somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্টুথ বার্ড

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবুল আহাদ একজন রাজনীতিক। তার এলাকায় তিনি খুব সম্মানিত। তার ন্যায় নিষ্ঠা প্রজ্ঞা ও জ্ঞান তাকে আর সব রাজনীতিকের থেকে আলাদা করেছে। তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম এক ব্যক্তিত্ব। কেউ কেউ তাকে বলেন, জাতির বিবেক! সংসদে যখন তিনি কোন কথা বলতে দাড়ান তখন চারদিক নীরবতায় ভরে ওঠে। সংসদে উপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তি মন দিয়ে শোনেন তার কথা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পরিষদের অন্যরাও তাকে শ্রদ্ধা করেন । গত সংসদে তার দল সরকার গঠন করতে না পরলেও সরকার পক্ষ তাকে সমঝোতার ভিত্তিতে মন্ত্রী করে। সবাই তাকে স্বারাষ্ট্র বা পররাষ্ট্রের মতো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে চাইলেও তিনি বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব বেছে নেন।

মন্ত্রী হবার পর প্রথম বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি কোন ক্ষমতা লাভ করিনি, বরং একটা দায়িত্ব ও দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়েছি। সে দায়িত্ব যথাযথ পালনের জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি মনে করেন যে একজন মন্ত্রী একই সাথে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের ভূমিকা ঠিকমতো পালন করতে সক্ষম হন না। তার যুক্তি ও প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সংবিধানে সংশোধনী আনা হলো; তিনি সংসদ সদস্যের পদ পরিত্যাগ করে মন্ত্রী হিসাবে তার দায়িত্ব পালন শুরু করলেন।

মন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর সংসদে তিনি বললেন যে, যে কোন কাজ ঠিক ভাবে করার জন্য আইন ও বিচারকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিতে হবে। তা না হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিতর যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে বা ঘটে চলছে তা সব মহৎ উদ্যোগ নষ্ট করে ফেলবে। যদি ঢাকা শহরের কথা বলি তবে এখানে ত্রিশ বছর আগেও যে ছাব্বিশটা খাল ছিল তা যদি আজও থাকত বা আমরা দখল বা বন্ধ করে না ফেলতাম তবে যানজট বা জলাবদ্ধতা কোনটাই তৈরি হত না। আমরা খালগুলো দিয়ে নৌকা বা স্টীমার চালাতে পারতাম। বর্ষায় বৃষ্টির পানি এই খালগুলো দিয়ে সোজা নদীতে গিয়ে পড়ত!

তিনি মাননীয় স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনারা অনেকে হয়ত জানেন যে ১৯৮০-র দশকে কোন কোন বিদেশী পত্রিকায় অনেক নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল বংলাদেশের ওপর। তাতে বলা হয়েছিল যে বাংলাদেশের গ্রামগুলোর ক্ষমতা আছে নয় কোটি মানুষের জীবিকা অর্জন এবং জীবন যাপনের যোগান দেয়ার। এর অতিরিক্ত জনসংখ্যা অবশ্যই শহরমুখী হবে। এটা অনুতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের শহরগুলোকে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। এসব দেশের সামগ্রিক পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। আমি নিশ্চিত পত্রিকার সেসব প্রবন্ধ দেশের জ্ঞানী জনের অনেকে পড়েছেন। কেন তবে আমরা তা নিয়ে ভাবিনি? নাকি তার কারণ এই যে আমরা যোগ্য লোকদের যোগ্য স্থানে বসায়নি? যাদের পুরস্কার প্রাপ্য তারা পুরস্কৃত হননি আর যারা শাস্তির যোগ্য তাদেরকেও তা দেয়া হয়নি?

সংসদ সদস্যদের মুখভাব দেখে মনোভাব তিনি বুঝতে পারেননি বটে কিন্তু তার মনে হলো, সবার ভালো লাগছে না। তিনি তার কথার দিক বদলালেন, আসলে কাউকে দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। বাংলাদেশে সম্ভাব্য যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটতে পারে আমি তার কারণগুলো সম্পর্কে কিছু বলার চেষ্টা করছিলাম!

