কয়েকদিন আগে হোলি-উৎসব শেষ হয়েছে। কিন্তু এর আলোচনা-সমালোচনা এখনও চলছে। অনেকের মাঝে হোলি-উৎসব নিয়ে বিরাট আতংক বিরাজমান। এরা ভাবছে: ‘আগামীদিনেও যদি এভাবে হোলি-উৎসব হতে থাকে—তাহলে, আমাদের ধর্মের কী হবে?’ আসলে, এরা কেউই ধার্মিক নয়। আর ধার্মিক কখনও কারও ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে না।
ফাল্গুন-মাসের পূর্ণিমাতিথিতে হিন্দুসম্প্রদায়ের দোলযাত্রা বা হোলি-উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আর এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। বাঙালির জনজীবনে হোলি-উৎসব একটি স্বতঃস্ফূর্ততার বিষয়। এখানে, কাউকে জোর করে হোলি-উৎসবপালন করতে বলা হয় না। এটি একটি সার্বজনীন উৎসব। তাইতো দেখা যায়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এতে অংশ নিয়ে নিয়ে থাকে। তবে মূলত এটি হিন্দুসম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠান। এখানে, অনেক বিদেশীরাও হাসিমুখে অংশ নিয়ে থাকে।
চলতি বছরে হোলি-উৎসব নিয়ে এদেশের নানাপণ্ডিত (অবশ্যই আত্মস্বীকৃত-পণ্ডিতশ্রেণী) নানারকম মতপ্রকাশ করেছে। কয়েকদিন যাবৎ এদের লেখাজোখা পড়লাম। আর দেখলাম, দেশের অনেক মানুষই সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠছে। এদের লাগামহীন-বক্তব্য জাতিগত-সংঘাতের শামিল।
অনেকে আবার আপত্তি তুলেছে—এই বছর নাকি কতিপয় হিজাবপরা-স্ত্রীলোকের গায়ে-মুখে কে বা কারা হোলির রঙ মাখিয়ে দিয়েছে! কী সাংঘাতিক কথা! ধর্মনাশের চক্রান্ত! খবর যাই হোক, এই অপকর্মটি যারা করেছে—তারা এদেশেরই একশ্রেণীর মুসলমান-নামধারী কুলাঙ্গার। আর এরা জন্মগতভাবে সাম্প্রদায়িক, সাম্প্রদায়িক, আর সাম্প্রদায়িক। কোনো হিন্দু এই কাজটি করতে যায়নি। কারণ, আমরা দেখেছি, কয়েক মাস আগে কাবাঘরের উপরে শিবের ছবি টাঙ্গিয়ে ধরা পড়েছে মুসলমান-নামধারী এক নরপশু—মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম! আর এই মুসলমান-নামধারী-নরপশুরা আমাদের পবিত্র কাবাঘরের উপরে হিন্দুদেবতা শিবের মূর্তি বা ছবি স্থাপন করে তার দায় চাপিয়েছিলো এক গোবেচারা হিন্দু—রসরাজের উপর! কতবড় শয়তান এরা। এরা একইসঙ্গে নিজের ধর্মকে করেছে কলুষিত—অপরদিকে, অন্যের ধর্মে আঘাত করে সাম্প্রদায়িক-দাঙ্গার সৃষ্টি করে সীমাহীন অমানুষিকতার পরিচয় দিয়েছে। আশা করি, আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। এই নরপশুরাই দেশের কতিপয় হিজাবধারী-মহিলার গালে-মুখে হোলির রঙ লাগিয়ে সার্বজনীন হোলিকে কলুষিত ও জাতির কাছে তা প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের দেশের এই পশুশ্রেণীটি একেবারেই সাম্প্রদায়িক। এদের কখনওই অপরের ধর্ম সহ্য হয় না।
এদেশে যাদের পরমত বা পরধর্ম সহ্য হয় না। তারা এবারের হোলি-উৎসব নিয়ে হোলির রঙকে দূষিত করার অপচেষ্টা করেছে। হোলির আনন্দপূর্ণ পরিবেশে রঙের খেলা এদের সহ্য হয় না। এই আনন্দ দেখে এদের মন কলুষিত হয়। আর এরা ঘরে-বাইরে একেকজন আইএস-জঙ্গি হয়ে ওঠে। এরা তাই ক’দিন হোলি নিয়ে খুব লিখেছে। আর এর দায়দায়িত্ব চাপিয়েছে এদেশের সংখ্যালঘু তথা হিন্দুসম্প্রদায়ের উপর।
সামান্য হোলির রঙ দেখে এদেশের অনেকের ব্লাড-প্রেসার খুব বেড়ে গেছে। এরা মনে হয় ঘাবড়ে গেছে। আর তাই, হোলি-উৎসবকে বয়কট করার জন্য নানারকম নেতিবাচক মন্তব্য করেছে, আর লেখালেখিও করেছে খুব। এই সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বলছি: আপনারা শান্ত হ’ন। আর বাঙালি-হিন্দুর হোলি-উৎসবকে সনাতনপ্রথা হিসাবেই মেনে নিন। এগুলোকে আপনাদের ধর্মজ্ঞান করতে বলছি না। বাঙালি-জনসমাজে সকল ধর্মের মানুষ তার উৎসবপালন করে হাসি-খুশি জীবনযাপন করবে—আমরা তা-ই চাই।
২৫/০৩/২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