না থাকায় তারা ভাষা ব্যবহার করতে পারছে না?

চমস্কিঃ আমি মজা করে এরকম একটা কথা বলেছিলাম। একটা (তাত্ত্বিক) সম্ভাবনার সূত্রে আমি তা বলেছিলাম। তবে মহাজগত নিয়ে আমরা আজও এমন কিছু জানতে পারিনি যার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অন্য জীবের ভাষা কৌশল জানা আছে কিন্তু প্রকাশ শৈলী না থাকায় তারা তা ব্যবহার করে না। অর্থাৎ, সম্ভাবনা আছে। হয়ত ভবিষ্যতে কখনো তা উদ্ঘাটিত হবে। তবে অধিকাংশ মানুষ এটা আশা করেন না। বরং তাদের যে কোনো ভাষা কৌশল জানা নেই হয়ত সেটাই সত্যি। এ ছাড়া এ নিয়ে অন্য কোন মতামাত ব্যাখ্যা করা কঠিন। জীববৈচিত্রের জটিল সব ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার অধিকাংশের ব্যাখ্যাই আমাদের জানা নেই। মানুষ ডারউইনের বিবর্তনবাদ বা এ জাতীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে কিন্তু সে বিষয়ে সাধারণ ছাড়া অন্য কোন প্রশ্নের জবাব তার দেয়না।

ভাষা বিষয়ক কথা বাদ দিয়ে যদি আপনি ভাইরাসের মতো অনুজীবকে বেছে নেন তাহলে দেখবেন তাদেরও বহুকোষী প্রাণীদের অনেক বৈশিষ্ট্য আছে কিন্তু বিবর্তনবাদ সেটাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। অথবা যদি গাণিতের ফিবোচি সিরিজ (Fibonacci Series)-র কথা বিবেচনা করি তবে তাকে বিশ্বপ্রকৃতির সর্বত্রই আমরা দেখতে পাব, যদিও কেউ জানেনা তা কেন। [ ০ ১ ১ ২ ৩ ৫ ৮ ১৩ ২১ ৩৪ ৫৫....... হলো ফিবোচি সিরিজ। ইতালিয়ান গণিতবিদ ফিবোচি সর্বপ্রথম এই সিরিজের কথা বলেন। সিরিজটির যেকোন পদ প্রথম দুটি পদের যোগফল, এবং প্রথম কয়েকটি পদ ছাড়া পাশাপাশি অন্য কোন দুটি পদের ভাগফল ০.৬১৮ অথবা ১.৬৬]

আপনি যদি একটা সূর্যমুখী ফুলকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখবেন যে এতে পাশাপাশি অবস্থিত বক্রতাগুলো একে অন্যের সাথে ফিবোচি শ্রেণীর সাদৃশ্য বজায় রাখে। এ ধরণের বিষয় সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতি জুড়ে বিরাজ করছে। অবশ্য এর কারণ আমাদের অজানা। তবে বস্তুজগতে এমন কিছু রয়েছে যা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন বস্তুকে ভিন্ন রূপ দেয়। আপনি যদি সূর্যমূখী ফুলের এই গঠনকে বুঝতে না পারেন তবে সম্ভবত আপনি কখনই প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ভাষাকে বুঝতে পারবেন না। এটা অপেক্ষাকৃত কঠিন। সুতরাং আমরা যে বিবর্তনের বস্তুনিষ্ট ব্যাখ্যা করতে পারছিনা তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ কিছু বিষয় ব্যতিত এর ব্যাখ্যা দেয়া আসলেই দুরূহ।

প্রশ্নঃ আপনি বলেছেন যে ভাষা মানুষের সহজাত একটা বিষয় কিন্তু ভাষা সৃষ্টি করা এবং তা প্রকাশ করা একেবারে দুটো আলাদা কৌশল। এটাকে কি একটু ব্যখ্যা করে বলবেন?

