somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ঈদ"এবং "ইদ"- কেন এত বিতর্ক?

২৮ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





থেমিস বিতর্ক শেষ হতে না হতে শুরু হয়েছে “ইদ” বিতর্ক । কোন বিষয়ে তর্ক বিতর্ক হতেই পারে। তর্ক বিতর্ক যুক্তি পাল্টা যুক্তি ছাড়া সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া কঠিন। কিন্তু বর্তমানে যা হচ্ছে তা হল উন্মাদনা। একদল আরেক দলকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং দুরভিসন্ধির অভিযোগও করছেন। যা অনেক ক্ষেত্রে অসত্য্ও নয়, এটাই হল দুঃখজনক। শব্দের ভিতরেও এখন রাজনীতি ঢুকে গেছে। আসলে বাংলাদেশ বেশ কিছু বছর থেকে ইসলামিক লিবারালিজম এর পথ থেকে ইসলামিক এক্সট্রিমিজমের পথে হাটা শুরু করেছে। এখন এর বিপরীত ধারার সামান্য কোন সিদ্ধান্তও বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হবে। ”ঈদ” এবং ”ইদ” নিয়ে এই প্রকট বিতর্কের কারণও শব্দটির ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা।

”ঈদ” এবং “ইদ” এই দুপক্ষে এখন মানুষ বিভক্ত। “ঈদ” লেখার পক্ষের যুক্তির সার সংক্ষেপ হচ্ছে-
১) “ঈদ” আরবী শব্দ, আরবী শব্দগুলোকে বাংলায় লিখতে হলে সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে, না হলে এর অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে যা ক্ষেত্র বিশেষে গুনাহর কারণ হবে।
যেমনঃ “ঈদ” শব্দটি লিখতে লাগে “আইন”, ”ইয়া” ও ”দাল” । আইন এর পর ইয়ার কারণ শব্দটি দীর্ঘায়িত হবে সে কারণে “ইদ” না লিখে “ঈদ” লিখতে হবে। যুক্তি দিয়েছেন “ঈদ” না লিখে “ইদ” লিখলে তা “ইদ্দতের” এক বচন কে বুঝাবে যার অর্থ মহিলাদের পিরিয়ড। আবার কেউ কেউ ঈদ শব্দটিতে আইন থাকায় এই আইনের উচ্চারণ জনিত কারণেই “ই” না লিখে “ঈ” লেখা উচিত বলে মত দিয়েছেন।

২) “ঈদ” বানানটি একটি প্রচলিত বানান অতএব এটার পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় নয়।

আর ”ইদ” এর পক্ষে প্রধান যুক্তি হচ্ছে-
১) বাংলা একাডেমি বাংলা শব্দের বানান কে শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং সহজীকরণের জন্য বিদেশী শব্দের ক্ষেত্রে “ঈ” এর পরিবর্তে “ই” ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণেই শব্দটির বানান “ইদ” হবে।

এখন সবাই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পক্ষে বিপক্ষে অতি সুক্ষাতিসুক্ষ বিশ্লষেণের মাধ্যমে তাদের মতের যৌক্তিকতা তুলে ধরছেন।
যুক্তি বিশ্লেষণের আগে প্রথমেই আসুন যা নিয়ে এত তর্ক বিতর্ক সেই বাংলা একডেমি তার অভিধানে কি লিখেছে তা দেখে নেই-

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘ইদ’ শব্দটির ভুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইদ/ইদ্/[আ.]বি. ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব; (ইদুল ফিতর বা ইদুল আজহা); খুশি, উৎসব; ঈদ-এর সংগততর ও অপ্রচিলত বানান। ইদ মোবারক /ইদ্ মোবারক্/বি. ইদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে উচ্চারিত অভিবাদন।’ অন্যদিকে, অভিধানের ‘ঈদ’ ভুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘/ইদ/[আ.]বি. ইদ-এর প্রচলিত ও অসংগত বানান।’ আবার বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘ইদ’ শব্দের ভুক্তিতে নির্দেশ করা হয়েছে ‘ঈদ’ শব্দকে।

এখানে দেখা যাচ্ছে বাংলা একাডেমি “ঈদ” বানানটি ভুল বলেনি বরং বলেছে প্রচলিত কিন্তু অসংগত।

এবার আসি প্রথম পক্ষের যুক্তি বিশ্লেষণে । তারা বলেছেন-
আরবী শব্দগুলোকে বাংলায় লিখতে হলে সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে না হলে এর অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে যা ক্ষেত্র বিশেষে গুনাহর কারণ হবে।

এই সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়ে সাধারণতঃ ইসলামী চিন্তাবিদরা আরবী শব্দগুলিকে ব্যবহারের কিছু রীতিনীতি প্রচলনের চেষ্টা করেছেন যা ঠিক প্রতিষ্ঠিত নয়। যেমন-
"ছোট কাফ" লিখতে "ক" এবং "বড় কাফ" লিখতে "ক্ব" , "সোয়াদ" কে "স" দিয়ে আর "সিন" কে "ছ" দিয়ে বা বা উচ্চারণের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী "ই" বা "ঈ" দিতে এ রকম আরো উদাহরণ দেয়া যায়। তবে এ গুলোর কোনটিই প্রতষ্ঠিত কোন রীতি নয়। আর ”সালাত” বা ”সালাম” কে “ছালাত” বা ”ছালাম” লিখা হাস্যকর মনে হয়।
যখন এক ভাষার কোন শব্দ অন্য ভাষায় প্রবেশ করে তখন সেই শব্দটি (সাধারণতঃ) তার উচ্চারণ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থগত কিছু গুনাগুন বিসর্জন দিয়েই প্রবিশ্ট হয়। যেমন –“English” শব্দটি তার উচ্চারণ বিসর্জন দিয়ে “ইংরেজি” হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে।

