somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবতার সুখ-(ছোটগল্প)

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বীপবাসী গাংলাবি জাতি।
হাজার হাজার নারী,পুরুষ,শিশু,বৃদ্ধ আর নানাজাতি পশুপাখির বাস।
সব মিলিয়ে গাংলাবিরা সুখেই ছিলো।
তাদের নিজেদের আয় নিজেরা খায়।চিন্তা নাই।কষ্ট নাই।আনন্দ।
কিন্তু হঠাৎ কি হলো কে জানে?জনে জনে মানুষ মারা পড়তে লাগলো।কি অসুখ কি বৃত্তান্ত কেউ জানে না।সাগরতটে চিত হয়ে পড়ে মুখ থেকে ফেনা উজিয়ে মরণ।আশ্চর্যের ব্যাপার,খালি নারীরাই মহামারীর শিকার।
এযে নারীমারি রোগ।
দ্বীপের লোকে ভয়ে অস্থির।নারী না থাকলে চলবে?
ভাত দেবে কে? মার খাবে কে?
সব লোক দল বেঁধে ছুটলো দ্বীপসেরা গূণীন মীনাজির কাছে।দ্বীপসেরা গূণীন মীনাজি।তার মতন গূণী লোক দুনিয়ায় নেই।আকাশের দেবতাদের সাথে দিন কাটান তিনি,মেঘপরীদের সাথে রাত।
দ্বীপসেরা গূণীন মীনাজি।তার কাছে সকল সমস্যার সমাধান।সকল রোগীর চেহারা দেখলেন।ভরাট দেহগুলো সব কঙ্কালসার।চোখ ঠিকরে বেরোচ্ছে।চোয়াল দিয়ে ফেনা।
এদের বহু নারীকে তিনি দ্বীপবাসীর কাছে ভেট পেয়েছেন।মেঘপরীদের সরিয়ে এদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।ভাবতেও ঘেন্না।এরা বাতিল।
তিনি রোগী দেখে চোখ বুজলেন।এখন দিন।কাজেই তিনি নির্ঘাত আকাশের দেবতাদের সাথে সময় কাটাতে গেলেন।
ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!
নারীদের গায়ে বিষ পাপে বিয়াকুল
মুখে ফেনা বডি ত্যানা দেবের ত্রিশূল
ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!
এইসব বুড়ি ধাড়ি বাতিল এ মাল
এরা বিষ ভাইরাস,ঘটাবেরে কাল
ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!
প্রাক্তন এ বারবি-রে বারবিকিউ কর
তবেই দেবতা দেবে তোহাঁদের বর!
ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!

গূণীনের কথা গাংলাবিরা কিছুই কিছুই বুঝতে পারলো না।
বাবা,আমরা মুখ্যু।যদি একটু চক্ষু খুলে আমাদের বুঝায়ে বলেন।
বাবার চোখ খোলে।চোখে আগুন।
নির্দেশ।
চোখের আগুনের চেয়ে উত্তপ্ততর আগুন জ্বালো।সেই আগুনে রোগাদের ঢালো।এরা পাপী,ব্যাভিচারী নিশ্চিত।তাইতো দেবতার আদেশে এরা এখন বাতিল মাল।
কিন্তু বাবা,দ্বীপ যে তবে নারীছাড়া হয়!
তাতে কি!শিশু তো আছে।এরা নিষ্পাপ,বোঝে না।কামসুখ খোঁজে না।তারচেয়ে বড় কথা এরা কচি।টাটকা!এদেরই তো এখন সময়।বড় হলে নারী।নারী ব্যভিচারী।তার আগেই কাজে লাগুক।ব্যাভিচারী হলে তখন আগুন!
মা গেলো আগুনে,কন্যা গেলো আগুনে,বোন গেলো আগুনে,স্ত্রী গেলো আগুনে।
ওরা আগুনেই যাক।ওরা ব্যভিচারী।
গাংলাবিরা আগুনে একেকটা নির্বল চিৎকাররত রোগা নারী নিক্ষেপ করতে করতে একজন আরেকজনকে বলে, হাঁ রে,ব্যাভিচারী মানে কিরে?
তাতে কি? দেবতারা রাগ।নারী সব বাদ।
রোগী সব আগুনে।
রোগী নাই।
তাই রোগও নাই।
কাজেই গাংলাবি নিরোগ জাতি আবার।
বিরাট অসুখ সারিয়ে দিলেন বাবা গূণীন।
জয় মিনাজির জয়।
সব ঘর থেকে একটা করে শিশু ভেট গেলো মিনাজির আশ্রমে।
কিছুদিন পরে।
এবারে একে একে শিশু সব মরে।
সাগরতটে মুখে ফেনা উজিয়ে মরণ।
মিনাজি বাবা কই?
রোগী দেখে রোগ দেখে বাবার চোখ বন্ধ।
এখন রাত।
নিশ্চয় মেঘপরীদের বিছানা থেকে আসছে সমস্যার সমাধান।

ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!
বালিকার গায়ে বিষ পাপে বিয়াকুল
মুখে ফেনা বডি ত্যানা দেবের ত্রিশূল
ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!
বেশি কচি বেশি ছোট,বাতিল এ মাল
এরা বিষ ভাইরাস,ঘটাবেরে কাল
ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!
প্রাক্তন এ বারবি-রে বারবিকিউ কর
তবেই দেবতা দেবে তোহাঁদের বর!
ভম!ভম!ভগা লগা,তোরা সব মগা ছগা!

বাবা,এরা যে নিতান্তই বালিকা!আপনার নির্দেশেই নারীর অভাব পূরণে লিপ্ত!
তাতে কি,দেবতা অতীব পুষ্ঠ,ব্যভিচারে খুবই রুষ্ঠ।বালিকারে আগুনে ফেলো।
বাবা!এবারে তো তবে সত্যিই দ্বীপ নারিছাড়া হয়।
তাতে কি!
বাবাগো,বুঝেন না!আপনারই যে শিষ্য!
ভম!ভম!ভগা,লগা তোরা দেখি মহা মগা!কচি বালকেরা কিজন্যে রয়েছে।আকাশ থেকে ইশারা পেয়েছি।প্রাচীন জ্ঞানের আধুনিক প্রয়োগ।দেবতার আশীর্বাদে সবই সম্ভব।
কিছুদিন পরে একি দেখি!এবার বালকেরা মরে।
মিনাজি বলেন,বালকেরো ব্যাভিচার!এতো বড়ো অবিচার।যে করেই হোক ব্যাভিচার দূর করো।
কিন্তু বাবা!বোঝেন না!শিষ্যের কি হবে তবে?বালক যে বেশি মজা!
কে বলে বেশি মজা!তোরা দেখি আধা খোজা!পোড়া দেখি সব পোলা।ভেড়াগুলো আছে কি করতে?গবাদি বিদ্যা তোদের শেখাবো এবারে।
প্রাচীনতম জ্ঞানের প্রাচীন প্রয়োগের আধুনিক নব উত্থান।
ধিকি ধিকি ধিকি!
চেয়ে দেখো দিকি!
গাংলাবি তীরে আগুন জ্বলে।আগুন।
চামড়া পোড়ে,মাংস পোড়ে।কলজে খসে খসে পড়ে পড়ে পোড়ে।চিৎকার পোড়ে কান্না পোড়ে।দেবতাদের জয়ধ্বনি পোড়ে।
আগুনের বিরাম নেই।
অনেকদিন ধরে আগুন জ্বললো।
তারপর আরো অনেকদিন হয়ে গেলো।
অনেকদিন মিনাজির কাছে কেউ আসে না।
কই হে!নাই কেউ?নাই কেউ!সবাই কি পুড়েছে!আহা,সবাই এরা ব্যভিচারী।দেবতার নির্দেশ।অবশেষ!ব্যাভিচার মুক্ত গাংলাবি।একমাত্র ব্যভিচার মুক্ত,টিকে আছে মিনাজি।
আগুন ধিকি ধিকি।মেঘ ওই উঁকি দেয়।বৃষ্টি।
আগুন থাকে থাকে জলে পোড়ে নেভে।
আগুন নিভে গেলে গলা মাংস চামড়া আর ব্যভিচারীদের আত্মার টুকরো দিয়ে একটা আসনের মতন হয়।
সেই আসনে বসেন মিনাজী।
দেবতা অবশেষে তুষ্ট।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×