somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

Akm Khokon
মাঝে মাঝে দুরন্ত হই!! প্রকৃতির রূপ,রস,গন্ধ খোঁজতে যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই বেরিয়ে পড়ি। খুঁজে ফিরি আপন গন্তব্য!!! তবে,প্রতিটা ক্ষনেই ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয় তথাকথিত কিছু স্বার্থপরদের কাছে!!

শ্রাবনের বৃষ্টি

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীষ্মের শেষার্ধে, ঘামে ভেজা জষ্ট্যের শেষ বেলা অতিক্রম করে আষাঢ় এসে কেবলই ধরণীর দোয়ারে দাঁড়িয়েছে। এমন সময়ই আষাঢ়ের প্রথম দিনের প্রথম বৃষ্টিফোঁটার দল সুদূর কণ্ঠে নুপুর পায়ে জড়িয়ে রিনিকঝিনিক শব্দ সাঁজিয়ে পাখা মেলে দিল প্রকৃতির বুকে। জানানি দিল সকল হৃদয় ফেঁটে চৌচিড় হওয়া তৃষ্ণার্থ মৃত্তিকাকে। মৃত্তিকা তার বৃষ্টির জলে ফিরে পেল নিজের প্রান, কিছু অরণ্য খুঁজে পেল নতুন করে নিজের কিছু গান। বৃষ্টিরাও যে গান করতে জানে, সে কথাই বা কজনে জানে! কত রমণী পাখা মেলেছে আজ বৃষ্টিজলের সাথে, কত গীতিকার সুর ধরেছে বৃষ্টি গানের সাথে। কত তরুণতরুণী বারান্দায় ছুটে এসেছে আজ বৃষ্টির চোখেচোখ রাখবে বলে, কত কবি ছন্দ বেঁধেছে বৃষ্টির তরে-
“বৃষ্টি নাঁচে- বৃষ্টি গায়
বৃষ্টি পরেছে নুপুর পাঁয়,
বৃষ্টি হাঁসে- বৃষ্টি হাঁসায়
বৃষ্টি ভালবাসার উৎসবে ভাসায়”
হয়তো এবেলায় আবেগী কোন কাব্যকার হরণ করছে তার স্মৃতিচারণকে। নয়তো গভীর দৃষ্টি দিয়ে বেলকুনীতে বসে কফি কাপের সাথে খবরের কাগজে মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু নিজ নির্বোধ মুর্খ্য অধমের মন বিষণ্নতা কে প্রশ্রয় দিয়ে ফ্যাঁকাসে করে রেখেছে রঙিন গ্রহটাকে। ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-নিরাশা, পাওয়া-নাপাওয়ার কোন হিসেব নেই সেই মনে। মধ্যাহ্নে ঝরে যাওয়া সেই একপসলা বৃষ্টির প্রাণে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এমন সময় রহমত এসে বললো, “অনেক বেলা হয়েছে দাদাবাবু, দানাপানি কিছু মুখে দিন” রহমতের কথা শুনে গভীর ভাবনাটার ঘোর কেটে গেল। আজ ঢের করি সাধু-সন্যাসীদের ধ্যান বুঝি এভাবেই কেউ এসে ভঙ্গ করে দেয়। তাকিয়ে দেখলাম রহমত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে দৃষ্টি দর্শন করতেই সে অপরাধ বোধ মনে করে মাথা নত করলো।
রহমতকে বললাম, “যা টেবিলে খাবার দে, আমি আসছি”।
রহমত নতশীর উত্তলন করে বললো, “দাদাবাবু খাবার টেবিলে সাঁজানো হয়েছে, আপনি চাইলে এখন আসতে পারেন”।
“ঠিকাছে তুই যা আমি আসছি”।
ক্ষনিকক্ষণ বিলম্ব করে ভাবতে লাগলাম রহমতে কথা। মনে হচ্ছে এইতো গত কদিন আগে কথা, রহমত আমার দোয়ারে এসে দাঁড়িয়ে বলছে, “দাদাবাবু আমায় একটা কাজ দেন দাদাবাবু”।
