বহুদিন ধরেই বিষয়টা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। লিখব লিখব করে আর লেখা হয়ে উঠেনি। ভাবনাটা প্রথম আমার মাথায় আসে বাসে মহিলাদের সিট নিয়ে ঝগড়ার মাধ্যমে। মহিলা সিটে বসে থাকা কোন পুরুষকে সিট ছেড়ে উঠতে হলে প্রায়ই তাকে বলতে শোনা যায়- “ একদিকে সম আধিকার এর কথা বলে আবার বাসে উঠলে মহিলা সিট বলে চেচায় কেন?” এখনও লিখতে বসেছি desperately seeking Dhaka এর এমনি একটি বিষয়ের পোষ্ট ও তার কমেন্ট পরে।
প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আচ্ছা ভাই, এই যে সম অধিকার কথাটা এইটা দিয়ে প্রকৃত পক্ষে কি বুঝানো হয়েছে তা কি ভেবেছেন? আমার ভাবনাটা একটু বলি, তার আগে একটা ভূমিকা দেই। ৩ দুই ধরনের একটা প্লাস ৩ আর একটা মাইনাস ৩। কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয় ৩ তাহলে আপনি মাইনাস ৩ বুঝবেন না, প্লাস ৩ ই বুঝবেন। অর্থাৎ কিছু কথার মধ্যে অন্তর্নিহিত আরও একটা কথা থেকে যায়, যা বলবার প্রয়োজন পড়ে না। আর একটা উদাহরণ দেই, কাউকে যদি বলা হয়, “এদিকে আস” তাহলে প্রকৃত বাক্যটি হল- “তুমি এদিকে আস”। কিন্তু এই তুমি শব্দটি বাক্যে অনুপস্থিত থাকলেও তা বলা হয়ে যায়, যা প্রয়োজন তা হল বাক্যটি একটু ভাবা ও বুঝা দরকার। ‘সম অধিকার’ বলতে ‘সম অধিকার প্রিতিষ্ঠার’ কথা বলা হয়েছে। বর্তমান প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতে বলছি নারীর সম অধিকার বলতে আসলে নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এখন কথা হল, কোন কিছু প্রতিষ্ঠার জন্য একটা পদ্ধতি বা নিয়ম বা এমনই কিছু অবলম্বন করতে হয়। আর এই জন্যই বাসে পুরুষরা যেমন সিট পেয়ে যায়, মহিলারাও যেন পায় তার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা ছাড়াও মহিলারা পুরুষের মত হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠে সিট দখলের যুদ্ধে নামতে পারত। কিন্তু তখন আমরাই বলতাম, গেল গেল সমাজটা অধঃপাতে গেল, সামাজিক মানসিকতার অবক্ষয় দেখ, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে না তাকিয়ে কেমন পুরুষের সাথে ধাক্কাধাক্কি করছে দেখ। বলতাম কিন্তু, তাহলে এখন কি তাহলে ব্যবস্থা এটাই যে তারা হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে নয়ত বাসে উঠে দাঁড়িয়ে থাকবে? তা ত হয় না, তাই না? এখন একটু সহজ করে বলি, বাসে সিট পাওয়াটা মানুষের অধিকার, নারী পুরুষ নির্বিশিষে। কিন্তু আমাদের শহরে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, সাধারণ ভাবে সবকিছু চলতে দিলে নারীরা আর কোনদিনই বাসে সিট পাবে না। আর তখনই একটা অসম অধিকার এর উপস্থিতি হত। এই অসম অধিকারের উপস্থিতিটাকে বাদ দেয়ার জন্যই সম অধিকার নামক বর্তমান ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়েছে। সম অধিকার প্রতিষ্ঠা বলতে কাউকে কোন অধিকার/জিনিস ভোগ করার জন্য সমান যোগ্যতার ব্যবস্থা করা। এমন একটা ব্যবস্থা করা যেন সে যা পাওয়ার কথা তা পায়। আমরা সাধারণ নাগরিকরাও কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালকদের সাথে সম অধিকারে আছি সাংবিধানিক ভাবে। কথাটা বললাম যেন না ভাবেন যে সম অধিকার শব্দটা শুধু নারীরাই ব্যবহার করে। আর একটা কথা, নারীদেরকে শারীরীকভাবে দুর্বল ভাবাটা ইদানিং আমার কেমন যেন উদ্ভট মনে হয়। কারণ এই শহরে রাতের বেলা মাটিকাটা থেকে শুরু করে যাবতীয় শক্তি নির্ভর কাজ করতে বিস্তর নারীকে দেখা যায় পুরুষের পাশাপাশি। কাওরান বাজারে সব্জির বস্তাও টানতে দেখেছি। শক্তির যতটুকু পার্থক্য ততটুকু বোধহয় দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। নারীর সম অধিকার এর প্রতিষ্ঠা করার জন্যই একদিন “মহিলা সমিতির” দরকার হয়ছিল। কারণ তখনকার সময়ে তারা আইনের আশ্রয়টা কিভাবে নিবে তাও বুঝে উঠতে পারত না। তা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য একটা সাহায্য সংস্থা দরকার। এই সংস্থাটির সাহায্য ছাড়া কিন্তু নারীরা বিচার ব্যবস্থায় পুরুষের সম অধিকার পেত না।
যে কথা বলতে চাই, মহিলা সিটের ব্যবস্থাটি আসলে আমাদের সামাজিক মানসিকতা সুন্দর ও স্থিতিশীল করবার জন্যই দরকার।
ভুল চিন্তায় বসবাসের একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করছিঃ কোন গ্লাসে হাফ গ্লাস পানি আছে। আমরা প্রায়ই বলি, যে যেভাবে দেখে। কেউ দেখবে হাফ গ্লাস খালি আছে, কেউ দেখবে হাফ গ্লাস ভরা আছে। কিন্তু আমি যা বলতে চাই তা হলঃ দু’রকমভাবে’ত দেখা যাবে না, যায় না। সত্য কখনো দু’রকম হয় না। আপনি যখন হাফ গ্লাস পানি দেখছেন তার অভ্যন্তরে এইটাও দেখছেন যে হাফ গ্লাস খালি, আপনি আসলে দুটোই দেখছেন; দুজন ভিন্নভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। (বিষয়টা “এখানে আস” বাক্যের তুমি শব্দটার অনুপস্থিতির মতই অভ্যন্তরে থেকে যাওয়া।)