somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাল ভারতের দালালি করেছি, আজকের দালালিটা পাকিস্তানেরপক্ষেই যাক... কি বলেন?

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশিষ্ট নাট্যগুরু প্রবীর গুহর একাটা কর্মশালা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অল্টারনেটিভ থিয়েটার ফর্ম নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি বেশ পরিচিত একটি নাম। একবার ভারতের প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড ও পেয়েছেন। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। ১৯৭১ সালে বাবা মায়ের সাথে শরণার্থী হয়ে দেশ ছাড়েন। আর ফিরে আসা হয়নি।
কর্মশালায় তিনি আমাদের ক্রিয়েটিভিটি যাচাই করার জন্য কিছু টপিক দিলেন। আমাদের কাজ হল সেই টপিক দিয়ে একটা ছোট নাটিকা তৈরি করে দেখাতে হবে। দেখা গেল আমরা যাই করছি তার মাঝে ঘুরে ফিরে মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১, মুক্তিযোদ্ধা ব্যাপার গুলো চলে আসছে। যেমন-
নদীঃ মুক্তিযোদ্ধারা নদীতে গোছল করছে।
পানিঃ বীরাঙ্গনা পানি খেতে চায়।
কাপড়ঃ বাংলাদেশের পতাকার কাপড় লাল সবুজ।
এক পর্যায়ে তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। নিজের রাগ সামলে বলে উঠলেন- "তোরা আমাকে ভুল বিঝিস না। তোদের এই মুক্তি যুদ্ধের প্রতি আমার কোন অসম্মান নেই। এই যুদ্ধ আমার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আবার অনেক কিছু ফিরিয়েও দিয়েছে। তোদের কাছে অনুরধ তোরা মুক্তিযুদ্ধের বলয় থেকে বেরিয়ে আয়। তোদের সব কিছুই আটকে আছে ১৯৭১ সালে। কিন্তু পৃথিবীটা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।"
আপাত দৃষ্টিতে একজন ভারতীয় নাগরিকের মুখে একথা শুনলে মাথা তো গরম হবারই কথা। তাই না?
...
আমি লক্ষ করে দেখেছি আমি যতবারই আমার পাকিস্তানী কোন বন্ধু/পরিচিতর সাথে কথা বলতে গিয়েছি ততবারই ঘুরে ফিরে ১৯৭১ সাল চলে এসেছে। হয়েছে যুক্তি আর আবেগের জগাখিচুড়ী টাইপ কথা। না আমি তাকে বিশ্বাস করাতে পেরেছি যে, তোমার পূর্ব পুরুষরা অমানুষ ছিল। না সে আমাকে বিশ্বাস করাতে পেরেছে যে যুদ্ধটা ছিল ভারত-পাকিস্তানের খোলসে হিন্দু মুসলমানের। পরিনামে যা হবার তাই হল। আমি একদিকে, সে একদিকে।
এমন তর্ক যুদ্ধ আমি অনেক করেছি। ফলাফল শুন্য। একারনেই আমার পাকিস্তানী এক মেয়ে বন্ধু ইন্সাল্ট করে বলত-"দেশপ্রেমিক বাঙ্গালী বাবু"
একবার এক পাকিস্তানী মেয়ে আমার সাথে একি টেবিলে খেতে বসেছিল বলে আমি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম-" তোমার সাথে এক টেবিলে বসে খেলে আমার পাপ হবে। কারন আমার জন্ম বাংলাদেশে"
এর প্রতিবাদ করে আমার অনেক বন্ধুই আমাকে বলেছে- এটা একধরনের রেসিজম। তোমার কাছে এটা আশাকরা যায় না। দেশ প্রেম মানেই রেসিজম না। তুমি ভুল করেছ" ।
...।।
প্রবীর গুগর সেই কথাটা আমার জীবনেও সত্য। আমিও সব কিছুর মাঝেই ১৯৭১ খুঁজি। এই খোঁজাটা অনেকটা ফোবিয়া টাইপের হয়ে গেছে। যার পরিনামে অনেকটা এমন যে যুক্তি মানি, তালগাছটা আমাকে দিয়ে দেও।
এবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে লাহড় বই মেলাতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষার কবি সাদাফ সায সিদ্দিকী। সেখানে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এক সেমিনারে। তিনি সেই সেমিনারের অভিজ্ঞতা সেয়ার করেছেন প্রথম আলোতে।
একটু দেরিতে হলেও বুঝতে পারলাম যে, ১৯৭১ সাল কেবল আওয়ামীলীগের এক তরফা ব্যাবসার পণ্য নয়। এটাকে পণ্য হিসেবে পাকিস্তানও ব্যাবহার করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে যেমন দেশ প্রেম মানেই হল- বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত ছবি, বীরাঙ্গনার বিবস্ত্র ছবি প্রদর্শন, মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে বড় বড় কথার ফুলঝুরি ফোটানো। আদতে কাজের কাজ কিছু না। তেমনি করে পাকিস্তানের কাজ একই রকম এই যুদ্ধকে স্রেফ ভারতের ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দেওয়া। যাতে মুসলিম রাষ্ট্র কায়েম করাটা সহজ হয়।
আওয়ামীলীগ যেমন খুব সুকৌশলে আমাদের দেশ প্রেম শেখানোর নামে মস্তিষ্কে গুঁজে দেয় আওয়ামী প্রেম ও অন্ধত্ব। ঠিক সেভাবেই পাকিস্তান রাষ্ট্র খুব সুকৌশলেই জেনারেশন বাই জেনারেশন সুকৌশলে মস্তিষ্কে গুঁজে দিচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্বেষ। কিন্তু সত্য কি আর চাঁপা থাকে?