আমি যে বাবার গৃহচুত্য, সম্পদচুত্য হয়েছি সে হয়তো সেটা জানতে পারেনি। সে কেবল কারও হতে জানতে পেরেছে আমাদের জমদারি আছে। আমরা চাইলে তাদের মতো শত দাসদাসি রাখতে পারি। সেদিন রহমতের আকুতিমিনতী আর চোখেরজল দেখে ওকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। নিজে মৌনবোধ করলাম, “আজ হতে আর একা থাকবোনা, রহমতকেউ আমার সাথে রাখবো। নিজে যা খাবো, ওকেউ তাই খাওয়াবো। কিন্তু টাকাকড়ি কোথায় থেকে দিব সে বিষয়ে অনেকটা বিচলিত।
আমি সেদিন রহিমের কাছে আমার কথা প্রথম মুখ খুলে বললাম, “আমাকে গৃহচুত্য, সম্পদচুত্য করা হয়েছে। নিজেরই আশ্রয়টাই এখন খুঁজতে হবে। তোমাকে আমি রাখবো কি করে”।
রহমত আমায় বললো, “দাদাবাবু আপনার সব থেকেও নেই, আর আমার এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। টাকাকড়ি কিছুই চাইনে, যদি কোনক্রমে একবেলা আহার করতে পারি তবেই আমার শান্তি। আজ নয়দিন যাবৎ পেটে কিছু পরেনি দাদাবাবু। শুধু পানি পানের মধ্যেমে নিজের ক্ষুদা মিটাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে কি আর ক্ষুদা মিটে! বেশ ক্লান্ত আমি দাদাবাবু, আমাকে একটু আশ্রয় দিন”।
অন্যের আশ্রয় স্থানে নিজে আশ্রয় নিয়েছি, এখনে অন্যেকে আশ্রয় দেওয়াটা আমার পক্ষে কতটা দুষ্কর সেটা আমি বেশ উপলদ্ধি করছি। যদিও এখানকার কেহ এখনো সে খবর পায়নি। সহসা সেকরণেই হয়তো এখনো আমার প্রতি এখানকার কারো যত্ন কমেনি। প্রায় দিন দশেক সেখানেই রহমতকে নিয়ে রইলাম। জমিদারবাবু বুঝি এতোদিনে নিজ সন্তানের শূন্যতা বোধ করেছে। উজিরকে দিয়ে একখানা নোটিশ করেছে। যাতে লেখা আছে- রায়পুরের বাঙলো আর সেখানকার বাগানগুলো তার কাছে হস্তান্তর করেছে। সেটা যেন অনতিবিলম্বে সব বুঝিয়া নেয় তাই উল্লেখিত করেছে। এবং উজিরের নিকট হয়তো পাঁচশত মোহর প্রদান করেছে। নোটিশখানা পড়িতেই বেশ উচ্চহাঁসি পেল! কিন্তু হাঁসলাম না! ভাবলাম গৃহচুত্য করে গৃহ দিলো! সম্পদচুত্য করে সম্পদ দিলো! কিন্তু মা-চুত্য করে আমার মা দিলোনা কেন? বাবা-চুত্য করে আমার বাবা দিলোনা কেন? আজ বোধ করি জমিদারের ভালবাসা আর দয়া বুঝা সত্যিই মুস্কিল! প্রজারা বুঝি একারণেই দয়া দেখলে ভয় পায়। ভাবে এতো দয়া করে বুঝি অতঃপর সব কেঁড়ে নিবে। কিছুটা ভুল আমারও ছিল সেদিন, আমিও সাজা পাওয়ার যোগ্য। তাই উজিরের নোটিশখানা আর ফেরৎ পাঠালাম না। সেখান থেকে বিদয় নিয়ে জমিদায়ের দয়ারই হোক আর ভালবাসারই হোক সেই পূর্ননিবাসে রহমত-কে নিয়ে চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম আমার জন্যে সেখানে কিছু দাসদাসিও জমিদারবাবু পাঠিয়ে দিয়েছে। দেখে এবারেও হাঁসি পেল। কিন্তু হাসলাম না! রহমতের শুকনো মুখটা কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে গেছে। কাজের একটা কর্মস্থল পেয়ে গেছে। রহমত-কে নিয়ে বাঙলোর ভেতরে প্রবেশ করতেই পিতার রক্ষক এসে আমাকে সব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ততা দেখালো। আমি রহমতকে দেখিয়ে বললাম, “কাকাবাবু তুমি যা বুঝানোর এই রহমতকে বুঝাও, আমার এসব মাথায় ঢুকবেনা”।
