প্রথমেই উল্লেখ করে নিই, এই ব্লগটির বিষয়বস্তু আমি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই এর কাছে থেকে সংগ্রহ করেচ্ছি, এবং ইসলাম নিয়ে তার এই পড়াশনা ত্থেকে ব্যক্তিগত ভাবে উতসাহ পেয়েছি।যারা যুক্তি দিয়ে, বিকৃত নাস্তিকতার ধারনাকে অসার প্রমান করতে চান, তাদের জন্যে এই ব্লগটা অত্যন্ত দরকারী বলে মনে করি ।
****************************************************
হত্যা- খুনের মাধ্যমে অভিজিৎদের কখনোই পরাজিত করতে পারবে না, তাদের অকাট্য যুক্তিকে তোমরা কখনোই পরাজিত করতে পারবে না, যদি সত্যি সত্যিই অভিজিৎদের পরাজিত করতে চাও , তবে জেনে রেখো , অভিজিৎদের পরাজিত করার অন্যতম প্রধান উপায় হলোঃ ইসলামের শরীর থেকে জাল হাদিসের অপসারন । কেননা এই সমস্ত জাল হাদিসগুলোই নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদের প্রসারে অন্যতম রসদ সরবরাহ করে থাকে । দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আজকালকার নামধারী মূর্খ মুসলমানেরাও এইসমস্ত জাল হাদিসকে ছুড়ে ফেলে না দিয়ে, বরং উল্টো, এই সমস্ত জাল হাদিসগুলোকেই সহি জ্ঞান করে শক্ত করে আকড়ে ধরে থাকে ।অতএব কি আর বলবো ..................!!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এবার আসি মূল পোষ্টেঃ
---------------------
১) হাদিসঃ
হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেছেন, একদা জিব্রাঈল (আঃ) খাবার ভর্তি একটি ডেগ আমার কাছে নিয়ে এলেন । আমি তা থেকে কিছু খাবার গ্রহণ করলাম । তাতে আমার ভিতর চল্লিশজন পুরুষের পুরুষত্ব শক্তি এসে গেলো । (সূত্রঃ মাদরিজ উন নবূয়ত । শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ) । প্রথম খন্ড)
২) হাদিসঃ
কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত:
আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, “নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] দিনে এবং রাতে চক্রাকারে তাঁর সকল স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন এবং তাঁরা সংখ্যায় এগারো জন ছিলেন।”
আমি আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কি এই পরিমাণ শক্তি ছিল? আনাস (রা.) উত্তর দিলেন, “ আমরা বলতাম যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ত্রিশ জনের শক্তি দান করা হয়েছে।” আর সাঈদ কাতাদা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আনাস (রা.) তাঁকে শুধু নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ২৬৮, ইংরেজি: ১।৫।২৬৮, সুন্নাহ.কম: ৫।২১]
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
উপরোক্ত হাদিসদুটি দিয়ে মুক্তমনা নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদী ব্যাবসা, নাস্তিকদের বক্তব্যঃ
" আরে ব্যাটা তোগো নবী তো একটা কামুক ।উপরের হাদিসটা তো এটাই প্রমান করতেছে ।এই জন্যই তো তোগোরে নবী ১১ টা বউ আর অসংখ্য দাসীবাদী রাখছিল । তোগো নবী একটা মাগীবাজ লম্পট ছাড়া আর কিছুই নয়, যে কিনা প্রতিরাতে ৯ জনার সাথে সহবাস করে ! হা হা হা ..................।তোদের ধর্মজীবিদের এইটা হলো, তিরিশ পুরুষের সমান যৌনক্ষমতাধারী ইছলামী শিশ্ন বনাম শিবলিঙ্গের লড়াই!! ।হা হা হা........................। তোরা ব্যাটা এসব মাগীবাজের খপ্পড়ে পড়ে ধর্ম নামের কুসংস্কার বিশ্বাস করিস, আমরা নাস্তিকেরা এসব কুসংস্কারও বিশ্বাস করি না, কোন মাগীবাজ ধর্মজীবির কথাও বিশ্বাস করি না...........................এই সব ধর্ম-টর্ম বাদ দিয়ে তোরাও নাস্তিক হয়ে যা ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
