somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদ্র বয়সের উপলব্ধিসমূহ ------- |-)

২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১।
এই গ্রহের জীবজগতের কেউই কখনো কোনো অন্যায়, অপরাধ, পাপ, পুণ্য, সৎকাজ ইত্যাদি কিছুই করে নি। এগুলো মনুষ্যজাতের বুদ্ধিমান অংশের আরোপিত, আবিস্কৃত কিংবা উদ্ভাবিত আপেক্ষিক সত্য-মিথ্যা।
২।
আসলে কেউ কারও নয়, হবেও না কোনোদিন;
কারন কেউ কারও ছিলও না কোনোদিন!
৩।
আপেক্ষিক বাস্তবতা সত্যের চাইতেও অধিক বাস্তব।
৪।
সমীকরণ: প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ = জীবজগতের ইন্দ্রিয়জাত উপলব্ধির নিম্নগামিতা
৫।
বাংলাদেশে আর্থনীতিক সমাজবাস্তবতা আর নিম্ন/মধ্য/উচ্চবিত্তের উপার্জনগত বৈষম্য এতটা প্রকট যে, এখানে মানুষ শিক্ষিত হওয়ার জন্য শিক্ষাগ্রহণ করে না।
৬।
পতন শুধু নিম্নগামী নয়। এখন উর্ধ্বগামী পতন দেখা যাচ্ছে; যেমন- আমরা অধিক প্রাচুর্য লাভ(অর্জন নয়) করি আর অধিকতর অমানবিক হয়ে উঠি।
৭।
সম্ভবত, এদেশের ভবিষ্যৎ ভালো নয় কারন প্রজন্মের ব্যবধানে আমরা নিকৃষ্টতর অনুভূতিসম্পন্ন প্রজন্মের দেখা পাচ্ছি।
৮।
বাংলাদেশে সম্ভবত আমরা কেউই স্পষ্ট করে জানি না যে আমরা আসলে কী করছি! কিংবা কেন করছি।
৯।
এদেশে সম্ভবত জীবনমানের সামষ্টিক সম-উন্নয়ন আর সম্ভব নয়। সততার চর্চা তো নয়ই। আসলে, প্রত্যেককে পৃথকভাবে বা স্বতন্ত্র‍ভাবে সততার অর্থ বুঝে সৎ হতে হবে। আমাদের এখন সবার আগে সেই পথটাই খুঁজে বের করতে হবে।
১০।
প্রতিটি মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় অনুভব করে- সে একা, তার কেউ নাই। কিন্তু তখনো তার অবচেতন মন জানে আসলে তার ঈশ্বর আছেন এবং তিনি পরম আশ্রয়। আর সেই নিরাকার অসীম আশ্রয়ই হয়তো তাকে ফিরিয়ে আনে জীবনে।
১১।
নিটোল আনন্দের জন্য এখন আর সংস্কৃতিচর্চা হয় না। নতুন নতুন মুখোশ পরে সর্বগ্রাসী রাজনীতিক সূতোর টানে পুতুলের মতো হাত-পা ছোঁড়ার জন্য সংস্কৃতিচর্চা হয়।
১২।
মানুষের আর্থনীতিক সমৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে ধর্মীয় কৃত্য ও অনুষ্ঠানগুলো ফ্যাশনে রূপান্তরিত হয়।
১৩।
এদেশে শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি মানুষের মনোজগতকে এতটাই অবরুদ্ধ করে যে, কেউই সমাজে Alternative Reality বা বিকল্প বাস্তবতা'র অস্তিত্ব মেনে নিতে পারে না; বরং যেকোনো নতুন বা সমান্তরাল বাস্তবতাকে অস্বীকার করাটাই এখানকার সংস্কৃতি।
১৪।
সম্ভবত, আমাদের শিক্ষাদর্শনই মানুষে মানুষে বৈষম্য ও দূরত্ব বাড়াতে সহায়তা করছে।
১৫।
বোধই তারল্য লাভ করছে। শ্রদ্ধা, ভালবাসা, ঘৃনা, ভক্তি, সহানুভূতি, বন্ধুত্ব কিংবা একাকীত্ব- সব। আর এই তরল বোধগুলো প্রকাশে নতুন নতুন শব্দও তৈরি করছি আমরা। যেমন- জানু, কিউটি, বিল্লি, বেইব, হট, কুল, অসাম ইত্যাদি
১৬।
এদেশে সূর্যগ্রহণ/চন্দ্রগ্রহণের সময় লোকেরা অনেক ভয় পায়, কিন্তু নিজের আত্না'র গ্রহণের ব্যাপারে একটুও ভয় পায় না কেননা তা দেখা যায় না, চলতে থাকে নিরবধি।
১৭।
মানুষে মানুষে নিঃস্বার্থ সম্পর্ক হতে পারে- সম্ভবত এটা মহাজাগতিক ভুল।
১৮।
সন্তানদের জন্য বাবা-মা অনিবার্যভাবে অনেক কিছু যদিও মা-বাবার জন্য সন্তানরা হয়ত কেউ না।
১৯।
কেউ কি কখনো ফিরে আসে?
