somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ আনন্দের প্রকারভেদ

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ অর্থ-আনন্দ, ঈদ অর্থ খুশি, ঈদ অর্থ উৎসব। ঈদ অর্থ-পরম মমতায় মায়ের কাছে গাঁয়ে ফিরে যাওয়া। ঈদ মুসলমানদের এক বড় ধর্মীয় উৎসব। শেকড়ের সন্ধানে ফিকে হয়ে যাওয়া শৈশব-কৈশর উজ্জ্বল হয়ে উদ্ভাসিত হওয়া। সব ভেদাভেদ ভুলে সকল মুসলমান এক কাতারে সামিল হওয়া। কোলাকুলি- বুকে বুক মেলানো, আর সেমাই রুটি খাওয়া, বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-অনাত্মীয় সকলের জন্য দুয়ার খোলা।

ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা হলো সব’চে বেশি আনন্দের, সব’চে বেশি মধুর। কারণ, রোজার দিন ইফতার করেই দে দৌঁড় পশ্চিমাকাশে চাঁদ দেখা যায় কিনা। কে কার আগে চাঁদ দেখলো, আর কে কার আগে চাঁদকে সালাম দিল এ নিয়ে এক প্রতিযোগিতা হয়ে যেত। চাঁদ দেখা গেলে তাকে সালাম দেয়া। আর তার পর সেই ঐতিহাসিক গানের মূর্ছনা- রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। কী আবেগ রয়েছে এ গানে! নজরুলের এ গানটি বোধ হয় সব’চে বেশি শোনা হয়েছে। এ গানের সাথে মনে ঝিলিক দিয়ে ওঠে। আর তখনই মনে হয় ঈদ দুয়ারে দাঁড়িয়ে।

