আমি যখন স্কুলে পড়ি, তখন জার্মান ফুটবল দলের দারুণ ভক্ত ছিলাম। নিজেও ফুটবল খেলতাম খুব। জার্মান দলে সে সময় বেশ কয়েকজন ফুটবলার ছিল, যাঁদেরকে মাঠে রীতিমতো অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম। হা হা হা। লোথার ম্যাথিউস, জুর্গেন ক্লিন্সম্যান, অলিভার কান, মাইকেল বালাক, অলিভার বিয়েরহপ, মিরোস্লাভ ক্লোসা (২০০২ বিশ্বকাপ থেকে) ইত্যাদি। সবমিলিয়েই অসাধারণ একটি দল ছিল জার্মানি। মোজার্টের পিয়ানোতে তোলা মুগ্ধকর সুরের মতোই নিখুঁত ও ছন্দময় ছিল তাঁদের ক্রীড়া শৈলী। খেলোয়াড়দের মাঝে চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। যদিও সেই দলটা ৯৮, ০২ বিশ্বকাপ জয় করতে পারেনি! ০২ -এ ব্রাজিলের সাথে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল। ৯৮ -এ বোধহয় কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। মনে পড়ছে ২০০২ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ‘সৌদি আরব - জার্মানি’ ম্যাচটা। সে ম্যাচটি আমি শেওড়াপাড়ার একটি ইলেকট্রনিক্স পন্য বিপণীকেন্দ্র’র বাইরে রাখা টিভিতে একদল মানুষের সাথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম। চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা। সে ম্যাচে জার্মানি ৮-০ গোলে সৌদি আরবকে পরাজিত করে। অভিষিক্ত মিরোস্লাভ ক্লোসা একাই চারটি গোল করেন সেদিন। তাঁড়িয়ে তাঁড়িয়ে উপভোগ করেছিলাম ম্যাচটা। আরও কয়েকটা সহজ সুযোগ সে ম্যাচে মিস করেছিল জার্মানি, নইলে আরও বড় ব্যবধানে হারাতে পারতো সৌদি আরবকে। সেখানে দর্শকদের অনেকেই ছিল সৌদি আরবের সমর্থক। তারা ভীষণরকম হতাশ খেলার এই পরিস্থিতি ও ফলাফল দেখে। নানাজনে নানান কথা বলছিল। এরকমও কাওকে বলতে শুনেছিলাম যে, ঘুস খেয়ে নাকি সৌদি আরব ইচ্ছা করে এরকমভাবে খেলে হেরে যাচ্ছে!
সেটাই বোধহয় জুর্গেন ক্লিন্সম্যানের শেষ বিশ্বকাপ ছিল! তারপর বুট জোড়া তুলে রাখেন তিনি। পরবর্তীতে আমরা তাঁকে কোচের ভূমিকায় দেখতে পাই। অত্যন্ত ভালো মানের একজন ফুটবলার ছিলেন। বিশ্বকাপ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন টুর্নামেন্টে আমি তাঁর খেলা দেখেছি। যেমন নাম, তেমনি খেলতেনও একেবারে নিটোল ক্লিন ফুটবল। কার্ড টার্ড পাওয়া তো বহুদূরের ব্যাপার, মাঠে তাঁকে ফাউল টাউল করতেই দেখতাম না। সবসময় আপনমনে নিজের মতো খেলে যেতেন। যাই হোক ওপরে যাঁদের নাম বলেছি, তাঁরাসহ তৎকালীন পুরো জার্মান দলেরই দারুণ ভক্ত ছিলাম আমি। ২০০২ সাল থেকে তো মিরোস্লাভ ক্লোসা প্রিয় ফুটবলার হয়ে উঠলো। কর্নার থেকে হেডে গোল দিতে তাঁর মতো পারদর্শী ফুটবলার আর দ্বিতীয়টি দেখিনি; আমি অন্তত দেখিনি।
ভালো থাক সেইসব দুনিয়া কাঁপানো প্রিয় ফুটবলাররা। যাঁরা দারুণ আনন্দময় এক শৈশব উপহার দিয়েছিল আমাকে, ও আমার মতো পৃথিবীর আরও আরও অসংখ্য শিশু কিশোরকে। তাঁদেরকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এখন আর সেভাবে ফুটবল দেখা হয় না যদিও, তারপরও কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে জার্মানিকে খেলতে দেখলে আজও আমি প্রতিপক্ষের পরাজয়ের অপেক্ষা করি।