চমস্কিঃ ভালো কথা। ভাষার এই স্বাভাবিকতা অবশ্যই একটা মজার ব্যাপার। ভাষার এই সাহজাত্যের বিপক্ষে অনেক লেখা হয়েছে কিন্তু পক্ষে বলা হয়নি কিছু। কাজেই বিতর্কটা একটা এক পাক্ষিক তামাশা। ভাষা যে সহজাত সে প্রস্তাব অজস্র মানুষ প্রত্যাখান করেছেন কিন্তু তার সর্মথনে কোনো যুক্তি দেখাননি। কারণ এক্ষেত্রে বোধগম্য কোন যুক্তি নেই। নেই সেসবের উত্তর দেয়ার যথাযথ পদ্ধতি।

যদি বলি যে ভাষা সহজাত নয় তবে বলতে হবে যে আমার ছোট নাতিটার সাথে এক টুকরে পাথর বা একটা খরগোশের কোন ব্যবধান নেই। অন্যভাবে বলতে পারি, এই এই তিনটি অস্তিত্বকে যদি কোন ইংরেজী ভাষার সম্পর্শে নিয়ে রাখি তবে তারা প্রত্যেকে ইংরেজী বলা শিখবে। যদি একথা কেউ বিশ্বাস করেন তাহলে তিনি একথাও বিশ্বাস করবেন যে ভাষা সহজাত নয়। আর যদি তারা ঐ তিনটি অস্তিত্বকে ভিন্ন অনুভব করে থাকেন তবে তারা বিশ্বাস করবেন যে ভাষা সহজাত। অর্থাৎ, যারা ভাষার সহজাত্যতা নিয়ে বির্তক করতে চান তারা নিশ্চিতভাবে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। তাদের সে নির্বুদ্ধিতা একেবারে কোন যুক্তিকেই দাঁড় করাতে পারে না। ভাষা যে সহজাত তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

ভাষা সহজাত এর অর্থ এই যে আমার নাতনীর ভিতর এমন কিছু প্রাকৃত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যা মাছি, বিড়াল, শিপাঞ্জী বা পাথরের নেই। এই অন্তর্গত স্বভাবটাকে আমরা জানতে চাই। আমাদের বর্তমান জ্ঞানে অন্তর্গত এই ব্যবধানটা ঘটে জিনগত কারণে। জিনগত কারনেই মানুষের রয়েছে ভাষা-কৌশল (যেমন, জিনগত কারনে আমাদের অন্তকর্ণে একটা ছোট পাতলা অস্থি বা হাড় রয়েছে ঠিক ইঁদুরের তা আছে)। কিন্তু কিভাবে তা হলো যেসব আমাদের অজানা। জ্ঞানের সুবৃহৎ রাজ্যে এরকম আরো অনেক ক্ষেত্রে আমাদের এমন সব উত্তর জানা নেই। অনানুষ্ঠানিকভাবে বললে ‘ভাষা মানুষের জন্য সহজাত’ উক্তিটির অর্থ এরকমই দাঁড়ায়। একইভাবে আমরা বলতে পারি, মানুষের জন্য হাত সহজাত যেমন পাখির জন্য ডানা।

এখানে একটা প্রশ্ন আসতে পারে যে ভাষা বিষয়ক যা কিছু মানুষের সহজাত তার প্রত্যেকটাই কী সুনির্দিষ্টভাবে ভাষা-কৌশলের জন্য প্রযোজ্য নাকি তা মানুষের অন্যসব মানসিক ক্রিয়াকলাপের মতো অনেকগুলো কাজের একটা সমন্বয় মাত্র ? এটা একটা পর্যবেক্ষণমূলক প্রশ্ন। আপনি দেখতে পাবেন এ বিষয়ে গোঁড়ামির কোন সুযোগ নেই। আমাদের মনে হয় যে ব্যাপারটা সুনির্দিষ্ট। তাপকৌশলের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কেবল মানবমনে বা অন্যত্র সু্িনর্দিষ্ট নয় বরং বিভিন্ন প্রাণীসত্তার মাঝে তা বিরাজমান।

