somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম!!!

২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলহামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ


আরে ভাই ঈদ তো ছোটদের। আমাদের বড়দের কি আর ঈদের সেই আনন্দ আছে? আমি জানি এটি অনেকেরই কথা। তবে উদযাপনে আনন্দের বিষয়টি আসলে আপেক্ষিক। কেউ মাঠে খেলাধুলা করে আনন্দ পায়, কেউ গান শুনে আনন্দ পায় অথবা কেউ অন্য অনেক কিছুতে আনন্দ পেতে পারেন। আসলে আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম টা আমাদের একেক জনের একেক রকম।

প্রত্যেকটা জাতির জীবনে রয়েছে আনন্দের দিন। তেমনি আমাদের মুসলিম জাতির জীবনে সবচেয়ে আনন্দময় ও খুশির দুই দিন হল ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। স্বাভাবিকভাবেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ এই দিনে আনন্দ প্রকাশ করতেন। তাদের আনন্দ এবং খুশি একে অপরকে ভাগাভাগি করতেন। কেমন ছিল তাদের ঈদ? আমরা কি এখন ঈদের আনন্দ লাভ করতে পারিনা? সাহাবীগণের সাথে মিলিয়ে কি আমরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারি না ? অবশ্যই পারি। আসুন জেনে নেই তাদের আনন্দ আয়োজন ও কিভাবে আমরা তাদের সাথে মিলিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারি।

১. ঈদের দিন সবার সাথে সাক্ষাৎ হবে। এজন্য বিশেষ প্রস্তুতি সাজগোজ এর মধ্যে রয়েছে আনন্দ।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সর্বপ্রথম গোসল করতেন। কারণ এই দিন সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে একসাথে সবাই মিলিত হবে। এই দিনের জন্য তাই চাই বিশেষ প্রস্তুতি। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ে কোনো ত্রুটি করতেন না। তিনি তার কাছে থাকা সবচেয়ে ভালো পোশাক পরিধান করতেন। সুগন্ধি মাখতেন এবং সাজসজ্জা করতেন। সাহাবীগণ একই কাজ করতেন।

আমরা হয়তো এই বিষয়ে কোন ত্রুটি করি না। আমরাও নতুন পোশাক পরিধান করি। আতর দেই। সাজসজ্জা করি। মাশাআল্লাহ এখানে আমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সুন্নত অনুযায়ী আনন্দ প্রকাশ করছি।

২. । সাজসজ্জা করে ঘর থেকে বের হতেই কারো না কারো সাথে অবশ্যই দেখা হওয়ার কথা। হয়তো আমাদের পরিচিত কেউ যার সাথে বহুদিন দেখা হয় না। ঈদ উপলক্ষে তার সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ মেলে আমাদের। এতে আনন্দের কমতি কি। প্রিয়জনের সাথে দেখা হওয়া অথবা পরিচিত কারো সাথে দেখা হওয়ার আনন্দ সীমাহীন। দেখা হওয়ার সাথে সাথে আমরা একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। এতেও রয়েছে অনাবিল আনন্দ।

সাহাবীগণ একে অপরের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের ক্ষেত্রে তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম বলতেন। যার অর্থ আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুন। চিন্তা করা যায় কত সুন্দর ভাষা। তারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। সাথে সাথে আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তাদের নিজেদের জন্য দোয়া করতেন। তবে এক্ষেত্রে আমরা আমাদের দেশে

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ঈদ মোবারক শব্দটি আমরা বলে থাকি। যার অর্থ আপনার ঈদ বরকত ময় হোক। যার অর্থ অনেক সুন্দর। তবে সাহাবীগণের শুভেচ্ছা বিনিময় আমাদের থেকে আরো বেশি সুন্দর। আমরাও তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম বলে একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারি এবং তাদের দোয়া করতে পারি। সাথে সাথে সাহাবীগণের সুন্নত পালন করতে পারি। সাক্ষাৎ করা একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা এ থেকে আমরা আনন্দ লাভ করি না!

