ভালো লেখক কে এবং ভালো লেখা কোনটা এ নিয়ে অনেক কথা হয় আমাদের বাংলাদেশে, এবং পৃথিবীর অন্যত্র। মানুষে মানুষে মতভেদ বা মতানৈক্যও হয়। এসব মতের ভেদ কখনও তর্কে রূপ নেয়, এবং সে তর্কের অবসানও হয়। যেমন স্থানটা যদি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তবে পত্রিকায় তর্কের সে বিষয়টা নিয়ে লেখালেখি হয়, এবং হতেই থাকে। প্রত্যেকে তার নিজের মতো করে যুক্তি পেশ করেন এবং অন্যপক্ষের যুক্তি খন্ডান। ব্যাপারটার নিষ্পত্তি হয় যখন সে বিষয়ে পারঙ্গম কোন লোক তার যুক্তিটা লেখেন। তার বক্তব্য অন্য সবাই চুপ করে শোনে এবং মেনে নেয় কারন সে-বিষয়ে তিনিই সব থেকে অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ।
আর ব্যাপারটা যদি হয় যেমন জমি নিয়ে বিতর্ক মারামারি হানাহানি তবে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয় আইন ও আদালত। মোটকথা মতের ঐক্যে পৌঁছতে হলে আমাদের মধ্যস্থাকারী (Arbitrator)-র শরণাপন্ন হতে হয়। কারন, আমার মতের এটা ঠিক তো আপনার মতে সেটা ঠিক। আমি হয়ত ভাবছি যে পথের কুকুরের পশ্চাদ্দেশে ক-ঘা বসালে অসুবিধা কী! আমি হয়ত বলছি, এসব জায়গা জমির পুরোটা আমার আর আপনার বক্তব্য ছল চাতুরী করে আমি সব গ্রাস করেছি। এরকম অবস্থায় দেশের বিধি মোতাবেক আমরা আদালতে যাই। আদালত যদি রায় দেন যে ভুলটা আমার তখন আমি তা মেনে নিই বা মেনে নিতে বাধ্য হই। কারন, আমরা সবাই বিশ্বাস করি আইন ও আদালতে। আমরা আশ্বস্ত যে সেখানে আমরা ন্যায় বিচার পাব। এছাড়া সালিশীর জন্য আমরা কখনো কখনো এমন কাউকে বেছে নিই যার ন্যায়পরায়নতায় আস্থা আছে আমাদের।
কিন্তু কে ভালো লেখক আর কোন লেখাটাই বা ভালো তা মেনে নিতে কার শরণাপন্ন হব আমরা? আমরা কি শরণ নেব কোন প্রাজ্ঞ জনের না কি বলব যে লেখা পড়তে ভালো তাই-ই ভালো লেখা, আর যে -লেখকের নাম বেশি তিনিই ভালো লেখক? যেহেতু বিষয়টা বস্তুগত নয় এবং বিষয়টা বিমূর্ত (abstract), অর্থাৎ তাকে কোন অবয়ব বা ফ্রেমে দাঁড় করানো যাচ্ছেনা, এক্ষেত্রে বুদ্ধিগতভাবে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কোন লেখা ভালো সে বিষয়ে ঢালাওভাবে বলাটা সহজ নয়। আবার লেখাও নানান ধরনের, যেমন, সংবাদপত্রের লেখা, দেয়াল পত্রিকা লেখা, দলিল লেখা, পাঠ্যপুস্তক লেখা, সাহিত্যের বই লেখা ইত্যাদি। আবার যদি শুধু সাহিত্যের কথা বলি তাও নানান ধরনের; গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি। ছাপাখানার ব্যাপক সাফল্যের পর উপন্যাস লিখে তাদের জীবন কাটিয়েছেন সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক অনেক মানুষ। এদের অনেকে তাদের বিজ্ঞতার কারণে নন্দিতও হয়েছেন।
যে যে বিষয় নিয়ে জীবদ্দশায় তাঁরা কাজ করেছেন তার অনেক কিছুতে তাদের স্থান ও বক্তব্য সবার কাছে গ্রহণীয় না হলেও মূল্যবান। জাঁ পল সার্ত (১৯০৫-১৯৮০) এমন একজন দার্শনিক ও লেখক যিনি সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য নোবেল পদকের জন্য নির্বাচিত হন ১৯৬৪ সালে। ভালো ও মন্দ উপন্যাসের বিষয়ে তিনি বলছেন, The bad novel aims to please by faltering, whereas the good one is an enigence and and act of haith. (What is literature, 1947). অর্থাৎ, “মন্দ উপন্যাস অতি কথনের দ্বারা পাঠককে সন্তুষ্ট করতে চায়। অন্যদিকে, যে কোন উৎকৃষ্ট উপন্যাস হলো প্রয়োজনীয় ও প্রতিশ্রুতিময় কাজ।
আবার ভালো লেখকের প্রসঙ্গে ফাউলার (H.W Fowler) বলেন, Anyone who wishes to become a good writer should endeavour, before he allows himself to be tempted by the more showy qualities. to be direct, simple, brief uigorous and lucid’. (http://www.bantleby.com/116/)। ‘কেউ একজন ভালো লেখক হতে চাইলে আতœপ্রচারের বাসনা তাকে ত্যাগ করতে হবে। তাকে চেষ্টা করতে হবে খোলাখুলি, সরল বলিষ্ঠ, সহজবোধ্য এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘ নয় এমন লেখা তৈরির।”
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কোনটার অনুসরণ করা আমরা? অনুসন্ধান করবো ভালো লেখকের না ভালো লেখার? আবার একজন ভালো লেখকের সব লেখাই কি ভালো? বা, সব ভালো লেখাই কি কেবল ভালো লেখকদের? সৃষ্টি ও লেখনীর কোন পর্যায়ে একজন খারাপ লেখকের হাতও লিখতে পারে কোন ভালো লেখা। আবার একজন ভালো লেখকও লিখতে পারেন মানহীন লেখা। এ কারনে আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে ভালো লেখার। আর যিনি অনেক সংখ্যক ভালো লেখা লিখেছেন তিনিই তো ভালো লেখক।