somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেচে থাকুক বাস্তবিক সব ভালোবাসা .....

০১ লা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। চোখ পড়লো খোলা এক রেস্টুরেন্টে। ভেতরে এক ভদ্রলোক সাথে পরিচিত এক মহিলাকে দেখলাম। ভদ্রলোক উল্টোমুখ হয়ে বসে আছেন।মহিলাটাও সিরিয়াস ভঙ্গীতে কি যেন বলছেন। আমি এগিয়ে গেলাম। না অন্যকেউ না।আমার খুব কাছের এক ভাই আর ভাবি। আমার কিছুটা অবাক লাগছে কারণ ওই ভাবি বা ভাই কেউ এই টাইপের রেস্টুরেন্টে খাওয়াতো দুরের কথা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাননা কখনো।ভালো রেস্টুরেন্ট ছাড়া লাঞ্চ ডিনার বা কোন কিছু কল্পনাতীত।

আমাকে দেখেই তারা ডাকলেন খুব জরুরী ভাবে। বললাম- "কি অবস্থা ভাবি?"ভাবি বললেন- "ভাই আসছো ভালই হইছে। কিছু আলাপ করি। তোমার ভাই এক্কেবারে গাধা। হিসাবে কাঁচা”। ভাই লজ্জা পেলেন বোধয় ভাবির দেয়া এহেন সার্টিফিকেটে।আমি হাসলাম। এই হাসি দিয়ে ভাইকে যেন ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম- মেয়েরা তাদের স্বামীকে সবসময় গাধাই ভাবে। তারা মনে করে স্বামীরা টাকা পয়সার হিসাব কম বোঝে। এ তেমন কিছুনা ভাই। বি ইজি।

তাদের দু'টা মেয়ে। এক ছেলে। বড় মেয়ে এবার এইচএসসি পাশ করেছে। রেজাল্ট মোটামুটি ভালো। এই রেস্টুরেন্টে বসে আলোচনা হচ্ছে মেয়ের ভার্সিটি ভর্তি নিয়ে। সামনে সাদা কাগজ। ভাবি বললেন- আতিক, ভাই লেখতো...আমি লেখছি। ভাবি বলছেন- "আমি পার্লারে বাবদ যে খরচ করি ধর হাজার দুয়েক। লেখো পার্লার খরচ বাদ। "আমি খাতায় লিখলাম দু'হাজার। পাশ থেকে ভাই বলছেন-“এবার লেখো ডাক্তার বাবদ প্রতিমাসে তিনহাজার। এখন থেকে ডাক্তার বাদ”।পাশ থেকে ভাবি ক্ষেপে গেলেন। “এই তুমি ডাক্তার বাদ দেবে কেন। তোমারতো কোমরের ব্যাথা এখনো ভালো হয়নি”।ভাই বলছেন- "না ধুর। কিসের ব্যাথা। এই ব্যাথার আর ওষুধ না খেলেও হবে। শুধু খরচ। তুমি লেখো। "আমি লিখলাম তিনহাজার। এ পর্যন্ত তাদের অতিরিক্ত থেকে বের হলো মোট পাঁচহাজার। 

এবার ভাবি বলছেন-“প্রতি সপ্তাহে মাছ মাংস না খেয়ে এখন থেকে মাসে একবার মাংস একবার মাছ। তাহলে খরচ বাঁচল কত, সোহান যোগ কর আরও আড়াই হাজার, কত হলো?” লিস্টে যোগ হল সাড়ে সাত হাজার টাকা।এবার পাশ থেকে ভাই বললেন- “বাসায় ডিশ লাইন কেটে দিলে কেমন হয়। এসব চ্যানেলে কি সব দেখায়। দেখার মত না। লাইন কেটে দিলে বাঁচবে আরো ছয়শত। পত্রিকা দুইটা নেয়ার দরকার নাই। একটা নিলেই হবে- সোহান লেখো আরো এক হাজার”।আমি যোগ করলাম আরো এক হাজার। ভাবি বললেন- এখন থেকে তুমি অফিস থেকে আর সিএনজি করে বাসায় আসবেনা। আমিও আর সিএনজি করে বাসায় আসবো না। কোথাও যাবোও না। হাঁটাহাঁটি শরীরের জন্য ভালো। এতে করে মাসে আমাদের বাঁচবে আরো হাজার চারেকের মত। "কিন্তু ভাই এই বয়সে তিন কিমি কিভাবে হাঁটবে?

