somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী: যেমন দেখেছি ময়মনসিংহ নগরীকে

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ময়মনসিংহ স্টেশন।

মাঝরাতে ময়মনসিংহ স্টেশনে

ময়মনসিংহে ট্রেন থেকে নামলাম মাঝরাতে। তিনটা থেকে চারটার মধ্যে। মনের সুখে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম স্টেশনটা। তখন ঢাকাগামী যাত্রীদের বেশ ভিড় ছিল প্লাটফর্মে। বাংলাদেশের অন্যান্য রেল স্টেশনের মতোই একটি স্টেশন। প্লাটফর্মের চারপাশে অগণিত ছিন্নমূল দরিদ্র মানুষ শুয়ে আছে। অধিকাংশেরই মূল পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। যাদের মাঝে বেশ কয়েকজন ছিল বিকলাঙ্গ, বহু থুকথুকে প্রবীণ প্রবীণা, নোংরা ধূলোমলিন শিশু। সবাই নিশ্চিন্তে বেঘোরে ঘুমোচ্ছিল। সত্যি ঘুমের সময় পৃথিবীর মানুষের কোনও শ্রেণি বিভাজন থাকে না! সবাই একইভাবে ঘুমায়। সবাই এক হয়ে এক্কেবারে একাকার হয়ে যায়! নানান রঙের আলো জ্বলছিল চারপাশে। কয়েকটি চব্বিশ ঘন্টার খোলা দোকান; মূলত শুকনো খাবার ও চা বিক্রি হয় সেখানে। পত্রিকার দোকানগুলো খোলা ছিল কিনা, ঠিক মনে পড়ছে না এখন! বেশ কিছুটা সময় মনের সুখে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ালাম। মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্নের মাঝে হেটে চলেছি আমি। দারুণ ভালো লাগছিল স্টেশনের পারিপার্শ্বিকতা, মাঝরাতের আলো আঁধারিতে সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নাবিষ্ট! আহ, কী যে আনন্দ এইসব নগর ভ্রমণে, নতুন নতুন অচেনা শহর জনপদ দেখার মাঝে। সত্যি এ অদ্ভুত এক আসক্তি, অদ্ভুত এক মায়া, আর যার কোনও সঠিক ব্যাখ্যাও হয় না!
এ সময় আমি চা খাবার জন্য কাছের একটি ছোট্ট দোকানে গেলাম। বৃদ্ধ দোকানদার তখন ঝিমুচ্ছিল, হয়তো ঘুমিয়েই পড়েছিল! কৃত্রিম মৃদু কেশে আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।
‘চাচা চা কি হবে?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘হইবো।’ আড়মোড়া ভেঙে তার জবাব।
‘এককাপ দুধ চা দেন।' বসে পড়লাম দোকানের সরু কাঠের বেঞ্চের ওপর।
তারপর প্রবীণ দোকানদারের সাথে কিছুক্ষণ নানান বিষয় নিয়ে এলোমেলো কথা হলো। চা পান করলাম। সাথে বোধহয় কেক বা সল্টেড বিস্কুট- কিছু একটা ছিল। চা পান শেষে বিল মিটিয়ে দিয়ে স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম নিজের মতো। চাচাও পরিষ্কার বুঝতে পারলেন, আর কোনওকিছু অর্ডার করবো না আমি, এমনি এমনি তার শূন্য দোকানে বসে থাকবো। আর তারপর আবার তিনি আগের মতো বসে ঝিমুতে লাগলেন, অনেকটা বসে বসে ঘুমোতে লাগলেন বললেও হয়তো ভুল বলা হবে না! হ্যা, ওখানে আদতে ঘুমিয়েই পড়লেন তিনি। কাঠের কিছু একটা শক্ত অবলম্বনের ওপর শরীর ছেড়ে দিয়ে নিঢাল হয়ে দোকানের ভিতরে ঘুমোতে লাগলেন প্রবীণ দোকানদার! এই সুযোগে আমি সেখানে তার বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম আমার সেলফোনের ক্যামেরায়। আফসোস, ছবিগুলো সেভাবে আজ আর আমার সংগ্রহে নেই! যাই হোক এক পর্যায়ে সেখান থেকে উঠে গেলাম। হেটে হেটে প্লাটফর্মের ছাউনির এক প্রান্তের একেবারে শেষে মাথায় চলে গেলাম। সেখানে বেশ কয়েকজন নোংরা আলুথালু শিশু গল্প করছিল; পরস্পরের সাথে বন্ধুসুলভ খুনসুটি আড্ডা! হাটতে হাটতে ওদের দুষ্টুমি দেখছিলাম, কথা শুনছিলাম। বুজজুইন, খাইছুইন, গেছুইন- ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষা! দারুণ ভালো লাগছিল শুনতে।
এভাবে বেশ খানিকটা সময় অতিবাহিত হলো। রাত তখন ভোরের কাছাকাছি। আমি সেখানে যারপরনাই ক্লান্ত। ইচ্ছে করছিল ঘোড়ার মতো কিছুকাল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ঘুমাই প্লাটফর্মে। রাত বাড়ছিল। এ সময় প্লাটফর্ম থেকে বেরোতে উদ্যত হলাম। তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। তখনও রাত্রিকাল- অমানিশা। আর সকলের মতো আমারও অপেক্ষা পৃথিবীতে একটি উজ্জ্বল ভোরের।
(চলবে)

আগের পর্ব- ১
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×