somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোর দর্শন

০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




চোর দর্শন বলতে চোর দেখা নয়, চোর এবং চুরি সম্পর্কে আমার কিছু এলোমেলো ফিলোসফি।

অনেকদিন আগের কথা।ফার্মগেট এলাকা দিয়ে হেটে যাচ্ছি, একটা অর্তনাদের আওয়াজ কানে আসায় তার উৎসের দিকে তাকালাম। দেথলাম জনা বিশেক লোক জটলা পাকিয়ে দাড়িয়ে আছে, আর্তনাদের শব্দটা আসছে তাদের ওখান থেকে। বুঝলাম কোন পকেটমার বা চোর ধরা পড়েছে, তার বিচার চলছে। এসব ব্যাপার গুলো আমার ভাল লাগেনা দেখে মাথা ঘামালাম না। আমার পাশ থেকেই এক লোক জটলা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো, তার পর পরই আবার কয়েকটা তীব্র আর্তনাদের আওয়াজ পেলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম সেই লোক হাঁপাতে হাঁপতে বের হয়ে আসছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতে বলল, ”কয়টা দিয়া আসলাম।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি করেছে? উত্তর, “ পকেট টকেট মারসে মনে হয়..”। এরই নাম বীর বাঙ্গালী! কি করেছে জানার দরকার নাই হুজুগে ক‘টা দিয়ে আসলো।

আমার সাথে ল‘পড়তো একটা মেয়ে । একদিন ক্লাসে এসে বললো,” কাল রাতে একটা ভাল কাজ করেছি। স্বাভাবিক কারনে প্রশ্ন করলাম, ”কাল রাতে কি এমন ভাল কাজটা তুমি করলা?”। বলল, “ একটা চোর কে পালাতে সাহায্য করেছি”। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম এই তোমার ভাল কাজ? পরে ইতিহাস যা জানলাম তা হল, গতকাল রাতে ওদের বাড়িতে চুরি করতে এসেছিল এক চোর। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বাড়ির পুরুষরা লাঠি সোটা নিয়ে চোর খুঁজতে নিচে নেমেছে। তিন তলার জানালা দিয়ে মেয়েটি তাকিয়ে দেখে তারে জানালর নিচের সানশেডে চোরটা ভয়ে চুপ করে শুয়ে আছে। তখন সে চোরটাকে বাড়ির লোকের চোখ এড়িয়ে কি ভাবে পালানো যায় সেই বুদ্ধি বাতলে দেয়। আবার প্রশ্ন করলাম, ”এমন কাজ তুমি কেন করলে?” উত্তরের সারমর্ম হল- নির্মম ভাবে পিটিয়েও কোন চোরের চুরি ছাড়ানো যায়নি, বরং আমরা নিষ্ঠুর এটাই প্রমাণ করেছি। তাই সহানুভূতি দেখিয়ে দেখা কোন ফল হয় কিনা। তাছাড়া নির্মমতা তার খুবই অপছন্দ।

আমি আর কিছু বললাম না। আমারো নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা খুবই অপছন্দ, সে নির্মমতা বা নিষ্ঠুরতা যদি নীতিগত কারণে হয় তবুও। জানি চোরকে সহানুভূতি দেখালে চুরি আরও বেড়ে যাবে তাই তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। যদি সে শাস্তি “দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার” এমন হতো তবে কথা ছিলনা। কিন্তু চোর কে উৎসব করে নিষ্ঠুর, নির্মম ভাবে প্রহার করা দেখলে প্রহৃতের চেয়ে প্রহারকারীদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে আমার মনে বেশি প্রশ্ন জাগে।

