somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

”সৃজনশীল নিক্তিতে এ+ বাটখারায় ওজন করা শিক্ষাব্যবস্থা”

১২ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফায়ারিং স্কোয়াড অপেক্ষায় তোমার জন্য ”হে সৃজনশীল নিক্তিতে এ+ বাটখারায় ওজন করা শিক্ষাব্যবস্থা”

শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এই তিন সম্প্রদায় সৃজনশীল এ+ বাহিত প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হাতের তালুতে ঢেলে মধু খাওয়ার মত দু’এক জায়গায় টার্চ করছে আর সুস্থ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দিলে ঐ মানুষগুলো তাদের ভেতরের জীবানুগুলো সাথে করে পরলোক গমন করবে এ কথা সত্য কিন্তু যে কারনে তারা এহন সংক্রামক রোগের জীবানুতে আক্রান্ত হয়েছে তার টিকা না দিলে ফায়ারিং স্কোয়াড থিউরী কাজ করবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

তাই মনে করি ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়ার আগে কোথা থেকে এসে কিভাবে এ ভয়ংকর জীবানু কতিপয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক সম্প্রদায়কে আক্রান্ত করল তা চিহিৃত করে জীবানুর সৃষ্টির কারনের চিকিৎসা করা দরকার।

প্রশ্ন ফাঁস হয় একথাটি শিক্ষার্থীরা এক সময় প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে লজ্বায় মুখ দেখাতে না পেরে আত্নহত্যাও করেছে বহু শিক্ষার্থী।ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সংগ্রহ তো দূরের কথা অভিভাবকের জ্ঞাতসারে সন্তানের নকল করে পরিক্ষা দেওয়া ব্যতিক্রম ঘটনা হিসাবে আমাদের সমাজে প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।।পরিক্ষার হলে নকল শিক্ষার্থীদের চুরি করেই করতে হত।শিক্ষকরা নকলে সহযোগীতা না করে বরং নিজেরাই ছাত্রদের বহিস্কার করত।

ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়ার পূর্বে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদের মানসিকতার কেন এমন আমূল পরিবর্তন হল সে কারন খুঁজে উপযুক্ত প্রতিষেধক না দিলে সমাধান টেকসই হবে না।

শিক্ষকদের পাশ করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ+ কে বানানো হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রের সাফল্য মাপার বাটাখারা। ছাত্র/ছাত্রী ফেল করলে বা যথেষ্ট পরিমান এ+ না পেলে শিক্ষকের রুটি রুজি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়।বোঝার উপর শাকের আঁটি যে সিষ্টেম কোন দিন দেখেও নাই শোনেও নাই পড়েও নাই এমন এক সিষ্টেমে ছাত্র/ছাত্রীদের পড়াতে হচ্ছে আবার পাশ ফেল ও করাতে হবে।

এ যেন সকল আম গাছকে অফিস নির্দেশ দেওয়া হল “ হে আম গাছ সকল, আগামী বছর থেকে আমের বদলে লাল টুকটুকে থোকা থোকা লিচু প্রসব করতে হবে। এ নির্দেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে।” তার মানে লিচুর মুকুল আসার দরকার নাই, দিনে দিনে গুটি হওয়ার দরকার নাই, সার বিষ দেওয়ার দরকার নাই, রাত জেগে বাদুর কাঠবিড়ালী পাখপাকালি তাড়ানোর দরকার নাই। একবারে লাল টুকটুকে রসে ভরা ডাঁসাডাঁসা লিচু ওরফে সৃজনশীল এ+ প্রসব করতে হবে।

এ নির্দেশনা অনতিবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু এ+ আর এ+ আর সবাই পাশ। আম গাছ লিচু প্রসব করেছে ঠিক তবে দেখতে লিচুর মত, ফ্লেভারটা আমের মত আর স্বাদটা মেহগনি গাছের বিচির মত তিততততা।

সৃজনশীল নিক্তিতে সবাই পাশ আর গন এ+ নামক দুইটা বাটখারায় ওজন করা শিক্ষাব্যবস্থার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন একটি রোগ নতুন নামে আর্বিভুত হল প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস নামে। অবশ্য নতুন লেজুড় সাথে করে এনেছে উত্তরপত্র ফাঁস নামে এক্কেবারে নতুন মাল। সৃজনশীল নাম দিয়ে এমন জিনিস বানাইছে তারা যে সিলেবাস বেলের সাথে সরবত বানায়ে খেয়েও ছাত্র/ছাত্রী প্রশ্ন বুঝতে পারবে না তাই শুধু প্রশ্নপত্র পেলে হবে না সাথে উত্তরপত্রও লাগবে।