উদাহরণস্বরূপ, ভাষা কৌশলের অত্যন্ত প্রাথমিক একটা বৈশিষ্ট্য হলো বিযুক্ত অসীমতা (discrete infinity) । অর্থাৎ, আপনি ব্যবহার করতে পারেন ছয় বা সাত পদের বাক্য কিন্তু সাড়ে ছয় পদ দিয়ে কোন বাক্য আপনি তৈরি করতে পারবেন না। অবশ্য পদের সংখ্যার ক্ষেত্রে কোন সীমা নেই। আপনি দশ, বিশ বা আপনার ইচ্ছামতো সংখ্যক পদ দিয়ে বাক্য তৈরি করতে পারেন। এটাকেই বলা হয় বিযুক্ত অসীমতা। কার্যত, জীববিজ্ঞানের জগতে এই বৈশিষ্ট্য অজানা। সেখানে অজস্র ধারাবাহিক (continuous) এবং সমাপিক (finite) নিয়ম রয়েছে - কিন্তু বিযুক্ত অসীমতার কথা ভাবুন সেখানে! ভাষার ক্ষেত্রে অপর যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা হলো আঙ্কিক সক্ষমতা। এটাকে ভাষা কৌশলের একটা শাখা হিসাবে বিবেচনা করা যায়। যত বেশি আপনি এ বিষয়ে কাজ করবেন ব্যাপারটা তত বেশি স্পষ্ট হবে। আমরা এখানে যেসব বিষয়ে কথা বলছি আপনি যদি এধরণের প্রশ্নের মুখোমুখি হন তাহলে, সম্ভবত জীববিজ্ঞানের কোথাও এমনকি ডি.এন.এ বা অন্য ধরণের প্রাক রাসায়নিক কোন বিষয়ে-এর সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন না। অর্থাৎ, ভাষা কেবল সহজাত নয় উপরন্তু তা অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট যা জীবজগতের আর সবার থেকে মানুষকে আলাদা করেছে। আমর মনে হয় এটা একটা প্রলেপ বা আবরণের মতো। এটা অন্য অনেক কিছুর ওপর একটা প্রলেপ (overlay) যা একটা নিয়মের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং যার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আছে। এসব বিষয়ে অন্য কেউ যদি ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা দেন তবে নিশ্চয় সেটা মজাার শোনাবে। অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্ন কোন প্রস্তাব নেই তাই আলোচনাও নেই।

এখন সমস্যা হচ্ছে ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলোর উদ্ঘাটন এবং ভাষা-কৌশলের ভিতর এই বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রয়োগ নিয়ে। এবার আমরা প্রশ্ন করতে পারি আমাদের জিহবা দাঁত কী ভাষার উপযোগী করে সৃষ্ট না ভাষা চর্চার সাথে সাথে তা বিবর্তিত হয়েছে। বিভিন্ন মতামত রয়েছে এ বিষয়ে যেগুলো মোটামুটি স্পষ্ট। অত্যন্ত সম্মানিত বিজ্ঞানীদের অনেকে বাচন বিশ্লেষণ এবং প্রত্যক্ষ করে সন্দেহ করছেন যে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের কোন নির্দিষ্ট ধরণের অভিযোজনের ফলেই সম্ভব হয়েছে ভাষা। অবশ্য অন্য অনেকে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। ভাষাকে বাস্তব রূপদানের স্তরে বিভিন্ন ধরণের ধারণা ও মতামত রয়েছে কিন্তু এসবের খুব কমকিছুই আমাদের বোধগম্য। উদাহরণ হিসাবে মনে করা যাক, একজন বিশ্বাস করেন যে মানুষের স্বাভাবিক ভাষার প্রকাশ চিন্তার ভাষা (Language of Thought)-য় চিত্রিত করা যায়। ভাষা প্রকাশের কিছু বৈশিষ্ট্য সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিরূপণ করবে যে কিভাবে চিন্তার ভাষাকে চিত্রিত করতে হবে। এসবের যে বিশদ বিবরণ তার কোন অংশ চিন্তার ভাষার শব্দার্থতত্ত্ব বা বাগার্থবিদ্যা (Semantics)- র অংশ হবে? এ বিষয়ে বেশ কিছু ধারণা রয়েছে, তবে খুব বেশি নেই। [প্রখ্যাত ভাষা বিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ Semantics এর বাংলা পরিভাষা হিসাবে বেছে নিয়েছেন ’অর্থতত্ত’¡ শব্দটি। দ্রষ্টব্যঃ আজাদ, হুমায়ুন। বাক্যতত্ত্ব । বাংলা একাডেমি। ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৪।]

প্রশ্নঃ বাগার্থবিদ্যার সর্বসা¤প্রতিক ধারা কোনটি? এটা কি একদিন এর উপাদানগুলোকে নিয়ে নিজেই বিজ্ঞান হয়ে উঠবে?

