নভেম্বরের রেইনের অসাধারণ লিরিক্স নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছুই নেই ।
“তোমার ওই চক্ষু পানে চাহিয়া দেখি
দেয়ালের ওপাশে আঁটকে পরা ভালোবাসা
যখন জড়িয়ে থাকি তোমায় , তবুও কি বোঝনা
প্রানে প্রানে কি স্পন্দন ?
সবকিছুই তো বয়ে চলে
হৃদয়ের বিবর্তন ও তো আমরা বুঝি !
তবুও এই ভালোবাসা ক্লান্তিকর
সময়টা যখন প্রবল বিষাদধারার !
------ "
অনুবাদে আমি একেবারেই অপরিপক্ক । কোথায় যেন নভেম্বর রেইনের একটা চমৎকার অনুবাদ পড়েছিলাম । সে এক দুর্দান্ত অনুভূতি ।
দা ইউনিক লিরিক্স
নভেম্বর রেইনের লিরিক পৃথিবীর সবচাইতে অসাধারণ লিরিক গুলোর একটি । সহজিয়া ভাষায় দুজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ , ভয় , বিষাদ , ভালোবাসা তথা এক ভয়ঙ্কর জটিল সময়কে তুলে ধরা হয়েছে । গানের শুরুতেই আমরা দেখি একজন মানুষের ভয়মিশ্রিত অনুভূতির কথা যেখানে সে তার প্রেমিকার ভালোবাসার অভাবে বিষাদগ্রস্থ । একদিকে মানুষটার তার প্রেমিকার প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা অন্যপাশে তার প্রতি প্রেমিকার নিঃস্পৃহতা মানুষটাকে ক্রমশ ভীত করে ফেলছে । সে কি হারাতে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষকে ?
গানে ‘নভেম্বর রেইন ‘ মূলত দুজন মানুষের জীবনের এক ক্রান্তিকাল কে রিপ্রেজেন্ট করে । ‘ক্যান্ডেল’ বলতে সম্ভবত ভালবাসাকে বোঝানো হয়েছে । এমন একটা সময় যখন ভালোবাসার সুন্দর স্মৃতি গুলোও বিষাদের চাপে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে ।কিন্তু তবুও প্রেমিক মানুষটা হাল ছাড়তে রাজি নয় সে চায় তার প্রেমিকা ‘সময়’ নিক , ভেবে দেখুক অতীতের সুন্দর অনুভূতিগুলোর কথা । যেহেতু কোন কিছুই চিরন্তন নয় তাই হয়তো প্রেমিকার ভুলও ভাঙবে কখনো , হয়তো সব অভিমান ভুলে ঝাপিয়ে পড়বে তার বাহুডোরে । গানের পরের লাইনগুলোতে সেই আশাবাদ ই যেন ব্যাক্ত হয়েছে বারংবার । এ দিক গানটিকে প্রবলভাবে অপটিমিষ্টক ও বলা চলে ।
অবিশ্বাস্য একটা মিউজিক ভিডিও !
মিউজিক ভিডিওর ইতিহাসে এতোখানি মেটাফেরিকাল কোন ভিডিও আছে বলে আর মনে হয়না । ভিডিওর শুরুতেই আমরা দেখি রোজ ঘুমের ওষুধ খেয়ে খাটে শুয়ে পরে । এর পর হুট করেই লস এঞ্জেলসের আরফিয়াম থিয়েটারে গান্স এন্ড রোজেস বাহিনীর লাইভ কনসার্ট ! এই দৃশ্যে হুইস্কি সামনে নিয়া রোজ যেমনে পিয়ানো বাজায় এটা মোটামুটি পাগল করে ফেলে আমাকে । এর পরেই আমরা আবার দেখি একটা সাদা বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রোজ পিয়ানো বাজাইতাসে
। জিশুর মূর্তির সামনে থাকা মোমবাতি ধুপ করে নিভে যাওয়ার সাথে সাথেই আলোকোজ্জ্বল আকাশ কেমন যেন মেঘলা হয়ে আসে । তারপর আমরা দেখতে পাই , এক্সেল তার প্রেমিকা স্তেফানিকে বিয়ে করছে নিউ মেক্সিকোর কোন এক চার্চে । পরের দৃশ্যটা হৃদয়বিদারক ! আমরা আবার চার্চে ফিরে যাই কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন । স্তেফানির মৃত্যুতে ভেঙে পড়তে দেখা যায় রোজকে ।কিন্তু স্তেফানি কীভাবে মারা যায় এই বিষয়টা ভিডিওতে একেবারেই দেখানো হয়নি । গানপাগলাদের কাছে স্তেফানির মৃত্যু এখনো বিতর্কের বিষয় । তবে আমার মনে হয় , স্তেফানি আত্মহত্যা করে । চার্চে মধ্যে কফিনে শুইয়ে রাখা স্তেফানির মাথার অর্ধেক গ্লাসে ঢেকে রাখা হয় , এ থেকে ধারনা করা যায় তার মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছে স্তেফানি । অন্যদিকে ভিডিওর এক পর্যায়ে আমরা দেখি রোজ একটা গানশপের পাশ দিয়ে ধীর গতিতে হেঁটে যাচ্ছে । হয়তো এই গানশপ থেকেই অস্র কিনেছিল তার প্রেমিকা স্তেফানি ।