আসলে ঈদ আনন্দ যে কি তা লিখে শেষ করা যাবে না। ঈদের আনন্দ বড়দের চেয়ে ছোটদের কাছেই বেশি। সেই ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে ঈদগাহে যেয়ে নামায পড়তে হবে। কখন যাবো, কখন বড়দের সেলাম করবো, আর সেলামী পাবো। কে কত সেলামী পেলো তার হিসেব। ছোট বেলায় এটাই বেশি বড় মনে হতো। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নামাজের প্রস্তুতি। নতুন পাজামা পাঞ্জাবী পরে সুরমা আতর মেখে বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি। বাবা সাত সকালে উঠে গাছের নারকেল ভেঙ্গে দিতেন। তা কুরে কুরে সেমাইয়ে মিশিয়ে দেয়া হতো। নানা বাড়িতে খুব ছোট বেলায় দেখেছি, হাতে বানানো সেমাই। নানা বাড়ির সবাই মা -খালারা তা রোদে শুকিয়ে ঈদের আগেই তৈরি করে রাখতেন। আমি খালার পাশে বসে আশ্চর্য হয়ে দেখতাম কি সুন্দর ভাবে নরম ময়দা চিকন সুতার মত সিমাই হয়ে বেরুচ্ছে। ময়দা পানিতে নরম করে তা মেশিনের উপর দিয়ে চেপে হাত দিয়ে হ্যান্ডেল ঘুরালেই নিচ দিয়ে সেমাই কল কল করে বের হতো। আমি সেমাই বানানো মেশিনের হ্যান্ডেলটা ধরে সজোরে ঘুরাতাম আর এক অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি অনুভব করতাম। আবার রুটি বানানোর পিড়িতে হাতেও সেমাই বানানো হতো। হাতের ডলায় তা বেশ মোটা মোটা হয়ে সে সব সেমাই তৈরি হতো। এখন সে চলন আর গ্রামে নেই। সেই ঝক্কি ঝামেলা আর বউ বেটিরা করতে চায় না। দিন বদলে গেছে। রুচি বদলে গেছে। আর সাথে সাথে মানুষের সামর্থ্যরেও ধরণ পাল্টে গেছে। এখন প্যাকেট সেমাই, লাচ্ছা সেমাই।
ছোটকালে যখন শহরে থাকতাম বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার প্রস্তুতিটাও থাকতো আমাদের কাছে ভিন্নরকমের। গ্রামের বাড়িতেই আসলে ঈদের আনন্দ বেশি বলে আমার কাছে মনে হয়। কারণ শহরে তেমন ঈদগাহ নেই বললেই চলে। মসজিদে মসজিদে ঈদের নামায আদায় করতে হয়। প্রায় শহরেই ঈদগাহ রয়েছে হাতে গোনা। বিশেষ করে মফস্বলের ছোট শহরে এক-দুই-তিনের মধ্যে। আর গ্রামে, প্রায় প্রতি গ্রামেই রয়েছে ঈদগাহ যেখানে ঈদের আগে ঈদগাহকে সাজানো হয়। রং-চং দেয়া হয়। রঙিন কাগজ কেটে তিন কোণা আকৃতির করে তা আঠা দিয়ে সুতলী দড়ির সাথে লাগিয়ে শুকোতে দেয়া হয়। তারপর ঈদগায়ের ঠিক মাঝখানে ইয়া লম্বা এক বাঁশ পুতে তাতে সুতলি জাড়ানো রঙিন কাগজ বেধে ঈদগাহের চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ইমাম সাহেব নামাজের সময় নিয়ে মাইকে বারংবার তাগাদা দিতে থাকেন। মানুষ পিঁপড়ের সারির মত দল বেধে ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে জড়ো হয়। বেশ দৃষ্টি নন্দন। আর শহুরে জীবনে এর ঘাটতি রয়েছে। মানুষ সবাই ব্যস্ত, যে যার মতো। কে কার খোঁজ রাখে। কে কার ধার ধারে। এক জটিল সমিকরণে শহুরে জীবন চলে । ঈদেও এর প্রভাব দেখা যায়। পথের পাশে নিরন্ন মানুষের সারিবদ্ধ আবাসন। ফুটপাতে কোন মতে মাথা গোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা। ঈদে তাদের নতুন কাপড় কেনা হয়না। উন্নত মানের খাবার জোটেনা। তাদের আবার ঈদ কী? ঈদ তাদের কাছে আর কোন আনন্দের বারতা বয়ে আনে না। বরং কষ্টের ধাক্কা আরো সজোরে দেয়। চোখের সামনে যখন অন্যদের ঈদ আনন্দ হৈ হুল্লোড় করতে দেখে তখন নিজের কাছে তাদের কোন প্রশ্নের উত্তর সমাধান হয়ে ধরা দেয় না।
নামায শেষে মাঠেই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করা রেওয়াজ। এর নাকি একটা তাৎপর্য রয়েছে। কোলাকুলিতে বুকে বুক লাগে। একের বুক অপরের বুকের সাথে ঠেকে, যেখানে হৃদয় নামক যন্ত্রটি ধুকপুক ধুকপুক করছে। এই ধুকপুকানী দুজনের হৃদয় এক স্থানে এলে তাতে অনেক মহব্বত বাড়ে বলে ধর্মে এক মিথ রয়েছে। এ কারণেই কোলাকুলির রেওয়াজ চালু। সত্য-মিথ্যা কখনো যাচাই করে দেখিনি। তবে গ্রামে অনেককে দেখেছি ঈদের দিন কোলাকুলি করে পরের দিন ঝগড়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হতে। সে এক ভিন্ন বিষয়। তবুও ঈদের ময়দানে কোলাকুলি করা ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে ক্ষণিকের জন্য হলেও এক কাতারে দাঁড়ানো। এ এক অপার বিস্ময়!
গ্রামে ভিন্ন চিত্র রয়েছে। গ্রামের কৃষক পরিবারে যাদের সামর্থ্য নেই তারা তো আর নতুন পাজামা পাঞ্জাবী পরে নিজেকে রঙিন রঙে আবির করে ঈদগাহে আসতে পারে না। নিতান্ত বাধ্য হয়েই তাদের পুরোনো মলিন কাপড় পরেই ঈদগাহে আসতে হয়। তাদের কাছে ঈদের আনন্দ কিন্তু ভিন্ন স্বাদের। তাদের কাছে ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ নয়। বরং অনেকটা নিরানন্দ। তবুও তারাও সাধ্যমত তাদের পরিবারকে ঈদের আনন্দ দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে।
আমাদের ঈদের আনন্দ তখনই সার্থক হতে পারে, যখন দেশের সকল মানুষের ঈদ উদযাপনের সামর্থ্য সুযোগ আসবে। পথের পথকলিরা একটি নতুন জামা পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হবে, হৃদয়ে নেচে উঠবে আনন্দের সুবাতাস। ঠিক তখনই ঈদ প্রকৃত ঈদআনন্দ হয়ে আসবে। অন্যথায় এই ঈদ বার বার কিছু মানুষের জন্য আনন্দের বারতা নিয়ে আসলেও ব্যাপক জনগোষ্ঠির কাছে তা অধরাই হয়ে থাকছে। ঈদের আনন্দ রঙিন না হয়ে ফিকে হয়ে থাকবে। তবুও ঈদ সকলের কাছে আনন্দের বারতা নিয়ে আসুক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×