somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Jannat : in search of Heaven : একটি রিভিউ

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত খুব দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে বিভিন্ন দিকে। তাদের এই এগোনোর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক যেটি, সেটি হচ্ছে "বলিউড"। সম্প্রতি যারা বলিউডের হিন্দি ছবিগুলো প্রায়ই দেখেন, তারা তো জানেনই বলিউড সিনেমার দিক দিয়ে কতটা উপরে উঠে গেছে। হলিউডের কাছাকাছিও যেতে না পারলেও তাদের পুরনো ইতিহাস ও ঢালিউডকে ছাড়িয়ে গেছে বহুদূর। তাদের ক্যামেরা হয়ে গেছে উন্নত, রীল হয়ে গেছে দামী, ডিরেক্টররা হয়ে গেছেন আরো অসাধারণ প্রতিভাবান, আর জন্ম হচ্ছে অসাধারণ সব গান ও মিউজিকের। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বলিউড থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত মোট ছবির প্রায় সত্তরেরও বেশি শতাংশ জনপ্রিয়তা পায় শুধুমাত্র গানের জন্য। হ্যাঁ, গানই হচ্ছে বলিউডের ছবির "মুক্তি পাবার আগেই জনপ্রিয় হয়ে যাবার" মূল কারণ। বেশ কিছু ছবি আছে যেগুলোর কোন কাহিনী নেই, কতক্ষণ বকবক করে ছবি নাকি শেষ হয়ে যায়। এসব ছবিও ব্যবসায় সফল হয় কারণ কাহিনী বানাতে না পারুক, দারুণ সুরের একটি গান বানাতে পারলেই ছবি হিট।

এইসব ভেবেই বোধহয় আমাদের জেমস ভাই বলিউডের দিকে পা বাড়িয়েছেন। কারণ, তার প্রতিভানুসারে বাংলাদেশে তাকে ততটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছিল না। যতটুকু পেতেন, তা তার ভক্তদের কাছ থেকে সরাসরি। আর বাংলা ছবিতে অবশ্য তাকে বহু অনুরোধ করলেও তিনি গান গাইতেন কি না সন্দেহ আছে, যদিও গাইতেন, তবু খুব কম। কারণ আমাদের বাংলা ছবি ফ্লপ করে গানের মাধ্যমে। বিশ্বাস না হলে বাংলা ছবি দেখতে চলে যান :)

যাই হোক, ফিরে আসছি আজকের মূল বিষয়ে। সব ছবি না হলেও, বেশিরভাগ ছবিই বলিউডের খুব দারুণ হয়। নিশ্চয়ই জানেন কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া ছবি জান্নাত এর কথা। অনেকে হয়তো জান্নাত ছবিটাকে "ইমরান হাশমী"র উপস্থিতির জন্য বাজেয়াপ্ত করে ফেলবেন। কারণ ইমরান হাশমীর আগের ছবিগুলো (আশিক বানায়া আপনে) দেখলে যেকোন "ভাল মানুষ"ই ইমরান হাশমীর আর কোন ছবি দেখতে ইচ্ছা করবে না।

কিন্তু আমি বলছি জান্নাত পুরো ভিন্ন্। এখানে নেই অশ্লীলতার ছিটেফোঁটাও। এর কাহিনী এক কথায় অসাধারণ, হৃদয় ছোঁয়া। আপাতঃদৃষ্টিতে একে লাভস্টোরি মনে হলেও শুধু লাভস্টোরিই নয়, ছবিটির কাহিনী আরো সুন্দর। এতে রয়েছে কিছু সুক্ষ্ম বার্তা, যা সত্যিই বাস্তব। এছাড়াও বরাবরের মতই ছবির সূরের মূর্ছনায় ছবি মুক্তি পাবার আগেই এটি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল (জান্নাত জাহা, জুদাই, যারা সা)। এছাড়াও ছবির স্ক্রীনপ্লে ও ক্যামেরা সত্যিই দারুণ হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রশংসনীয় একটি ছবি।


