স্কুলজীবনটা সবার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে কাটে।
স্কুল তো এই শেষ হয়ে গেল বলে ! কলেজে উঠে গেলে কেউ আর প্রতিদিন ক্লাস করতে বলবে না। বাবা আর সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরতে বলবে না। রাস্তার পাশে ক্যানভাচার লোকটা আর ১৮+ কথা বলার সময় আর আমাকে তাড়িয়ে দেবেনা।
স্কুলজীবন শেষে স্কুল বন্ধুদের হারানোর জন্য যেটুকু দুঃখ হয় তার চেয়ে বেশি হয় স্বাধীনতা পাবার আনন্দ।
বড় হয়ে গিয়ে স্বাধীন হয়ে গেছি এমন ভাবাটা আসলে বোকামি।
বড় হয়ে কেউ কখনওই স্বাধীন হয়না বরং পরাধীনতার শিকলে বেশি করে বাঁধা পরে।
স্কুলে থাকতে যে ছেলেটা রাত ৯ টায় টেবিলের উপর ঘুমিয়ে পরত সে সারারাত জেগে সকাল ৯ টার দিকেও ঘুমাতে পারেনা। তার মস্তিষ্ক তখন দুঃশ্চিন্তা করতে শেখে।
স্কুলে থাকতে যে ছেলেটা তার খাতা দেখে লেখার জন্য মুখিয়ে থাকত সে আজ আমেরিকা গিয়ে পড়ছে। দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে।
বাবা'র হার্টে হুট করে একটা অ্যাটাক হয়ে গেল। সে আর কাজ করতে পারবে না। দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে।
ছোট বোনটার সব দায়িত্ব তো আমাকেই নিতে হবে। আমি ছাড়া তো ওর খরচ চালানোর মত আর কেউ রইল না। দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে।
পড়াশোনা শেষে কপালে একটা চাকরি জুটবে তো? বাবা'র সম্পদ যে কিছুই নেই। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় আজকাল? দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে।
মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেগুলোর সংগ্রাম এভাবেই শুরু হয়।
স্কুলজীবনের ঐ স্বাধীনতার স্বপ্নটা কেবল আপনার সেই আমেরিকায় গিয়ে পড়া বন্ধুটার জন্য।
আর আপনার জন্য স্বপ্ন; আপনি মাঝরাতে চুপিসারে বাম হাতে আঠা আর ডান হাতে 'পড়াতে চাই' লেখা কাগজ নিয়ে দেয়ালে একটা কাগজ এঁটে দেবার মত জায়গা খুঁজছেন।
অথবা, পরিচিতদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন একটা পার্টটাইম চাকরি খুঁজে দেবার জন্য।
খুব সহজ একটা কথা বলতে চাই, আপনি স্বাধীন ছিলেন সেই স্কুলজীবনেই। বাকি জীবনটা কেবল দায়িত্ব নিতে নিতে কাটবে আপনার যদি আপনি মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত হন।
স্কুলজীবনে স্বাধীন হবার স্বপ্ন দেখে আশাহত হয়ে লাভ কী !
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৬