কাকাবাবু অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রহমতকে সব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল।
রহমত নিজের মতো করে সবকিছু বুঝে নিয়েছে। কিছুক্ষণ পর রহমত এসে বললো, “দাদাবাবু এখন সব আপনি বুঝিয়া লন, আমার এসব মাথায় থাকবেনা, ক্ষনিকবাদে সব ভুলে যাইবো”।
আমি বললাম, “আজ থেকে এখান সব দ্বায়ভার তোর উপর। বাগান, পুকুর যাকিছু আছে সেগুলো অন্যের নিকট চাষার জন্যে দিয়ে দে। চাষীদের সবাইকে ডাক, তাদের মধ্যে যে বাৎসরিক বেশি টাকা প্রদান করতে পারবে তাকে সব বুঝিয়ে দে। যে অর্থ আসবে বোধকরি সে অর্থ দিয়েই সারাবছর চলে যাবে। আর এখানে যতগুলো দাসদাসী পাঠিয়েছে তাদের মধ্যে রান্নাকাজের জন্যে একজন আর বাহিরের কাজ করার জন্যে রেখে বাকি সবাইকে বড়বাড়ি পাঠিয়ে দে”।
.
সেসময় থেকেই এই চারজন মানুষ নিয়ে কেটে গেল জীবনের প্রায় সাঁতটি বছর। এরমধ্যে কতবার মায়ের কাছে চিঠি পাঠালাম, একটা চিঠির উত্তর পেলামনা। যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলাম বলে একটা চিঠি এসেছিল আর তাতে লেখা ছিল- “দুঃসাহস দেখালে তার পরিণতি খুব খারাপ হতে পারে”। সেখানে যাওয়ার ইচ্ছেটা আর রইলোনা। বুজেছিলাম এতো বছরে হয়তো রাগটার নিয়ন্ত্রন এসেছে। সব ভুলে হয়তো সন্তানকে ক্ষমা করতে পেরেছে। কিন্তু সম্পূর্ন ভাবনাটাই মিথ্যে ছিল।
রহমত আবার এসে আমাকে বলল, “দাদাবাবু খেতে আসবেন বললেন যে”।
এখন আর বিলম্ব করলাম না। বেলিকুনীর আরাম কাঁদারা থেকে গিয়ে খাবারের টেবিলে বসলাম। টেবিলে খাবার দিয়ে রহমত নিজের খাবারটা নিয়ে মেঝেতে বসলো। রহমত কে উপরে বসতে বললাম।
রহমত প্রতিউত্তরে বললো, “সে দুঃসাহস আমি করিনে দাদাবাবু, সভাবসিদ্ধ যেখানে বসে খাবার খেতে অভ্যস্ত, সেখানে আহারে অনেক তৃপ্তি”।
মাঝেমাঝে রহমতের কথা শুনে নিজেকে বাবার আসনে নিয়ে যাই। বাবাকে খাবার দিয়ে লাবু কাকাও প্লেট নিয়ে নীচে বসতো। আর বাবা যখন এমন করে বলতো লাবু কাকাও তখন ঠিক এই কথাটাই বলতো। হঠাৎ কারা যে সেদিন লাবু কাকার মন্ডুটা আলাদা করে বাগানের মাঝে রেখে গেল জানতেই পারলাম না আর! বাবা শত চেষ্টা করেও আর খুনিকে খুঁজ বেড় করতে পারলোনা।
অর্ধ খাবার শেষ করেছি এমন সময় রহমত বললো, “বেয়াদবি মাপ করবেন দাদাবাবু, কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। যদি অনুমতি পাইতাম তবেই বলতাম”।
“কি কথা বলবি বল”?
