somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দা সুইসাইড নোট !

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।


কোটরের গভীর থেকে গভীরে ডেবে যাওয়া একজোড়া নিষ্প্রাণ লাল চোখ , উসকো খুশকো চুলগুলো কাঁধের উপর দিয়ে আলতো করে ছড়িয়ে আছে বুকের উপর । উদ্ভ্রান্ত-বিহ্বল দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা । বা' হাতের আঙ্গুলগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপছে ।
মেয়েটার নাম সৃজনি । তানজিলা তাসনিম সৃজনি । ঢাকার একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা করে । চতুর্থ বর্ষ ! আর মাত্র একটা বছর ,তারপরেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে যাবে ।
হাহ ! গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো সৃজনির বুক থেকে । ডান হাতের মুঠোতে দলা পেঁচানো কাগজটা খুলতেই বেরিয়ে পরলো পলিথিনের ছোট একটা প্যাকেট । প্যাকেট ভর্তি সাদা সাদা ক্ষুদে ক্রিস্টাল দানা ! প্যাকেটটা টেবিলের উপর রেখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল সৃজনি । তারপর দশ ডলারের একটা চকচকে নোটকে সরু পাইপের মতো করে পেচিয়ে নিল ।
সৃজনির চোখভর্তি ঘোলাটে মাদকতা । পারকিন্সনস পেসেণ্ট এর মতো কম্পমান হাতে কাগজের নলটাকে নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করালো ।

দু' মিনিট পর _

চেয়ার থেকে ছিটকে ফ্লোরের উপর বিদঘুটে ভঙ্গিতে পরে আছে সৃজনি । কপালের এক পাশ থেকে সরু ধারায় বেরিয়ে আসছে রক্ত , মুখে ভীতিকর অস্ফুট গোঙ্গানি । বা' হাতে দলা করে পেঁচানো এক খণ্ড সাদা কাগজ ।

২ (১) ।

বুকের ভিতরে ধুবধুব শব্দ হচ্ছে । মনে হচ্ছে তীব্র আক্রোশে হৃদপিণ্ড বুক চিড়ে বেরিয়ে আসবে । সামান্য দূরের স্থির চেয়ারটা হুট করে নড়ে উঠলো । গ্র্যাভিটেশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ধীরে ধীরে শূন্যে উঠে যাচ্ছে । চোখের উপর বা ' হাত দিয়ে ঘষা দিল নওসাদ । চোখের উপর হাতের স্পর্শ অনুভব করছেনা ও । ভীত চোখে হাতের দিকে তাকালো । তিরতির করে কাঁপছে আঙ্গুলগুলো ।
মাথা তুলে দেয়ালের দিকে তাকালো ও । দেয়ালের সাদা রঙ্গের শরীরে অশরীরী সব রঙ্গের নিত্য । প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মাথার নিউরনগুলো যেন ছিঁড়ে যাবে । রক্তের শিরা গুলো ট্রেনের সাইরেনের মতো ভাইব্রেট করছে । গলা দিয়ে গোঙ্গানির মতো আওয়াজ বেরুচ্ছে নওসাদের । চোখের সামনের পৃথিবী এক পলকে যেন নড়ে উঠলো । ঘরের দেয়ালগুলো ছুটে এসে চেপে ধরল ওকে ।


২ (২) ।


' Imagination is more important than anything ! এই ছেলে ! কি বলছি শুনছো ? '
চোখ খুলে তাকাল নওসাদ । পাঁটের আঁশের মতো সাদা চুল মানুষটার , অগোছালো । নাকের নিচে ভারী গোঁফ । মুখ থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি দূরে স্থির অবস্থায় ভাসছে একটা পাইপ । পাইপের ছিদ্র থেকে সরু লাইন করে মানুষটার খোলা মুখের দিকে ছুটে আসছে ধোঁয়া । আর বেরুচ্ছে চোখ , নাক আর কানের ছিদ্র দিয়ে । ভয়ানক অবাস্তব দৃশ্য । মানুষটার সাথে ও নিজেও শূন্যে ভাসছে । কি ঘটছে এসব !


' আপনি কে ? ' খনখনে গলায় জিজ্ঞেস করলো নওসাদ । কিন্তু অবাক হয়ে দেখল গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না ।


মানুষটা মাথা ঘুরিয়ে তাকাল । ঠোঁট নড়ার কোন চিহ্নই দেখা গেলো না কিন্তু ও পরিস্কার শুনতে পেল মানুষটার কণ্ঠ । ' আমি আইনস্টাইন ! তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় টুকটাক পড়াশোনা জানা মানুষ । ১৯২১ এ একটা নোবেল প্রাইজও পেয়েছি ।অবশ্য সেটা কোন বিষয় না । তারপর বল তুমি কেমন আছ ?'


নওসাদ ভ্রু কুঁচকে তাকাল । ' ভালো না । শরীর ভয়ঙ্কর খারাপ । আপনি এখানে কি করেন ?'


' তেমন কিছু না । আড্ডা দেয়ার কোন মানুষ খুজে পাচ্ছিলাম না । তাই ভাবলাম তোমার সাথে কিছুক্ষন গল্প করা যাক । ' খেক খেক করে হাসল আইনস্টাইন ।


' ও । ভালো করেননি । আমার মাথা ভর্তি যন্ত্রণা । এখন আপনার সাথে গল্প গুজব করতে ইচ্ছে করছেনা । আপনি বিদেয় হন তাড়াতাড়ি । '


আইনস্টাইন মন খারাপ করে তাকাল । ' যেতে ইচ্ছে করছেনা তো । তুমি বরং চা খাও । শরীরটা ভালো লাগবে । দাড়াও আমি তোমার জন্য চা আনাচ্ছি । '
ঘরের দরজাটা ক্যাঁচক্যাঁচে আওয়াজে খুলে গেলো । শূন্যে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে এলো দু ' কাপ চা ।


নওসাদ আর্তনাদ করে উঠলো । ' এটা কি ?'