আমি ভাবছি। টাকা বাঁচানোর লিস্টে আর যোগ করতে ইচ্ছে করছেনা। এই দুজন নিজেদের সব সখ মাটি করে দিচ্ছে, নিজেদের শরীরকে কষ্ট দেয়ার রাস্তা বের করেছে। টাকা বাঁচাচ্ছে।মেয়েকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করাবে, প্রতি সেমিস্টারে অনেক টাকা লাগবে তাই। ইতিমধ্যে তারা তাদের যা সঞ্চয় ছিলো - ভেঙ্গে ফেলেছে সন্তানতো আরো দু’টা আছে।আমি একসময় বলেই ফেললাম- ভাই নিজেদেরকে এভাবে কষ্ট দেয়ার কি দরকার। মেয়েকে কি আরও পড়াতেই হবে? ভর্তি করাতেই হবে? আর তাছাড়া মেয়েরতো বিয়ে হবে , অন্যঘরে যাবে।ভাই কিছুটা বিরক্ত হলেন মনে হয় এমন কথা শুনে।বললেন- "ধুর মিয়া তুমি কি বুঝবা। আমার মেয়ে , আমার ছেলে আমার কলিজা। তারা বড় হবে, উচ্চশিক্ষিত হবে। আমাদের জীবন দিয়ে হলেও তাদেরকে অনেকদূর পর্যন্ত পড়াবো।যেদিন বাপ হবে সেদিন বুঝবে।"

আমি আবারও লিস্টে মনোযোগ দিলাম।এবার ভাই কেমন যেন চমকে গেলেন। বললেন- “আহা মেয়ে ভার্সিটিতে সারাদিন থাকবে। দুপুরে খাবে কি। বন্ধু বান্ধবীরাও মাঝে মাঝে আবদার করবে তার কাছে, মেয়ে লজ্জা পাবে,তুমি লিস্টে দু হাজার যোগ কর। আমি সকালে একবারে ভাত খেয়ে বের হবো, দুপুরে বাইরে লাঞ্চ করবোনা। শরীরটাকে একটু নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। ডায়েট করতে হবে। দু হাজার টাকা এমনি বেঁচে যাবে।এভাবে আমার লিস্টে টাকার পরিমাণ অনেক বাড়তে থাকে। ভাই সিগারেট ছেড়ে দেবেন। যিনি হার্টের অসুখেও সিগারেট ছাড়লেন না তিনি কিনা এবার সিগারেটও ছেড়ে দেবেন।মাসে আরও কিছু টাকা বাঁচবে। কাজে লাগাতে পারবে মেয়ের কাজে।তারা দু’জনেই টাকার যোগফল শুনে শব্দ করে হাসে। ইয়েস আমার মেয়ের টিউশান ফি জোগাড় হয়ে যাবে প্রতি মাসে এভাবেই।

তাদের প্রশান্তির হাসি দেখলেও আমি হাসতে পারছিনা।আমার মন খারাপ হতে থাকে।তাদেরতো আরো দু সন্তান আছে। তাদের পেছনেওতো অনেক খরচ। সে খরচ ম্যানেজ করতে না জানি এই দম্পতি আরও কত কষ্ট করবে তার হিসাব নেই...তারা টাকা বাঁচানোর লিস্টটা বারবার দেখছে। চা খাচ্ছে। আমার চা খেতে ইচ্ছে করছেনা। আমি ওখান থেকে চলে এলাম। আমাদের সব মা বাবারাই হয়তো এভাবেই নানা কৌশল করে নিজেদেরকে কষ্ট দেন। টাকা বাঁচিয়ে সন্তানের পেছনে খরচ করেন। “কি খেলাম কি পেলাম এসে যায় কি তাতে সন্তান মোর থাকে যেন সুখে শান্তিতে”। আমি ভাবলাম ; মেকি ভালোবাসার ভীড়ে বেচে থাকুক বাস্তবিক এ ভালোবাসা গুলো।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×