আরবি শব্দে “আলিফ”, ”আইন” ও ইয়া বা ”সিন”, ”সোয়াদ” এবং ”সা”, বাংলায় চাইলেই কি এ গুলোর জন্য আলাদা বানান প্রচলন করতে পারবো। আর যদি পারাও যায় তবে প্রত্যেক ভাষা থেকে আগত শব্দই তার উচ্চারণ ও অর্থগত কারণে ভিন্ন ভিন্ন বানান রীতির দাবীদার হবে। বাংলা ভাষা এ বিশৃংখলা কেন মেনে নেবে? তাছাড়া কখনও ভিন্ন ভাষা থেকে আগত কোন শব্দের বানান রীতি আগে থেকে প্রচলিত থাকে না। প্রথমে কোন একটি বানানে এ রকম শব্দ প্রচলিত হয় । তারপর বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘতের মধ্যে দিয়ে শব্দটির বানান প্রতিষ্ঠা পায়। অনেক সময় এ রকম শব্দের একাধিক বানান রীতি প্রচলিত থাকতে দেখা যায়। পরে কোন একটি বানান রীতি হয়তো শুদ্ধ বলে প্রতিষ্ঠা পায়। যেমন আমাদের দেশে “কোরান”, কোরআন” ”ক্বুরআন” বা ”রহমান”, ”রাহমান” বা “সালাম” ও “ছালাম” বানান গুলি প্রচলিত। তবে এর নির্দিশ্ট কোনটিই প্রতিষ্ঠিত নয়। এ গুলোর কোনটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে্ও হয়তো বিশৃংখলা দেখা দেবে।

”আরবী শব্দগুলোকে বাংলায় লিখতে হলে সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে না হলে এর অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে যা ক্ষেত্রে বিশেষে গুনাহর কারণ হবে।”

”উপরোক্ত উক্তির অর্থ পরিবর্তনে গুনাহ হবে” এই যুক্তিটিও খুব জোরালো নয়। কারণ অন্য ভাষার শব্দ নয় প্রায় প্রত্যেক ভাষাতেই তার নিজস্ব বহূ শব্দেরই একাধিক অর্থ রয়েছে যেমন- বাংলায় ”কর” শব্দ দ্বারা হাত, করা, বা ট্যাক্স বুঝানো হয়। আরবিতেও এরকম বহু শব্দ রয়েছে। আরবি ”ফাজিল” শব্দটি দ্বারা বাংলায় ”বখাটে” বা ”বাচাল ” বুঝানো হয় অথচ আরবীতে এর অর্থ ”পণ্ডিত" বা "বিদ্বান"। তাহলে এ শব্দটির অর্থ নির্ধারিত হবে কি করে? নির্ধারিত হবে এর বাক্যস্থিত অর্থ দ্বারা। পূর্বেও বলেছি প্রায় প্রতিটি ভাষাতেই এ রকম বহু অর্থবোধক শব্দ রয়েছে যার অর্থ প্রকাশ পায় বাক্যস্থিত অর্থ বা বক্তার ভাবগতি দ্বারা। আমরা বাঙালীরা ৯০% (ধারণা) আরবীর সঠীক উচ্চারণ লেখা তো দুরের কথা বলতেও পারবোনা। আমরা পরিবেশ পরিস্থিতি বা বাক্যস্থিত অর্থ দ্বারাই শব্দটি বুঝে নেই।

তবে প্রথমোক্ত দলের ”ঈদ বানানটি একটি প্রচলিত বানান রীতি” এটি একটি জোরালো এবং গ্রহণযোগ্য যুক্তি।

আর দ্বিতীয় পক্ষের বানান রীতির ক্ষেত্রে শৃংখলা বিধানের কথাটি যৌক্তিক হলেও প্রচলিত এবং স্পর্শকাতর বিষয় গুলোকে এড়িয়ে যাওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ।

বেশির ভাগ নিরপেক্ষ ব্যক্তি উভয়টাকেই শুদ্ধ বলে মত দিয়েছেন। বাংলা একাডেমিও কোন বানানকে ভুল বলেনি, তাদের নিয়ম অনুযায়ী "ইদ" বানানকে সংগত বলেছে শুধু। আর আমি বাংলা অভিধান ঘেটে দেখলাম "ঈদ" বানানের সাথে সাথে আনেক দিন আগে থেকেই "ইদ" বানানটিও তাদের অভিধানে যুক্ত আছে।

সবশেষ কথা হচ্ছে “ঈদ” কে ”ইদ” না করে যদি ”ঈগল” কে ”ইগল” করা হতো তবে এ নিয়ে তেমন কোন হৈচৈ হতো না। কারণ ”ইগল” বিতর্কে ইন্ধন যোগানোর মত লোক বা রসদ কোনটিই নাই। আসলে ”ঈদ” বিতর্কে এক দল স্রোতে গা ভাসিয়েছেন আর একদল এই শ্রোতকে বেগবান রেখেছেন।

বিঃদ্রঃ লেখাটির জন্যে ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন পত্রিকার আর্টিকেল থেকে সহায়তা নেয়া হয়েছে।
ছবিঃ ইন্টারেনট


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×