বাংলাদেশের আজ সুদিন। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ছড়াচ্ছে। হাতে কলমে না হলেও সমগ্র বিশ্ববাসীও জানে যে বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যক প্রতিভাবান মানুষ জন্মে। যথাযথ মর্যাদা কিংবা সুযোগের অভাবে অধিক জনঅরণ্যে তারা আবার হারিয়েও যায়। প্রতিভাচর্চার পর্যাপ্ত ক্ষেত্র আর সুদৃষ্টির অভাবে বাংলাদেশের প্রতিভাবানদের শতকরা কতজনের প্রতিভার যে বিকাশ ঘটছে, তা আজও অজানা।
যাই হোক, আজ বাংলাদেশেরই সুদিন। কারণ বাংলাদেশের এক যুবক যে বিবিসিতে সংবাদকর্মীর দায়িত্ব পালন করে থাকে, সে বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর ব্যক্তির ইন্টারভিউ নিতে যাচ্ছে। প্রথমে খবরটা সে বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু তার ব্যক্তিত্বতায় মুগ্ধ হয়ে বিবিসি কর্তৃপক্ষ তাকেই নির্বাচিত করেছে সেই মহান (!) ব্যক্তিটির এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার নেবার। যার নামে আজ সমগ্র বিশ্ব কাঁপে। যার কথায় জাতিসংঘ উঠে-বসে। যাকে সবাই মনে মনে ঘৃণা করলেও সামনে সম্মান করে। তাকে যে সম্মান করতেই হবে। পৃথিবীটাযে তারই! তার সামনে পান থেকে চুন খসলেই যে পৃথিবী থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হবে!
এই মহামান্য ব্যক্তিটি আর কেউ নন, জর্জ ডব্লিউ বুশ। বর্তমান বিশ্বের নিঃশব্দ আতঙ্ক।
এই নিয়ে বিশ্ব প্রেস মিডিয়া আর সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠার কোন শেষ নেই। বাংলাদেশের মত নিম্নমানের দেশের সাধারণ একজন অল্পবয়স্ক ছেলেকে কেন এই গুরুদায়িত্ব দেয়া হল, তা নিয়ে সমালোচনায় উঠে পড়ে লাগল সিএনএন রয়টার্স এপি এএফপি, সবাই মিলে। কে জানে, কেন তারা এটা সহ্য করতে পারছে না। তবে যে যাই বলুক, স্বয়ং বুশ এই অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিতির সম্মতি দিয়েছেন। প্রথম দিকে তিনিও অবাক হননি এমনটা নয়, কিন্তু তার একান্ত কাছের একজন কূটনীতিক তাকের পরামর্শ দিয়েছেন এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতে। কূটনীতিকের মতে, বাংলাদেশের একজন নাগরিকের সাথে টক শো তে বসতে অসম্মতি জানালে বিবিসি সেটা ঢালাওভাবে প্রচার করবে এবং বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আপনার উপর আস্থা ও সম্মান হারাবে। কারণ, ক্ষমতা ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা যেমনই হোক, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ অত্যন্ত দেশপ্রেমী। পাকিস্তানের ট্রেনিংপ্রাপ্ত অস্ত্রসুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে সাধারণ কিছু গোলাবারূদ এবং পর্যাপ্ত ট্রেনিং ছাড়া বাঙ্গালীরা হার মানিয়ে দিয়েছিল। এই কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার পর মার্কিন সরকার যথেষ্ট আর্থিক ও খাদ্য সাহায্য দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা হলেও আমাদের উপর খুশি (!)। আর আপনার মতো উঁচুমানের একজন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের একজন যুবকের সাথে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বসেন, তাহলে তো বাংলাদেশ বর্তে যাবে।
সম্মানিত বুশ রাজি হলেন।
সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হল। সাহসী চালাক যুবক জর্জ বুশের সাথে সম্মতি রেখেই কথাবার্তা চালাল। কারণ সে জানতো, এটা অনিল কাপুরের অভিনীত "নায়ক" ছবি নয় যে জর্জ বুশের অত্যাচারের বিবরণ তুলে ধরবে। তাকে বুঝতে হবে সে কার সাথে কথা বলছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি!