কাহিনী সংক্ষেপ
অর্জুন (ইমরান হাশমী) একজন সাধারণ মানুষ থাকে প্রথমে। তাস খেলে। কিন্তু প্রতিবারই সে তাস খেলায় হেরে যায়। দারিদ্রতার জন্য সে তেমন কোন ব্যবসাও করতে পারতো না। তবে জুয়া খেলার মত ছোটখাট অপরাধে বরাবরই লিপ্ত থাকতো। তার বাবা ছিলেন সমাজের একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি, সৎ, যদিও তার বাবারও আর্থিক অবস্থা ততটা ভাল ছিল না।

একদিন অর্জুনের দেখা হয় একটি মেয়ের সাথে। শপিং মলে। প্রথম দেখায়ই মেয়েটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে অর্জুন। তারপর তার পিছু নেয়। মেয়েটিকে দেখে একটি আংটির সামনে মনভোলা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। আংটির দাম অনেক, তার কেনার সামর্থ্যের বাইরে। অর্জুন তখন বিপরীত পাশে গিয়ে যে কাঁচের ভিতরে আংটিটা ছিল, সেটা ভেঙ্গে ফেলে। পুলিশ তখন তাকে থানায় নিয়ে যায়। যাবার সময় অর্জুন বারবার জিজ্ঞেস করে সেই মেয়েটার নাম জেনে নেয়। জয়া (সোনেল)।

কাহিনী এগিয়ে যায়। জয়ার সাথে অর্জুনের প্রায়ই দেখা হয়। কথায় কথায় জয়া একদিন অর্জুনকে বলে, প্রেম করতে হলে গাড়ীর প্রয়োজন হয়। তখন অর্জুন চিন্তায় পড়ে যায়। গরীব সে, গাড়ি পাবে কোথায়?

অর্জুনের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ছিল অত্যন্ত প্রখর ও আশ্চর্যজনক। সে এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে শুরু করে ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিংয়ে। এভাবেই সে টাকা আয় করতে শুরু করে। একসময় ইন্ডিয়া ছেড়ে কেপটাউনে চলে যায় তারা দু'জন। কিন্তু সবকিছু গোপন থাকে না বেশিদিন। জয়ার কাছে সব খবর ফাঁস হয়ে যায়।

এভাবেই ঘটনা এগিয়ে যেতে থাকে। একদম শেষ দৃশ্যে পুলিশ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে জয়া ও অর্জুনকে।
এই শেষ দৃশ্যটিই ছবির সবচাইতে আকর্ষণীয় ও হৃদয়ছোঁয়া পর্ব। শেষ দৃশ্যে কী হয় সেটা বলছি না। আপনি নিজেই দেখুন। আর যারা দেখেছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, শেষ ঘটনাটা বলবেন না। নিজে দেখলে পুরো ছবির আনন্দটা পাবেন।

যাই হোক, ছবিটা মূলত আমাদেরকে বলে যে, আমরা যতই সততা সততা বলি না কেন, টাকা পয়সা ছাড়া আসলে জীবন অত্যন্ত কঠিন। এমনকি ভালবাসতেও আজকাল টাকা লাগে (যার জলজ্যান্ত প্রমাণ দিতে পারবেন এই ব্লগেরই অসংখ্য ব্লগার :) )। এছাড়াও আরো দারুণ কিছু স্পট ও মিউজিকের সমন্বয় আপনাকে আনন্দ দিতে ব্যর্থ হবে না।

উল্লেখ্য, মুক্তি পাবার পর প্রায় তিন সপ্তাহ একাধারে জান্নাত ছবিটি ভারতের টপ লিস্টের এক নাম্বারে অবস্থান করছিল। এছাড়াও সবদিক মিলিয়ে একটি ব্যবসাসফল ছবিও বটে এটি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১১ রাত ১২:২১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×