somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃদশটা দশ...

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-হাহ! মেয়েটা আসলেই বেশ বোকা। আমাকে বলে, “তুমি, তুমি, তুমি না, একটা অপদার্থ।”বলেই গট গট করে হেঁটে গেল। আচ্ছা, আমি কি করে অপদার্থ হলাম? আমার ওজন আছে, জায়গা দখল করি, কেউ বল প্রয়োগ করলে নিউটনের ৩য় সূত্র “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে” অনুসারে প্রতিক্রিয়া দেখাই, তারপরও আমি অপদার্থ! সায়েন্সে পড়ে মেয়েটা। ওহ! না, তিনি তো বিজ্ঞান বিভাগে পড়েন, ইংরেজি তার পছন্দ না।

পরিচয়টা হয়েছিল আকস্মিকভাবে। একেবারেই আকস্মিকভাবে। কলেজের বারান্দা দিয়ে হাঁটছি, একটা মেয়ে হটাৎ বলে উঠল, ভাইয়া ক’টা বাজে?
আমি বললাম, দশটা দশ।
-ধন্যবাদ।
আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, স্বাগত।
মেয়েটা আমার একটা মিস্টি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেল।
পরে আমি ঘটনাটা ভুলেই গেলাম।

অন্যদিন। কলেজে, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠান হবে। আমি রয়েছি সার্বিক অবস্থা দেখাশোনার ক্ষেত্রে। হটাৎ একটা মেয়ে, সাথে আরও কয়েকটা মেয়ে; বলল, অনুষ্ঠান কখন শুরু হবে?

এই প্রশ্নটায় আমি সকাল ন’টা থেকে, অর্থাৎ যখন উপস্থিত হয়েছি তখন থেকেই জর্জরিত হচ্ছি। তাই বিরক্তিসহকারে অন্যমনস্কভাবেই বললাম,সাড়ে দশটায়।
-এখন কটা বাজে?
-দশটা দশ।
-ওহ, আচ্ছা।

হটাৎ একটা মেয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠল, আরে আপনি সেই ভাইয়াটা না?
আমি চকিত তাকালাম। ভাবলাম। কিন্তু ‘সেই ভাইয়াটা’,কোন ভাইয়াটা বুঝলাম না। তাই আমি ভদ্রতা বজায় রেখে বললাম, জী, আপনি কাকে বলছেন?
-(উচ্ছাসে ফেটে পড়ে)আপনাকে, আপনাকে।
-কেন, বলুন তো?
-(দ্বিগুণ উচ্ছাসে) ওই যে, আমাদের দেখা হলো না...
পুরো ঘটনাটা বলার পর সময় বলে দেওয়ার সেই ঘটনাটা মনে পড়ল। আমি স্মিত হাসলাম।
এমন সময় রুমের ভিতর থেকে আমার ডাক পড়ল। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলাম।
আমার ডাকটা পরেছে স্যারদের রুম থেকে। মনির স্যার আমাকে বললেন, অশ্রু, তুমি কি আবৃতি করতে পার?
-পারি না,স্যার।কেন স্যার?
-সমীরের আজ আবৃতি করার কথা ছিল। কালকে খেলতে গিয়ে ব্যথা পাওয়ায় আসতে পারছে না। “আসতে পারব না’’ বলে এখনই জানাল। গাধাটা আসতে পারবে না, কালকেই বল। যাই হোক, শুনেছি তুমি নাকি কবিতা লেখ?
আমি সলজ্জ ভঙ্গিতে বললাম, টুকটাক লিখি।
-তবে তো আবৃতিও টুকটাক পারার কথা। গীতিকার তো কেবল গানই লেখে না, একটু আধটু গাইতেও পারে।
-জী স্যার। চেষ্টা করতে পারি, তবে সফলতা বা ব্যর্থতার দায়ভার আপনার উপরে।
-আচ্ছা, ঠিক আছে। এখনই তোমার ডাক পড়বে, যাও।
অনুষ্ঠানের শুরু হল আমার আবৃতি দিয়ে। আমি দাঁড়ালাম, বললাম, চলে এলাম। অনেকটা সিজারের ভিনি, ভিডি,ভিসি-র মত।

কবিতা আবৃতিতে বেশ প্রশংসা পেলাম।

***

বাসায় পড়ার টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে রয়েছি। হাতে কলম,টেবিলে খাতা। কবিতা লেখার চেষ্টা। এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠল। সময়টা দেখে নিলাম দশটা দশ। অজানা নাম্বার। লেখালেখির সময় বাঁধা। বিরক্ত সহকারে ধরলাম,হ্যালো কে বলেছেন?

ওপাশ থেকে একটা মেয়েলী কণ্ঠ।
-হ্যালো, আমি।
-আমিটা কে?
-আপনি তো অশ্রু।
-ওহ! “আমিটা কে?” মানে আপনি কে?
-আমার নাম ইরা।
ভ্রু কুঞ্চিত করে বললাম, কোন ইরা?
-আপনি কতজন ইরা-কে চেনেন?
-একজনকেও না।(মজা করে) তবে ইরাক চিনি।
-ইরাক চিনি হবে কেন? ওটা তো একটা দেশ।

বুঝলাম ওপাশের মানবী আমার চেয়েও রসিক।আমি খানিকটা রেগে বললাম, আপনি কিন্তু বেশি বেশি কথা বলছেন।

ওপাশ থেকে প্রতিত্তরে হাসির শব্দ ভেসে এল। বেশ ছন্দময় একটা হাসি। মনটা হারিয়ে যায় বনলতার কাছে। আমার সংবিৎ ফিরে এলে বললাম, হাসছেন কেন?
-আপনার কথা শুনে।
-সত্যি করে বলুন তো আপনি কে?
-আমি, আমি হলাম...