“গত কয়েক বছর যাবৎ কথাটা নিজের ভিতরে পুষিয়া রেখেছি, আপনার কাছে বলিবো বলিবো করে আর বলার সাহস হয়ে উঠেনি। আপনার বিবাহের জন্যে কি কোন পাত্রী পছন্দ করা আছে”।
রহমত-কে কখনো আমার পিছনের গল্প বলা হয়নি। সেও হয়তো জিজ্ঞাস করতে সাহস পাইনি। বেশ কয়েকদিন ধরেই ভাবছি রহমতের এইবার একটা ঘরনী এনে দিবো। আর আজ কিনা রহমত নিজেই আমাকে আমার কথা বললো!
রহমতের প্রশ্নটা শুনে কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে গেলাম। খাবার সামনে রেখে চলে গেলাম সেই বেলায়। মাত্র তেইশ বছর বয়সে আমি সরাবের গোটিতে বাইজী মহলে গিয়ে মুখ লাগিয়ে ছিলাম। রঙিন মহলের রঙিন মানুষের সাথে গড়ে উঠেছিল আমার রঙিন সঙ্গ। গরম সরাব, তবলার টুবঠুব আওয়াজ আর শৈলীর নুপুরের ঝঙ্কারে ডুবে থাকতাম রাতদিন। নেশায় মগ্ন হয়ে কত বেতালে কাওয়ালী, গুজরাটি গান তাল ভেঙ্গে ধরেছি তার কোন হিসেব নেই। তখন কেউ কিছু বলেনি। শত হলেও আমি বাবুর ছেলে। আমাকে কেউ কিছু বললে তার প্রায়শিত্ত অনিবার্য দিতে হবে। এক শ্রাবণের রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। রঙ্গমঞ্চে যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পরেছিলো সেদিন। কিন্তু শৈলীর নুপুরের শব্দের শোনার নেশায় আমার রাতের ঘুম আসছিলোনা।
.
কোন বৃষ্টিবাদল তোয়াক্ত না করে সেদিন কালো শাল চাদরটা মাথার উপর দিয়ে ছুঁটে গেলাম নেশারটানে। ভেজা শরীর নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম সেখানে আজ কেউ আসেনি। শুধু গোলবৃত্তাকারের মাঝে কেউ একজন সেঁজেগুজে বড় ঘোমটা টেনে বসে আছে। কিছুটা বিস্মিত ছিলাম দৃশ্যটা দেখে। কেউ নেই তবুও আজ কে এই মঞ্চে? কে সেঁজে বসে আছ? নানান প্রশ্ন এসে ভীর জমালো মনে ভেতর। দ্বারের কটঘট শব্দ পেয়ে বৃত্তের মাঝে থেকে ঘোমটা সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। খেয়াল করলাম সে আর কেউ নয়, শৈলী! ছোট ছোট পদে আমার নিকটে এসে দাঁড়িয়ে বললো, “আমি জানতাম তুমি আসবে বাবু”।
কথাটা অবাক করে দিলেও কিছু না বলে নিজের ভেতরেই রেখেদিলাম। আমার হাতে একটা তোয়ালে দিয়ে বললো, “এইটা দিয়ে শরীর মুছে নাও। পাশের রুমে শুকনো জামা আছে সেটা পরিধান করে এসো। বাবুর ছেলে বলে জামা ঐজামা পরতে দ্বিধা করোনা ছোটবাবু। ঐ জামাটা আমি তোমার জন্যেই এনেছি”।
পাশের রুমে গিয়ে সমস্ত ভেজা জামা ছেড়ে আসলাম। এসে দাঁড়াতেই শৈলী বললো, “বসো বাবু, আজ আমি শুধু তোমার জন্যে নাঁচবো গাইবো। কোন বাদ্যযন্ত্র লাগবেনা। মুগ্ধ হয়ে আজ আমার নাঁচ উপভোগ করবে তুমি”।
কথা বলেই এক ঘোটি ফেনা উঠা গরম সরাব আমার সম্মুখীন রাখলো। দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র জ্বালজ্বেলে নিয়ে আসা। সবকিছু শুধু উপভোগ করে যাচ্ছি। মাদুরের মাঝে শৈলী এদিকওদিক হাঁটছে আর তার নুপুরের ঝঙ্কার আমার কর্ণেরপর্দ ভেদ করে হৃদয়ে গিয়ে লাগছে। শৈলী নিজে এসে আজ গেলাসে সরাব ঢেলে মুখে ধরলো। মধু, বিষ নাকি সত্যিই সরাব তা কখনো আমার মনে প্রশ্ন তুলেনি। কেন তুলেনি! কি কারণে