somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এর জন্য কি সরকার, শেখ হাসিনা বা মেয়র দায়ী

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগের কথা। স্থান ঢাকাস্থ যমুনা ফিউচার সিটি শপিং মল। বিকেলবেলা। যমুনা ফিউচার সিটি শপিং মল শুধু বাংলাদেশরই নয় সারা বিশ্বের মধ্যেই অন্যতম বৃহৎ ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি অত্যাধুনিক শপিং মল। বাংলাদেশি হিসেবে আমরা নিঃসন্দেহে গর্বিত হতে পারি এর জন্য। আমি তখন লিফটে নিচে নামছিলাম। লিফটে সে সময় মার্কেটের দুজন স্টাফ ছিল। এদের মধ্যে একজনের হাতে ওয়্যারলেস। সে নির্ঘাত সেখানকার ফ্লোর সুপারভাইজার হয়ে থাকবে! তারা দুজন কথা বলছিল। এ সময় ওয়্যারলেস হাতে লোকটা তার সঙ্গীকে বললো, 'লিফটে দরজার পাশে একটি ঝুরি রাখতে হবে।' এরকম কিছু। আমি তৎক্ষণাৎ ঠিক বুঝলাম না, হঠাৎ লিফটে ঝুরি রাখার কথা কেন বলছে সে! এ সময় অপরজন বললো, 'একটা কেন দশটা ঝুরি রাখলেও বাঙালি তাও ময়লা বাইরেই ফেলবে।' একথা শুনে কৌতূহলী হয়ে লিফটের ফ্লোরে তাকালাম, দেখলাম ব্যবহৃত নোংরা টিস্যু পেপার, পরিত্যক্ত কোমল পানিয়ের ক্যান সারা ফ্লোরে যত্রতত্র পড়ে আছে। সংখ্যায় তা একাধিক। পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, বেশ কয়েকজন ইচ্ছে মতো আবর্জনা ফেলে অপরিচ্ছন্ন করেছে লিফটের ফ্লোরকে। এখন আফসোস হচ্ছে স্মার্ট ফোনে দুয়েকটা ছবি কেন তুলে রাখলাম না! একেবারে যা তা অবস্থা; মনে হচ্ছিল যেন ফুটপাতে আবর্জনার ট্যাংক উপচে কিছু বাড়তি ময়লা পড়ে আছে বাইরে! দৃশ্যটা দেখে পুরোপুরি বোকা বনে গেলাম।
বেচারা মার্কেট স্টাফকে বলতে ইচ্ছে করলো, লিফট ডাস্টবিন রাখার জায়গা না। মানুষ খুব অল্প কিছুক্ষণ, মাত্র দুয়েক মিনিট অবস্থান করে লিফটে! এর মধ্যে যাদের উচ্ছিষ্ট ক্যান, ময়লা পরিত্যক্ত টিস্যু পেপার ইত্যাদি বাইরে নিয়ে যেয়ে ফেলার মতো কমন সেন্স নেই, তাদের জন্য একাধিক ঝুরি রাখলেও কাজের কাজ কিছু হবে না। তারপরেও তারা আবর্জনা ফ্লোরেই ফেলবে। আপনার সহকর্মী ঠিকই বলেছে। সম্ভব হলে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে যারা এ ধরণের দুষ্কর্ম করে তাদের জরিমানার ব্যবস্থা ও পুলিশের সঙ্গে আসামিদের যেমন কাঁচুমাচু মুখের ছবি গণমাধ্যমে আসে ওরকম ছবি তুলে দুষ্কর্মকারীদের নাম, পরিচয়, পিতার নামসহ পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করে মার্কেটের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারিং করতে হবে। প্রয়োজনে অবশ্যই কিছু শারীরিক নির্যাতনও করতে হবে, হালকা উত্তম মাধ্যম আরকি! তাহলে কাজ হবে আশা করি। এছাড়া কিচ্ছু হবে না! আমার তো মনে হয়, লিফটের ভিতরে ডাস্টবিন রাখলে উল্টো তখন তারা আরও বেশি করে ফ্লোর অপরিচ্ছন্ন করবে। তখন বরং আরও বেশি এসব পরিত্যক্ত জিনিষ ছোড়াছুড়ি করবে, আরও বেশি নোংরা হবে পরিবেশ।
সত্যি এটা আমি কল্পনাও করতে পারি না! আমার কাছেও লিফটে অনেক সময় ব্যবহৃত টিস্যু থাকে হাতের মুঠোয়। আমি তা অবশ্যই লিফট থেকে বেরিয়ে যথাযথ স্থানে ফেলি, ফেলে আসছিও। আমি আমার কথাটা মোটেও কোনও বাহবা পাবার জন্য এখানে প্রকাশ করলাম না! এটা নিতান্তই একজন সুস্থ সভ্য পরিণত বয়সের মানুষের অত্যন্ত সাধারণ একটি ব্যাপার। ইংরাজিতে একে কমন সেন্স (common sense) বলে। বাংলায় আমরা মানুষের সাধারণ বুদ্ধি বিবেচনা বলতে পারি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষেরই এই কমন সেন্সের দারুণ অভাব। শুধু ওই একটা বিশেষ ঘটনাই নয়, আমি আমার এই এযাবতকালের জীবনে প্রতি পদে পদে দেখে আসছি, এভাবেই আমাদের বদ অভ্যাস, আলস্য বা কোনও কিছু যথাযথ ব্যবহার না করার ফলে আমরা নিজেরাই আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশের ক্ষতি করে থাকি, আর এভাবে ব্যাপারটা যখন এক পর্যায়ে চরম রূপ ধারণ করে তখন আমরা বেমালুম দোষ চাপাই সরকার, প্রশাসন, মেয়র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র কাঁধে!
