আজ শুক্রবার, সারা সপ্তাহ শেষে একটু শান্তিমত ঘুমানোর দিন , কিন্তু ১২-১৫ বছর আগেও শুক্রবারের মানে আমাদের অনেকের কাছেই ছিল অন্যরকম ।
শুক্রবার মানেই পুরা সপ্তাহ শেষে একটা দিন বিটিভিতে সিনেমা দেখার দিন। সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম কখন শুক্রবার হবে , কখন ৩:৩০ বাজবে , কখন সেই শাড়ি পরা মহিলা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলবে এখন আপনারা দেখবেন পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ... শ্রেষ্ঠাংশে ... যেখানে আনোয়ার হোসেন নাহলে প্রবির মিত্র নামটা থাকতই , আর দিলদার নামটা শুনলেই মনে একটা আলাদারকম শান্তি পাইতাম । ছবি দেখা শেষে সন্ধ্যার একটু আগের বাকিটা সময় যখন খেলতে আসতাম তখন চলত ছবির মজার জায়গাগুলা অভিনয় করে দেখানো , কখনও বা নায়কের মত মারপিটের মিথ্যা অভিনয়। আর এর মধ্যে কারেন্ট চলে গেলে পুরা সপ্তাহটাই মাটি। আর যেদিন সালমান শাহ এর ছবি দেখানো হবে সেদিন যেন ঈদ , এমন ই ছিল দিনগুলা। এমনও হইসে হয়ত কারেন্ট চলে গেছে আশেপাশে কারো বাসায় ব্যাটারি দিয়ে টিভি চালানোর বেবস্থা থাকলে সেখানে চলে গেছি ছবি দেখতে , মফস্বলে পাশের বাসায় তখনকার দিনে যাওয়া এমনকি টিভি দেখতেও সেটাকে স্বাভাবিক ই মনে হত অন্তত আমাদের বাচ্চাদের কাছে ।
তখনকার দিনে বিটিভির একটা সিনেমা দেখার জন্য সবাই কেমন পাগল ছিল তার একটা ছোট উধাহরণ দেই-
তখন একবার বিটিভি নিয়ম করল যে শুক্রবারের ছবি শনিবার দেখানো হবে , সময়টা ১৯৯৯ সাল।থাকি দিনাজপুরের একটা থানা শহর বিরামপুর এ, পড়ি ওখানকার একটা স্কুল এ, স্কুল আবার শনিবার খোলা , এখনকার অনেক স্কুল এর মত শনিবার আমাদের কোন বন্ধ ছিলনা । ত শনিবার ছবি দেখাবে তাই আমি স্কুল এ যাইনাই , আমার মত প্রায় সবাই ই যায়নাই । এমন অবস্থা যে আমাদের ক্লাস ৪ এর ১০০ অথবা একটু বেশি ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে আমার যতদুর মনে পড়ে গেসিল মাত্র ৫-১০ জন এর মত। ক্লাস ১, ২, ৩,৫ এর অবস্থা ও খুব সম্ভবত এর চেয়ে ভালনা । ত পরেরদিন আমি স্কুল এ যাইনাই , খুব সম্ভবত কেউ খবর দিসিল যে সকালের শিফটের ১, ২, ৩ রে দিসে ভালমত । পরেরদিন স্কুল এ যায়া শুনি হেড স্যার ক্লাস এ আইসা নাকি একেকটারে মারতেসিল আর বলতেসিল , কি ছবি দেখাইসে কাল , পরিবার??? নায়ক কে জসিম?? এই টাইপ কথা বার্তা সেই শনিবার দেখাইসিল আমার মতে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একশন নায়ক জসিমের পরিবার ছবিটা । ছবি দেখার এমন ই নেশা সবার , মার খাওয়ার পরও খুব একটা আফসোস মনে হয়না কারো ছিল , পরের কোন এক শনিবার স্কুল এ গেসি, সেদিন আর বাসায় থাকিনাই , এক ফ্রেন্ড টিফিনের সময় গেসে বাসায় খাইতে আর নামাজ পড়তে , অরে জিজ্ঞেস করলাম , কি ছবি দেখায় , কইল কাজের বেটি রহিমা , নায়িকা শাবানা আছে , শাবানারে নাকি খালি মারে। মনটা দুঃখে ভরে গেসিল , ইশ দেখা হইলনা ছবিটা , পরে অবশ্য বিটিভির বারবার এক ছবি দেখানোর কল্যাণে অনেকবার দেখসি ছবিটা
এখন আমার কাছে শত শত ছবি, শুধু বাংলা হিন্দি ইংরেজি না , চাইনিস করিয়ান , রাশিয়ান এমনকি ব্রাজিলের ছবিও দেখা হয় যেখানে আগে একটা ইংরেজি ছবি দেখলে মনে হইত বিশাল জিনিস। তারপরও আমার কাছে আগের সেই বিটিভিতে সারা সপ্তাহ একটা ছবি দেখার জন্য যে আগ্রহ , যে ভালোলাগা ওইটার মত লাগেনা । যেমন এখন পিসিতে অনেক টিভি সিরিস থাকলেও সেই সন্ধ্যায় আলিফ লায়লা দেখার জন্য,সেই আলিফ লায়লার সুরে সুরে শোন এক নতুন কাহিনি মন ভরে দেয় তার বাণী গানের সাথে সাথে আলিফ লায়লা শুরু হয়ার জন্য যেমন পাগলের মত অপেক্ষা করতাম সেটা আর কখনো হবেনা।
যেমন আগের মানুষরা বিটিভিতে সারা সপ্তাহে একটা নাটক দেখার জন্য অপেক্ষা করত যেটা আমাদের অতটা করা লাগেনাই, তেমনি আমরা কিভাবে অপেক্ষা করতাম এখনকার পোলাপানরা জানেনা ।
সারা সপ্তাহ ধরে বিটিভির একটা বাংলা সিনেমা,আলিফ লায়লা,রবিন হুড, সিন্দবাদ দেখার জন্য যে মধুর অপেক্ষা সেটা শুধু সেই সময়ের আমরা যারা আছি তারাই অনুভব করতে পারি,বলে বোঝানো যাবেনা ব্যাপারটা আসলে কেমন ছিল ।
লেখাটা ১ বছর আগে একবার দিসিলাম, সেই সব শুক্রবারের দিনগুলার কথা মনে হয়ে আবারো দিতে ইচ্ছা হইল
কি ছিল সেই দিনগুলা , ভাবলেই নস্টালজিক হয়ে যাই
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