যথারীতি অনুষ্ঠান সম্প্রচার হল। সমগ্র বিশ্ব আরেকবার বাংলাদেশকে শ্রদ্ধার চোখে দেখল। কিন্তু সেই উপস্থাপক যুবক কয়েকদল জঙ্গি'র প্রধান টার্গেট হয়ে রইল। যেইমাত্র তাকে সেই সব জঙ্গিদের কাউকে দেখবে, সেইমাত্র তাকে যেকোন উপায়ে হত্যা করতে হবে। জঙ্গি লীডারদের কাছ থেকে আল জাজিরা ও ভয়েস অব আমেরিকায় ভিডিও টেপ পাঠানো হল। জঙ্গি লীডাররা ঘোষণা করলেন, জর্জ বুশের বন্ধু, বিশ্ব মানবতা ও ইসলামের চরম শত্রু। তাকে হত্যা করা ফরজ, ঠিক যেমনিভাবে জর্জ বুশকে হত্যা করাও ফরজ। এদের কাউকে হত্যা করলে আল্লাহ বেহেশতের গ্যারান্টি দিয়েছেন। বিনা হিসাবে নিশ্চিত বেহেশত। তাই বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ গোপন জঙ্গি সদস্যদের উন্মুক্ত আহ্বান করা হলো, সেই বাংলাদেশী যুবককে হত্যা করার জন্য তক্কে তক্কে থাকতে। বেহেশত নসীবের এই অপূর্ব সুযোগ যেন কোনভাবেই হাতছাড়া না হয়!
এবার বাংলাদেশের ভয়ের পালা। তবে ঐ ছেলের ভাগ্য ভাল ছিল যে সে বুশের পক্ষে (আপাতঃদৃষ্টিতে) ছিল। তাই স্বয়ং বুশ ঐ যুবকের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি ঐ যুবকের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্স গঠনের নির্দেশ দিলেন। ঘোষণা দিলেন, এই যুবক চব্বিশ ঘন্টা সাতশ' রাইফেল ও চৌদ্দশ' প্রহরীর কড়া প্রহরায় থাকবে যাতে বাইরের একটি ধূলিকণাও ওকে স্পর্শ করতে না পারে।
শুরু হলো ঐ যুবকের বন্দি জীবন। একে তো বন্দিই বলে। চব্বিশ ঘন্টা প্রোটেকশনের মধ্যে থাকতে হয়। ইচ্ছে করলে প্রোটেকশন বাদ দিতে পারে, কিন্তু তার জীবনের প্রশ্ন এতে জড়িত। তাই প্রোটেকশন ছেড়ে বেরিয়েও আসতে পারেনা। কী করবে এখন সে? এই বন্দী জীবন কদ্দিন?