চমস্কিঃ এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এখানে প্রথমে বাগার্থবিদ্যা কী তা নিয়ে আলোচনা করা যাক। বাগার্থবিদ্যা বলতে যদি প্রচলিত মতামতকে গ্রহণ কর হয় (যেমনটা পিয়েরস বা ফ্রেক বা তাদের মতো অন্যেরা ভাবেন) তাহলে দেখব যে, বাগার্থবিদ্যা হলো শব্দ (Sound) ও বস্তু (thing) র ভিতরকার সম্পর্ক যা হয়ত কোনভাবেই বিদ্যমান নয়। তবে এটা যদি সেই ধরণের কোন বিদ্যা হয় যেখানে বিভিন্ন বিষয় যেমন, এজেন্সি বা মধ্যস্ততাকারী, কাল, বিষয়ীকরণ, ঘটনা-সংঘটন, প্রভৃতি এবং এ সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে তবে সেটা অবশ্যই একটা মূল্যবান বিষয়। কিন্তু সেটা বাক্য প্রকরণ বা বাক্যরীতি (syntax)। অর্থাৎ, এটা সর্বতোভাবে মানুষের মানসিক প্রকাশ। এই প্রকাশ তার আপন গতিতে চলতে থাকে ধ্বনিতান্ত্রিক (Phonological) প্রকাশের কোন রকম তোয়াক্কা না করে। এটাকে ভুলবশত ‘বাগার্থবিদ্যা’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। বিষয়টা এরকম যে ধ্বণিতত্ত্বকে আমরা গ্রহণ করেছি কিন্তু নিজেদেরকে প্রতারিত করছি এই ভেবে যে ধ্বণিতত্ত্ব হচ্ছে ধ্বণি একক এবং পদার্থের ভিতরকার সম্পর্কজনিত বিদ্যা।

এটা তা নয়। এটা জন্য ধরনের বিষয়। ধ্বনিতত্ত্ব হচ্ছে সেই বিদ্যা যেখানে আমাদের চারপাশের জগতের যে ক্রিয়া প্রক্রিয়া তার সবচেয়ে কাছের মানসিক ভাবমূর্তি। আমার মতে, বাগার্থবিদ্যায় যা আছে তার বেশির ভাগই বাক্যরীতির অংশ। এটা আসলে বাক্যরীতির সেই অংশ যেটা ভাষার প্রকাশিত অংশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে অনুমান করতে পারি। সুতরাং, এটি বাক্য রীতির অংশ এবং নিশ্চিতভাবে তা শব্দ ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশিত ভাষার ব্যবহারিক অংশ। কিন্তু বাগার্থবিদ্যা আসলেই বিরাজ করে কিনা তা একটা উন্মুক্ত প্রশ্ন। তা যে বিরাজ করে এরকম ভাবার কোন কারণ আমি খুঁজে পাইনা। আমি মনে করি, এটা একটা প্রাচীন ধারণা। সম্ভবত এই অনুমান মিথ্যে যে শব্দ এবং বস্তুর ভিতর প্রয়োজনের সাপেক্ষ ছাড়া স্বাধীন কোন সম্পর্ক আছে।

প্রশ্নঃ ‘গাছে চড়া’ এই ধারণাটা জানার দ্বারা কি একজন শিশু জেনে যায় যে এই ধারণাটা বোঝার জন্য দরকার হয় একটা মাধ্যম (agent) এবং একটা বিষয়বস্তুর (theme)? ‘মুত্যু’র ধারণা কি একজন শিশু ’মৃত্যু’ এবং ’পটল তোলা’ শব্দ দুটো দিয়ে সমানভাবে উলপদ্ধি করে? গণনা এবং ধারণার যে সহজাত অনুভূতি তা অবশ্যই ভিন্ন। ভাষা বিজ্ঞান কি মনে করে যে এ দুটোর কোন রকম সমন্বয় ঘটে যাতে করে কার্য-কারণের যুক্তিগত ধারণা (predicate-argument structure) বোধগম্য এবং প্রকাশযোগ্য পদাশ্রয়ী বাক্যরীতিতে রূপান্তরিত হয়?

