somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক বড় রহস্য গল্পঃ পৃথিবীর সবচেয়ে কদাকার মানুষের একটি গল্প

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক.
'দেখ দেখ কী কুৎসিত লোকটার চেহারা!' মুখ বিকৃত করে বলে উঠলো সুন্দরি মেয়েটি। চোখেমুখে ঘৃণা ও আতঙ্ক।
'হ্যা, সত্যি কী ভয়ঙ্কর দেখতে লোকটা!' শীতল গলায় বললো ওর পাশে বসা মেয়েটি। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। 'এমন কুৎসিত চেহারার মানুষ আগে কখনও দেখিনিরে বাবা, উফ! আসলে লোকটাকে আমার ঠিক মানুষ বলেই মনে হচ্ছে না। কে জানে, হতে পারে ভীনগ্রহের কোনও কিম্ভুতকিমাকার প্রাণী টানি কিনা, ভুল করে পৃথিবীতে এসে পড়েছে! হা হা হা।' বেশ জোরেই হেসে উঠলো মেয়েটি। হাসতে হাসতেই বললো, 'এই লোকটার মুখোমুখি বসে অচিনপুর পর্যন্ত যেতে হবে নাকি। তাহলে সত্যি সত্যি কিন্তু বমি করে ফেলবো বলে দিচ্ছি।'
'আহ ফারিয়া থামবি তোরা!' এসময় বললো তৃতীয় মেয়েটি। কণ্ঠস্বরে কাঠিন্য সুস্পষ্ট। চেহারাতেও বিরক্তিভাব। 'লোকটা হয়তো শুনতে পাচ্ছে সব। শুনলে কি ভাববে বল তো! কেন শুধু শুধু লাগছিস ওর পিছনে!'
'তুই কি ওই কালো ভুতটাকে বিয়ে করবি নাকি! হা হা হা।' অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো ফারিয়া নামের মেয়েটি। ওর সাথে যোগ দিলো অপর মেয়েটিও। দুজনেই সশব্দে হাসতে লাগলো। হাসির গমকে আরেকটু হলে সিট থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবার মতো অবস্থা।
'ধ্যাত তোদের সবসময় শুধু বাজে ইয়ার্কি!' শ্রাগ করে হতাশ গলায় বলে উঠলো তৃতীয়জন। 'তোদের সাথে আসাটাই ভুল হয়েছে আমার।'
'চুপ কর তো মনিকা।' বিরক্তির সাথে বললো অপর মেয়েটি। 'না এলেই পারতি। কেউ তো তোকে জোর করেনি আমাদের সাথে আসতে। আর ফার্স্ট গার্ল হয়েছিস বলে সবসময় এমন হামবড়া ভাব নিয়ে থাকবি নাতো, বিরক্তি লাগে।'
'আচ্ছা সত্যি সত্যি কি লোকটার মুখ দেখতে দেখতেই অচিনপুর পর্যন্ত যেতে হবে!' বললো ফারিয়া। দারুণ বিরক্তি চেহারায়। 'এই কেউ বল না ওকে অন্য কোথাও যেয়ে বসতে। এই কামরায় তো আরও দুয়েকটি সিট এখনও খালি আছে। লোকটা ওর কোনও একটিতে যেয়ে বসুক না ওর মালপত্র নিয়ে! মেয়ে মানুষ আর তিনজন একসাথে না হলে আমি কখন অন্য জায়গায় যেয়ে বসতাম।' ঘৃণা ও কিঞ্চিত ভয়েও মুখ বিকৃত হয়ে উঠলো ওর। 'আমার একদম ভালো লাগছে না। অস্বস্তি হচ্ছে খুব।'
'হ্যারে রূপা একদম ঠিক বলেছিস। লোকটাকে দেখার পর থেকেই আমার শরীরও কেমন যেন ঘিনঘিন করছে। কী ভয়ানক বিদঘুটে চেহারা!' বলতে লাগলো ফারিয়া। চেহারায় আতঙ্ক। 'পৃথিবীতে যে এমন কুৎসিত চেহারার মানুষ আছে একে না দেখলে জানতাম না কোনদিন। সাক্ষাত ইবলিশ যেন, দোযখ থেকে নেমে এসেছে।'
লোকটা ভাবলেশহীন মুখে শুনছিল মেয়েগুলোর কথোপকথন। থেকে থেকে এক রহস্যময় স্মিত হাসি খেলে যাচ্ছে তার অবয়বে। দেখে মনে হতে পারে বোধহয় সে উপভোগ করছে তাকে ঘিরে মেয়েগুলোর এই তির্যক কথোপকথন। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। তবে এ সবে সে অনেকটাই অভ্যস্ত। মানে তার চেহারা দেখে মানুষের এই আঁতকে ওঠাটা। এ সব মোটেও নতুন কিছু নয় তার জীবনে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে সে নিজেই অনেক সময় নিজের কদাকার চেহারা দেখে আঁতকে ওঠে। উচ্চতায় মাত্র চার ফিট পাঁচ ইঞ্চি। প্রায় বনমানুষই বলা যায়। বেটত্বের সাথে বেমানান বেঢপ শরীর। সাথে যোগ হয়েছে বড়সড় চাল কুমড়োর আকৃতির বিরাট একটি মাথা। মাথার ঠিক মাঝখানে সরলরৈখিক চকচকে একটি টাক, যা অনেকটা ক্রিকেট মাঠের পিচের মতো দেখায়। দুদিকে অল্প কিছু চুল ছড়ানো ছিটানো। থ্যাবড়া একটা নাক মুখের বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে রেখেছে। মানুষের নাক সাধারণত এতো বড় হয় না। তারটা খুব দৃষ্টিকটু একটি ব্যতিক্রম। দাঁতগুলোতেও কণামাত্র শ্রী নেই; বেশ বড় ও উঁচু। এ সবের সাথে গোদের ওপর বিঁষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছে আলকাৎরার মতো কুচকুচে কাল রং। তার মতো কাল গাত্র বর্ণের মানুষ এই বঙ্গ দেশে তেমন একটা দেখা যায় না। আফ্রিকান আদি অধিবাসীদের মতো একেবারে আবলুস কাঠের মতো কুচকুচে কালো।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×