মৃত্যু যে আত্মহত্যার মাধ্যমেই হয়েছিল সেটি অন্যভাবেও নিশ্চিত হওয়া যায় । গানের পুরো ভিডিও প্লটটি নেয়া হয়েছিল ডেল জেমসের ‘ উইথাউট ইউ ‘ নামক ছোটগল্প থেকে । সেখানেও আমরা দেখতে পাই নায়িকা মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করে ।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে , ভিডিওতে হুট হাট করেই একঘটনা থেকে অন্যটায় যেভাবে টার্ন নিচ্ছিল ব্যাপারটা আমার কাছে অস্বস্তি লাগছিল । যেমন বিয়ের দৃশ্যয়ের পরে হুট করে দেখলাম রোজ এবং স্তেফানি লস এঞ্জেলেসের রেইনবো বার এন্ড গ্রিলে দুষ্টুমি করছে । কিন্তু সেই সময়ে স্তেফানির রিং ফিঙ্গারের ভিন্ন আংটি প্রমান করে যে তখন ও তাদের বিয়ে হয়নি । অথচ এর আগের দৃশ্যেই আমরা তাদের বিয়ে হতে দেখেছি ! এই অসামঞ্জস্যতা পরিকল্পিত বলেই বোধ করি ।একেবারে প্রথম দৃশ্যে আমরা দেখি রোজ রোজ ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে , তারপর একপর্যায়ে জিশুর চোখ থেকে বেরিয়ে আসে রক্তের ধারা , ঠিক তার পরের দৃশ্যেই দেখি রোজ ঘুমের মধ্যে হাস –ফাস করতে করতে এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে । শেষ দৃশ্যে দেখা যায় স্তেফানির হাত থেকে ছোড়া ফুল গুলো সাদা থকে ক্রমেই লাল হতে থাকে । এ থেকে একটা সুন্দর সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়াকেই বুঝে নিতে পারি আমরা । এরপরের মুহূর্তেই আতঙ্কিত- ঘর্মাক্ত অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠে রোজ । তাই আমার মনে হয় নভেম্বর রেইন গানটা পুরোটাই রোজের দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না ।তাই আমি বলি _ নভেম্বর রেইন না , আমি রোজের দুঃস্বপ্নের সঙ্গীত শুনি ।
শেষের দিকে রোজের পিয়ানো চুলকানো আর স্ল্যাসের সলো নিয়া কিছুই বলার নাই । গানটার আত্মা বলা যায় স্ল্যাসের সলোকে । রোজের যন্ত্রণা যেন স্ল্যাসের গিটারের কান্না হয়ে ঝরে পরছিল !
কিছু তথ্য _
১। নভেম্বর রেইন GnR এর Use your Illusion 1 এ্যালবামের দশম ট্র্যাক । এ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ১৯৯২ এঁর জুনে ।
২।গানস এন্ড রোজেস এঁর বিখ্যাত ট্রিলজির একটি নভেম্বর রেইন । অন্য দুটি হলো _ Don’t Cry এবং Estranged .
৩। ব্যান্ডের পূর্বের সদস্য গান এঁর এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় _ এক্সেল রোজ গানটি প্রথম লিখতে শুরু করে ১৯৮৩
সালের দিকে !
৪। শুরুর দিকে স্ল্যাস এবং অন্যান্য ব্যান্ড মেম্বাররা নভেম্বর রেইন কে এ্যালবামে রাখতেই চায়নি ! পরে এক্সেল ব্যান্ড ছাড়ার হুমকি দিলে বাধ্য হয় । ভাগ্যিস হুমকি
দিছিল !
৫ । এ্যালবামে নভেম্বর রেইন সংযুক্ত করার আগে রোজ টানা আটদিন একলা একটা রুমের মধ্যে কাটায় । আট দিন পর ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরা দেখে রুমের এককোনায় রোজ উলটো হয়ে ঘুমুচ্ছে । রুম ভর্তি খালি পিজ্জার বাক্স আর মল – মূত্র !!
৬। মিউজিক ভিডিওতে নায়িকা চরিত্রে থাকা স্তেফানি সত্যিকার অর্থেই রোজের গার্লফ্রেন্ড ছিল । যদিও পরে তাদের ব্রেক আপ হয়ে যায় ।
৭। পৃথিবীর সবচাইতে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওর একটি । পুরো ভিডিওটি বানাতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় !( Estranged গানের মিউজিক ভিডিও করতে খরচ এঁর চাইতে বেশী পরছে ! প্রায় চার মিলিয়ন ডলারের মতো ! )
৮। মিউজিক ভিডিওটা সিনেমাটোগ্রাফির জন্য MTV এ্যাওয়ার্ড পায় রিলিজের পরপরই ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২