somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং কিছু নিজস্ব ভাবনা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র আন্দোলন অন্যতম একটি আলোচিত ঘটনা । কোটা ব্যবস্থাটি সারা পৃথিবী জুড়েই আছে বিশেষ করে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের অথবা সমাজে সংখ্যালঘু একটা শ্রেণীর মূলধারায় আসার সুবিধার্থে কোটা পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত । অনেক দেশেই এধরণের কোনো আইন না থাকলেও , অলিখিত ভাবে তারা প্রাধান্য পেয়ে থাকে তবে তা একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় । আমাদের দেশে যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা ঠিক তেমনিভাবে অনেক দেশেই ওয়ার ভেটেরানদের গুরুত্ব দিয়ে থাকে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে , তাহলে আমাদের দেশে সমস্যা কোথায় ? আমাদের কোটা পদ্ধতির সূচনাতেই গলদ আছে , প্রথমত , এই পদ্ধতি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করা হয়নি । আদিবাসী কোটায় যদিও আমরা বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী দেখতে পাই , তারপরেও বহু জনগোষ্ঠী এর বাহিরে থেকে গেছে । মুক্তিযোদ্ধা কোটা নির্ধারণের পূর্বে আমরা সঠিক ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করতে পারিনি । এক এক সরকার রাজনৈতিক ভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করেছে এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা মূলধারার বাহিরে চলে গেছে ।
দ্বিতীয়ত , সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ব্যাপক সংখ্যাবৃদ্ধি করে , সমগ্র কোটা সিস্টেমকেই বিতর্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে । মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব আর অহংকার , রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় তারা দেশে অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে । তারা স্বাধীন দেশে যুদ্ধের পর চাকরিবাকরি পায়নি , সেই হিসেবে তাদের সন্তানদের সরকার সুযোগ দিতে পারে এবং দেয়া খুবই যৌক্তিক ।কিন্তু তাই বলে তাদের নাতি -নাতনিদের জন্য কোটা সংরক্ষন মেধাবীদের চাকরিক্ষেত্রে আসার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে ।কোনো দেশেই কোটার সংখ্যা সেই দেশের সাধারণ মেধার জন্য সংরক্ষিত সংখ্যার বেশি নয় , ছাত্ররা মূলত এখানেই সংস্কার চাচ্ছে , এই সিস্টেমকে বাতিলের জন্য নয় ।

এখন এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে মেধাবী আর অমেধাবী। কোটা সিস্টেম এর বিপরীতে যারা সাধারণ তারা মেধাবী শব্দটিকে কোটার বিপরীতে ব্যাবহার করছে ।বাংলাদেশের প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থায় কে মেধাবী আর কে অমেধাবী তার সঙ্গে নির্ধারণ খুবই কঠিন , এখানে সেই প্রাথমিক থেকে শুরু করে একদম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবাই আমরা বিদ্যা গলাধঃকরণ করে পরীক্ষার হলে গিয়ে বমি করে দিয়ে আসি ।বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমিও এর বাহিরে না , তারপর বিদ্যামান গ্রেডিং সিস্টেম আর প্রশ্ন ফাঁস সমস্ত ব্যাবস্থাকে আরো দুর্বল করেছে। শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড তথা বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের সিঁড়ির প্রথম সোপান , আমরা সেই মেরুদণ্ড ভেঙে এখন প্যারালাইজেড কন্ডিশন এ আছি , এই অবস্থায় কে মেধাবী আর কে অমেধাবী তা যাচাই করার সুযোগ নেই ।

কিন্তু এই যে আন্দোলন ? এই যে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যে সরকারি চাকরি তথা বিসিএসের পেছন ছুটছে এর কারণ কি ? এর এক নম্বর কারণ হচ্ছে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব , অন্য ভাবে বললে দিন দিন উচ্চশিক্ষিত বেকারের হার বৃদ্ধি , সরকার এই সমস্যা কে এখনো গুরুত্ব দিচ্ছে না , এই সমস্যা এখন এতো ব্যাপক যে তা উপশমের বাহিরে চলে যাচ্ছে ।একটি দেশের সরকারি চাকরির সংখ্যা সবসময় লিমিটেড , বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তাতে বেসরকারি সেক্টরের কল্যানে হয়েছে , কিন্তু তারা বলছে যে প্রচুর চাকরির সুযোগ কিন্তু তারা কোয়ালিটি গ্রাজুয়েট পাচ্ছে না , এর কারণ কি ????