ফিরে এলেও সে আর আগের মানুষটা থাকে না।
২০।
আমরা শিশুকাল থেকে 'মানুষের মত মানুষ' হওয়ার সাধনা করি। আসলে, শিশু অবস্থায়ই আমরা প্রকৃত 'মানুষ' থাকি। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে সর্বোচ্চ যা হতে পারি তা হলো - সামাজিক মানুষ।
২১।
আমরা জীবনমঞ্চে অভিনয় করে যাই মৃত্যু অবধি। অথচ, ভেতরে ভেতরে সবাই ঠিকই বুঝতে পারি- কখন মঞ্চ ছেড়ে দর্শক গ্যালারিতে বসা উচিত। কিন্তু, অভিনেতারা কখনো দর্শক হতে পারে না।
২২।
মানুষ ব্যতীত কোনো প্রাণিই পাশবিকতা ভিন্ন কিছু দেখাতে পারে না; মানুষই একমাত্র প্রাণি যে একই সাথে মানবিকতা, অমানবিকতা এবং পাশবিকতা- সব দেখাতে পারে।
২৩।
মানুষের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা নষ্ট হওয়ার মূল কারণ- 'নিয়ম, কানুন ও আইন'!
২৪।
বিবেকহীন বিবশ মূর্খ'রা, যারা জন্মেছে এবং জন্ম নেবে রাজনীতি'র বহুগামী সংগমে, যে কোনো শ্রেষ্ঠ সময়কে পরিণত করতে পারে নিকৃষ্টতম সময়ে। উল্টোটাও করতে পারত কিন্তু মূর্খ বলে পারে না।
২৫।
পৃথিবীর সব প্রেমিক প্রেমিকাই পরস্পরকে মিথ্যা বলে। অন্তত নিজেকে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করে। অথচ তারা পরস্পরকে Confidently এটাও বলে, "আমি তোমার সাথে মিথ্যা বলি না"!! হয়তো এটাও এক ধরনের ভালবাসা!!
২৬।
আমরা এখন ভালবাসা'র মানুষটির সাথে শুধু হাতে হাত ছুঁয়ে একটি বিকেল কাটিয়ে দিতে পারি না। কারণ, সেও হয়ত তা চায় না!
২৭।
আমরা এখন ভালবাসা'র মানুষটির হাতে ভালবেসে একগুচ্ছ গোলাপ কিংবা কদম ফুল তুলে দেই না। কারণ, কেউই এখন ততটা Unsmart না!!
২৮!
এদেশের কিশোর-কিশোরী অথবা তরুন-তরুনীরা এখন ২০শে ফেব্রুয়ারি বিকেলের পর ফুল জোগাড় করতে অস্থির হয়ে ওঠে না।
২৯।
আমরা এখন সিনেমা হল-এ জাতীয় পতাকা'র দৃশ্য দেখে উঠে দাঁড়াই না, হাত তুলে সম্মান জানাতেও সাহস পাই না।
৩০।
কেউই শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারি না। কন্ঠ দিয়ে পারলেও মানসিকভাবে পারি না।
৩১।
সমাজে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সচিব, শিল্পী, সাহিত্যিক কিংবা ধর্মীয় নেতা - কাউকেই মন থেকে শ্রদ্ধা করতে পারি না; কারণ তারা এটা 'ডিসার্ভ' করে না। তবে, ঐ পেশাজীবীগণও কোনো "শ্রদ্ধা" জাতীয় কিছু প্রত্যাশা করে না।
৩২।
শব-ই-বরাতে প্রতিবেশি'র বাড়ীতে রুটি-হালুয়া নিয়ে যেতে পারি না কারণ এটা যেন "নিম্নবর্গের ইতিহাস"!
