এক.
গ্রামীন ফোন তাদের কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটির ( CSR )র অংশ হিসেবে আমাদের দেশে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে আয়োজিত পাইলট টিকাদান কর্মসূচীতে অর্থায়ন করছে ।
কথাটা শুনতে খুবই সুন্দর । কিন্তু হঠাৎ করেই মনে প্রশ্ন জাগে , টিকাদান কর্মসূচীটা আবার পাইলট প্রকল্প হয় কেন ? টিকাদান তো সার্বজনীন কর্মসূচী হওয়ার কথা । পাইলট প্রকল্প মানে হচ্ছে একটা ছোট্ট প্রকল্প করে এর ভুলত্রুটিগুলো দেখা । এই যেমন ধরা যাক ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা দেশব্যাপী শুরু করার আগে গাজীপুরে একটা পাইলট প্রকল্প করা হয়েছে ।
গ্রামীনের এই টিকাদান কর্মসূচীটা পাইলট প্রকল্প , এর মানে কি এই টিকাদান কর্মসূচীর মাঝেও কোন ভুলত্রুটি আছে ?
দুই .
এই ধরনের চিন্তা আসার পরেই আবার বিষয়টি নতুন করে দেখলাম । গ্রামীন অর্থায়ন করছে সাভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে ।
সার্ভিক্যাল ক্যান্সার টার্মটা আমার কাছে নতুন । বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কথা আগে শুনেছি , কিন্তু কারো কখনো সার্ভিক্যাল ক্যান্সার হয়েছে বলে আমার স্মরণ শক্তিতে মনে করতে পারলাম না । বিষয়টি নিয়ে একটু পড়াশোনা করে যেটা বুঝলাম , সেটা হচ্ছে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার অনেকটাই সংক্রামক জাতীয় ক্যান্সার ,যেটি সাধারনত কমবয়সী তরুণীদের মাঝেই হয়ে থাকে । উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে ,"Human papillomavirus (HPV) infection is a necessary factor in the development of nearly all cases of cervical cancer."
বিষয়টি আবার পড়লাম এবং বুঝতে পারলাম যে এই ক্যান্সারের প্রকোপটা বেশির ভার ক্ষেত্রেই আসলে যৌন সম্পর্কের সাথে সম্পর্কযুক্ত । এইচআইভি সংক্রমন নিয়ে আমাদের দেশের মিডিয়া আর এনজিও গলা ফাটাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই , এখন এইচআইভি'র পাশাপাশি এই এইচপিভি আমাদের উপর আছর করতে যাচ্ছে ।
সামাজিক এবং ধর্মীয় কারনে আমাদের দেশে অবারিত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক কম । সেকারনেই সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের যৌন সম্পর্কের উপর অধিকাংশে সংক্রমন নির্ভরশীল এই নামটা মার্কিনিদের কাছে যতো পরিচিত আমাদের কাছে ততো পরিচিত নয় । সার্ভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধের তুলনায় ডায়রিয়া প্রতিরোধ আর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন আমাদের জন্য অনেক বেশি প্রায়োরিটি ।
তবু ঠিকাছে , আমাদেরকে যদি বিনামূল্যে টিকা দিতে চায় , আমরা সেই টিকাটা হাত পেতে নিয়েই ফেলি । রোগ আজ হয় নি তো কাল হতেও তো পারে ।
তিন .
কিন্তু সমস্যা বেধেছে অন্য জায়গায় ।
জানা গেল গ্রামীন ফোনের স্পনসরে ৩০ জন তরুণীকে এই টিকা দেয়া হবে আমাদের দেশে । তারপর হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এই পাইলট কর্মসূচীর প্রভাব নিয়ে গবেষনা করবে !!!
এই গবেষনা কথাটা শুনেই আমার ভুরু কুচকে যাচ্ছে খানিকটা ।
খাদ্যের বিনিময়ে , সামান্য অর্থের বিনিময়ে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের উপর অনেক ধরনের ঔষধের গবেষনা করেছে বিদেশী ঔষধ কোম্পানীগুলো । তাদের সেই দুর্দশা নিয়ে কিছু চলচিত্র , কিছু বইপত্রে যে ছবি ফুটে উঠছে সেটা মর্মান্তিক ।
আমাদের তিরিশজন তরুণী কি এবার সেই একই অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯/২০ টি রাজ্য এখন পর্যন্ত এই টিকাদানকে তাদের কর্মসূচীতে সংযুক্ত করার ব্যাপারে ' পেন্ডিং' অথবা কমিটি কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত/বাতিল/স্থগিত অবস্থায় রেখেছে , সেই সময়ে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের তরুণীদের স্বাস্থ্য নিয়ে গ্রামীন ফোন ও হার্ভার্ড স্কুল অব মেডিসিন এর এই গবেষনা আগ্রহকে নিয়ে দ্বিতীয়বার খোঁজখবর করার প্রয়োজন অবশ্যই অনেক অনেক জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:০৯