চমস্কিঃ সম্ভবত প্রায় দশ বছর আগে আমার লেখা একটা বইয়ের সূত্রে আপনি কথাটা বলছেন। সেখানে বলা হয়েছে, শিশুরা তাদের শারীরিক অন্য সব ক্ষমতার মতো এক গুচ্ছ বোধ/ধারণা নিয়ে জন্মায়। পরে তারা নিজের নিজের ভাষার ভিতর দিয়ে তা অনুভব করে। অর্থাৎ, ‘গাছে চড়া’ শব্দটির একটা বিমূর্ত ধারণা শিশুর মাঝে আছে। তাছাড়া ‘গাছে চড়া’ শব্দটির সম্ভব সব বৈশিষ্ট্যের বোধও তার আছে। সে শুধু শেখে যে গাছে চড়াকে উচ্চারণ করতে হবে ‘গাছে চড়া’। এ প্রসঙ্গে জেরি ফোর (Jerry fodor) এর কাজ উল্লেখযোগ্য। তিনি রে জ্যাকনেফ (Ray Jackendeff) এবং অন্যদের সাথে মিলে কাজটা করেছিলেন। আসলে আপনার প্রশ্নগুলো খুব সঙ্গত। এ বিষয়ে আপনার নানা ধরনের মতামত থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে আমাদের জানাশোনা খুব বেশি নয়। আমি এ প্রশ্নগুলোর বিষয়ে কেবল আমার ধারণার কথা বললাম তবে এগুলোকে আামি গবেষণার বিষয় বলে মনে করি।

‘গাছ’, ‘গাছে চড়া’, ‘দৌড়ানো’, বই বা অন্যসব শব্দের অর্থ যে বাস্তবিকভাবে সুর্নিধারিত তা ভাববার অজস্র কারণ আছে। যখন এগুলোকে আপনি পর্যবেক্ষণ করবেন, দেখবেন যে এদের অভাবনীয় এবং জটিল সব বৈশিষ্ট্্য রয়েছে প্রথাগত অভিধান শাস্ত্রে (Lexicography) যার উল্লেখ নেই। যখন পেটমোটা কোন অভিধান [যেমন, অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারী বা বাংলা একাডেমির কোনো অভিধান] পড়ছেন তখন আপনি ভাবতে পারেন যে বিভিন্ন শব্দের সংজ্ঞা সেখানে পাবেন যেটা একেবারে ঠিক না। বরং আপনি সেখানে পাচ্ছেন শব্দ সম্পর্কে কিছু ধারণা। কিন্তু সহজাত ভাবেই আপনার মন অজস্র ও বিস্তৃত অনেক জ্ঞানে পূর্ণ। কাজেই শব্দগুলোর সম্যক উপলদ্ধি আপনি পাবেন। আবার যখন আপনি এই যোগাযোগটাকে অনুসন্ধান করতে চেষ্টা করবেন তখন দেখবেন যে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য রকম জটিল। আনুমানিক দুশো বছর আগে বিষয়টা মানুষের নজরে আসে। কোন প্রশ্নকে যাচাই/ পর্যবেক্ষণ করবার এই ধারা মোটামুটিভাবে কিছু রবদবল করে হবস্ (Hobbes) থেকে হিউম (Hume) পর্যন্ত চলে এসেছে। আমি মনে করি, চিন্তার এই প্রথাগত ধারার পরিবর্তন দরকার। এই ধারাটার উৎস এরিস্টটলে। তবে সতেরশ শতক পর্যন্ত প্রায় সমান্তরালভাবে তা চলে এসেছে নব্য প্লেটোবাদী (neo-Platonis) দের কাল পর্যন্ত। কিন্তু আপনি যখন এগুলো উদ্ঘাটনের চেষ্টা করবেন, দেখবেন ধারণাগুলো বেশ জটিল। অর্থাৎ, শব্দের ধারণাগুলো অন্তর্নিহিত ছিল গভীর মনে। তারপর সহসা তারা যুক্ত হলো ধ্বনিময় উচ্চারণের সাথে। কিন্তু তারপরও এই প্রশ্ন আসে যে তারা কতটা স্থির বা পরিবর্তনশীল? বিষয়-মাধ্যম (agent theme) বৈশিষ্ট্য কি নির্দিষ্ট না পরিবর্তনশীল? এসব গবেষণার বিষয়। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন ধরুন ’পটল তোলা’র মধ্যে মুত্যুর যে অর্থ নিহিত তা আরোপিত অর্থ (artificially imposed)। আবার যদি শব্দের অর্থের স্থিরতা নিয়ে বলি তবে আমরা আসলেই তা জানি না। ধারণাগত (conceptual) এবং গণনাগত (computational) উপাদানগুলো কি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়? কার্যত, এটাও আমাদের ভালোভাবে জানা নেই। তবে অত্যন্ত পরিচিত একটা প্রশ্ন হলো, ভাষা ছাড়া কি আমরা চিন্তা করতে পারি? আপনি যদি জানতে চান এ বিষয়ে আমরা কতটা জানি তবে আমি বলব খুব বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু চিন্তাভাবনা আর পর্যবেক্ষণ রয়েছে মাত্র।