৩৩।
আমরা এখন জোছনা, চন্দ্র, পূর্ণিমা -এগুলো কিছুই ভালবাসি না; মাঝেমধ্যে ভালো লেগে যায় কারণ ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে লাইক ও কমেন্টের জোছনায় ভাসা যাবে!
৩৪।
আমাদের কাছে এখন কবিতা আসে না; তাই জোর করে কবিতাকে টেনে এনে একগুচ্ছ মুমূর্ষু লাইন লিখে ফেলতে পারি!
৩৫।
আমাদের কাছে বহুগামিতা মন্দ লাগে না; তাই ধর্মচর্চা কিংবা রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন এখন আর ততটা ভাল লাগে না!!
৩৬।
আমি কতটা দেশপ্রেমিক বোঝার জন্য চোখ বন্ধ করলাম; বুকে হাত রেখে উচ্চারণ করলাম
"আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি।"
চোখ খুলতেই মনে হলো আমি খুব হাস্যকর একটা কথা বলে ফেলেছি আর কথাটি অন্য কারও সামনে বলাটাও সম্ভব নয়।
আসলে এই "আমি" সম্ভবত বর্তমান সবার মাঝেই বিরাজমান!
৩৭।
আনন্দ = বেদনা; সুখ = যাতনা
বিপরীত অনুভূতিগুলো সম্ভবত সমান ও সমান্তরাল। একটা খুনের ঘটনায় একজনকে চরম কষ্ট পেতে হয়; অন্যজন পায় চরম আনন্দ। অথচ, ঘটনা কিন্তু একটাই!
৩৮।
এদেশে কেউ একজন সব কথা শতভাগ সত্যি বলতে শুরু করলে আশ্চর্যজনকভাবে তার সাথে সম্পর্কযুক্ত অনেকেই বৈচিত্রময় বিপদে পড়তে শুরু করে!
৩৯।
মানব সম্প্রদায় পৃথিবী'র কোনো উন্নতি করে নি; বরং নিজেদের স্বার্থে পৃথিবীকে বিকৃত করেছে, অপ্রাকৃতিক করেছে। জীবজগতের মধ্যে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা এই গ্রহের ভৌত পরিবর্তন করে সর্বাধিক ক্ষতি করেছে এবং করে চলেছে।
৪০।
কেউ আমাদের "ফরেইনার" "হলিউডি" কিংবা "ওয়েস্টার্ন লুক" ইত্যাদি বললে খুব ভাল লাগে, উৎসাহিত হই; কিন্তু "খাঁটি বাঙালি" বললে কেমন যেন অপমানিত বোধ করি। কেউ কেউ মনে করি- "গালি দিয়েছে"!!
৪১।
শহরে একটু রাত করে বাসায় ফেরা পথিকরা প্রত্যেকেই প্রত্যেককে সন্দেহ করে আর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটতে থাকে।
অথচ, গ্রামে এই ব্যাপারটা চমৎকার। হাট-বাজার থেকে গভীর রাতে বাড়ী ফেরার সময় পথিমধ্যে একজন অন্যজনকে ডেকে গল্প করতে করতে বাড়ী ফেরে।
৪২।
শহরবাসী যেকোনো একজনের পুরো একটা দিন(২৪ ঘন্টা) ঐ ব্যক্তির অগোচরে ভিডিও করে তাকে দেখানো হ'লে, সে নিজ কর্মের নিরর্থকতা দেখে এতটাই অবাক হতো যে, সে নিজের আর নগরজীবনের বুজরকি সম্পর্কে অনেক কিছুই নতুন করে বুঝতে পারত!
৪৩।
এখন আমরা যথার্থ ভক্তিশ্রদ্ধাসংযমসহ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে পারছি না। তবে, ধর্মীয় উৎসবগুলোতে শুধু আনন্দ-ফুর্তি-মাস্তি করতে কিংবা ভোগ, উপভোগ ও সম্ভোগ করতে একটুও বঞ্চিত করি না নিজেদের!