উপরোক্ত হাদিসটি প্রেক্ষিতে এবং নাস্তিকদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এবার এই অচ্ছুত- অধম (প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক গালাগালির শিকার এই অধম মালাউনের বাচ্চার কিছু কথাঃ)
" আমি আগেই বলেছি, জাল হাদিসগুলোই হচ্ছে নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদের প্রসারের অন্যতম প্রধান রসদ । যদি জাল হাদিস না থাকতো্, তখন নাস্তিকেরাও এসমস্ত হাদিসকে পূঁজি তাদের ব্যাবসা আর চালাতে পারতো না ।নাস্তিকদের ব্যাবসাও তথন ১০০% না হলেও , অন্তত ৫০% ব্যাবসা লসের সম্মুখীন হতো ।। সে জন্যই বলিঃ যদি নাস্তিকদের সত্যিই যদি পরাজিত করতে চা্ন,তবে জাল হাদিসগুলোকে আগে ইসলামের শরীর থেকে পৃথক করুন।"
নবীজিকে নিয়ে চরম অশ্লীলপূর্ণ আর আপত্তিকর ঐ হাদিসটিকে কেন জাল-হাদিস বলে আখ্যায়িত করলাম, এবার তার সপক্ষে কিছু যুক্তি ও প্রমান দেইঃ
আমরা সকলেই জানি নবীজি প্রথম বিয়ে করেন ২৪ বছর বয়সে, অতঃপর ৫৩ বছর বয়সে তিনি ২য় বিয়ে করেন।
যেখানে মাত্র ১ জন বাদে বাকি সবাই ছিল বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা অসহায় রমনী । ৫৩ থেকে ৬৩ বছর বয়সের মধ্যে নবীজি এসব বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা অসহায় নারীদের বিয়ে করেছিলেন, মূলতঃ এসব অসহায় মেয়েদের মাথা গোজার ঠাই হয়, এজন্যে । কাম লালসার লোভে নয় । কেননা, ঐ তথাকথিত হাদিসটির ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি যদি এতোই কামুক হতেন, উনার কাম লালসা মেটানোর প্রয়োজন যদি এতোই হতো (!), উনার সেক্স পাওয়ার যদি এতোই হতো, তাহলে তো উনি ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যেই উনি ২০-৩০ টা বিয়ে করে ফেলতেন ।কেননা মানুষের যৌবনকাল তো আসলে ১৮ থেকে ৫২ বছরের মধ্যেই । অথচ উনার পূর্ণ যৌবন কালে উনি বিয়ে করেছিলেন মাত্র ১ টি ।
১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে তাঁর এই পূ্র্ণ যৌবনকালে, কই তথন তো উনার একাধিক মেয়ের প্রয়োজন হলো না ?? এ থেকে বোঝা যায় নবী মোহাম্মাদ (সাঃ) কামুক ছিলেন না ।
অথচ উপরের হাদিসটি নবীকে একজন কামুক পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেটা নবীজির জীবনচারণের সাথে মোটেই খাপ খায় না । বরং এই হাদিসটিকে স্পষ্টতই নবী ও
তার পরিবার সম্বন্ধে অশ্লীল ও আপত্তিকর হাদিছ হিসেবেই এই হাদিসকে চিত্রায়িত করা যায় ।একারনেই এই হাদিসটি জাল এবং যুক্তিবোধহীন ।দ্বিতীয়ত প্রশ্ন হচ্ছে:
আনাস বিন মালিক (রা.) এই কথা কার কাছ থেকে শুনেছেন, স্বয়ং নবীজির কাছে থেকে, নাকি তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট হতে? এই হাদিসে এ-সম্পর্কে কোন বক্তব্য নাই। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর স্ত্রীগণ ব্যতিত অন্য কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী সহবাস করেছিলেন কিনা (?)।
দ্বিতীয়তঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য পর্যায়ক্রমে একদিন/একরাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। এটা সুবিদিত এবং নবীজির একেবারে ঘরের মানুষ আয়শা (রা.) নিকট থেকে বর্ণিত এ সংক্রান্ত হাদিসের কোন অভাব নেই, উদাহরণ হিসেবে নিচের হাদিসগুলো পেশ করা হলো:
যখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সফরে যেতে চাইতেন, তিনি লটারি করতেন যে কোন স্ত্রী তার সঙ্গী হবে। যার নাম আসতো তিনি তাকেই নিতেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের জন্য একদিন এবং একরাত নির্দিষ্ট করে দিতেন। কিন্তু সাওদা বিনতে জামআ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রী আয়শা(রা.)-কে তার (ভাগের) দিন এবং রাত দান করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খুশি করার জন্য। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ২৫৯৩, ইংরেজি অনুবাদ: ৩।৪৭।৭৬৬, সুন্নাহ.কম: ৫১।২৭]
