মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন (১৮৩৫-১৯১০) একবার বলেছিলেন, একজন লেখাপড়া জানা মানুষ আর একজন লেখাপড়া না জানা মানুষের মধ্যে পার্থক্য কি যদি লেখাপড়া জানা মানুষটা একটা ভালো বই না পড়লেন? নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রাজ্ঞ বচন। এখন প্রশ্ন হলো, কোন বই একটা ভালো বই?
মানুষের হিসাবে এই পৃথিবীর বয়স যত বাড়ছে তত বিস্তৃত হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখা। মহাকাশ বিজ্ঞান থেকে শুরু করে মনোবিজ্ঞান পর্যন্ত সকল জ্ঞান ও বিজ্ঞানধারা সূক্ষè হতে সূক্ষèতর অনুসন্ধানে লিপ্ত। মানুষের এসব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর লেখা ও ছাপা হচ্ছে শত শত বই। এর ভিতর কোন বিষয়ের কোন ধরনের বই ভালো বই? যে কোন অর্থে এটি একটি ব্যাপক প্রশ্ন। আর প্রতিটি প্রশ্নই আমাদের পৌঁছে দেয় এক বা একাধিক উত্তরের গন্তব্যে।
সাধারণ অর্থে বলা যেতে পারে যে কোন বিষয়ের ওপর লেখা যে কোন বই-ই হতে পারে একটা ভালো বই যদি তাতে থাকে সে বিষয়ের নূতন কোন উদ্ঘাটন বা চিন্তা। যদি বলি চিকিৎসা শাস্ত্রের কথা, ধরা যাক সেক্ষেত্রে কোন রোগ সংক্রমণের ওপর লেখা হয়েছে নতুন কোন তত্ত্ব তবে বইটি অবশ্যই বিবেচনার দাবীদার। অবশ্য সেই তত্ত্ব যদি হয় বাস্তবতা শূন্য তবে তা বিভ্রান্তিমূলক এবং মূল্যহীন। ধরা যাক বইটি যে তত্ত্ব ও তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক ও সত্য তবে অবশ্যই বইটি মূল্যবান। এছাড়া বইটির যদি থাকে পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি (clarity) তবে তা ভালো বই। চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষক আর পাঠকদেরকে খুব দ্রুত তা নতুন জ্ঞান দেবে। অর্থাৎ, যে কোন বইয়ের ভালো বই হবার জন্য দুটি আবশ্যক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। এগুলো হলো, নূতনত্বের পরশ এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিচ্ছন্নতা। পাঠকের বোঝার সুবিধার জন্য সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হবে আমাদের। কারন মনসতাত্ত্বিকভাবে একশ পাতার কোন কঠিন বইয়ের থেকে হাজার পাতার সহজ বই পাঠকের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে আরেকটা কথা বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন যে পাঠক যদি অদক্ষ হন বা পাঠাভ্যাস থেকে দূরে থাকেন তবে তার কাছে সহজ করে লেখা একটা বইও কঠিন বলে মনে হবে। তাহলে কোন জিনিস দিয়ে আমরা বিচার করব কতটুকু পাঠাভ্যাস দক্ষ পাঠকের পাঠাভ্যাস? প্রশ্নটির সমাধান এক কথায় অসম্ভব কারন তা একটি গুণবাচক (qualititative) প্রশ্ন, পরিমাণগত (quantitative) নয়। আবার তা একেক জনের কাছে একেক রকম (subjective)।
এবার যদি বিশেষভাবে সাহিত্যের বইয়ের কথা বলি তবে সাধারন বৈশিষ্ট্য দুটিকে আমরা বিবেচনায় রাখব। তার সাথে বইটির পুনরাবৃত্তির বৈশিষ্ট্য থাকবে না। অর্থাৎ, একই সংবাদ (message) বা বিষয় (subject) নিয়ে একজন লেখক অপ্রাসঙ্গিকভাবে বার বার বলা থেকে বিরত থাকবেন। অনেকে হয়ত এ বিষয়ে একমত হবেন না। অনেকে বলেন, আনন্দের জন্য পড়া! যে-বই আনন্দদায়ী সে বই ভালো বই। কথাটা পাঠাভ্যাস তৈরির জন্য ভালো তবে তা বইয়ের ভালোত্ব বিচারের জন্য কম-যথেষ্ট । আমরা যদি বইয়ের ভিতর নিছক আনন্দ খুঁজি তবে তা নেহায়েত নির্বুদ্ধিতা হবে কারন বইয়ের জগত জানাবার ও জানবার জগত। তবে যারা বই পড়ে আনন্দ পান সেইসব চিন্তাময় মানুষের থেকে মানুষ অনেক কিছু প্রত্যাশা করে এবং পেতে পারে।
আর যদি আনন্দের কথা বলা হয় তবে আনন্দধারায় ধন্য এ ভূবনে আনন্দের উপাদান ও উপকরণ সর্বত্র ছড়ানো, শুধু তাকে খুঁজে নিতে হবে। এছাড়া জানার যে আনন্দ তার ধারা এক ও অভিন্ন। এ আনন্দ অজানা হতে জানার পথে আমাদের উত্তরণ, অপ্রাপ্তি হতে প্রাপ্তির পথে যাত্রা।