এতদিন পাকিস্তানীদের ঘৃণা করতাম। আজ থেকে আর না। কারন এদের তো কোন দোষ নেই। না এরা সেই সময় জন্ম নিয়েছে, না আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। তবে নতুন প্রজন্ম কেন সেই দায়ভার কাঁধে নেবে। যেখানে তাদের জানতেই দেওয়া হয় না আসল সত্যটা কি...।।
মিঃ সিদ্দিকীর লেখা থেকে জানলাম যে তাঁর বক্তিতা শোনার পরে অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছে সেই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের জন্য। তারা আরও জানতে চায়। তাদের যে জানানোই হয়নি সেটা নিয়েও তাদের অনেক আক্ষেপ।
একটা জাতি, জাদের কৌশলে অন্ধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সত্যটা জানতে দেওয়া হয়নি। আলো যাদের কাছে পৌঁছায়নি। তাদের উপরে রাগ করে থাকার কোন মানে হয় না।
আমার এক বন্ধু একবার দেশ প্রেম প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগ করে গালি দিয়ে বলেছিলেন- "আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। দেখতেও চাই না। আমার আক্ষেপও নাই। আমার কাছে দেশ প্রেম মানে মধ্য রাতে ঢাকা শহরের ওভার ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে থেকে বড় বড় করে নিঃশ্বাস নেওয়া। সাহাবাগে বসে চা খওয়া আর আড্ডা দেওয়া, রিক্সায় করে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ান। কারন আমি বিদেশে থাকলে এগুলকেই মিস করি। তবে শহীদদের প্রতি সম্মানের কোন কমতি নাই।"
সেদিন তাঁর কথার মর্ম বুঝিনি। আজ কিছুটা বুঝি। দেশ প্রেম বলতে যে বায়োনারী হিসাব আমাদের শেখানো হয় যে, এগুলো এগুলো করলেই তাকে দেশ প্রেম বোলবে। আর এগুলো এগুলো মানেই তা কোন দেশ প্রেম না। সেটা বড়ই হাস্যকর।
তাই আজ থেকে চিন্তা করেছি আর কোন পাকিস্তানির সাথে ঝগড়া বিবাদ করব না। পারলে এক কাপ কফি বেশি খাওয়াব। নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে নিয়ে যাব। সত্যটা বিনয়ের সাথে খুলে বলব।
আমার কাছে আজ থকে দেশ প্রেম হল যত বেশি মানুষকে আমার দেশ সম্পর্কে পজেটিভ করতে পারব আমি তত বড় দেশ প্রেমিক। এটাই আমার কাজ।
পাকিস্তানীরা সত্য জেনেও যখন আমাদের উপরে অত্যাচারকে সমর্থন করবে তখন না হয় ওদের ছুঁড়ে ফেলব। কিন্তু যতদিন সত্যটা ওদের জানাতে না পারছি, ততদিন পাকিস্তানীর সাথে প্রেম করব।
আমার বক্তব্য যাদের বোঝার তারা এমনিতেই বুঝবে। যারা বুঝবে না তাদের আর বুঝিয়ে লাভ নেই। শেষ কথাটি হল- পাকিস্তানী সাধারন জনগন আর পাকিস্তান রাষ্ট্র কিন্তু এক বিষয় না। সুতরাং আমার এই প্রেমেরও সীমাবদ্ধতা আছে।
কাল ভারতের দালালি করেছি, আজকের দালালিটা পাকিস্তানের পক্ষেই যাক... কি বলেন? সময় পেলে বাংলাদেশের দালালিও করব।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×