শত ভাইয়ের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ,সমগ্র জাতির সাথে নিয়তি নিষ্ঠুর পরিহাস করে কেড়ে নিল শাহীনাকে। আজ শাহীনা মানে নিজের জীবন তুচ্ছ করে দুর্গতদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া অসংখ্য ভাইয়ের ভালবাসা। আজ শাহীনা মানে দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করা এক সাহসী যোদ্ধা। আজ শাহীনা মানে বিত্তের লালসায় বলি হ্ওয়া শত সহস্র গার্মেন্টস শ্রমিক। আজ শাহীনা মানে রক্ত পানি করা শ্রম দিয়ে এ দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়া লক্ষ লক্ষ পোষাক শিল্পী। তাই শাহীনাকে আমরা ভুলতে পারিনা, তবে শাহীনা হতে দিতে চাই না আর কোন রহিমা, ফাতেমা, সখিনাকে।
আমরা বড় আবেগ নির্ভর জাতি সব কিছু নিয়ে হৈচৈ করি, কিন্তু বেশি দিন মনে রাখি না। আমরা ভুলে গেছি স্পেক্ট্রামে নিহতদের কথা, ভুলে গেছি তাজরিনে জীবন্ত দগ্ধদের কথা। হয়তো ভুলে যাব রানা প্লাজার নিহতদের কথা, হয়তো ভুলে যাবো শাহীনার কথা। দু একজন সোহেল রানা বা আমিনুলদের কারাদণ্ড দিয়ে হয়তো আমাদের দুঃখ, ক্ষোভ লাঘব করা যাবে, তবে রক্ষা করা যাবেনা ভবিষৎ এর শাহীনাদের, ফিরিয়ে আনা যাবেনা বিদেশীদের কাছে ভুলন্ঠিত হওয়া আমাদের ভাবমূর্তি। সে জন্য প্রয়োজন ভবিষৎ এর শাহীনাদের রক্ষা করতে কাজ করা। আজ হয়তো বিজিএমইএ বা অন্যান্য বিভ্ন্নি সংগঠন চাপে পড়ে বা বিবেকের দংশনে বলছে পোষাক শ্রমিকদের জন্য অনেক কিছু করার কথা। সময় অতিবাহিত হবে, চাপ কমে যাবে, বিবেকের ক্ষত শুকিয়ে যাবে, ভুলে যাবে শাহীনাদের জন্য প্রদত্ত অঙ্গীকারের কথা। সে কারণে জাতিকে বার বার বা বছরে অন্ততঃ একবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে শাহিনাদের কথা
এর জন্য প্রয়োজন ২৪ এপ্রিল (রানা প্লাজা ধসে পড়ার দিন) কে "শাহীনা দিবস" ঘোষণা করা শাহীনা দিবস মানে স্মরণ করা আত্মত্যাগী সকল পোষাক শ্রমিককে, শাহীনা দিবস মানে রহিমা, ফাতেমা , সখিনাদের আর শাহীনা হতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা, শাহীনা দিবস মানে পোষাক শ্রমিকদের ঘামের মর্যাদা দান। এ দিবসে রাষ্ট্র থেকে কিছু র্কাযক্রমকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা যেতে পারে। যেমনঃ-
এই দিনে-
১) বাংলাদেশের সকল পোষাক শিল্প বন্ধ রাখা
২) প্রত্যেক পোষাক কারখানা মালিক এবং শ্রমিকের একটি সভা করা যেখানে শ্রমিক মালিক পারস্পরিক র্স্বাথ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে
৩) মালিকের পক্ষ থেকে পোষাক শ্রমিকদের জন্য ন্যুনতম আপ্যায়নে ব্যবস্থা বা কোন উপহার প্রদান করা
৪) এই দিনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে বিজিএমইএ , বিভ্ন্নি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কিছু সাধারণ শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনায় বসা, ইত্যাদি
আমার ধারণা এর মাধ্যমে মালিক, শ্রমিক উভয়েই উপকৃত হবেন, শত –সহস্র নিহত পোষাক শ্রমিকদের প্রতি সম্মান প্রর্র্দশন করা হবে, কর্মরত শ্রমিকদের মূল্যায়ন করা হবে, সর্বপরি বিদেশের কাছে আমাদের হারানো ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উদ্ধার করা যাবে। তাই মে দিবসের মত,
২৪ এপ্রিল "শাহীনা দিবস" ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২২