৪৪।
নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই উপমহাদেশের মানুষের চুল ঘন কালো; আর তাই আমাদের সিঁথিতেই বেশ মানিয়ে যায়। কিন্তু আমরা এখন ওয়েস্টার্ন লুক, রিবন্ডিং, স্মোকি, লেয়ার আর স্পাইক পছন্দ করি। কেননা, আমরা মনে করছি "সিঁথি অনেকটাই সেকেলে!"
৪৫।
সঙ্গীতচেতনা এখন একটু ভিন্ন পথে চলছে! গানের কথা কিংবা অর্থ এখন গুরুত্বহীন কেননা আমরা গান শুনি না; বরং গানের টিউন, রিদম, বিট, ইকো, ইফেক্ট, নয়েজ- এগুলো শুনি।
তারপর, বিজ্ঞের মতো গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলি, "কম্পোজিশনটা অসাম হইসে!"
অথবা রেগে গিয়ে বলে উঠি, "F***ing Music!"
৪৬।
ছেলেরা চায় তার ভালবাসা'র মেয়েটির মুখ সবসময় হাসি খুশি থাকবে; কিন্তু নিজেকে সে উদাসীন হিসেবে উপস্থাপন করবে । অন্যদিকে প্রতিটি মেয়ে, যারা ভালবাসে, চায় দু'জনকেই হাসি খুশি থাকতে হবে; এমনকি তা সবসময়।
৪৭।
পৃথিবীতে অনেক মেয়েই পিতৃগৃহ কিংবা স্বামীগৃহ- সারাজীবন ধরে কোথাও সুখের দেখা পায় না। আসলে প্রকৃতিই তাদের পাঠায়- নিজে সুখী হতে নয় বরং সদা হাসিমুখে অন্যকে সুখী করে তুলতে।
৪৮।
কয়েক বছর আগেও ‘ইষ্টিকুটুম’ নামের হলুদ-কালো পাখিটা ডেকে ডেকে জানিয়ে দিত যে বাড়িতে অতিথি আসবে। আমরা আনন্দে অতিথির অপেক্ষা করতাম।
সেই অলৌকিক পাখিটা এখন হারিয়ে গেছে কেননা মানুষ এখন অতিথি বা কুটুমের জন্য অপেক্ষা করে না; বরং অতিথিকে 'পেইন' বা 'প্যারা' মনে করে।
৪৯।
‘তীব্র’ কিংবা ‘চরম' এসব শব্দ এখন আর ততটা গায়ে লাগে না কেননা এখন আমরা অনেক কিছু শুরুই করি "এক্সট্রিম" থেকে।
৫০।
শিক্ষিত নারীদের মধ্যে ধূমপায়ী’র সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকে দোকান থেকে পুরুষদের সামনে সিগারেট কিনতে কোনো দ্বিধা করছে না।
এতে আমার কষ্ট লাগে কেননা তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে।
এতে আমার কষ্ট লাগে না; কেননা পুরুষের সাথে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা একধাপ এগিয়ে গেছে।
৫১।
মানুষ এখন সবকিছু দ্রুত ভুলে যায় এবং বেশি বেশি ক্ষমা করে দেয়। কেননা মূল্যবোধ কমে যাওয়ায় বড় ক্ষতিটাও এখন আর ততটা কষ্ট দেয় না আমাদের।
৫২।
আরোপিত নিয়ম ভেঙে মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনভাবে সে তখন কিছু নতুন নিয়ম তৈরি করে যা সবাই ভালবাসে। তবে, পরের প্রজন্ম এসে এগুলো সব হাস্যকর ও বাতিল ঘোষণা করে।
৫৩।
আমরা সবসময়ই যেন কিছু একটার অপেক্ষা করতে থাকি। তবে স্পষ্টভাবে জানি না সেটা কি।
হতে পারে এটা নিয়তি’র অপেক্ষা; কারণ একমাত্র নিয়তি'র জন্যই মানুষকে না-জেনে অপেক্ষা করতে হয়।
