(পূর্ব প্রকাশের পর)
তাকে দেখে আঁতকে ওঠে মানুষ। শিশুরা ভয়ে মায়ের আচলে মুখ লুকায়; অনেকে কেঁদেও ফেলে। অবশ্য ওরা নিতান্তই শিশু, অবুঝ। ভাবলো সে। ওদের সবকিছুই হাসি মুখে সহ্য করে নেয়া যায়। কিন্তু বড়, পরিণত বয়সের কেউ যদি প্রকাশ্যেই তার চেহারা নিয়ে এমন কদর্য হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে তখন তা মেনে নেয়া কষ্টকর বৈকি। ওরা তো আর অবুঝ নয়! ফের সেই রহস্যময় মৃদু হাসিতে ভরে উঠলো লোকটার মুখ। বছর দুয়েক আগে একবার এক পুচকে ছোকরাও এই মেয়ে দুটোর মতো ভুল করে বসেছিল। একদিন একটি রেস্টুরেন্টে সবান্ধব খেতে বসে তাকে দেখতে পেয়ে, মুখ বিকৃত করে প্রকাশ্যেই সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে একের পর এক যা তা বলে নোংরা রসিকতা করতে লাগলো। এরকম কয়লার মতো কালো মানুষ নাকি এখন আর খোদ আফ্রিকাতেও পাওয়া যাবে না, আমেরিকায় নিগ্রোরাও আস্তে আস্তে শাদা হয়ে যাচ্ছে, মাথার দুদিকে সবুজ রঙ আর টাকটা শাদা করে দিলেই ওটা মিনি ক্রিকেট মাঠ হয়ে যাবে, বিরাট নাকটা নাকি ওর তিনটে নাকের সমান বড় ইত্যাদি। আরও কতো লম্ফঝম্প, কদর্য হাসি মসকারা তার চেহারা নিয়ে।
ছেলেটার কথা ভেবে পুলকিত হলো সে। এই মেয়েগুলোরই বয়সী, বা কিছুটা বড় হবে। সুদর্শন। দীর্ঘ, পেটানো ব্যায়াম করা শরীর। সুশ্রী মুখাবয়ব। দেখলেই মডেল বা অভিনেতা, মানে সিনেমা নাটকের নায়ক বলে মনে হয়। এতো সুন্দর, সুদর্শন ছেলেটা অথচ মন তার কতো অপবিত্র, রাজ্যের কলুষতায় ভরা! আপনমনে মুচকি হাসতে লাগলো লোকটা।
'দেখ দেখ জানোয়ারটা হাসছে কীভাবে!' বিড়বিড় করে বললো রূপা নামের মেয়েটি। গলায় আতঙ্ক। 'কেউ ওকে অমন কুৎসিতভাবে হাসতে নিষেধ করবি প্লিজ। নইলে আমি সত্যি সত্যি কিন্তু বমি করে ফেলবো। বারবার ওভাবে হাসছে কেন ও! হাসির কি হয়েছে এখানে!'
'ঠিক বলেছিস রূপা।' বললো ফারিয়া। তীক্ষ্ণ চোখে রাজ্যের ঘৃণা নিয়ে দেখতে লাগলো লোকটাকে। 'মানুষের হাসি যে এতো কুৎসিত হতে পারে একে না দেখলে জানতাম না কোনদিন। সাক্ষাত শয়তান একটা। নরক থেকে নেমে এসেছে যেন।'
'দয়া করে এবার চুপ কর তো তোরা।' বিরক্তির সাথে বললো মনিকা। 'সেই কখন থেকে দেখছি শুধু শুধু ভদ্রলোকের পিছনে লেগে আছিস! এবার অন্য কোনও বিষয়ে কথা বল প্লিজ। উনি নির্ঘাত তোদের কথা শুনতে পাচ্ছে। বেচারা নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে এতে। সেও তো মানুষ আমাদের মতো। আর সবচেয়ে বড় কথা সে তো আমাদের কোনও ক্ষতি করেনি। নিজের মতো বসে আছে, একবার ফিরেও তাকায়নি আমাদের দিকে। তোরা কেন শুধু শুধু তাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস!'
'আবার ভাষণ শুরু করলি তুই!' বিরক্তির সাথে মনিকাকে লক্ষ্য করে বললো ফারিয়া। 'আমাদের কিছু বলার আগে ওই লোকটাকে ওভাবে হাসতে নিষেধ কর। কী বিশ্রী হাসি! দেখলেই বমি আসে।'
'হ্যা, বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছি,' বললো রূপা। 'থেকে থেকে কেমন কুৎসিতভাবে হাসছে লোকটা। এখানে ওর অমন হাসির কি ঘটেছে শুনি! ছি, মানুষের হাসি এতো কুৎসিত হতে পারে!' মুখ বিকৃত করলো রূপা। 'ইচ্ছে করে আমাদের ভয় দেখাচ্ছে ও। আস্ত শয়তান একটা। নয়তো ওর ওভাবে বারবার হাসির কি উপলক্ষ ঘটেছে এখানে!'
'ওর দিকে তাকানোর দরকার নেই তোদের।' বললো মনিকা। 'আরেক দিকে তাকিয়ে থাক। ব্যাপারটা এখানেই শেষ কর প্লিজ।'
(চলবে)
আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫০