somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসতে দেখো, গাইতে দেখো, অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো, দেখো না কেউ...

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ ভোর ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার একটা স্বভাব হচ্ছে চুপচাপ থাকা। কখনো কখনো এই স্বভাব বেশ কাজে দিয়েছে, কখনো কখনো এই স্বভাব বেশ সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। চরম মাত্রার ইনট্রোভার্ট হওয়ার কারণে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়েছি এবং পড়েই রয়েছি। তবে সেসব বলার জন্য এই পোস্ট নয়।

ইনট্রোভার্ট স্বভাবের দরুণই হোক বা অন্য যে কারণেই হোক, আমি অনুভূতিগুলোকে ঢাকতে পারি বেশ ভালো। কোনো নির্দিষ্ট মূহুর্তে আমাকে দেখে কেউ বলতে পারবে না আমার মনের অবস্থা কী। সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনস্তাত্ত্বিকবিদদের কথা আলাদা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমার মনের অবস্থা সবসময় লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করি। এই লুকিয়ে রাখার অভ্যাস কোত্থেকে এসেছে জানি না। তবে এতটুকু জানি, এটা বেশ কাজে দেয়।

মানুষ যত কাছেরই হোক না কেন, বন্ধুত্ব যত গাঢ়ই হোক না কেন, একজনের দুঃখ-কষ্টের কথা আরেকজন শুনতে চায় না। হয়তো বন্ধুত্বের টানে শুনতে চাইবে এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও করবে। কিন্তু দুঃখ-কষ্টের কথা বেশিদিন মানুষ শুনতে চায় না। কেবল তা-ই নয়, দুঃখ-কষ্টের মাঝে পড়ে রয়েছে এমন মানুষও অন্যরা খুব একটা পছন্দ করে না। ডিপ্রেসড বলে তার একটা খেতাব জুটে যায়। তাই কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ার না করাই সবচেয়ে ভালো। এ কথাও সত্যি যে কষ্ট শেয়ার করলে তা কমে। কিন্তু আল্লাহ যখন কষ্ট দেন, তখন বেশ ভালোভাবেই দেন। শেয়ার করে হয়তো নিজের কষ্ট কমবে, কিন্তু অন্যরা তো আসলে তা শুনতে চায় না। একটা সময় পর যখন সেই বোধোদয় হবে, তখন কষ্টগুলো মানুষ নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে। ফলে কষ্টের কষ্ট আর কষ্ট শেয়ার করতে না পারার কষ্ট মিলে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।

আমার ক্ষেত্রে প্রথমটা হয়নি। আমি কারো সঙ্গে ঠিক শেয়ারই করিনি কিছু। হয়তো ততো কষ্টই পাইনি। কিন্তু যতটুকু পেয়েছি তা কোনো অংশে কম নয়। তবে নিজেই আবিষ্কার করেছি, কাউকে বলে কোনো লাভ নেই। কেউই কষ্টটাকে আমার মতে করে অনুভব করতে পারবে না। কারো মনের পরিস্থিতি আমার মতো হবে না। এটা সম্ভব না। আর তাই, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজের সঙ্গেই এক ধরনের প্রতারণা করা।

প্রতারণা কি না জানি না, তবে আমি আমার মেন্টাল স্টেটটা সবসময়ই লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। আর বেশিরভাগ সময়ই সেটা পারি। আমার এই মানসিক মুখোশটা আজ অবধি কেউ ধরতে পারেনি। এর ভেতরে থাকা সিক্রেটটা কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। আর আমিও সেই গোপন কথাটা বলতে চাই না। আমি গোপন কথা বলে কষ্টের কথা বোঝাচ্ছি না। আমি বলছি, সেই গোপন কথা, যা জানলে মানুষ জেনে ফেলবে কোনটা আমার কষ্ট ঢাকবার মুখোশ।

আইয়ূব বাচ্চুর অনেক গানই বাস্তবতার সঙ্গে অনেক মিল রেখে লেখা। এ জন্য অনেক আগে থেকেই আমার আম্মুর আইয়ূব বাচ্চুর গান পছন্দ ছিল। ওনার গান সারাক্ষণই বাসায় বাজতো। সম্ভবত "ক্যাপসুল" ছিল ক্যাসেটটার নাম, যেটায় হাসতে দেখো গানটা ছিল। আমার গানটা বরাবরই ভালো লাগতো। একটা ব্যাডমিন্টন ব্যাটকে গিটার বানিয়ে সারাঘর ছুটে বেড়াতাম আর আইয়ূব বাচ্চুর এই গানটা গাইতাম।

আজ ১৫-১৬ বছর পর সেই একই ঘরে রয়েছি। আজও স্পিকারে সেই গানটা বাজে। আজও সেই একই সুর, একই কথা, একই বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি। একমাত্র পার্থক্য, গানের কথাগুলোর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাস্তবতা।

তাই প্রতিবার যখন আমি মুখোশটা খুলে রাখি, একা একা নিজের কষ্টগুলো না পাওয়াগুলো "উপভোগ" করতে শুরু করি, তখন স্মৃতির কোনো এক কোণে বেজে ওঠেঃ

হাসতে দেখো, গাইতে দেখো,
অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো,
দেখো না কেউ, হাসি শেষেই,
নীরবতা।
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×