আহাদ সারা দেশ আবার ঘুরলেন। দেশের সমস্ত জলাশয় বনাঞ্চল সাগর সৈকত এবং জলজ বনজ সকল সম্পদের ওপর একটা জরিপ চালালেন। এসবের পাশাপাশি আমাদের আকাশে বনে জলে স্থলে যত প্রাণী বসবাস করছে তার হিসাবও নিলেন। দুঃখজনকভাবে তিনি লক্ষ করলেন যে ঢাকার আকাশে কাকের বিচরণ অনেক কমে গেছে। ‘তাহলে কি ঢাকায় দূষণের মাত্রা এতটা বেড়ে গেছে যে কাকদের জীবনও সেখানে নিরাপদ নয়?’ এরকম হাজারও প্রশ্নের ভিড় পেরিয়ে তিনি দেখতে পেলেন যে প্রকৃতির ওপর মানুষের জবর-দখলের সাগরটা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সব তথ্য উপাত্ত ঘেটে তার কাছে পরিষ্কার হলো যে বিত্তবান ক্ষমতাবান ও রাজনীতির ছায়ায় বন নদী গিরি ও সাগর লুন্ঠনকারীরা সব লুটতরাজে মেতে ওঠেছে! সবকিছু তার কাছে তামাশা তামাশা লাগল।

যদিও মন্ত্রী হবার আগে এসবের অনেক কিছু তিনি জানতেন কিন্তু মন্ত্রী হয়ে তিনি কর্মর্-পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পার্থক্য উপলব্ধি করলেন। ‘যেহেতু আমি মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছি’, তিনি ভাবলেন, ‘সাধ্যমতো চেষ্ট করতে হবে আমাকে’! এতশত নৈরাজ্য, বখাটেপনা ও ক্ষেপামি থেকে দু’ এক বছরে কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। আবার, যেকোন হঠাৎ পরিবর্তনও খারাপ। তিনি ভাবতে লাগলেন, কিভাবে গণ মানুষের বিবেক ও বোধকে জাগিয়ে তোলা যায়? কিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব প্রকৃতি ও পরিবেশের নিরাপত্তা? প্রকৃতির নিরাপত্তাহীনতা ইঙ্গিত করে যে মানুষও অনিরাপদ! আবার মানুষ কার কারনে অ-নিরাপদ? মানুষ নিজের কারণে অনিরাপদ, সে নিজেই তার শত্রু! এবস চিন্তা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। মাত্র দুই বছরে তার ওজন বিশ পাউন্ড কমে গেল। তার চেহারায় বার্ধক্য স্পষ্ট হয়ে উঠল। তার যেসব প্রবাসী বন্ধুরা বছর দুই আগে তাকে দেখেছিল তারা তাকে দেখা মাত্র আৎকে উঠল। তার স্বাস্থ্যের অধঃপতন কোনভাবে ঠেকানো গেল না।

তার স্ত্রী ও কন্যারা তার স্বাস্থের অবনতিতে দুঃচিন্তায় পড়ল। মেয়ে বলল, বাবা! তুমি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দাও; সব কিছুর থেকে তোমার জীবন আমাদের কাছে দামী। আহাদ মেয়ের কথায় হেসে বললেন, কি বলছিস মা? না হয় দু’বছর কম বাঁচলাম। একথা ঠিক যে সব মানুষের বাঁচার বসনা আছে। কিন্তু কথা হলো, মানুষের ভালোর জন্যে কিছু করতে গিয়ে বছর দুই যদি কম বাচি তাতে ক্ষতি কি? আর মরতে যে হবেই। তাছাড়া ধর কালকেও তো মরতে পারি একটা দূর্ঘটনায় পড়ে। মেয়ে চোখ ছল ছল করে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, একথা তুমি বলতে পারলে বাবা? তুমি মরলে আমাদের কি হবে?

