somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমা হলে মনপুরা দেখতে যেয়ে আরও যা যা দেখলাম

১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বেশ কবছর আগের কথা। মনপুরা সিনেমা দেখতে গিয়েছি ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত পদ্মা সিনেমা হলে। দুপুর তিনটার শো। নতুন এসেছিল সিনেমাটি হলে। পোস্টার দেখে গতানুগতিক মারদাঙ্গার ঢাকাই সিনেমা নয় ভেবে দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। হলে যেয়ে দেখলাম বেশ ভিড়। অনেকদিন বিরতি দিয়ে সেদিন আমার আবার কোনও বাণিজ্যিক সিনেমা হলে সিনেমা দেখা। স্বভাবতই বেশ ইতস্ততভাব ছিল। আগতদের অনেককে প্রশ্নোত্তরে রিয়ার স্টলের টিকিটের দাম বলাবলি করতে শুনলাম। কেউ বলছে ছাব্বিশ, কেউ সাতাশ, কেউ বা আটাশ! ব্যাপারটা আমাকে সেখানে বেশ বিস্মিতই করলো। একেকজন টিকিটের একেক দাম বলছে কেন, ব্যাপারটা কি!
আমি গেলাম কাউন্টারে। টিকিট কাটলাম। সাতাশ বা আটাশ টাকা মূল্য রেখেছিল। দেখলাম টিকিটের গা'য়ে পরিষ্কার লেখা, সব শুল্ক টুল্ক সহ বিক্রয় মূল্য পচিশ টাকা। কিন্তু পচিশ টাকায় কোনও টিকিটিই ছাড়ছে না কাউন্টারের লোকটা। খুচরো টাকা, কয়েনের বান্ডিল নিয়ে বসেছে। সবার কাছে দুতিন টাকা করে বেশি রাখছে তো রাখছেই। এজন্য কেউই টিকিটের সঠিক মূল্য বলতে পারছে না; ছাব্বিশ সাতাশ আটাশ যার কাছে যা নিয়েছে, তারা তাই বলছে। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে বিরক্তিকর! প্রতিবাদ করার ইচ্ছা খুব কষ্টে সংবরণ করলাম। কারও কোনও সমস্যা হচ্ছে না যখন, একা আমি লম্ফঝম্প করে কীইবা করতে পারি! দরকার নেই পাঁচ ছয় বছর পর হলে সিনেমা দেখতে এসে, এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করার। এখানে নিশ্চয় এটাই নিয়ম। এভাবেই চলে আসছে। সুতরাং চুপচাপ স্রোতে গা' ভাসিয়ে দাও! দিলামও। এভাবে টিকিট প্রতি দুতিন টাকা করে বেশি নিয়ে, নির্লজ্জ অসাধুতা করে, দিনশেষে বিরাট অঙ্কের একটা অবৈধ টাকা পকেটে পুরছে কাউন্টার ম্যান। লোকটা দারুণ দুর্নীতিবাজ! পাঁচশ টাকা খুচরো করে হলেও টিকিটের বাড়তি দাম না নিয়ে টিকিট ছাড়বে না! কেমন যেন ব্যাপারটা, তাই না; প্রত্যেক টিকিটেই দুতিন টাকা করে বাড়তি মূল্য রাখছে তো রাখছেই। নিজের দুনাম্বারির সুবিধার জন্য খুচরো কয়েন, টাকার বান্ডিল নিয়ে বসেছে সে। বাহ!