আইনস্টাইন মুচকি হাসলেন । ' টেলিকাইনেটিকস ! '


' টেলিকাইনেটিকস ! আপনি টেলিকাইনেটিকস এ বিশ্বাস করেন ! চোখ বড় বড় করে আইনস্টাইনের দিকে তাকাল ও ।


' হুম । করি । ক্যান করবোনা বাছা !আজকালকার পদার্থবিদরা মনে করে জগত পদার্থবিদ্যার সূত্রের বাইরে যায়না । সব অপদার্থ । ম্যাটাফিজিক্স সম্পর্কে এদের কোন ধারনাই নাই । এইরকম একটা উচ্চস্তরের গাধা হল ম্যাক্স প্লাঙ্ক । কোয়ান্টাম ফিজিক্স আবিস্কার করছে গাধাটা । কোয়ান্টাম তত্ত ইন হিস এসহোল ! এই রুমের দিকেই তাকাও দেখ চেয়ার টেবিল এমনকি আমরাও গ্রিভিটিকে কাঁচকলা দেখিয়ে কেমন ভাসছি । দেখ দেখ , ওই ফুলদানিটার কনাগুলাও লেভ্ররোটেটরি । গাধা পদার্থবিদরা এই জিনিসের কি ব্যাখ্যা দিবে বল দেখি ? ওমা ! এই ছেলে তোমার কি যন্ত্রণা হচ্ছে ? ' নওসাদের বাকিয়ে উঠা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল আইনস্টাইন ।


' হুম ! অসম্ভব । মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার ।বকবক বন্ধ করেন তো আপনি । মেয়েটার ছবি চোখের সামনে ভাসছে । ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে । ভীষণ । '


' কোন মেয়ে ! ও আচ্ছা বুঝেছি !মেয়েটা তোমাকে ভালবাসেনা তাই তো ? '


নওসাদ মাথা উপরনিচ করলো ।


আইনস্টাইন গম্ভীর গলায় বললেন , ' আলো বেঁকে যায় , জানতো । সূর্যের প্রচণ্ড গ্রেভিটেসনাল এনার্জিকে উপেক্ষা করতে পারেনা । এখানেই আলোর পরাজয় । পুরুষরা হল আলোর মতো সোজা পথে ছুটতে থাকে কিন্তু যখনই সূর্যের কাছাকাছি আসে সে বেঁকে যায় । কাজেই কখনোই সূর্যের কাছাকাছি যাওয়া উচিৎ নয় । '


' আপনার কথা বার্তা পুরো পাগলের মতো । মেয়েরা সূর্য হয় কিভাবে ! আপনি ফোটেন এখন । '


আইনস্টাইন নিজের মনে বিরবির করতে করতে মুখ বাকিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসলো । কাঁধের ছয় ইঞ্চি উপরে শূন্যে ভাসছে একটা ভায়লিন । বিষণ্ণ একটা সুর বাজছে ।


নওসাদের চোখের সামনে এক টুকরো কাগজ ভাসছে । নওসাদ মনে মনে ভাবছে _
' আমি কেউ ছিলাম না । আমি কেউই থাকবনা । শুধু ভালবাসা টিকে থাকবে যন্ত্রণাদায়ক অনুভুতিগুলোর ইলেকট্রন আর কোয়ার্কের কনফিগারেশনে ! তোমার জন্য ভালবাসা । '


৩ ।


সৃজনি আধ খোলা চোখে বা' হাতের দিকে তাকাল ।ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে তুলে দেয়ালের সাথে ঠেশ দিয়ে বসলো । হাই তুলতে তুলতে হাতের দলা মোচড়া করা কাগজটা খুলে চুখের সামনে ধরলো । গোটা গোটা হরফে কিছু লেখা । হাতের লেখা ঠিক বলা যায়না আবার কম্পিউটার কম্পোজ ও না ! কেমন যেন বিদঘুটে হরফ গুলো । কাগজের টুকরোটা চোখের আরও কাছে নিয়ে এলো ও ।তাতে লেখা _


' আমি কেউ ছিলাম না । আমি কেউই থাকবনা । শুধু ভালবাসা টিকে থাকবে যন্ত্রণাদায়ক অনুভুতিগুলোর ইলেকট্রন আর কোয়ার্কের কনফিগারেশনে ! তোমার জন্য ভালবাসা ' ।


শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৃজনি ।চোখ থেকে গাল বেয়ে ফোটায় ফোটায় জল গড়িয়ে পরছে ।মৃদু স্বরে ও বলল _ ' তোমার জন্য ও ভালবাসা । '


৪।


আজিমপুর কবরস্থানে আমার প্রায়ই যাওয়া হয় । ওখানে গেলেই আমি ২১ নাম্বার ব্লকের প্রথম কবরটার সামনে দাড়াই , একটু অগোছালো কবরটা । অযত্নে বাড়তে থাকা লতা পাতায় এপিটাফ ছেয়ে গেছে । অস্পষ্ট এপিটাফের গায়ের লেখাটা অনেকটা এরকম_

' আমি কেউ ছিলাম না ।আমি কেউই থাকবনা । শুধু ভালবাসা টিকে থাকবে যন্ত্রণাদায়ক অনুভুতিগুলোর ইলেকট্রন আর কোয়ার্কের কনফিগারেশনে ! তোমার জন্য ভালবাসা ' ।
_ নওসাদ ।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×