অবস্থাটা যে এত আবেগপ্রবণ হয়ে উঠবে আহাদ তা বুঝতে পারেননি। তিনি মেয়ের দুঃখ ব্যাথা দূর করতে তৎপর হয়ে উঠলেন। মেয়েকে তিনি বশ মানাতে পারলেও স্ত্রীকে বোঝানো গেল না। তার এক কথা, দেশের ভালো করতে চাও ভালো। মানুষের উপকার করতে চাও ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে এভাবে তো আমরা তোমাকে উচ্ছন্নে যেতে দিতে পারি না! আমি আর ছয় মাস দেখব। এর মধ্যে তোমার স্বাস্থের যদি উন্নতি না হয় তাহলে তোমার মন্ত্রীগিরি আমি করাচ্ছি দাঁড়াও। বউ তাকে রীতিমত শাসাল।
বউ এর শাসনের তোয়াক্কা তার মন করলেও শরীর করলনা। তার স্বাস্থ্যের অধোগতি থমল না। তার চুল দাড়িতে পাক ধরল। আহারে রুচি ফিরল না। তার অবস্থার দেখে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বিব্রত বোধ করলেন। তিনি তাকে দ্রুত বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার পরার্মশ দিলেন। এ প্রস্তাবে তার স্ত্রী-কন্যারা স্বস্তি বোধ করলেন যদিও তার কাজ এত বেড়ে গেল। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যত খরচ হবে তার কতটা তিনি নিজে ব্যবস্থা করতে পারবেন! তার এ অবস্থা দেখে অন্য মন্ত্রীরা বেজার হয়ে উঠলেন, কেন বাপ? তুমি দিব্যি সরকারি টাকায় ঘুরে ফিরে আসতে পার, এত ঝামেলা কেন? তাছাড়া এরপরে বিদেশে আমরা যে একটু আধটু বেড়াতে যাব সে বিষয়েও তো প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলবেন। একে মন্ত্রী করাটা একটা অভিশাপ হলো দেখছি!

তার মেয়ে বলল, বাবা! তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেল? কি করছ এসব? বাবা বললেন, নারে মা। শুধু কি সরকারী কাজ করতে গিয়েই আমার শরীর খারাপ হয়েছে যে সব টাকা সরকারের কাছ থেকে নেব? তাছাড়া সরকারের টাকা মানে তো জনগণের টাকা। একজন শ্রমিক বা সধারণ মানুষ যদি আমার কাছে তাদের টাকার হিসাব চায় তাহলে আমি কি জবাব দেব? আমাকে অবশ্য সরকারের কোষাগার থেকে কিছু সাহায্য নিতে হবে, কিন্তু সেটা যত কম হয় তত ভালো। আমি শুধু হিসাব করে দেখছি কত টাকার ব্যবস্থা আমি নিজে করতে পারব। একটা কথা মনে রাখিস মা, আমরা অন্যের জন্য যত সুযোগ সৃষ্টি করে রাখতে পারব তত ভালো। সবসময় সব সুযোগ আমরা গ্রহণ করতে যাই বলে অন্যেরা সুযোগ পায় না। যে-জাতির মানুষেরা শুধু সুযোগ গ্রহণের চিন্তায় থাকে , অন্যের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেনা, তারা অভিশপ্ত। তাদের কখনও উন্নতি হয় না। তুমি কি চাও মা তোমার বাবা অভিশপ্ত হোক?