এবার আসি লেখা চোর প্রসঙ্গে। যদি্ও লেখা চুরি আর বস্তু চুরি এক না। তবুও প্রসঙ্গ যেহেতু চোর বা চুরি তাই এ প্রসঙ্গের অবতারণা। বেশ অনেকদিন থেকে ব্লগে লেখা চুরি প্রসেঙ্গে আলোচনা হচ্ছে অনেকে ডিটেকটিভের মত লেখাচোরদের পাকড়াও করছেন। তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। লেখাচোরকে কিছু উত্তম মধ্যম (লেখার মাধ্যমে) দেয়া প্রয়োজন সেটা্ও মনে করি। তবে লেখা চোরের ভয়ে ব্লগে লেখা দেয়া ছেড়ে দিতে হবে সেটাকে আমি সঠিক মনে করিনা।

লেখা চোরদের সম্পর্কে আমার একটু ভিন্ন দর্শন রয়েছে।দর্শনটি বর্ণনার আগে আমার একটি ডিসক্লেইমার দেয়া প্রয়োজন মনে করছি তা হল আমি শুধু লেখা চুরি নয় থিম চুরি করাটাও অপছন্দ করি তবে লেখা চোরদের প্রতি আমার কোন আক্রোশ নেই আছে করুণা আর ঘৃনা।

আমাদের নিজেদের লেখাকে আমরা সাধারণতঃ নিজ সন্তানের মত বলে থাকি, কেউ নিজ স্ত্রীর মত বলিনা। =p~ আমার স্ত্রীকে যদি কেউ নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেয় তাহলে আমাদের অবশ্যই ক্রুদ্ধ হওয়া উচিত। X( কিন্তু আমার সন্তানের যশ, খ্যাতি দেখে কোন সন্তান জম্নদানে অক্ষম ব্যাক্তি যদি আমার সন্তানের ক্লোন করে কোন অজ্ঞাত শহরে নিজের সন্তান বলে পরিচয় দিয়ে আত্মতৃপ্তি পায় তাহলে আমার ক্রুদ্ধ হওয়ার বা এই ভয়ে সন্তান জন্মদান থেকে বিরত থাকার কি আছে! কারণ এতে আমার বা আমার প্রকৃত সন্তানের কার্যেত তেমন কোন ক্ষতি হয় না। বড় জোর অক্ষম ব্যক্তির এই অনৈতিক আচরণের জন্য ঘৃণা আর করুণা হতে পারে।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- ক‘দিন আগেই এক লেখা চোর ফেসবুক থেকে লেখা চুরি করে আনায় ব্লগ থেকে চিরদিনের জন্য ব্যান্ড হল। এতে ফেসবুকের প্রকৃত লেখকের কি কোন ক্ষতি হয়েছে, হয়নি, বরং লাভ হয়েছে। ফেসবুকের ঐ লেখক বিনা পরিশ্রমে এ ব্লগে খ্যাতি অর্জন করেছেন। শাস্তি পেয়েছে এবং অপমানিত হয়েছে লেখা চোর। প্রশ্ন আসতে পারে যদি ধরা না পড়তো। ধরা না পড়লে কিছু প্রশংসা কুড়াতো চোর লেখক সাথে লেখাটি, তাতে মুল লেখকের কোন ক্ষতি হতো না বরং লেখাটি প্রশংসিত হলে পরোক্ষভাবে এটা প্রকৃত লেখকেরই প্রাপ্তি হতো।

আমার মত অখ্যাত ব্লগারের কথা বাদ দিলাম, যারা এই ব্লগের খ্যাতিমান লেখক/আঁকিয়ে/কবি/রন্ধন শিল্পী তারাও কেউ এমন কোন লেখা/আঁকা এই ব্লগে দেন না, যে লেখা দিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন বা এর মাধ্যমে কোন পদকে ভূষিত হতে পারেন। বেশীর ভাগ ব্লগার এখানে আসেন সময় কাটাতে আর মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে। তার পরও কেন এত ভয়, এত দালাদলি, এত বলাবলি, এত ডলাডলি আমি বুঝে পাই না। মুখের উপর হয়তো কেউ বলে বসবেন, ”আপনার মত অখ্যাত ব্লগারের পক্ষে সেটা বোঝা সম্ভব না।” তাদের এই মতামতকেও আমি শ্রদ্ধা করি

ছবিঃ নেট থেকে প্রাপ্ত এবং এডিটিত।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×