এই সুযোগে একটা কথা সবার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার বলে রাখি, অন্যায়ের কোনও ছোট বা বড় বলে কিছু নেই। সবই সমান ঘৃণাজনক, সমান নিন্দনীয়, এবং অপরাধের ধরণ অনুযায়ী সবই নিশ্চিতরূপে শাস্তিযোগ্য। আমাদের দেশের মানুষের মাঝে একটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা আছে যে, আমরা অনেক সময় অনেককিছু 'ছোটখাটো' ভেবে, বলে এড়িয়ে যাই! যা আমাদের অজান্তে, প্রকারান্তরে অপরাধ ও অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়া। সবার কাছে আমার বিনীত নিবেদন থাকলো, এ প্রবণতা পরিহার করুন। হয়তো এই মুহূর্তে অনেকেই হাসছেন আমার এই লেখা পড়ে। মনে মনে বলছেন, কোথাকার কোন সিনেমা হলের কর্মচারীদের দুই তিন টাকার দুর্নীতি নিয়ে এতো মাথা ঘামানোর কি আছে! সরকারী কাজে কতো কর্তাব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে পকেটে পুরছেন, তার কোনও খবর নেই! যারা এমন মনোভাব পোষণ করেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনাদের এ ধরণের মনোভাব প্রকারান্তরে অপরাধ ও অপরাধীকে উৎসাহিত করারই সামিল। আগেই বলেছি প্রত্যেকটি অনিয়ম, অপরাধ, দুর্নীতি ইত্যাদি অসাধু কর্মকাণ্ড, তা যতো ছোটই হোক না কেন, সব সমানভাবে ঘৃণিত, নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। এসবকে এক চুল পরিমাণ ছাড় দেয়াও ভীষণ অনুচিত। অপরাধ তা যাই হোক। সবই সমানভাবে পরিত্যাজ্য।
যাই হোক মূল ঘটনায় ফিরে আসি। সেখানে দেখলাম, কাউন্টারে সঠিক মূল্যে টিকিট পাবার দূরতম কোনও সম্ভাবনা নেই কারও। সবাইকে অকারণ বাড়তি মূল্য দিয়েই টিকিট ক্রয় করতে হচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহের অভ্যন্তরে যাবার সময় পথে কেউ একজন আমার কাছে টিকিটের মূল্য জিজ্ঞেস করেছিল। তাকে জানিয়েছিলাম, মূল্য পচিশ টাকা, কিন্তু সবার কাছে দুতিন টাকা করে বেশি রাখছে। উপায় নেই! আমার কাছে আটাশ রেখেছে।
দীর্ঘ দিন পর হলে সিনেমা দেখতে যেয়ে শুরুতেই তিক্ত অভজ্ঞতা! বিরক্তি নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করলাম। টিকিট চেকার টর্চের আলো ফোকাস করলো আমার দিকে। দেখলাম সিনেমা শুরু হয়ে গেছে, অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে, বড় পর্দায় সিনেমা চলছে, গমগমে জোরালো আওয়াজ। এসময় টিকিট চেকার এসে দাঁড়াল সামনে। টিকিট নিল, টর্চ জ্বেলে দেখে আবার ফিরিয়ে দিলো। হঠাৎ এসময় লোকটা ফিসফাস করে আমার কানেকানে বললো, 'দুটাকা দিন।'
কেন! দুটাকা কেন দিব, কি বাবদ! দারুণ বিস্মিত হলাম, আকস্মিক কোনও কারণ ছাড়া তার আমার কাছে এই দুটাকা দাবী করায়। 'কেন দুটাকা কেন দিব!' বলে বসলাম আমি। বিস্ময় চেপে রাখতে পারলাম না। আরও কয়েকজন দর্শক এসময় প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করলো। আমাকে পাশে বসতে বলে, তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো চেকার মহাশয়। আমার সেই কঠোর মুখভঙ্গি আর বিস্মিতভাব দেখে বোধহয় সে বুঝতে পেরেছিল, আমি সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত নই।
'পাঁচটাকা দিন।' পাশে একটি সিটে বসতে বসতে শুনলাম এসময় আগত দুজন কিশোরের কাছে সেই একই অজ্ঞাত কারণে এবার সংখ্যায় দুজন হওয়া সাপেক্ষে পাঁচ টাকা দাবী করে বসলো টিকিট চেকার! ওরা বিনা বাক্য ব্যয়ে তা দিয়েও দিল। বোঝা গেল, নিয়মিত যাওয়া আসা আছে সিনেমা হলে, এসবে অভ্যস্ত। আমি বিষণ্ণ মন নিয়ে সিনেমা দেখতে লাগলাম। যদিও পরবর্তীতে 'মনপুরা' সিনেমাটা খুব উপভোগ করেছিলাম সেদিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:১১
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×