আহাদ এখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য আছেন। আজ সেখানে তার শেষ দিন। ডাক্তার বললেন, আপনার সমস্যাটার সমাধান এখনও মেডিক্যাল সায়েন্স উদ্ঘাটন করতে পারেনি। তবে আমরা যতটা জানি, প্রাচীন বাংলায় এ রোগ ছিল। এর চিকিৎসায় সেকালের ডাক্তাররা একটা পাখির মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। সকাল সন্ধ্যা একটা করে দুটো পাখির তাজা মাংস এক নাগাড়ে ত্রিশ দিন খেতে হবে। আমাদের এই হাসপাতালের একদল গবেষক ‘প্রাচনি বাঙলার চিকিৎসা’র ওপর কাজ করছেন। অল্প কিছু দিন হলো তারা খুঁজে পেয়েছেন যে একই সাথে মেধাক্ষয় ও শরীর-ক্ষয় যদি চলতে থাকে তাহলে এই পথ্য একটা কর্যকর চিকিৎসা। অবশ্য এখনও পর্যন্ত আমরা এটা প্রমান করতে পারিনি। তবে সম্প্রতি এই প্রজাতির কিছু পাখি গহীন সুন্দরবন থেকে আনানো হয়েছে। আগামী দু এক বছরে এদের বংশ বিস্তার হলে তখন হয়ত আমরা এটা প্রমাণ করতে পারব। অবশ্য আপনি যেহেতু বাংলাদেশের লোক আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি যথেষ্ট সংখ্যক পাখি সেখানে পান! ‘পাখিটার নাম কি?.’ আহাদ জানতে চাইলেন। পাখিটার নাম ‘ট্টুথ বার্ড’ ডাক্তার বলেন, তবে এর স্থানীয় অন্য নাম থাকতে পারে।’ তিনি পাখিটার একটা ছবি তাকে দিলেন।

দেশে ফিরে আহাদ নিয়ম মতো তার কাজ শুরু করলেন । তার সেক্্েরটারি তাকে বার বার তাগাদা দিলো ট্টুড বার্ডের খোঁজ করার। যখন সে দেখল যে তার মাননীয় মন্ত্রী সে-কথা বেমালুম ভুলে আছে তখন সে নিজেই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে শুরু করল। প্রথমে সে ভেবেছিল যে মন্ত্রণালয়ের কাউকে দিয়ে এ-কাজ করাবে। পরে শুনল যে স্বয়ং মন্ত্রীর নিষেধ আছে তখন সে নিজে ব্যাপারটাতে নেমে পড়ল। এক সপ্তাহর জন্য সুন্দরবন গিয়ে সে বার জোড়া ট্টুথ বার্ড ধরে আনল। আবুল আহাদ তার সেক্রেটারির কাজে মোটেও সন্তষ্ট হলেন না। তিনি তাকে পাখিগুলো ছেড়ে দিতে বললেন।‘ আমি ভাবছি দেশ জুড়ে একটা জরিপ করব যাতে দেশে কতগুলো ট্টুথ বার্ড আছে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়, আহাদ বললেন।

মন্ত্রী বললেও তার সেক্রেটারি সে কথা মানল না। সমন্ত সুন্দরবনের ওপর জরিপ চালিয়ে আরও বার ছোড়া ট্টুথ বার্ডের সন্ধান পাওয়া গেল। সারা দেশের কাজ সম্পন্ন হলে আরও চার জোড়ার খোঁজ পাওয়া গেল। সেক্রেটারি এবার বলল, স্যার তাহলে মোট হলো আঠাশ জোড়া। ত্রিশ দিন না হোক ২৮ দিন খেলেও ইনশাল্লাহ আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সন্ধ্যায় তার সেক্রেটারি তার অফিসে একটা ট্টুথ বার্ড রোস্ট করে নিয়ে এল।
তার পরিবার পরিজন, শুভাকাঙ্খী এবং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আশ্বস্ত হলেন যে আহাদ ট্টুথ বার্ড খাওয়া শুরু করেছেন। তাদের মনে কেবল এই বাসনা যে আহাদ সুস্থ হয়ে উঠবেন।

পর পর দুই দিন ট্টুথ বার্ড খাওয়ার পর আহাদ চরম অস্বস্তি অনুভব করছেন এটা ভেবে যে এই আঠাশ জোড়া ট্টুথ বার্ড যখন শেষ হয়ে যাবে তখন ট্টুথ বার্ড প্রজাতিও কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে না পৃথিবী থেকে? তার মনে হল, এই পৃথিবীর সব কাক যদি মরে যায় তাহলে কি আমরা আরও আবর্জনায় ডুবে যাব না? আর ট্টুথ-বার্ড যেখানে রোগ আরোগ্যকারী পাখি তার বিলুপ্তি তো কোনভাবে কাম্য নয়! তার মনে একটা ক্ষীণ আশা জেগে উঠল হাসপাতালের গবেষক দলটির কথা ভেবে। পরে আশংকা হলো, পরিবেশের ভিন্নতার কারণে পাখিগুলো যদি ওখানেও না বাঁচে! তার মনের মধ্যে একটা ‘হায়! হায়!’ অনুতাপ জোগে উঠল। ‘না, একটা ট্টুথ বার্ডও আর হত্যাা করা যাবে না। এদের বাঁচাতে হবে। সংরক্ষণ করতে হবে সমস্ত পৃথিবী আর এর মানুষের ভালোর জন্যে!

