ময়মনসিংহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা ভালুকা। এখান থেকে অহোরাত্র ঢাকার বাস পাওয়া যায়। যেমন আমাকে গফরগাঁও থেকে বাসযোগে ভালুকায় যেয়ে, সেখান থেকে বাসে ক’রে ঢাকা আসতে হয়েছিল। ভালুকায় ভালুক নেই, কিন্তু গিজগিজ করে মানুষ। অনেকটা ঢাকার গুলিস্তানের মতোই অগণিত মানুষের ব্যস্তসমস্ত ভিড় সেখানে সবসময়। বিশ্বরোডের একদিকে ঢাকাগামী, অপরদিকে ময়মনসিংহগামী বাসগুলো স্রোতের মতো অনবরত যাওয়া আসা করে। প্রচুর সংখ্যক মানুষ এখান থেকেই নিত্য গমনাগমন করে দু জায়গায়। ভালুকায় কিছুক্ষণ অবস্থান করেছিলাম। মার্কেট, দোকানপাটে ভরা চারপাশ। পুরোটাই আগাগোড়া একটি ব্যবসা বাণিজ্যের এলাকা। সড়কের পাশে এক মিষ্টির দোকানে দই, পরোটা ভাজি, মিষ্টি খেয়েছিলাম। বিল দিতে গিয়ে দেখলাম, ঢাকার চেয়েও দাম বেশি ভালুকায়। এমনকি অল্প দূরত্বে গফরগাঁও থানার থেকেও প্রায় দ্বিগুণ দাম সেখানে খাবারদাবারের। নির্ঘাত অন্যান্য সবকিছুই তুলনামূলক ব্যয়বহুল হবে। তাই সব বুঝেশুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভালুকায় আর কখনওই যাবো না, কিছুতেই যাবো না! হা হা হা।
ঢাকা শহরে ফুট ওভারব্রিজগুলোর সিংহভাগেরই মোটেই কোনও দরকার নেই। ওভারব্রিজগুলো সবসময় প্রায় খালি পড়ে থাকে। সুষ্ঠুভাবে এগুলো ব্যবহার করার মতো সভ্য নই আমরা, এ দেশের আপামর মানুষেরা। রাজধানীজুড়ে এসব ফুট ওভারব্রিজের আদৌ কোনও দরকারই ছিল না! আমাদের দরকার ছিল, উন্নতমানের প্রশস্ত জেব্রা ক্রসিং। কিন্তু তা করা হয়নি। ফুট ওভারব্রিজগুলো তৈরি ক’রে নিছকই ভুল ক’রেছে নগর পরিকল্পনাবিদগণ বা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এতে শুধুমাত্র বেশুমার সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন ঢাকার এখানে সেখানে অনেক ফুট ওভারব্রিজ দেখতে পাই। সচরাচর জনশূন্য নিথরই পড়ে থাকে বেশিরভাগ ব্রিজ। লোকজন ওঠেই না বলতে গেলে। তারা সড়ক দিয়ে হেটে রাস্তা পার হয়। এক্ষেত্রে নিজেদের সুবিধার জন্য রোড ডিভইডার বা আইল্যান্ড না কি যেন বলা হ’য়ে থাকে, রাস্তাকে দুদিকে পৃথক করেছে। ওগুলোর ভারি ভারি রডগুলো বাঁকিয়ে ফোকর তৈরি ক’রে, সেখানে শরীর গলিয়ে এপার ওপার আসা যাওয়া করে লোকজন। উদাহরণ স্বরূপ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম’র পাশের ফুট ওভারব্রিজটির কথা বলতে পারি। ওরকম একটি ব্যস্ত ভিড়ভাট্টার এলাকাতেও শূন্য, নিথর পড়ে থাকে সেখানকার ব্রিজটি। অথচ সড়কের বিভিন্ন জায়গায় রড বাঁকিয়ে তৈরি করা কিঞ্চিত ফাঁক গলে প্রতিনিয়তই রাস্তার এপার ওপার আসছে যাচ্ছে মানুষ। সত্যি, বলতে লজ্জা ও দুঃখবোধ হচ্ছে যে, বড়জোর দু তিন মিনিট হেটে জেব্রা ক্রসিং দিয়েও স্বাভাবিকভাবে এপার ওপার যেতে আসতে পারে তারা, কিন্তু সেটাও কেউ করে না! ওভাবে দৌড়ে, লাফিয়ে লাফিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রধান সড়ক দিয়েই অবৈধভাবে রাস্তা পেরোয় সবাই। এরকমভাবেই এখানে অনন্তকাল রাস্তা পেরোবেও সাধারণ মানুষেরা। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ফুট ওভারব্রিজগুলো তৈরি করা নিতান্তই বোকামি হয়েছে এখানে। দেদার অর্থের অপচয় হয়েছে, অনেকেই কালো টাকায় পকেট ভারি করেছে, অনেকেরই ভুরি স্ফীত হয়েছে। কিন্তু আসল কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি। বরং রোড ডিভইডার বা আইল্যান্ডের ভারি ভারি রডগুলো মানুষ কর্তৃক যত্রতত্র বাঁকিয়ে নষ্ট করার দরুন সড়কের সৌন্দর্যহানী হয়েছে। এরপর আর একটিও ফুট ওভারব্রিজ না করার জন্য অনুরোধ করছি প্রশাসন, কর্তৃপক্ষকে। ফুট ওভারব্রিজ নয়, আমাদের সড়কের মোরে মোরে দরকার উন্নতমানের প্রশস্ত জেব্রা ক্রসিং। আর তা না হলে এমনি রাস্তাই থাক। রাস্তা দিয়েই সুযোগ সুবিধা মতো দৌড়ে, লাফিয়ে রাস্তা পারাপার করবে সকলে। এটা বোঝার জন্য ভারি পড়াশোনা করে নগর পরিকল্পনাবিদ হতে হয় না!