যে সিষ্টেম নিজে বুঝি না তা অন্যকে বোঝানো নিজের সাথে করা বড় রকমের প্রতারনা । আর এ প্রতারনা করতে শিক্ষক সম্প্রদায়কে বাধ্য করা হয়েছে।ফলাফল: টিকে থাকার দায়ে শিক্ষকরা অনৈতিক পথে পা ফেলতে বাধ্য হয়েছে।

”সিরাজগঞ্জ জেলাকে উত্তর বঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এখানে তাঁতের লুঙ্গি, গামছা ও গেঞ্জি তৈরী হয়। এ অঞ্চলের চলন বিল দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বিল” এ গল্প টুকু লিখে প্রশ্ন করা হল ”ট্রাকের চাকার টিউবে দুইটা ইটের খোয়া ভরে বাতাস দিলে তা কি ভাবে ধানক্ষেতে ইলিশ মাছ চাষের ফলন বাড়াতে সাহায্য করবে বর্ননা কর”।পুরো সিলেবাস গুলায়ে খেয়েও শিক্ষার্থীরা দিশাহারা প্রশ্নে আসলে কি চাওয়া হয়েছে।এমনই এক উদ্ভট সিষ্টেমের নাম সৃজনশীল।

এ+ এমন উদার ভাবে বিলি করা হয়েছে যে ক্লাস রুমের টেবিল চেয়ার ও আজ কাল এ+ পায়।কে যে আসলে মেধাবী আর কার প্রকৃত মার্কস ৬০ কে বাড়িয়ে এ+ বানানো হয়েছে তা বোঝা যেন এক গোলকধাঁধা। এ+ কে সমাজে এতটা সহজলভ্য ও গ্লোরিফাই করা হয়েছে যে নিজ সন্তানের একটা এ+ না থাকাটা মান সম্মানের ব্যাপার বা প্রেষ্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত সহজ জিনিস অথচ আমার ছেলে পায় না!!!!!!! আবার জানা জিনিস/পারা জিনিস ছেলে মেয়ে লিখে আসতে পারছে না কারন প্রশ্নই বুঝতে পারছে না। একটু কিছু সময় বেশী পাওয়া গেলে প্রশ্নটা বোঝার জন্য সুবিধা হবে এ ভাবনায় অভিবাভকরা সমিতি করে চাঁদা তুলে প্রশ্ন কিনছে নীতি নৈতিকতার মায়েরে বাপ করে।

জাতিগত ভাবেই আমরা একটু দূর্নীতি প্রবন। সহজ সমাধান হিসাবে এ পথটি বেছে নিয়েছে কতিপয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকরা।

সৃজনশীল এ পদ্ধতি যেখান থেকে এসেছে সেখানকার জন্য হয়ত ভাল। কিন্তু একটা কথা আবারও বলছি আমার সন্তানের জুতা হতে হবে তার পায়ের মাপে। ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার লম্বা লম্বা পা ওয়ালা বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর জুতা আমার সন্তান পায়ে দিয়ে এক কদম হাটলে দুই কদমের সময় পা থেকে জুতা খুলে পড়ে যাবে।সৃজনশীল পদ্ধতি আমাদের জন্য কাজ করছে না।

সৃজনশীল পদ্ধতি প্রয়োগ করে ক্লাস রুমে আইনষ্ট্যাইন, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, নিউটন সৃষ্টি করার উদ্ভট প্রকল্প বিদ্যমান অবকাঠামোতে সম্ভব না। যে আইনষ্ট্যাইন হবে তার জন্য তথাকতিথ সৃজনশীল পদ্ধতির দরকার নেই আর যে নিউটন হবে না তার জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি কাজ করবে না। ফলাফল তথাকতিথ সৃজনশীল কারো জন্যই কাজ করছে না।

সৃজনশীল পদ্ধতি কারো জন্য সুফল বয়ে না আনলেও শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এই তিন সম্প্রদায়কে দিশেহারা করে ফেলেছে। তাদের অনৈতিক পথে পা বাড়াতে বাধ্য করেছে।

সমস্যার মুলটা কোথাই তা চিহিৃত না করে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দিলে এ রোগের জীবানু তাদের সাথে পরলোক গমন করবে না।এটা নিশ্চিত।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৪৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×