চলচ্চিত্রময় দুটো দিন কাটল। শর্ট ফিল্মের শুটিং এ গিয়েছিলাম। কোলকাতা শহর ছেড়ে বহুদূর। ভালোই কাটল দিনটা। এখানকার তরুণদের পালস বোঝার ট্রাই করছি। আগামী দিনে এরা কেমন সিনেমা বানাবে সেটা বোঝার চেষ্টা করছি। পরিচালক স্বয়ং বন্ধুবর অভিষেক ভদ্র।
এখানকার ছেলে মেয়েদের কাজে স্বকীয়তা আছে। এরা এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করে। মেকাপ বা গ্লামারের চাকচিক্যের থেকে গল্প বলার ঢঙ বা মেকিং এ এদের নজর বেশি। অনেকেই ইন্ডাস্ট্রির বাইরে কাজ করছে। সিনেমাকে যে ভিন্য ভিন্য আঙ্গিক থেকে দেখা যায় সেটা এরা ভালো বোঝে। এদের সিনেমা নিয়ে পঠন পাঠনও কম না।
ভদ্র স্যুরিয়ালিজমের উপরে কাজ করছে। কোন এক অজানা কারনেই এদের আবস্ট্রাক বিষয় গুলো নিয়ে কাজের আগ্রহ বেশি। কোলকাতায় আজ কাল এসব কাজ বেশ চলছে। সাম্প্রতিক নির্বাক নামে একটা সিনেমা রিলিজ পেয়েছে। এটাও স্যুরিয়ালিজমের উপরে। হলে সাধারণ দর্শকের উপচে পরা ভিড়। সাধারণ দর্শক এই সকল সিনেমা দেখছে, সিনেমা শেষে হাঁতে তালি দিচ্ছে ও বিশেষ বিশেষ দৃশ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। এটা দেখেই বোঝা যায় যে, কোলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতারাই শুধু সমঝদার হয়ে ওঠেনি, সেই সাথে এখানকার দর্শকদেরও দার্শনিক বিকাশ ঘটেছে। তারাও সমঝদার হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
মাঝে মাঝে তরুণ ডিপ্লোমা ফিল্ম নির্মাতাদের মাঝে গান্ডু সিনেমার বিতর্কিত নির্মাতা কিউ এর প্রভাব লক্ষণীয়। যদিও অনেকেই সে কথা সরাসরি স্বীকার করতে নারাজ। আবার এমনও হতে পারে, সামাজিক রীতিনীতি ভেঙ্গে নতুন কিছু গড়ার লড়াইয়ে সবাই একই কাতারের সৈনিক।
গত দুইদিন আগে 'লেবার অফ লাভ সিনেমা' দেখলাম। এক কথায় বলব, এপিক একটা সিনেমা দেখলাম। পরিচালক যে সত্যিকারেই দার্শনিক সেটা এই সিনেমায় আবার উঠে এসেছে। 'লেবার অফ লাভ' নিয়ে অন্য একদিন লেখব। এই সিনেমার অর্জন অনেক বেশি। ১০ টা আন্তর্জাতিক পুরুস্কার পেয়েছে। একই সাথে প্রায় নয়জন বাংলাদেশী সিনেমা দেখতে নন্দনে ঢুকলাম। সিনেমা শেষে আমাদের আলোচনা সমালোচনার সারমর্ম এক কথায় বললে বলতে হবে- সিনেমা কিভাবে দেখতে হয় সেটা শিখতেও আমাদের এখনো অনেক দিন ব্যায় করতে হবে। আমরা এখনো একটা বলয়ের মাঝে ভাবছি। ভাবনার স্বাধীনতা এখনো আমাদের অর্জিত হয়নি। আমরা কি সিনেমা বানাচ্ছি, আমার কাছে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল আমরা আসলে সিনেমাকে কি চোখে দেখছি? সিনেমা বিশ্লেষণের ক্ষমতা আমাদের আসলে কতটুকু??
যাই হোক। এই মুহূর্তে সিনেমার সাথে কিছুদিন কাটাতে চাই। আজ হটাত হাঁতে এসে পরল 'আওয়ার ফিল্মস দেয়ার ফিল্মস- বাই সত্যজিৎ রয়' বইটা। অনেকদিন যাবত বইটা খুঁজছিলাম। আজ ভদ্রের লাইব্রেরীতে পেয়ে গেলাম। সাথে আরও কিছু ফিল্ম ম্যাগাজিন আনলাম। সত্যজিতকে একটু অন্যরকম ভাবে খুঁজে পাচ্ছি লেখা গুলোতে।
আগামী কিছদিন বইয়ের সাথে কাটাতে চাই। ফেসবুকে অনেক সমঝদার পাঠক আছেন। আপনারা আপনাদের পছন্দের কিছু বই সাজেস্ট করুন। পড়া শুরু করি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৪৫