আমার যা কিছু পর্যবেক্ষণ আছে তার ভিত্তিতে বলতে পারি যে ভাষা ছাড়া আমি চিন্তা করতে পারি। প্রায়শ এমন হয় যে, আমি যা ভাবছি সেটাকে সমন্বয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠছে। এটা অন্ত:ত আমার নিজের জন্য অত্যন্ত সাধারণ অভিজ্ঞতা। আমার ধারণা প্রত্যেকের প্রকাশ করার চেষ্টা করা উচিত। আমি যেভাবে বলছি তা বোঝার জন্য হয়ত কঠিন তবে অন্য কেউ যদি অন্যভাবে বলেন তবে হয়ত তা সহজ হবে। অভিজ্ঞতাটা সবার জন্য সাধারণ তবে তা অন্যের বোধগম্য করে তোলাটা একটু কঠিন Ñ বিশেষত ভাষা ছাড়া যে চিন্তা করা সম্ভব সেই ধারণা যদি আপনার না থাকে। আপনি চিন্তা করেন, সেটাকে সমন্বয় করে একটা রূপ দিতে চান কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা পারেন না। অর্থাৎ , আপনি আপনার নিজের চিন্তার ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। আবার অনেক সময় খুব দ্রুত আপনি কোন কিছু যাচাই করে ফেলতে পারেন অসেচতভাবে। কিন্তু তখন কেউ যদি জানতে চান যে কিভাবে আপনি তা করলেন তবে দেখা যাচ্ছে যে আপনি সেটা ব্যাখ্যা করতে পারছেন না। এই ধরণের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে যে ভাষা ছাড়া আপনি চিন্তা করতে পারেন, এবং করেনও। আর যখন আপনি তা করছেন তখন ধারণার কিছু কাঠামো (conceptual staructer) আপনার ভিতর আছে। তবে ধারণার এই কাঠামো কিভাবে ভাষার সাথে সন্নিবিষ্ট হয় তার উত্তর অনুসন্ধান ছাড়া দেয়া সম্ভব নয়। অবশ্য বিষয়টা সত্যিকারভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং চমকপ্রদ।

প্রশ্নঃ বাক্য প্রকরণের দক্ষিণমুখী প্রবণতা (left-to-right ordering) Minimalist Program এর ক্ষেত্রে দিনে দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা কি ভাষার অন্তনির্হিত গঠন কাঠামোর কারণে নাকি মানুষের স্নায়ুতন্ত্র এবং ধারণা-কাঠামোর যে সমন্বয় সেতু তার কারণে?

চমস্কিঃ এটা গবেষণা করবার মতো একটা বিষয় বটে। আমার মনে হয় যে দক্ষিণমুখী প্রবণতা বলে কিছু নেই। আপনি যদি সজ্ঞননী নিয়ম (যে নিয়মের বলে একগুচ্ছ শব্দকে ব্যবহার করে মানুষ প্রয়োজন মাফিক দীর্ঘ বাক্য তৈরি করে এবং নিজের বক্তব্য পেশ করে) কে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখবেন যে এখানে ধারণা-কাঠামো বাক্য কাঠামোর রূপান্তরিত হয় আর তাতে দক্ষিণমুখী কোন প্রবণতা নেই। কার্যত, এখনো কোন ধরণের প্রবণতা নেই। এটা নিছক একটা ক্রমতান্ত্রিক (Hierachical) নিয়ম।

অন্যদিকে শব্দ বা আওয়াজের দক্ষিণমুখী প্রবণতা রয়েছে। আমার ধারণা এটা স্নায়ুতান্ত্রিক নিয়মের ফলে ঘটে থাকে। আমাদের সংবহনতন্ত্রের ক্ষমতা সীমিত। সময়ের প্রেক্ষিতে এরা একান্ত বাধ্য হয়ে দক্ষিণমুখী প্রবণতা প্রকাশ করে। অর্থাৎ, ক্রমতান্ত্রিক বিষয়টা যেটা নাকি অগোছালো সেটা একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় যাতে করে স্নায়ুসংবহনতন্ত্রের সাথে তার সনম্বয় ঘটে।

