এখানে তোমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, তুমি ভাবছো তুমি মরে যাচ্ছো! তুমি অনেকদিন পর আবার স্টিলের থালাটাকে বানাও ঢোল, শূন্যে তুলে ধরো আর বেদম পেটাতে থাকো রুটি বানানোর বেলন দিয়ে। পৃথিবীর সবচে’ নিখুঁত যন্ত্রসঙ্গীত- তোমাকে বাঁচার আনন্দ ফিরিয়ে দেবে না? হয়তো তুমি নিজেও বহু খুঁজছিলে- স্টিলের থালা, কাঠের বেলন? এখন ভুলে গেছ!
আবার ফিরে গেছ তুমি শৈশবের শহরে। পাখি শিকারীদের জুতো পা'য়ে, দিব্যি হেটে চলেছ মানুষের কোলাহল পূর্ণ দুপুরের সড়কে- এক মাথা সূর্য নিয়ে। কিন্তু তুমি নির্লিপ্ত! ম্যাটিনির ছেড়া অর্ধেক টিকিট তোমার প্যান্টের বাঁ পকেটে। আরেকটার সেলাই ছিড়ে গেছে। কীভাবে যে! পকেট ফুঁড়ে তোমার তর্জনী জানু ছুঁয়েছে। এখন একটি প্রিয় গান তুমি গুনগুন করে গাইতেই পারো! বহুদূরে পুলিশের ভ্যান- ষণ্ডমার্কা বিকট গোফওয়ালা পুলিশ, চটা খাকি ইউনিফর্ম। এখন এখানে শুধু মানুষের অনাদিকালের লাল সড়ক। নাকি বেমালুম ভুলে গেছ সব গান আজ- পৃথিবীর নির্নিমেষ পরিক্রমণে। বিস্তর আলো গিলে ফেলেছ নাসারন্ধ্র দিয়ে। কালের দুর্গন্ধের কুটিল আবর্তে অনেক ঘোরা শেষে- জানি, তুমিও ক্লান্ত। তবু চেষ্টা করে দেখোই না একবার, গাইতে প্রিয় কোনও গান! মনে পড়ে- আফ্রোদিতির সেই প্রেমের গান? ক্লাসরুম? মুখর করিডোর?
দেখো কাঠ পিঁপড়েদের- কতো সুখে বেঁচে আছে। সুখের কাঁটার আঘাত সয়ে সয়ে, যেভাবে গোলাপ চাষিরা সুখে স্বচ্ছন্দে বাস করে বারো মাস।
আরেকবার কি মিছিলে যাবে তুমি? সেই লোকগুলো কি পাবে আবার- সেই অবিন্যস্ত এবড়ো থেবড়ো পাথুরে সড়ক, গনগনে দুপুর, পলেস্তারা ধসে পরা কতো ক্রন্দিত করুণ দেয়াল? কতো দেয়ালিকাই তো পড়া হয়ে ওঠেনি আর! সার সার কতো চায়ের দোকান, টুংটাং সুললিত ছন্দ চামচ পেয়ালার, আলুথালু বেশবাস দুপুর পোড়ানো কতো মানুষের, সরষে ফুলের অবারিত হলুদ আলো- আর কি পাবে ফিরে? কেউ পেয়েছিল?
পাথরকুচি ফুল একদিন তুমি ভীষণ দেখতে চেয়েছিলে! এখনও কি তাই চাও?
সেদিন রেল ক্রসিংয়ে কারা বসেছিল, জ্বলন্ত সিগারেট হাতে রেল লাইনের ’পর? মনে পড়ে তাদের মুখগুলো? একটা সিগারেট না হয় তুমি আবার ধরাও। বলো, কবে ধসে পড়েছিল স্পেকট্রাম? মনে নেই! অঙ্কে তুমি বরাবরই দারুণ কাচা। বিকেলের ম্রিয়মাণ খাঁচায় বন্দি কতো বিষণ্ণ পাখিই তো কেঁদেছিল আকাশের কথা ভেবে! তুমি কি সমব্যথী হওনি কোনওদিন!
রঙিন যাদুর ছড়ি আবার ফিরে এসেছে তোমার হাতে। আবার ওটা ছুঁইয়ে দাও, শুভ্র অন্নের মতো পবিত্র সাদা কাগজে। আবার উড়িয়ে দাও শান্তির অমল পায়রাদের- পৃথিবীর মেঘাবিষ্ট কালিমালিপ্ত আকাশে। তুমি ঈশ্বর হবে। হয়েছিলে যুগে যুগে। অদূরে ভীষণ সাইরেন বাজছে কোথাও! ক্রান্তি কাল গড়ে তুলছে মানুষেরা- অগোচরে। শোনো, নিরন্ধ্র অন্ধকারের নীলচে আবর্তে দাঁড়িয়ে, মানুষের দৃপ্ত কণ্ঠে গাওয়া শিকল ভাঙার গান। দিব্য আলোয় নাচে, তাদেরই গড়া এইসব কাদামাটির প্রতিমা। তুমিও কণ্ঠ মেলাও, নাচো দুহাত তুলে।
আবার আগুন জ্বালো বুকে, পোড়ো, পোড়াও পৃথিবীকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২২