৩. ঈদের দিন। আনন্দের দিন। আনন্দের সময় অনেক সময় মানুষ মিছিল করে। স্লোগান দেয়। এর মধ্যেও রয়েছে আনন্দ।


সাহাবীগণ খুব তাড়াতাড়ি ঈদগাহে যেতেন। যাওয়ার সময় পথে তারা উচ্চ স্বরে তাকবীর পাঠ করতেন। তারা স্লোগান দিতে ন। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার , ওয়ালিল্লাহিল হামদ। মহান রবের প্রশংসা। যে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এই খুশির দিনে আমরা তাকে ভুলিনি। বড় আনন্দের দিনে তাকে মনে করেছি। উচ্চস্বরে সবাইকে জানান দিয়েছি সে কথা। সাহাবীগণ এমনটাই করতেন।

আমাদের দেশে অবশ্য এই রীতিটি দেখা যায় না। যদিও আমরা মনে মনে তাকবীর পাঠ করি। কিন্তু এটা অবশ্যই উচ্চস্বরে হওয়া উচিত । এই দিন আমাদের আনন্দের দিন। উচ্চস্বরে আজ আল্লাহর প্রশংসা হবে। এতেও রয়েছে আনন্দ অনুভূতি।

৪. সবাই মিলে একত্রে একটা কাজ করার আনন্দই আলাদা।

সাহাবীগণ সবাই মিলে ঈদের দিন ঈদগাহে যে সালাত আদায় করতেন। মহান রবের প্রতি সিজদায় অবনিতো হতেন।

আমরাও ঈদের দিন সালাত আদায় করি। এতে কি আমরা আনন্দ পাই না। মহান রবের কাছে নিজের মাথাটা নিচু করে বিশেষ দিনে তাঁর প্রশংসা করে কি আমরা আনন্দ পাই না। অবশ্যই পাই।

৫. ঈদের আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ এক পথ দিয়ে যেতেন এবং সালাত শেষে অন্য পথ দিয়ে ফিরতেন।

প্রিয় পাঠক গন। আমরাও ঈদের সালাতের আগে এক পথ দিয়ে আসব এবং সালাত শেষে অন্য পথ দিয়ে ফিরবো। এটা আমাদের আনন্দ অনুভূতি বেড়ে যাবে বহুগুণ।

৬. ঈদ উল আযহায় কুরবানী করা। কুরবানী করা, দেখা, মাংস কাটা, মাংস বিলানো ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে আনন্দ।

আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ ঈদুল আজহায় কোরবানি করতেন। সাধ্যমত পশু কোরবানি দিতেন। কোরবানি শেষে প্রাপ্ত গোস্ত কে তিন ভাগ করতেন। এক ভাগ গরিব-দুঃখীর জন্য, এক ভাগ নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং বাকি একভাগ নিজেদের জন্য। এতে তারা আনন্দ উপভোগ করতেন।

মাশাল্লাহ, আমাদের দেশেও কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। আসলে তিন ভাগ দান করার যে প্রথা তা কোন আইনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এটা একমাত্র মহান আল্লাহ্ তা'আলার জন্য। আমরা আনন্দের সাথে তিন ভাগের দুই ভাগ গোশত বিলিয়ে দেই। যাতে কুরবানীর ঈদ শুধুমাত্র বড়লোকদের ঈদ না হয়। ঈদ আসলে সার্বজনীন। বিলিয়ে দেওয়ার আনন্দ কম কিসে?


৭. আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করা। নিজের প্রিয়জনের সাথে সাক্ষাত করার আনন্দ যে কি তা তো কাউকে বোঝানোর দরকার নেই। আর বিশেষ উৎসবকে কেন্দ্র করে সাক্ষাৎ তো আরো আনন্দে র।

সাহাবী গণ ও ঈদের দিনে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতেন। তাদের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। এভাবে তারা একে অপরের ঈদ উপভোগ করতেন। এবং সবাই মিলে ঈদ ভাগাভাগি করতেন।

সুতারং আমরাও আমাদের প্রিয় জনের সাথে সাক্ষাত করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আর ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি মাধ্যমে আনন্দ বেড়ে যাবে বহুগুণ।

৮. আর ইসলাম করতে অবৈধ নয় এমন যে কোন আনন্দই আমরা ঈদের দিন করতে পারি। খেলাধুলা করা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, হালাল গান শোনা, ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ খাবার খাওয়া। ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাহলে বলা যায়, ঈদ আসলে ছোটদের নয়। এটি বড়দের, বৃদ্ধদের, নারীদের, গরিবদের, বড়লোকদের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের। তাহলে ঈদের দিন আর বড় কোন ঘুমের পরিকল্পনা নয়, বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের দেখানো পথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা টাই হোক আমাদের ঈদের দিনের বড় পরিকল্পনা।

সবাইকে ঈদ মোবারক। তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×