অবশ্য এগুলোর তেমন কিছু আবশ্যক নেই। আমাদের চারধারে এমন অনেক প্রাণীসত্ত্বা রয়েছে যাদের এই বৈশিষ্ট্য নেই। উদাহরণ হিসেবে ডলফিনের কথা ধরা যাক- তার মগজ তুলনামূলক বেশ বড়। এদের এক ধরণের জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এরা এদের নাকের মাধ্যমে সম্ভব সকল ধরণের আওয়াজ সৃষ্টি করতে পারে। এটা অনেকটা জলের তলে শব্দ নির্ণায়ক যন্ত্র ছোনার (sonar) এর মতো। এর সাহায্যে এরা অন্যদের তুলনায় নিজের অবস্থান সহজে বুঝতে পারে। তবে যাই হোক, এটা এক ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ডলফিনের কোন কোন প্রজাতি নাকের দু’পাশ দিয়েই এ-ঘটনা ঘটাতে পারে। অর্থাৎ, আমাদের থেকে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে এদের। এরা সমান্তরাল দুটি শব্দতরঙ্গ একই সময়ে সৃষ্টি করতে সক্ষম। অবশ্যই এটা এক ধরণের সুবিধা তবে কিন্তু এদের কোনরকম দক্ষিণমুখী প্রবণতা নেই। এদের রয়েছে সমান্তরাল বহি:প্রকাশ। হয়ত ধারা দুটির মধ্যে দক্ষিণমুখী রয়েছে, তবে সর্বোপরি এদের কোন দক্ষিণমুখী নেই। এদের মতো আমাদের দ্বি-মাত্রিক কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের যোগাযোগ পদ্ধতি এক মাত্রিক।

যদি হঠাৎ আমরা দৃষ্টি দিই প্রতীকী প্রকাশের দিকে তবে দেখব যে এটি একটি বহুমাত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু সুস্পষ্ট ভাষা শৈলী একটা একমাত্রিক ব্যবস্থা। এটা আমাদের স্নায়ুসংবহনতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা, যেটা কাটাতে এক ধরণের নিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। যদি আমরা মনে মনে যোগাযোগ (telepathy) করতে পারতাম তবে শব্দ তৈরির দরকার হতনা, প্রয়োজন পড়তনা নিয়ম মেনে বাক্য বলার। এটা একটা দারুন সত্য তবে কিনা প্রসঙ্গটা অন্য। কোন অভিব্যক্তি সৃষ্টি করা আর তা ব্যক্ত করা একেবারে আলাদা ব্যাপার। ব্যক্ত করার বিষয়টা এক ধরণের বিমূর্ত ক্রিয়া (abstract operation)। যখন কোন অভিব্যক্তি আমরা সৃষ্টি করি তখন তা ক্রমাগত একটার পর আরেকটা আসতে থাকে, আর এখানে ঘটনাটা ক্ষণস্থায়ী। এখানে আপনি অনেক ধরণের বদল ঘটাতে পারেন। এক্ষেত্রে বদলটা হলো পুন:সঞ্জনন (regenerating) প্রক্রিয়া। আর সঞ্চনন এবং উৎপাদন (production) বা সৃজন একেবারে আলাদা দুটো ক্রিয়া (operation) । অবশ্যই তারা একে অন্যের সম্পূরক। সজ্ঞননের কোন স্বাধীন সজ্জা নেই কিন্তু সৃজনের বিশেষ সজ্জা আছে কারন আমরা সময়ের নিরিখে সব কিছু করি। এসব অবশ্য এখানকার আলোচ্য বিষয় নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, যে বিমূর্ত প্রকাশের দ্বারা নিজেদেরকে আমরা প্রকাশ করি তার কি কোন সজ্জা আছে? আমার ধারণা, নেই। তবে স্নায়ু সংবেদনতন্ত্রের সাথে এর গভীর যোগ আছে। আর এসব কিছু গবেষণার বিষয় - এ নিয়ে আপনি গোড়ামি করতে পারেন না।

৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×