সে যখন সমস্ত ঘটনাটা ফের বলল, তখন পিছনের ঘটনাগুলো ফ্ল্যাশব্যাক করল।
এ ঘটনার পড় থেকে আমাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। প্রথম পরিচয়ের সময় সে ছিল ক্লাশ নাইনে, আর আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে। বর্তমানে সে ক্লাশ নাইনে আর আমি সেকেন্ড ইয়ারে। আজ আমাদের পরিচয়ের প্রথম বার্ষিকী। যেহেতু আমাদের পরিচয় হয়েছিল দশটা দশে তাই সে চেয়েছিল আজকেও যেন দশটা দশে দেখা হয়। কিন্তু জ্যামে পড়ে ৭ মিনিট দেরি হয়ে গেল। তাতেই সে রেগে আগুন। আমাকে বলে বসল আমি কিনা অপদার্থ!

যাই হোক দেখি তাকে শান্ত করতে পারি কিনা। একটা কবিতা বলা যায়।মেয়েদের মান ভাঙ্গাতে দারুণ এক ওষুধ। যাই তবে। পেয়ার কিয়া তো ডারনা নেহি।

-এই ইরা এই...
-আমি তোমার কোন কথাই শুনবো না।
-শুন না...
-না, না...
-আমি তো তোমার নানা নই...
-ফাজলামো কর না তো।
-এই দেখ আজ থেকে আমাদের ভালোবাসাকে অমর করে দিলাম।
-কিভাবে?
-আজ থেকে সকল ঘড়ির বিজ্ঞাপনে সময় দেওয়া থাকবে দশটা দশ।
-আমার সাথে ফাজলামো কর! মনে করেছ আমি জানি না? আজ থেকে কেন, ঘড়ির বিজ্ঞাপনে সময় দশটা দশ দেওয়া থেকে আব্রাহাম লিংকন নিহত হবার পর থেকেই। কারণ, কারণ...

সে কারণটা মনে করার জন্য এদিক অদিক তাকাচ্ছে।দেখতে অবশ্য ভালোই লাগছে। বিব্রতকর মুখ। নাহ বলেই ফেলি, কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন থিয়েটারে আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হবার সময়টা ছিল দশটা দশ। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ঘড়ির কোম্পানিরা তাদের বিজ্ঞাপনে সময় দেখায় দশটা দশ।

বলেই আমি মাথা নুইয়ে কুর্নিশ ভঙ্গীতে বাম হাত বুকে রেখে দান হাত প্রসারিত করে বললাম, হয়েছে তো মহামায়া?
সে খানিকটা বিস্মিত স্বরে বলল, মহামায়া?
আমি গম্ভীর সুরে বলাম, মায়াদেবী, হিন্দু পুরাণোক্ত অবিদ্যারূপিনী দেবী,দুর্গা।
-আবারোও ফাজলামো?
-এখনো মান ভাঙ্গে নি?
-না।
-না?
-হ্যাঁ, না।
বলেই সে মুখ ঘুরিয়ে নিল। অভিমানী মুখ। দেখলে বড় মায়া লাগে। যাই হোক, মান তো ভাঙ্গাতে হবে। তবে শুরু করলাম আমার কবিতা...

ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।
আবার তোমায় ধন্যবাদ।
পত্রঝরা দিনের শেষে
এলে নিয়ে নতুন সুসংবাদ।
ধন্যবাদ। তোমায় ধন্যবাদ।
গাছে গাছে নতুন কুঁড়ির সমাহার
মাঠে মাঠে নতুন ফসলের আবাদ।
ধন্যবাদ। তোমায় ধন্যবাদ।
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা
নেই কোন বজ্রনাদ।
ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।
কোকিলের গান, হাওয়ায় সুবাস
আর সবকিছুই যেন বাদ।
ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।
আবার তোমায় ধন্যবাদ।
ঝর্ণাধারায় নতুন জলের খেলা
আর বনে কচিপাতার ছাদ।
ধন্যবাদ, ওহে, বসন্ত, ধন্যবাদ।


কবিতা শুনে সে মুচকি হেসে বলল, বাহ! সুন্দর তো। কি নাম দিলে?
-তুমিই বল।
আমার মুখেও হাসি। সে ভাবনার ভঙ্গি নিল। বাম হাতের তেলোয় দান হাতের কনুই ভর করে গালে আঙ্গুল দিয়ে, চিন্তিত চোখে।
-বসন্তকে নিয়ে যখন লেখা তখন নাম দাও, ঋতুরাজ।
-আমিও তো তাই দিয়েছি।
-তাই! সত্যি?
-তিন সত্যি। সত্যি। সত্যি। সত্যি।

সে হাসতে শুরু করল। সেই ছন্দময় হাসি। যার কারণে তার কাছে বারেবার ফিরে আসি, আসব। তার জন্য আমি আকাশটাকে চুরি করতে পারি। জানে কি সে? না থাক... কিছু কথা তোলা থাক আগামীর জন্য। ধন্যবাদ ঈশ্বরকে তাকে দেওয়ার জন্য।

ধন্যবাদ। তোমায় ধন্যবাদ।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×