দিন-রাত বণ্টনের এই বিষয়টিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায়ও স্ত্রীদের অনুমতি ব্যতিত তিনি এর অন্যথা করেন নাই:
আয়শা (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থতার সময় তাঁর স্ত্রীদেরকে ডাকালেন। তাঁরা একত্রিত হলে তিনি বললেন: ‘আমি তোমাদের সকলের সাথে সাক্ষাত করতে অক্ষম। তোমরা যদি আমাকে আয়শার সাথে অবস্থান করার অনুমতি দিতে মনস্থ করো, তবে দিতে পারো।’ কাজেই তাঁরা তাকে অনুমতি দিলেন। [সূত্র: সুনান আবু দাউদ, আরবী: ১২।২১৩৭, ইংরেজি অনুবাদ: ১১।২১৩২, সুন্নাহ.কম: ১২।৯২]
কাজেই এক স্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত সময়ে তিনি অন্য স্ত্রীদের সাথে সহবাস করবেন, এটা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তবে কি- যে দিন এক স্ত্রীর পালা আসতো, সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য কোন স্ত্রীর সাথে সাক্ষাতও করতেন না? অবশ্যই করতেন, নিশ্চয়ই করতেন এবং প্রত্যেকের সাথেই সাক্ষাত করতেন। কিন্তু অন্য কোন স্ত্রীর সাথে ঐ দিনে/রাতে সহবাস করতেন না। না এটা আমার গলাবাজি নয়, আমার ব্যক্তিগত কোন ধারণাও নয়, বরং নবীজির একেবারে ঘরের মানুষের মুখের কথা। শুনুন তাহলে-
আয়শা (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমাদের সাথে তার অবস্থানের সময়কে ভাগ করার ব্যাপারে আমাদের কোন একজনকে অন্য জনের ওপর প্রাধান্য দিতেন না। এটা খুব কমই হতো যে কোনদিন তিনি আমাদের সাক্ষাত দেন নাই। তিনি সহবাস ব্যতিরেকে প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে আসতেন যতক্ষণ না যার দিন ছিল তার কাছে পৌঁছতেন এবং তার সাথে রাত কাটাতেন। [সূত্র: সুনান আবু দাউদ (হাদিসের প্রাসঙ্গিক অংশ), আরবী: ১২।২১৩৫, ইংরেজি অনুবাদ: ১১।২১৩০, সুন্নাহ.কম: ১২।৯০]
নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এঁর একেবারে ঘরের মানুষ আয়শা (রা.) এঁর এই বক্তব্যের পর, অন্য কারো বক্তব্য বা ধারণার আর কোন সুযোগ অবশিষ্ট থাকে না। কাজেই এক রাতে নয় জনের সাথে সহবাস করার গল্পটাও একেবারেই ভিত্তিহীন।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সুতরাং আলোচিত ঐ প্রথম হাদিসটি যে স্পষ্টতই জাল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।আর এই জাল হাদিস দিয়ে মুসলমানেরাও যেমন একদিকে নবীকে কামুক হিসেবে চিত্রিত করে নবীর অসম্মান করছে, অন্যদিকে তেমনি আবার তথাকথিত মুক্তমনা নাস্তিকেরাও এই জাল হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামকে আক্রমন করার সুযোগ পাচ্ছে, আর তাদের নাস্তিকতার দর্শনকে প্রচার করছে ।।একারনেই বলিঃ হত্যা কিংবা যুক্তি দিয়ে নাস্তিকদের কখনোই পরাজিত করতে পারবে না, যদি নাস্তিকদের সত্যিই পরাজিত করতে চাও , তবে জেনে রেখো , নাস্তিকদের পরাজিত করার একমাত্র উপায় হলোঃ ইসলামের শরীর থেকে জাল হাদিসের অপসারন । কেননা এই সমস্ত জাল হাদিসগুলোই নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদের প্রসারে অন্যতম রসদ সরবরাহ করে থাকে । যদি জাল হাদিস না থাকতো্, তখন নাস্তিকেরাও এসমস্ত হাদিসকে পূঁজি তাদের ব্যাবসা আর চালাতে পারতো না ।নাস্তিকদের ব্যাবসাও তথন ১০০% না হলেও , অন্তত ৫০% ব্যাবসা লসের সম্মুখীন হতো ।। সে জন্যই বলিঃ যদি নাস্তিকদের সত্যিই যদি পরাজিত করতে চা্ও ,তবে খুন খারাবি নয়, বরং জিততে চাইলে, জাল হাদিসগুলোকে আগে ইসলামের শরীর থেকে পৃথক করো।"
মূল লিখা ; প্রকৌশলী শয়ন কুমার রায়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৫