৫৪।
মানুষ প্রকৃতি'কে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, প্রকৃতিও মানুষের ওপর ঠিক ততটাই ক্ষিপ্ত ও ক্ষুব্ধ।
প্রকৃতি আর পৃথিবী’র অভিশাপে মানুষকে এখন চরম মূল্য দিয়ে তার চূড়ান্ত পরিণতি'র দিকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
৫৫।
মীরেরবাজার রেললাইনের খুব কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে একজন যাত্রীর হাতব্যাগ পড়ে যায়। পাশের টি-স্টলের দোকানি ওটা তুলে নিয়ে যায়।

জরুরি কাগজে ভরপুর ব্যাগটি ফেরত পেতে ঐ যাত্রী টঙ্গি জংশনে নেমে যান। তারপর বাসে চড়ে প্রায় ১ঘন্টা পর মীরেরবাজার ফেরত যান।

জিজ্ঞেস করতেই ব্যাগটির খোঁজ পাওয়া যায়। ঐ দোকানি ব্যাগটি ফেরত দিলে লোকটি খুশি হয়ে ঐ টি-স্টলে উপস্থিত সবাইকে চা-বিস্কিট খাওয়ান। এমন সময় তার মোবাইল বেজে ওঠে। কথা বলতে বলতে তিনি রেললাইনে উঠে লাইন বরাবর হাঁটতে থাকেন।

ব্যাগটা যেখানে পড়েছিল সেই জায়গাটি দেখতে পেয়ে তিনি হেসে উঠলেন আর ফোনে বললেন-“আরে যেখানে ব্যাগটা পড়ছিল, আমি এখন ঠিক সেই জায়গার পাশ দিয়াই…..”

পেছন থেকে আসা দ্রুতগামী ট্রেন নিমিষেই তাকে অতিক্রম করল। লোকটিকে আর দেখা গেল না; কয়েক খন্ডে বিভক্ত নিথর নিস্তব্ধ দেহটি পড়ে রইল অনেকটা জায়গা জুড়ে।
আর ব্যাগটি আবার সেই আগের জায়গায় পড়ে থাকল।

----আসলে মানুষের ‘নিয়তি’ সব সময়ই পূর্বনির্ধারিত; এমনকি স্থান-কালও নিয়তিরই অংশ যদিও আমরা তা বুঝে উঠতে পারি না।
(দুর্ঘটনাটি ২০১৫ এর এপ্রিলের)

৫৬।
সত্যিকার প্রেম ভালবাসা জৈবিক বলেই সেখানে অধিকারপ্রাপ্ত সেক্স আসতে পারে আর এটাই স্বাভাবিক। ১৮ বছরের তরুণী কখনো ৮১ বছরের বৃদ্ধ’কে ভালবাসে না; তেমনি ২৫ বছরের যুবকও ৫২ বছরের বিগতযৌবনা নারী'কে ভালবেসে ফেলে না। আমরা সাধারণত তাকেই ভালবাসতে পারি যার সাথে আনন্দঘন সেক্স হওয়ার সম্ভাবনা কল্পনা করতে পারি।
৫৭।
রাস্তা দিয়ে একটি অতি রূপসী তরুণী হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েটি'র ফিগার, ড্রেস-আপ, মেকআপ চমৎকার। আশেপাশে থাকা সব পুরুষ কমপক্ষে ২বার মেয়েটি'র দিকে তাকাবে । ১ম বার মেয়েটি আসলে পুরুষদের চোখে পড়ে; আর ২য় বার কিংবা পরবর্তী প্রত্যেকবার পৃথিবীর সব পুরুষের- মুচি কিংবা রিক্সাচালক থেকে ইমাম সাহেব কিংবা প্রধান বিচারপতি- সবার চোখের ভাষা ও তাকানোর অর্থ একই।
(তবে যারা অসৎ অথবা মিচকা শয়তান তারা এই ব্যাপারটি অস্বীকার করতে পারে!)
৫৮।
ভালবাসা পেয়ে মানুষ ততটা সুখ পায় না; যতটা পায় ভালবাসা না পেয়ে কিংবা হারিয়ে! তবে এই সুখটা একটু অন্যরকম; যে জানে শুধু সে-ই জানে!