--
আজও সেই যুবক নিরাপদ আছে। রাইফেল তাকে খুব কড়া প্রহরাই দিয়েছে। তার কিছু হয়নি। সে আপন দেশ, বাংলাদেশে বেড়াতে যেতে চায়। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে কড়াভাবে নিষেধ করল। বলল, বাংলাদেশে জঙ্গিরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কখন কোনদিক দিয়ে কী ঘটে যায় তা বলার কোন উপায় নেই। বাংলাদেশে গেলেই আমাদের প্রোটেকশনের এই মিশন ব্যর্থ হবে। না, এই জীবনে বাংলাদেশে যাবার নাম আর নয়। বাকী জীবন প্রবাসে কড়া নিরাপত্তা জালের মধ্যেই কাটাতে হবে।
কী আর করে সেই অসহায় যুবক। এই আদেশ জারি হবার পর বিবিসি'র অফিসে তার নিজেরই রুমে তার সিনিয়র সংবাদকর্মী তার সাক্ষাৎকার নিতে বসলেন। সেই সাক্ষাৎকার প্রচার হল টিভিতে। সাক্ষাৎকারটা ছিল এমনঃ
(কুশল বিনিময়ের পর)
রিপোর্টারঃ সম্প্রতি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সী আপনাকে (ভদ্রতার খাতিরে আপনি করে বলা হচ্ছে) নিজ জন্মভূমি বাংলাদেশে আর জীবনেও না যাবার পরামর্শ নয়, একেবারে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
বাংলাদেশী যুবকঃ আমার প্রতিক্রিয়া অবশ্যই খারাপ। আমি আমার নিজ ভূমিতে, যেই মাটিতে আমার সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার, সেই দেশ- বাংলাদেশে যেতে পারবো না, এটা নিঃসন্দেহে শুধু দুঃখজনক নয়, বরং জীবনের সবচাইতে বড় কষ্টদায়ক ব্যাপার। আমি সি.আই.এ'র বিরোধিতা করব না, কারণ আমি জানি তারা যা বলছে সঠিক বলছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় উন্নতি যদি সফল হয় তাহলে হয়তোবা সি.আই.এ আবার আমাকে দেশে যাবার অনুমতি দিবে। আমি সেই আশায় দিন যাপন করছি।
রিপোর্টারঃ আপনাকে আপনার দেশে যেতে মানা করা হচ্ছে তার একমাত্র কারণ জঙ্গিবাদ, আমরা সবাই জানি জঙ্গি বাহিনীর নেতারা ইসলামের নামে কী সব ঘোষণা এবং তাদের বিশ্বব্যাপী গোপন সদস্যদের প্রতি কী আহ্বান জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
বাংলাদেশী যুবকঃ আমার মতে, পৃথিবীতে যদি মানুষরূপী সত্যিকারের গাধা থেকে থাকে, তাহলে তারা হচ্ছে এই জঙ্গিবাদের সদস্যগণ। এদের মত বোকা আর হাঁদারাম পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। মানলাম ওরা আমাকে পছন্দ করতে পারেনি কারণ আমি জর্জ ডব্লিউ বুশের সাথে ভাল আচরণ করেছি। কিন্তু এর পরিণতি কি মৃত্যুদন্ড? পৃথিবীর কোন ধর্ম কি এই মত দেবে? আর সে স্থানে তারা পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম ইসলামের নামে এইসব ভুল তথ্য প্রচার করছে। তারা কি মুসলমান? একজন মুসলমানের দায়িত্ব কী? যদি সে ধর্ম প্রচার করতে চায় বা অন্যায়ের বিরোধিতা করতে চায় তাহলে তাকে তো আগে অবশ্যই ধর্ম গ্রন্থ আল-কুরআন এবং এরপর ক্রমানুসারে হাদীসগ্রন্থগুলো গভীর ভাবে অধ্যয়ন করে বুঝতে হবে। তাই নয় কী? অথচ তারা কী করছে, তারা বলছে আমাকে বা জর্জ ডব্লিউ বুশ সাহেবকে মৃত্যুদন্ড তথা খুন করতে পারলে আল্লাহ নাকি বেহেশতের গ্যারান্টি দিয়েছেন। আশ্চর্য, ঐসব জঙ্গি বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে নাকি যার উপর নতুন করে সুরা নাযিল হচ্ছে? যার কাছে প্রতিদিন ফেরেশতা এসে সমসাময়িক বিশ্বে করণীয় সম্বন্ধে আল্লাহর মতামত পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছে (নাঊযুবিল্লাহ)? পৃথিবীর এমন একজন মুসলমান যে ইসলামের নূন্যতম জ্ঞানটুকুও অধিকার করে, সেও মত দিবে যে, "না"। তাহলে ঐসব জঙ্গিদেরকে বোকা গাধা ছাড়া আর কী বলে আখ্যায়িত করতে পারি?
-----সমাপ্ত-----
উপরের ঘটনাটুকু পুরোটাই কল্পনার অবদান। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। উক্ত ঘটনা গুলো কখনো কোথাও ঘটেনি। শুধুমাত্র বর্তমানে জঙ্গিবাদের বোকামীর একটি চিত্র তুলে ধরতে গল্পটুকু রচিত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১১ রাত ১২:২৪