আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছেলে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আত্নহত্যা করেছে পড়লাম। আরো যে সকল ছেলে মেয়ে হরমোনের নারকীয় নৃত্যে আত্নহত্যা করার কথা ভাবছে তাদের জন্য।
আমার বাম হাতের দিকে তাকালে আমার হাঁসি পাই খুব। একটা S জ্বল জ্বল করছে তাতে। জলন্ত সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে লেখা একটা মেয়ের নামের অদ্যাক্ষর। হাঁসি পাই হরমোনের ক্যারিক্যাচাল দেখে।
সে মেয়ের সংঙ্গে আমার প্রেম বা ভালবাসা হয় নাই। অনেক দূঃখ পেয়েছিলাম। ১৮০ মিলির কেরুর ফাইন ব্রান্ডি এক নিশ্বাসে গলায় ঢেলেছিলাম।
এখন কি সম্ভব আমার পক্ষে জ্বলন্ত আগুনে নিজের হাত পুড়িয়ে অন্যের নাম লেখা???? না সম্ভব না। সময় পার করে ফেলেছি। বদ হরমনটা আর বানের পানির মত মস্তিষ্কে বহমান না। আবেগ এখন আর ডাইরিয়ার মত পিচকারী দিয়ে বের হয় না।
তারপর সময়ের বিবর্তনে বুঝতে শিখেছি যে ভালবাসে না তার কাছে ভালবাসার জোরালো দাবী একটা ক্রাইম সৃষ্টির সুযোগ তৈরী করে। বরং যে ভালবাসে তার ভালবাসা হৃদয় পেতে গ্রহন করলে জীবনটা ভালবাসাময় হয়ে ওঠে।
জীবন নদীর প্রতিটা বাঁকে বাঁকে এমন কিছু সুহৃদয়ের মানুষ পেয়েছি যাদের ভালবাসা যায়। প্রায় সব সময় মনে হয়েছে আগের বাঁকের চেয়ে এ বাঁকের ভালবাসা ডালি আরো বেশী সমৃদ্ধ।
মানব জীবনের এক ক্রান্তি কালে হরমোনের নারকীয় নৃত্যে আমাদের মনে হয় ঐ মেয়েটার বা ঐ ছেলেটার ভালবাসা বিহীন জীবন অর্থহীন। না পাওয়ার বেদনায় আত্নহত্যা করার মত ফালতু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
হেমোসেফিয়েন্সের সুচনা লগ্ন থেকে যে ডিএনএ এর ধারা বহমান তা থামিয়ে দিলে তুমি তোমার চোখে অসামান্য একটা মেয়ের জন্য!??
তুমি কি জানো ছিয়াত্তুরের মনন্ত্বরে যখন এ দেশের তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ মারা গিয়েছিল তখন মৃত্যুর সংঙ্গে লড়াই করে তোমার পূর্বপুরুষ জয়ী হয়েছিল তার প্রমান তুমি।
একাত্তুরের সেই উত্তাল দিন গুলোতে যখন যেকোন সময় মরে যেতে পারে তেমন পরিস্থিতিতেও জয়ী হওয়া ডিএনএ তোমার শরীরে তার প্রমান তুমি।
এমনও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ প্রত্যেকটি লড়াইয়ে জয়ীদের যে ডিএনএ তোমার মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে ছিল তার গতি এমন ভাবে থামিয়ে দিলে তুমি!!!!!!!!
হরমোন তোমার চিন্তাশক্তিকে এমন করে ওএসডি করে ফেলেছে!!!!! নিজেকে হত্যা করলে কার জন্য??? যে তোমাকে ভালবাসে না তার জন্য।?
যে ভালবাসে তার জন্য তো জীবন দেওয়া যায়। সে মৃত্যু গৌরবের। কিন্তু যে ভালবাসে না তার জন্য জীবন দেওয়া জীবনের কি নিদারুন অপচয়।
সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নতুন সম্ভাবনা দ্বার খুলে দেয়। প্রেমে ব্যর্থতা নতুন প্রেমের সম্ভাবনা তৈরী করে।
প্রেম ভালবাসা কি সে সর্ম্পকে লালন বলেছে
“বলব কি সেই প্রেমের কথা,
কাম হয়েছে প্রেমের লতা,
কাম ছাড়া প্রেম যথাতথা,
নয় সে আগমন।
করি কেমনে সহজ শুদ্ধ প্রেম সাধন……”।
আমি নিশ্চিত লালনের উপরোক্ত তত্ত্ব অনুসারে তাদের মধ্যে কখনই প্রেম হয় নাই। কারন এ তত্ত্ব অনুসারে প্রেম হলে(কাম হলে) হরমনোর নারকীয় নৃত্য স্থিমিত হয়ে পড়ে। শেষের লাইন এর চেয়ে প্রাঞ্জল করে বলা বিদ্যানোচিত হবে না।