বিউটি নামের যে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল। তার যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সবুজ ঘাশের ওপর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত মৃত বিউটি নিথর পড়ে আছে। দৃশ্যটা প্রথমবার দেখার পর থেকেই মনের ভিতর কেমন যেন এক খচখচেভাব ছিল। ছবিটার মধ্যে যেন কোনও নিগূঢ় রহস্য লুকিয়ে আছে, যা ধরতে পারছিলাম না। ছবিটা যেন আমার অচেনা নয়, বরং খুব চেনা, ছবিটা যেন আমার অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, ছবিটা যেন কিছু বলছে আমাকে! কিন্তু কী সেই রহস্য, কী সেই কথা, তৎক্ষণাৎ উত্তর পাইনি। কিন্তু কিছুদিন আগে ওপার বাংলার একটি কবিতা সাইটে দেখলাম, রূপকের আড়ালে ঘটনাটিকে নিপুণ মুনশিয়ানায় তুলে ধরেছেন জনৈক কবি। সেখানে কারও মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কবি এরকম কিছু একটা বলেছিলেন যে, ‘বিউটির লাশটাকে মনে হচ্ছিল, ঠিক যেন সবুজ ঘাশের বুকে লাল কালিতে বাংলাদেশের মানচিত্র আকা।’ তারপর আবার দেখলাম সেই ছবিটি, হ্যা, অনেকটাই আমাদের বাংলাদেশের মানচিত্রের আকার ধারণ করে, বিউটির সেই রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত লাশটি পড়েছিল সবুজ ঘাশের ’পরে। চলুন সবাই আরেকবার দেখি সেই ছবিটি। দেখে উত্তর দিন, বিউটির লাশটি কি কিছু বলছে আপনাকে? হ্যা, অবশ্যই কিছু বলছে। হয়তো আপনি শুনতে পারছেন না! কিন্তু আমি শুনেছি, সেই কবি শুনেছে। তাই আমরা আজ বলছি, বিউটি আমার বোন। বিউটির এই ধর্ষণ, হত্যার বিচার যদি এই রাষ্ট্র করতে না পারে, তা হলে আমিই তা করবো। আজকে থেকে ছ’মাস পর যদি দেখি, নরপিশাচটা দিব্যি গা’য়ে হাওয়া লাগিয়ে, বিউটির টকটকে তাজা লাল রক্তে আকা এই মানচিত্রের বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তাহলে আসুন আমরা সবাই সেদিন দিগম্বর হয়ে দল বেধে কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করি, সমস্তকিছু দুহাতে লণ্ডভণ্ড করি, তছনছ করি। আসুন এবার কঠিন কিছু একটা করি সকলে মিলে। যাতে এই রাষ্ট্রের, প্রশাসনের টনক নড়ে। যে রাষ্ট্র বিউটিকে ন্যায়বিচার দিতে পারে না, সেই ন্যাংটো অসভ্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের গা’য়েও পোশাক মানায় না! আর কতো আমরা নিজেদের দায় এঁড়াবো। এবার গণ জোয়ার চাই। আবার গণ জাগরণ চাই। আসুন সমস্বরে যে যার অবস্থান থেকে আমরা বলি, বিউটি আমার বোন, বিউটি আমার কন্যা, বিউটি আমার জননী। আমি আজ যারপরনাই উন্মাদ, উদভ্রান্ত, ক্ষুব্ধ। আমার রক্তে আজ আগুন, আমার করোটিতে তাজা লাল রক্ত নাচছে ভীষণ। তোমরা যদি অপরাধীকে শাস্তি দিতে না পারো, তাহলে আমাকেই ফাঁসি দাও, হত্যা কর। বিউটির ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি করতে পারি না এমন কিছু নেই পৃথিবীতে! আমাকে তোমরা ধ্বংস কর, নইলে আমিই সবকিছু ধ্বংস করে দেবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৩