সবশেষে আমাদের অসভ্যতা, নির্বুদ্ধিতার থেকে সৃষ্ট কিছু আমার চোখে দেখা সমস্যা, অসঙ্গতির কথা বলে লেখাটি শেষ করছি। ঢাকার আরেকটি বিরাট মার্কেট বসুন্ধরা সিটি শপিং মল যখন চালু হয়, তখন শুরুর দিকে সেখানে ওদের প্রত্যেকটি টয়লেটের দরজায় একটি করে হ্যাঙ্গার ছিল, ব্যবহারকারীরা যাতে প্রয়োজনে সেখানে তাদের কোট জ্যাকেট বা ব্যাগ ইত্যাদি রাখতে পারে। কিন্তু আজকে সেখানে সবখানে হ্যাঙ্গারের স্ক্রু'র ফুটোগুলো ঠিকই রয়ে গেছে, কিন্তু পিতলের সেই ধাতব হলদে হ্যাঙ্গারগুলোর একটিও নেই। কি হলো! কোথায় গেল ওগুলো!
বাংলাদেশের কোনও একটি বৃহৎ জেলা'য় যেয়ে যত্রতত্র ছড়ানো ছিটানো নোংরা আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখে আমি বেশ ঘাবড়ে যাই। পুরো শহরটাকেই আমার কাছে মনে হয়েছিল, যেন একটি চলমান ডাস্টবিন। স্থানীয় কয়েকজনকে বলেওছিলাম, আপনাদের শহর খুব নোংরা। নোংরা শহরের কারণে সেখানকার মানুষদেরকেই আমার মনে হয়েছিল, তারা নোংরা স্বভাবের। এখনও এ ধারণা আমার মাঝে রয়ে গেছে যে, বাংলাদেশের সেই বিশেষ জায়গার মানুষ সাধারণত তুলনামূলক নোংরা হয়ে থাকে! দুঃখিত সেই বিশেষ জায়গার নাম সঙ্গত কারণেই বলতে চাচ্ছি না। বাংলাদেশের সব জায়গাই কমবেশি নোংরা অপরিচ্ছন্ন, কিন্তু সেই বিশেষ জেলা যেন সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছে!
ঢাকার গুলশান আর বাড্ডা লিংক রোডের মাঝে একটা জায়গা আছে গুদারা ঘাট। একদিন রাতে দেখলাম চলন্ত বাসে, বাসের একজন যাত্রী জানালা দিয়ে এক দলা থুথু ফেললে তা একজন মধ্যবয়সী সাইকেল নিয়ে রাস্তা পাড় হওয়ার জন্য অপেক্ষারত ব্যক্তির গা'য়ে লাগে। আর অমনি শুরু হলো সেই ব্যক্তির অকথ্য ভাষায় বাংলা গালাগালি, এমনকি যে থুথু ফেলেছে, তাকে লক্ষ্য করে সে তার স্যান্ডেলও ছুড়ে মেরেছিল। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তা বাইরে পড়ে। বাসের যে লোকটি রাস্তার একজন নিরীহ ব্যক্তির গা'য়ে অকারণে এই থুথু বৃষ্টি করেছিল, সে দেখলাম জানালা দিয়ে মুখ বের করে সেই লোকটিকে বলছে, 'ওই, অমন করিস কেন! আমি কি দেখেছি নাকি!'
সেদিন বাসে আমি আর চুপ করে থাকতে পারিনি ঘটনাবলি দেখে। বাসের সেই যাত্রীকে বলেছিলাম, 'ভাই, সম্পূর্ণ দোষটাই আপনার। আপনি না দেখে কেন থুথু ফেললেন ভদ্রলোকের গা'য়ে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে একজন লোক সাইকেল হাতে রাস্তা পেরোনোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এসময় চলন্ত বাস থেকে থুথু ফেললে বাতাসের তোড়ে তা উড়ে যেয়ে তার গা'য়ে লাগা খুবই স্বাভাবিক। এটা একটা খুব সাধারণ কমন সেন্সের ব্যাপার, সব পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে! আপনার ভাগ্য ভালো যে উনি আপনাকে হাতের কাছে পাননি। পেলে যে কী করতো! বাসের অন্যান্য যাত্রীরাও আমার সাথে সুর মিলিয়ে সেই অসভ্য যাত্রীটিকে মৃদু ভর্ৎসনা করেছিল তার কৃত অপরাধের জন্য।
ঘটনাটা মোটেই হাসির নয়, কিন্তু এখন মনে পড়লে আমার খুব হাসি পায়। সেদিন লোকটার অকথ্য, ছাপার অযোগ্য গালাগালি আর সবশেষে স্যান্ডেল ছুড়ে মারার কারণে বাসের ভিতরে বেশ থমথমে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তার কোনও দোষ নেই। আসল যে নাটের গুরু, সমস্ত অনাসৃষ্টি যার কারণে, সে তো বহাল তবিয়তে বাসের ভিতর বসে, জানালা দিয়ে মুখ বের করে একজন নিরীহ ব্যক্তিকে অকারণ থুথু বৃষ্টিতে ভাসানোর পরও আত্মপক্ষ সমর্থন করে তুইতোকারি করে উল্টো তাকেই আবার বুঝিয়ে বলছে, 'ওই অমন করিস কেন! আমি কি দেখেছি নাকি!'
উপস্থিত মুহূর্তে ইচ্ছে করছিল ওর নাকটা যদি...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×