এর কারণ শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক সময়ে মানসিকতার পরিবর্তন যা আমাদের জন্য সামনের দিনগুলোতে খুব খারাপ ফল নিয়ে আসবে ।
একজন ছাত্রের মূল টার্গেট থাকে এখন বিসিএস , আগে এসএস সি কিংবা এইচ এস সি পাশের পর একজন ছাত্রের টার্গেট থাকতো ভবিষ্যতে ভালো ডাক্তার হবার , বড় ইঞ্জিনিয়ার হবার , বিজ্ঞানী হবার , কারো চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হবার , কারো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বা বহুজাতিক ব্যাংক এর শীর্ষ পদে যাবার ।এখনকার তরুণেরা এসব স্বপ্ন দেখে না , বিসিএস ক্যাডার হতে চাওয়া দোষের কিছু না , কিন্তু একটা দেশ উন্নত হয় উল্লেখযোগ্য পরিমানে ভালো ডাক্তার , ভালো ইঞ্জিনিয়ার , বিজ্ঞানী এদের অবদানে , এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর বিষয়ভিত্তিক নলেজ যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যায়ন করতে হয় , এখন শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষ থেকে আজকের বিশ্ব , সাধারণ জ্ঞানের চটি বই পড়া শুরু করে , তাদের সকাল শুরু হয় পাবলিক লাইব্রেরিতে লাইন দিয়ে ।

আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি বিদেশে আন্ডারগ্র্যাড লেভেলের ছাত্ররা ছোট ছোট রকেটের মডেল বানিয়ে ট্রায়াল দিচ্ছে, রোবটের ডিজাইন করে , আর আমাদের দেশে এই পর্যায়ে ছাত্ররা একগাদা সাধারণ জ্ঞানের চটি বই মুখস্থ করছে ।প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করতে তো হাতে কলমে দক্ষতা আর কিছুটা হলেও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের দরকার আছে , শুধু সাধারণ জ্ঞানের চটি বই পরে তো তা হয়না , তাহলে প্রাইভেট সেক্টর কেন তাদের চাকরি দেবে ?? তাদের তো কাজের লোকের দরকার।

এইসব উচ্চশিক্ষিত গ্রাজুয়েটদের তাই সরকারি চাকরি ছাড়া কোনো গতি নাই । সেখানে আছে আবার কোটা পদ্ধতির খড়গ , শিক্ষর্থীদের তাই আর কোনো উপায়ন্তর নেই , হয়তো আন্দোলনকেই তারা প্রধান অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে , কিন্তু আন্দোলন কি শেষ কথা ? এই আন্দোলনকারীদের সবাই কি চাকরি পাবে ? আবার শুধু আন্দোলনকারীরাই কি চাকরি পাবে আন্দোলনের বাহিরেও তো প্রচুর কোটাবিহীন প্রার্থী আছে । অন্যদিকে সরকার সরকারি চাকুরেদের সুবিধা বাড়িয়ে একে আলাদিনের চেরাগ বানায় ফেলছে , ছাত্ররা দেখে বিসিএস অফিসার আর বেসরকারি চাকুরেদের বৈষম্য কি , তারা কেন সাধারণ সাধারণ জ্ঞানের বই মুখস্থ করবে না ? সরকার কি বিষয়টা বুঝতে পেরেছে ?

কোটা হয়তো সম্পূর্ণ তুলে দেয়া হবে , অথবা কিছু রাখাও হতে পারে , কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান নেই ।সরকারকে বেসরকারি খাতের প্রতি নজর দিতে হবে , বেসরকারি খাতের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে , শিক্ষার্থীদের উচিত নিজ নিজ বিষয় ভালমত পড়া , খুব প্রতিযোগিতামূলক অথচ স্বল্প আসনের এই পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান সময় , জীবনীশক্তি সব হারাচ্ছে , কতজন পারে সফল হতে ? তারপর আছে দলীয়করণ ,আর দুর্নীতি ।বিশ্ববিদ্যালয় এ ভালো করে পড়াশুনা করে , নিজ বিষয়ে পান্ডিত্ব অর্জন করলে , দেশ কিংবা বিদেশ সবজায়গায় ভালো ক্যারিয়ার গড়া যায় , তাই শুধুমাত্র ঝোকের মাথায় বিসিএস বিসিএস না করে , নিজের ক্ষমতা , মেধা সবকিছু অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত , কারণ এই সময়টা হল জীবন গড়ে তোলার রিলে রেসের মত , এখানে পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই যেই রাস্তা দিয়েই দৌড়ানো হোক না কেন ? তাই সাবধানে রাস্তা নির্বাচন করতে হবে ।কারণ এই সময় আর কখনোই ফিরে আসবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭
৬টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×