আহাদ কাউকে কিছু না বলে অপহরণ করে আনা পাখিগুলোকে জীবিত চাইলেন। তার সেক্রেটারিকে তিনি বললেন যে এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি একজন পাখি বিশারদ ও একজন প্রকৃতিবিদকে নিয়ে একটা ছোট্ট বনে পাখিগুলোর অর্ধেক ছেড়ে দিলেন। তাদের কাজ হলো সেখানে পাখিগুলোর রক্ষনাবেক্ষণ ও বংশবিস্তারের সুযোগ করে দেয়া। বাকি পাখিদের তিনি নিজ হাতে তাদের আদি বাসভুমি সুন্দরবনে রেখে এলেন।
এরপরও ট্টুথ-বার্ড হত্যা থামল না। প্রতি সকালে ও সন্ধ্যায় তার সামনে ভাজা ট্টুথ বার্ড আসছে। জীবনে এই প্রথমবারের মতো তার মনে হলো যে তিনি কোন গভীর বিপদে পড়েছেন। তার সেক্রেটারি ধমক খেয়ে একাজে আর অগ্রসর হয়নি কিন্তু তার পরিবার ও অন্যরা থামল না। অগত্যা আবুল আহাদ অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে তাদের কাছে জানতে চায়লেন তোমরা কি চাওনা বাকি কয়টা দিন আমি এই পৃথিবীতে একটু শান্তিতে বেঁচে থাকি?

কোন সন্তোষ জনক উত্তর বা সমাধান না পেয়ে আবুল আহাদের মনে হলো, আজ থেকে যত বেশি দিন আমি বাঁচব পাখিগুলোর বাঁচার সম্ভাবনা তত বেশি কমবে! তার কারণে এ অপূরণীয় ক্ষতির কথা ভাবতে তিনি শিহরে উঠলেন। আজ সন্ধ্যায় তিনি সেই পাখি বিশারদ ও প্রকৃতিবিদের সাথে আলোচনা করে ট্টুথ বার্ড সংরক্ষণ বিষয়ক তার সমস্ত পরিকল্পনা তাদের জানালেন। একটা ছোট্ট উইল করে তার সঞ্চিত কিছু টাকা তাদের হাতে দিলেন। বললেন, যদি এসব বলার সুযোগ আর না হয়! আপনারা আশা করি, আপনাদের কাজ থেকে বিরত হবেন না।

তার গাড়ি ও ড্রাইভারকে তিনি ছেড়ে দিলেন। ড্রাইভার তাকে বাড়িতে পৌঁছে না দিয়ে যেতে চায়লো না। তিনি বললেন, এই তো, একটুখানি পথ। আমি হেঁটেই চলে যাব। ড্রাইভার আজ বড় বেশি ক্লান্ত। সে চলে গেল। আবুল আহাদ একার মনে হাঁটতে হাঁটতে শহরের ব্যস্ত পথ ধীরে চলতে শুরু করলেন। চলতে চলতে সব সাধারণ মানুষের ভিতর নিজেকে তার অসাধারণ বলে মনে হলো না। শুধু মনে হলো, কাল সকালে মানুষ যখন জানবে যে আবুল আহাদ আর নেই তখনও এই জীবনযাপন এই চলাচল একইভাবে বয়ে চলবে। তাছাড়া অজ¯্র মানুষের ভিতর থেকে একজন মানুষ অনুপস্থিত হয়ে গেলে এমন কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু একটা পাখি বা প্রাণ-প্রজাতি যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তবে সে ক্ষতি যে অপুরণীয়!
*******************************************
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×