somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণজাগরণ মঞ্চ: পিছন ফিরে দেখা

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় না হয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং রায়ের পর তার ভি চিহ্ন দেখিয়ে উপহাস করে বাংলার মুক্তি পাগল মানুষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল কাদের মোল্লা। তার এ উদ্ধত আচরণকে এ দেশের তরুণপ্রাণ যুবারা সহজে মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা সেদিনের এই অনাকাঙ্খিত রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইন এক্টিভিক্টস ফোরামসহ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের প্রতিবাদের ঝড় সারা বাংলায় টর্ণেডোর গতিতে ছড়িয়ে দিল। রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে ফেটে পড়লো এদেশের তরুণ প্রজন্ম, যুব সমাজ। আকাশসম অপরাধীর এতটুকু শাস্তি, তা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে সবাই যে যার মত করে ছুটলো শাহবাগ মুখে।

রাজাকারের বিচারের দাবি ছড়িয়ে পড়ল শাহবাগ থেকে দেশময় হয়ে বিশ্বময়। আজিজ সুপার মার্কেট থেকে ছুটে এল একঝাঁক কবি, নাট্যকর্মী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, কলাভবন থেকে ছাত্ররা ছুটে এলো, ঘরে বসে রইলনা গৃহিনীরাও। দলে দলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ডাক্তাররা বেরিয়ে এলো, ছাত্ররা আর মতিঝিল থেকে অফিস ফেরত সরকারি বেসরকারি চাকুরেদের ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসতে দেখা গেল শাহবাগ মুখে। পাবলিক লাইব্রেরিতে যারা বই পড়ছিল তারা বই পড়া ফেলে সবাই ছুটে এলো। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে ছিল দলে দলে যুবক- যুবতী, প্রেমিক-প্রেমিকা, সবাই তারা হাত ধরে ছুট দিল শাহবাগ মুখে, পেছনে রমনা ও সোহরাওয়ার্দীর সবুজ ঘাস আর পার্কের গাছগুলো মাথা উঁচু করে সমস্বরে সংহতি জানান দিল শাহবাগের অহিংস আন্দোলনে।
শাহবাগের থরে থরে সাজানো গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে শাহবাগের পিচঢালা পথে আলপনা আঁকা শুরু হল। ফুল দিয়ে লেখা হল বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর এবং দুই হাজার তের এর বিজয় গাঁথা। বাড়তে থাকে মানুষ, নতুন স্লোগান, বাড়তে থাকে ক্ষোভ বারুদসম অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত; তাদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ একজন মানুষ বুকে বড় বড় হরফে লেখা ’অপেক্ষা’ নিয়ে নির্বাক হয়ে চারুকলার সামনে মাঝপথে বসে পড়লো। কারো সাথে তার কোন কথা নেই। মনে হলো সে যেন রাজাকারের বিচারের দাবিতে জনম জনম প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে প্রস্তুত। আর একজন মাথায় হ্যাট পরে তাতে রণাঙ্গনের পাঠাগার লিখে অজস্র বই সাজিয়ে বসে পড়লো শাহবাগে। তাকে দেখে মনে হলো ঠিক যেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে সহযোদ্ধাদের অবসরে বই পড়ার আনন্দ দেয়ার জন্য তার এ আয়োজন। বিয়াল্লিশ বছরের জঞ্জাল সরানো হচ্ছে, তাই রাস্তা বন্ধ। এ ধরনের প্লেকার্ড লিখে দাঁড়িয়ে পড়ল কয়েকজন। লক্ষ লক্ষ মোমবাতি প্রজ্জ্বলিত করে অশুভ আঁধার দূর করা হল। হাজার হাজার বেলুন উড়িয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনের কাছে চিঠি লিখে পাঠালো। একজন সন্তান তার শহীদ পিতার কাছে, স্ত্রী তার শহীদ স্বামীর কাছে, ভাই তার শহীদ ভায়ের কাছে চিঠি লিখে রঙিন বেলুনে তা উড়িয়ে দিল। সারা বিশ্বের বাঙালি কোটি কন্ঠে, হাত উচিয়ে শপথ নিল বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার। দেশে দেশে বাঙালিরা গণজাগরণ এর আদলে তারাও কাঁপিয়ে তুললো বিশ্বময়।

শাহবাগে আমাদের তরুণ প্রজন্ম জেগে থাকলো নিদ্রাহীন অজস্র রাত। ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, বোমা, হেফাজতী তাণ্ডব কোন কিছুই তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাদের দেখে বাংলাদেশ স্তম্ভিত হল। আমাদের শাহবাগ তখন থেকে প্রজন্ম চত্বর হল। একদিন বিকেল চারটায় সমগ্র বাংলাদেশ প্রতিবাদ স্বরূপ সব কাজ ফেলে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে রইল। একদিন সমস্ত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী একযোগে সমস্বরে গেয়ে উঠলো প্রাণের জাতীয় সঙ্গীত, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। শিল্পী সংগ্রামীরা সমবেত হল একই চেতনায়। উদীচী’র সংগ্রামী সাথী বন্ধুরা সেদিন দিনকে রাত রাতকে দিন করে কাজ করে গেছে। ইতিহাসের এক অনন্য উচ্চতায় উদীচীকে নিয়ে গেছে। সারাদেশে উদীচী ছিল এ সংগ্রামের এক অপরিহার্য অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমরা আমাদের সকল কর্মীকে এ সংগ্রামে শরিক হওয়ার আহবান জানাই। তৈরি হল ফুল দিয়ে জাতীয় পতাকা, ঢোলের তালে, আবৃত্তি, নাটকে গানে আর স্লোগান কন্যা লাকীর কন্ঠ ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বময়। ছুটে এলো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী প্রতিবাদমূখর ছাত্র-ছাত্রীরা। পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখলো তারুণ্যের জয়, বাঙালির বিজয় উল্লাস নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হল। পরবর্তীতে গণজাগরণ মঞ্চ ইতিহাস হল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে।

এ আন্দোলনে শুরুতেই রাজীব হায়দারসহ অনেক সাথীদের হারাতে হয়েছে, অসংখ্য সাথীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। তবু গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে থামানো যায়নি। সাথীদের খুনে রাঙ্গা রাজপথে বিজয়ের পতাকা সমুখপানে এগুনোর প্রেরণা জোগাবে। জয় আমাদের হবেই হবে। সাথীদের হারানো বেদনার রক্তশপথ নিয়েছে যে তারুণ্য, তারা কী ঘরে ফিরে যাবে বিফল মনরথে! জয় ছাড়া কী বাংলার দামাল তুর্কী
তরুনেরা ঘরে ফিরে গেছে কখনো? জয়ের প্রতিক্ষায় অপেক্ষা, কেবলই অপেক্ষা আর প্রহর গোনা।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×