৫৯।
‘স্কুলপালানো’ এই উপমহাদেশে স্কুল পড়ুয়াদের একটা কমন ব্যাপার। তথাকথিত নিয়মে অপরাধ বিবেচিত হলেও এটা আসলে ট্যালেন্টেড ছাত্রদের এক ধরণের প্রতিবাদ; আমাদের আকর্ষণহীন ব্যর্থ শিক্ষাব্যবস্থা’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
৬০।
এদেশের মেয়েদের সবার আগে শিখতে হবে সঠিক সময়ে কীভাবে "না" বলতে হয়;
আর ছেলেদের জানতে হবে শত মায়া-কান্না-বেদনা'র মাঝেও কীভাবে হ্যান্ডশেক করে "গুড-বাই" বলে ঘুরে দাঁড়াতে হয়!
৬১।
মানুষ খুবই আত্নপ্রেমী কিংবা স্বার্থপর। সিটিং সার্ভিসে জোর করে উঠে দেখলেন আপনিই একমাত্র দাঁড়ানো যাত্রী। তখন আপনার মনে হবে “একজন দাঁড়িয়ে গেলে কী আর হয়!”
আপনি যদি বসে থাকা যাত্রীদের একজন হন তবে কিন্তু এ অন্যায়ের প্রতিবাদ শুরু করবেন। কন্ডাক্টর'কে ডেকে বলবেন – “ সিটিং সার্ভিসে দাঁড়ানো লোক কেন? সিটিং ভাড়া দিব না!”
৬২।
“নিঃস্বার্থ” অসম্ভব এবং অবাস্তব একটা শব্দ যা আসলে ‘স্বার্থ’ শব্দটা'কে ইতিবাচক(ভাল) অর্থে প্রয়োগের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা; কিংবা, ‘স্বার্থ’কে একটুখানি মানবিক আবেগের রঙে রাঙিয়ে তোলা'র অসৎ প্রচেষ্টা!
৬৩।
মানুষ তার নিজের সত্তা’কে খুঁজে পেতে পারে তখনি যখন সে সৎ উপায়ে অবাধ্য হতে পারে এবং প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত মতবাদগুলোকে অবিশ্বাস করতে পারে একেবারে একা; কারও সাহায্য ছাড়াই।
৬৪।
মানুষের চোখ সৃষ্টি হয়েছিল প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক বিষয়গুলো দেখার জন্য। কিন্তু মানুষ ক্রমশ নিজেকে এই সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সভ্যতার নামে অপ্রাকৃতিক বিষয়ের আধিক্যের ফলে দৃশ্য দূষণ বাড়ছে। আর মানুষের দৃশ্য দূষণের সবচে' মজার উদাহরণ হলো –“রাজনীতিক পাতি-নেতাদের শুভেচ্ছা জানানো হাসি-হাসি মুখের পোস্টার!”
৬৫।
মাঠে, ক্যাম্পাসে, রাস্তার পাশে, টি-স্টলে, রেস্তোরাঁয় অথবা কোনো আড্ডায় কতগুলো ছেলেমেয়েকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখলেও আপনি জানতে পারবেন না আসলে তারা কে কোথায় আছে! তারা নিজেরাও পরস্পরের অবস্থান জানে না কেননা প্রত্যেকেই ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি'র মায়াবী-অন্তর্জালের পৃথিবীতে নিমজ্জিত।
এখানে সবার প্রবেশাধিকার নেই! এখানে ঠোঁট কথা বলে না; দু'তিনটি আঙুলই সব কথা বলে।

৬৬।
পুরুষমাত্রই বহুগামী! 'শরীর' বিষয়ে তারা নারীদের চেয়ে অনেক বেশি অসৎ। তবে কেউ কেউ আছে যারা সুযোগের অভাবে সৎ থেকে যায় আজীবন!
৬৭।
সম্ভবত ‘পথ’ এবং ‘পথের রেখা’ আদিম মানুষের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের প্রথম নিদর্শন যা এখনো বিদ্যমান। এর কারণ -- পথ অসীম। পথের শেষ আসলে পথের শুরুতেই!
৬৮।
সর্বপ্রাণবাদে বলা হয় পৃথিবী’র সকল বস্তুতেই প্রাণ বিদ্যমান। অধিকাংশ মানুষ এই মতবাদ হেসে উড়িয়ে দেয় নিজেদের অজ্ঞতা ও অক্ষমতা’র কারণে।
মানুষের মাত্র পাঁচটি ইন্দ্রিয়ে যা কিছু ধরা পড়ে, তার বাইরেওতো কোনো জগৎ থাকতে পারে যা’র অস্তিত্ব ইন্দ্রিয়ঘাটতির কারণে মানুষ হয়ত টেরই পায় না!