তুলেনি! সেটা আমি বলতে পারবোনা। মনে কেবল একটাই ভাবনা ছিলে- এ হাতের বিষও বুঝি তৃপ্তিকর হবে। একএক করে খেয়ে নিলাম গেলেসের পর গেলেস! শৈলী ছোটছোট পায়ে নুপুর বাঁজাচ্ছে। নুপুরের শব্দ শুধুই আমায় কাছে টানছে। একপাঁ দুপাঁ করে আমি শৈলীর সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। শৈলী আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটকাঁপা সমস্ত শিহরণ উঁপচে পরছে আমার শরীরে। নেশায় তখন বড্ড মগ্ন এদেহ মন। হঠাৎ করেই শৈলীর হাত ধরে ফেললাম। তারপরে কি হল সে কথা সমস্ত পাঠক-পাঠিকাদের না শুনলেও ক্ষতি নেই।
সেদিন থেকে শুরু হয় একটি নতুন গল্প। নেশা যোগ নেশা! আমি দুই নেশায় ডুবে গেলাম। দিনেদিনে সে পথের পথিক না হয়ে সেখানকার বাসিন্দাই হয়ে গেলাম। হ্যা আমি শৈলীকে বিয়ে করে ফেললাম। রঙ্গমঞ্চের রংগিলা মানুষগুলো কেবলই রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা-অভিনেত্রী সেটা কখনো বুঝতে পারিনি।
.
একদিন রাতের প্রথমভাগে পিতার কাছে কে যেন এই কৃতকর্মের কথা কানে দিয়ে গেল। পিতা আমায় ডেকে জিজ্ঞাস করলো সকল কথা। আমি শৈলীকে (বাইজীকে) বিয়ে করেছি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক আমাকে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলো। সেদিনও প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। লোকে শুনলে পিতার সম্মানহানী হবে জেনে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বৃষ্টির মাঝে বেড়িয়ে পরলাম সেই রঙ্গমঞ্চের দিকে। বাড়িতে ঢুকে শৈলীর রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দেখলাম কেউ একজন আমার মতো নেশায় মগ্ন! তার জন্যেও এনে রেখেছিলো শুকনো জামা! তৈরি হয়েছিলো গরম ফেনা উঠা সরাব! পায়ে পড়েছিলো নুপুর! মুখ ফিরিয়ে চলে এলাম সেখান থেক। শৈলী একটা ডাক দিয়েছিলো। কিন্তু সে ডাকের সাড়া দেবার সাধ্য আমার সেসময় ছিলোনা। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে আজ। সত্যিই আমি মধু বা সরাব খাওয়া যোগ্য নই। আমার জন্যে বিষই সেদিন উত্তম ছিল। রঙ্গমঞ্চ থেকে বেড়িয়ে দেখলাম নেশার ঘোরে আজ সব হারিয়ে ফেলেছি। আমার পাশে কেউ নেই আজ মাথার উপর এক বৃষ্টি ছাড়া!
“কি ব্যাপার দাদুবাবু না খেয়ে শুধু বসে আছেন যে”?
রহমতের কথায় আবার ফিরে এলাম সেই কল্পনা থেকে। অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, “হ্যা আমি খাচ্ছি! খাচ্ছিতো”!
“দাদাবাবু বলছি আমার দেখা একটি সুন্দরী যুবতি মেয়ে আছে, আপনার সাথে বেশ মানাবে। যদি বলেন কথা বলতাম। আপনার প্রস্তাবে অবশ্যই তারা বরণ করে নিবে”।
“একসুন্দরীর ছলনায় মা-বাবা, রাজমহল সব হারিয়েছি! এখন আবার অন্য সুন্দরের মায়ায় ফেলে পৃথিবীটাকে কেঁড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছিস রহমত?”
“বুঝতে পারলাম না দাদুবাবু?”
“বুঝতে হবেনা রে রহমত- আমি আর এই রঙ্গমঞ্চের সামনে দর্শক হয়ে দাঁড়াতে চাইনা”
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×