তাই "সর্বপ্রাণবাদ" প্রায়শ আমার অযৌক্তিক মনে হয় না!
৬৯।
যেকোনো মনোজাগতিক জটিলতায় পুরুষ ও তার সমাজ সবসময় নারীদের দোষারোপ করে, পরিহাস করে এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে। অথচ, মেয়েদের ভালবাসা'র শক্তি সম্পর্কে তারা খুউব কম জানে কেননা পুরুষ সবসময় নারী’কে শেখাতে চেয়েছে “কীভাবে ভালবাসতে হয় আর সবকিছু কীভাবে প্রতিবাদবিহীন মেনে নিতে হয়!”
৭০।
এদেশে ধর্মান্ধতা এতটা প্রকট রূপ লাভ করত না যদি সবাই পুরো কোরআন শরীফ বাংলা ভাষায় পড়তে শিখত এবং অন্তত একবার জান্নাতের লোভ ও জাহান্নামের ভয়মুক্ত হয়ে তা পড়ে বুঝতে পারত!
৭১।
চোরেরা আগে না বলে কোনো কিছু নিয়ে যেত; ডাকাতরা নিত জোর করে।
বর্তমানে চোর-ডাকাতরা স্মার্ট হয়েছে। এখন তারা নেয় অনুরোধ করে ধার হিসেবে এবং নিয়ে তা ফেরত দেয় না আর; প্রয়োজনে সম্পর্ক নষ্ট করে।
৭২।
কষ্টার্জিত স্বাধীনতা’কে বাঙালি জাতি যতটা অবহেলা, অসম্মান ও অপব্যবহার করেছে, পৃথিবী’র অন্য কোনো জাতি নিজেদের স্বাধীনতা’কে ততটা অশ্রদ্ধা করার কথা কল্পনাও করেনি!
৭৩।
এদেশের সমস্যাগুলো অনেক গভীরে গ্রোথিত। কাঙ্ক্ষিত উন্নতি যে প্রায় অসম্ভব তা এই জনপদের পেশাজীবীদের বহুল-প্রচলিত বিশেষণগুলো দেখলেই বোঝা যায়।
যেমন- অসাধু ব্যবসায়ী, ঘুষখোর পুলিশ, দুর্নীতিবাজ নেতা, পল্টিবাজ রাজনীতিবিদ, গমচোর চেয়ারম্যান, মামলাবাজ/ভন্ড আইনজীবী, ফাঁকিবাজ/ভূয়া ডাক্তার, দুশ্চরিত্র/দরিদ্র শিক্ষক, লোভী সাংবাদিক, ভন্ড কবিরাজ, অসৎ সরকারি কর্মকর্তা, লুইচ্চা হুজুর, ভূমিহীন কৃষক, অভাবী দিন মজুর, নকলবাজ ছাত্র, বঞ্চিত নারী শ্রমিক – ইত্যাদি।
আমরা যেদিন এই বিশেষণগুলো থেকে মুক্ত হতে পারব, ঠিক সেদিন থেকে এই মুক্ত-স্বাধীন দেশটি উন্নতি করতে শুরু করবে।
৭৪।
এই শহরে বিনিময় ছাড়া কিছু পাওয়া প্রায় অসম্ভব। একগ্লাস জলও এখানে বিক্রি হয়।
নির্মল চাঁদ দেখতে চাইলেও অনেক কষ্টের বিনিময়ে দানবতুল্য অট্টালিকা'র ফাঁকেফাঁকে চাঁদ’কে খুঁজে বের করে নিতে হয়!
আর দেখা শেষ না হতেই হারিয়ে ফেলতে হয়!
৭৫।
তুমি যাকে যতটুকু দিয়েছ কিংবা যার কাছ থেকে যতটুকু নিয়েছ, মন্দ কিংবা ভাল, তার ঋনশোধ না করে কিংবা পাওনা গ্রহণ না করে তোমার মুক্তি নেই।
আর এই ভারসাম্য নষ্ট করার ক্ষমতা প্রকৃতি মানুষকে দিতে পারে না কেননা প্রকৃতিরও কিছু অপারগতা থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×